এক কৃপণের কিছু সম্পত্তি ছিল। সর্ব্বদা তাহার এই ভয় ও ভাবনা হইত, পাছে চোরে ও দস্যুতে অপহরণ করে। এজন্য, সে বিবেচনা করিল, যাহাতে কেহ সন্ধান না পায়, ও চুরি করিতে না পারে, এরূপ কোনও ব্যবস্থা করা আবশ্যক। অনেক ভাবিয়া চিন্তিয়া, অবশেষে, সে সর্ব্বস্ব বেচিয়া ফেলিল, এবং, এক তাল সোনা কিনিয়া, কোনও নিভৃত স্থানে, মাটিতে পুতিয়া রাখিল। কিন্তু, এরূপ করিয়াও, সে নিশ্চিন্ত হইতে পারিল না; প্রতিদিন, অবাধে, এক এক বার, সেই স্থানে গিয়া, দেখিয়া আসিত, কেহ, সন্ধান পাইয়া, লইয়া গিয়াছে কি না।
কৃপণ প্রত্যহ এইরূপ করাতে, তাহার ভৃত্যের মনে এই সন্দেহ জন্মিল, হয় ত, ঐ স্থানে প্রভুর গুপ্ত ধন আছে; নতুবা, উনি, প্রতিদিন, এক এক বার, ওখানে যান কেন? পরে, এক দিন, সুযোগ পাইয়া, সেই স্থান খুড়িয়া, সে সোনার তাল লইয়া পলায়ন করিল। পর দিন, যথাকালে, কৃপণ ঐ স্থানে গিয়া দেখিল, কেহ, গর্ত্ত খুড়িয়া, সোনার তাল লইয়া গিয়াছে। তখন সে মাথা কুড়িয়া, চুল ছিঁড়িয়া, হাহাকার করিয়া, উচ্চৈঃ স্বরে, রোদন করিতে লাগিল।
এক প্রতিবেশী, তাহাকে শোকে অভিভুত ও নিতান্ত কাতর দেখিয়া, কারণ জিজ্ঞাসিল, এবং, সবিশেষ সমস্ত অবগত হইয়া, কহিল, ভাই! তুমি, অকারণে, রোদন করিতেছ কেন? এক খণ্ড প্রস্তর ঐ স্থানে রাখিয়া দাও; মনে কর, তোমার সোনার তাল পূর্ব্বের মত পোতা আছে। কারণ, যখন স্থির করিয়াছিলে, ভোগ করিবে না, তখন এক তাল সোনা পোতা থাকিলেও যে ফল, আর এক খান পাথর পোতা থাকিলেও সেই ফল। অর্থের ভোগ না করিলে, অর্থ থাকা না থাকা দুই সমান।