এক মুনি, তাঁর অনেক শিষ্য। মুনিঠাকুর তাঁর পিতৃশ্রাদ্ধে এক মস্ত যজ্ঞের আয়োজন করলেন। সে যজ্ঞ এর আগে মুনির আশ্রমে আর হয়নি। তাই তিনি শিষ্যদের ডেকে বললেন, “আমি এক যজ্ঞের আয়োজন করেছি, সে যজ্ঞ তোমরা হয়তো আর কোথাও দেখবার সুযোগ পাবে না, কাজেই যজ্ঞের সব কাজ কর্ম বিধি ব্যবস্থা বেশ মন দিয়ে দেখো। নিজের চোখে সব ভালো ক’রে না দেখলে শুধু পুঁথি পড়ে এ যজ্ঞ করা সম্ভব হবে না।”
মুনিঠাকুরের আশ্রমে বেড়ালের ভারি উৎপাত; যজ্ঞের আয়োজন সব ঠিক হচ্ছে, এর মধ্যে বেড়ালগুলো এসে জ্বালাতন আরম্ভ করেছে- এটাতে মুখ দেয়, ওটা উল্টে ফেলে, কিছুতেই তাদের সামলানো যায় না। তখন মুনিঠকুর রেগে বললেন, “বেড়ালগুলোকে ধরে ঐ কোণায় বেঁধে রেখে দাও তো।” অমনি নয়টা বেড়ালকে ধরে সভার এক পাশে খোঁটায় বেঁধে রাখা হল। তারপর ঠিক সময় বুঝে যজ্ঞ আরম্ভ হল। শিষ্যেরা সব সভার সাজসজ্জা, আয়োজন, যজ্ঞের সব ক্রিয়া-কাণ্ড, মন্ত্রোচ্চারণের নিয়ম ইত্যাদি মন দিয়ে দেখতে আর শুনতে লাগল। নির্বিঘ্নে অতি সুন্দররূপে মুনিঠাকুরের যজ্ঞ সম্পন্ন হল।
কিছুকাল পরে শিষ্যদের একজনের বাবা মারা গেলেন। শিষ্যের ভারি ইচ্ছা তার পিতৃশ্রাদ্ধে সেও ঐ রকম সুন্দর যজ্ঞের আয়োজন করে। সে গিয়ে তার গুরুকে ধরল। তিনি বললেন, “আচ্ছা, সব আয়োজন করতে থাক, আমি এসে যজ্ঞের পুরোহিত হব।” শিষ্য মহা সন্তুষ্ট হয়ে যজ্ঞের সব ঠিকঠাক করতে লাগল।
ক্রমে যজ্ঞের দিন উপস্থিত। মুনিঠাকুর সশিষ্য শ্রাদ্ধের সভায় উপস্থিত; ঠিক নিয়ম মতো যজ্ঞের সমস্ত ব্যবস্থা প্রস্তুত হয়েছে কিন্তু শিষ্যটি তখনও সভাস্থলে এসে বসছে না, কেবল ব্যস্তভাবে ঘোরাঘুরি করছে। এদিকে যজ্ঞের সময় প্রায় উপস্থিত দেখে মুনিঠাকুরও ক্রমে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। তিনি শিষ্যকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আর বিলম্ব কেন? সবই তো প্রস্তুত, যজ্ঞের সময়ও উপস্থিত, এই বেলা সভায় এস।” শিষ্য বলল, “আজ্ঞে একটা আয়োজন বাকি রয়ে গেছে, সেইটা নিয়ে ভারি মুশকিলে পড়েছি।” মুনি বললেন, “কই, কিছুরই তো অভাব দেখছি না।” শিষ্য বলল, “আজ্ঞে চারটে বেড়াল কম পড়েছে।” মুনি বললেন, “সে কি রকম?” শিষ্য মুখ কাঁচুমাচু ক’রে বলল, “ঐ যে আপনার যজ্ঞে দেখলাম ঈশান কোণে নয়টা বেড়াল বাঁধা রয়েছে। আমাদের এ গ্রামে অনেক খুঁজে পাঁচটার বেশি পাওয়াই গেল না, কাজেই আর বাকি চারটার জন্য পাশের গ্রামে লোক গিয়েছে; তারা এই এসে পড়ল ব’লে।” শুনে গুরুর তো চক্ষুস্থির! তিনি বললেন, “আরে বুদ্ধিমান! কোনটা যজ্ঞের অঙ্গ আর কোনটা নয় তাও বিচার করতে শেখনি? আশ্রমের বেড়ালগুলি উৎপাত করছিল তাই বেঁধে রেখেছিলাম, তোমার এখানে কোনো উৎপাত ছিল না, তুমি আবার গায়ে পড়ে উৎপাত সংগ্রহ করতে গিয়েছ? বসে পড়, বসে পড়, আর বেড়াল ধরে কাজ নেই। এখন যজ্ঞটা নির্বিঘ্নে শেষ হয়ে যাক্।”
শিষ্য নিজের আহাম্মকিতে লজ্জিত হয়ে আপ্রস্তুত ভাবে সভার মধ্যে বসে পড়ল।
Related Chapters
- সূচনা
- জীবনী
- আবোল তাবোল
- অবাক কাণ্ড
- আবোল তাবোল
- আবোল তাবোল – ২
- আহ্লাদী
- একুশে আইন
- কাঁদুনে
- কাঠবুড়ো
- কাতুকুতু বুড়ো
- কি মুস্কিল
- কিম্ভুত
- কুম্ড়ো পটাশ
- খিচুড়ি
- খুড়োর কল
- গন্ধ বিচার
- গল্প বলা
- গানের গুঁতো
- গোঁফচুরি
- চোর ধরা
- ছায়া বাজি
- ট্যাঁশ গরু
- ঠিকানা
- ডানপিটে
- দাঁড়ে দাঁড়ে দ্রুম্
- নারদ! নারদ!
- নোট বই
- ন্যাড়া বেলতলায় যায় ক’বার
- পালোয়ান
- প্যাঁচা আর প্যাঁচানি
- ফসকে গেল
- বাবুরাম সাপুড়ে
- বিজ্ঞান শিক্ষা
- বুঝিয়ে বলা
- বুড়ীর বাড়ী
- বোম্বাগড়ের রাজা
- ভালরে ভাল
- ভুতুড়ে খেলা
- ভয় পেয়ো না
- রামগরুড়ের ছানা
- লড়াই ক্ষ্যাপা
- শব্দ কল্প দ্রুম্
- শুরু
- সাবধান
- সৎপাত্র
- হাত গণনা
- হাতুড়ে
- হুলোর গান
- খাই খাই
- দাঁড়ের কবিতা
- পাকাপাকি
- অসম্ভব নয়!
- খাই খাই
- বিষম চিন্তা
- হরিষে বিষাদ
- পরিবেষণ
- জালা – কুঁজো সংবাদ
- আড়ি
- নাচের বাতিক
- অবুঝ
- পড়ার হিসাব
- হিংসুটিদের গান
- সাধে কি বলে গাধা!
- তেজিয়ান
- জীবনের হিসাব
- আশ্চর্য !
- নিরুপায়
- হিতে-বিপরীত
- নন্দগুপি
- বর্ষ শেষ
- গ্রীষ্ম
- বর্ষার কবিতা
- শ্রাবণে
- নিঃস্বার্থ
- বর্ষ গেল বর্ষ এল
- হারিয়ে পাওয়া
- সঙ্গীহারা
- গ্রীষ্ম
- কাজের লোক
- দেশ-বিদেশের গল্প
- ওয়াসিলিসা
- পাজি পিটার
- শ্বেতপুরী আর লালপুরী
- দেবতার দুর্বুদ্ধি
- দেবতার সাজা
- হারকিউলিস
- অর্ফিয়ুস
- খৃস্টবাহন
- নাপিত পন্ডিত
- বুদ্ধিমানের সাজা
- দুষ্টু দরজি
- আশ্চর্য ছবি
- ভাঙা তারা
- লোলির পাহারা
- তিন বন্ধু
- দ্রিঘাংচু
- অসিলক্ষণ পন্ডিত
- রাজার অসুখ
- দানের হিসাব
- এক বছরের রাজা
- কার দোষ
- দুই বন্ধু
- বুদ্ধিমান শিষ্য ১
- বুদ্ধিমান শিষ্য ২
- ঠুকে মারি আর মুখে মারি
- বোকা বুড়ি
- সূদন ওঝা
- রামের শঙ্খ
- অন্ধের বর চাওয়া
- টাকার আপদ
- বিবিধ কবিতা
- নদী
- অন্ধ মেয়ে
- সাগর যেথায়
- আয়রে আলো আয়
- মেঘের খেয়াল
- আজব খেলা
- কত বড়
- বড়াই
- বেজায় রাগ
- সঙ্গীহারা
- বিচার
- বিষমকাণ্ড
- মনের মতন
- বর্ষ গেল, বর্ষ এল
- নূতন বৎসর
- গ্রীষ্ম ১:২
- শ্রাবণে
- শিশুর দেহ
- বেজায় খুশি
- খোকা ঘুমায়
- ভারি মজা
- লোভী ছেলে
- সাহস
- নানা গল্প
- ছাতার মালিক
- ব্যাঙের রাজা
- পুতুলের ভোজ
- হিংসুটি
- পেটুক
- সবজান্তা দাদা
- যতীনের জুতো
- গোপালের পড়া
- গল্প
- সত্যি
- রাগের ওষুধ
- ডাকাত নাকি
- হাসির গল্প
- বাজে গল্প ১
- বাজে গল্প ২
- বাজে গল্প ৩
- কুকুরের মালিক
- উকিলের বুদ্ধি
- গরুর বুদ্ধি
- ঠকানে প্রশ্ন
- ঠকানে প্রশ্নের উত্তর
- ভুল গল্প
- নাটক
- লক্ষ্মণের শক্তিশেল