ৰ্য্যোধনের দুষ্টাভিপ্ৰায়সংযমে ধৃতরাষ্ট্রের উপদেশ
ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন, “হে বৎস। তুমি আমার জ্যেষ্ঠ মহিষীর গৰ্ভজাত ও সর্ব্বজ্যেষ্ঠ, অতএব পাণ্ডবদিগের প্রতি কদাচ বিদ্বেষভাব প্রকাশ করিও না। দ্বেষ্ট হইলে অসুখী ও নিধন প্রাপ্ত – হইতে হয়। তোমার তুল্য মনুষ্য অব্যুৎপন্ন, তুল্যাৰ্থ, তুল্যমিত্র ও অদ্বেষ্টা যুধিষ্ঠিরের প্রতি কখনই দ্বেষ করেন না, তুল্যাভিজনবীৰ্য্যসম্পন্ন [ঐশ্বৰ্য্যে, বীৰ্য্যে, সৌন্দৰ্য্যে, মৰ্য্যাদায় সমান] হইয়া কেনই বা তুমি ভ্রাতার রাজ্যসম্পত্তিলাভে স্পৃহা করিতেছ? ভ্রান্তিক্ৰমেও যেন তোমার এরূপ বুদ্ধি না জন্মে। হে বৎস! এক্ষণে আর শোক করিও না। যদি তুমি ঐরূপ যজ্ঞসম্পত্তিপ্রাপ্তির ইচ্ছা কর, তবে যজ্ঞিকেরা সপ্ততন্তুনামক মহাযজ্ঞ আরম্ভ করুন। তাহা হইলেই ভূপালগণ তোমার প্রীতি সম্পাদন ও বহুমানের নিমিত্ত বিপুল বিত্ত আহরণ করিবেন। পরধানগ্রহণেচ্ছা নিতান্ত অসতেরই হইয়া থাকে, ফলতঃ যিনি নিরবচ্ছিন্ন স্বধনে সন্তুষ্ট ও ধর্ম্মনিষ্ঠ হয়েন, তিনিই প্রকৃত সুখী। পরস্বগ্রহণে অনিচ্ছা, আত্মকর্মে উৎসাহ ও স্বোপাজিত ধনের রক্ষণাবেক্ষণ-পণ্ডিতেরা ইহাকেই বিভবলক্ষণ বলিয়া নিরূপণ করিয়াছেন। যিনি বিপৎকালে নিরাকুল হইয়া থাকেন, যিনি সকল বিষয়ে সুনিপুণ ও নিত্য উত্থানশীল, এইরূপ অপ্ৰমত্ত ও বিনীত লোক ইহকালে শ্রেয়োলাভ করিয়া থাকেন। হে বৎস! স্ববাহুতুল্য পাণ্ডবদিগকে উচ্ছেদ করিও না। পাণ্ডবেরা তোমার ভ্রাতৃসদৃশ, অতএব ধনের নিমিত্ত মিত্রদ্রোহ করা নিতান্ত অন্যায়। এক্ষণে পাণ্ডবদিগের প্রতি বিদ্বেষভাব প্রদর্শন ও সমগ্র ভ্রাতৃধন-গ্ৰহণে ইচ্ছা করিও না। মিত্রদ্রোহে অতিশয় অধর্ম্ম আছে, তোমার ও পাণ্ডবদিগের একই পিতামহ। অতএব এক্ষণে অন্তর্ব্বেদিমধ্যে [যজ্ঞে-যজ্ঞযাজন ব্যাপারে] বিত্তদান, বিবিধ কাম্যবস্তুর উপভোগ এবং নিঃশঙ্কচিত্তে মহিলাগণের সহিত বিহার করিয়া ক্ষান্ত হও।”