এক স্থূলকায় পালিত কুকুরের সহিত, এক ক্ষুধার্ত শীর্ণকায় ব্যাঘ্রের সাক্ষাৎ হইল। প্রথম আলাপের পর, ব্যাঘ্র কুকুরকে কহিল, ভাল ভাই! জিজ্ঞাসা করি, বল দেখি, তুমি, কেমন করিয়া, এমন সবল ও স্থূলকায় হইলে; প্রতি দিন কিরূপ আহার কর, এবং, কি রূপেই বা, প্রতিদিনের আহার পাও। আমি, অহোরাত্র, আহারের চেষ্টায় ফিরিয়াও, উদর পূরিয়া, আহার করিতে পাই না। কোনও কোনও দিন, উপবাসীও থাকিতে হয়। এইরূপ আহারের কষ্টে, এমন শীর্ণ ও দুর্বল হইয়া পড়িয়াছি।
কুকুর কহিল, আমি যা করি, তুমি যদি তাই করিতে পার, আমার মত আহার পাও। ব্যাঘ্র কহিল, সত্য না কি; আচ্ছা, ভাই! তোমায় কি করিতে হয়, বল। কুকুর কহিল, আর কিছুই নয়; রাত্রিতে, প্রভুর বা বাটীর রক্ষণাবেক্ষণ করিতে হয়, এই মাত্র। ব্যাঘ্র কহিল, আমিও করিতে সম্মত আছি। আমি, আহারের চেষ্টায়, বনে বনে ভ্রমণ করিয়া, রৌদ্রে ও বৃষ্টিতে, অতিশয় কষ্ট পাই। আর এ ক্লেশ সহ্য হয় না। যদি, রৌদ্র ও বৃষ্টির সময়, গৃহের মধ্যে থাকিতে পাই, এবং, ক্ষুধার সময়, পেট ভরিয়া খাইতে পাই, তাহা হইলে, বাঁচিয়া যাই। ব্যাঘ্রের দুঃখের কথা শুনিয়া, কুকুর কহিল, তবে আমার সঙ্গে আইস। আমি, প্রভুকে বলিয়া, তোমার বন্দোবস্ত করিয়া দিব।
ব্যাঘ্র কুকুরের সঙ্গে চলিল। খানিক গিয়া, বাঘ কুকুরের ঘাড়ে একটা দাগ দেখিতে পাইল, এৰং, কিসের দাগ জানিবার নিমিত্ত, অতিশয় ব্যগ্র হইয়া, কুকুরকে জিজ্ঞাসিল, ভাই! তোমার ঘাড়ে ও কিসের দাগ। কুকুর কহিল, ও কিছুই নয়। ব্যাঘ্র কহিল, না ভাই! বল বল, আমার জানিতে বড় ইচ্ছা হইতেছে। কুকুর কহিল, আমি বলিতেছি, ও কিছুই নয়; বোধ হয়, গলবন্ধের দাগ। বাঘ কহিল, গলবন্ধ কেন? কুকুর কহিল, ঐ গলবন্ধে শিকলি দিয়া, দিনের বেলায়, আমায় বাঁধিয়া রাখে।
ৰাষ, শুনিয়া, চমকিয়া উঠিল, এবং কহিল, শিকলিতে বাঁধিয়া রাখে। তবে তুমি, যখন যেখানে ইচ্ছা, যাইতে পার না। কুকুর কহিল, তা কেন, দিনের বেলায় বাঁধা থাকি বটে; কিন্তু, রাত্রিতে যখন ছাড়িয়া দেয়, তখন আমি, যেখানে ইচ্ছা, যাইতে পারি। তদ্ভিন্ন, প্রভুর ভৃত্যেরা কত আদর ও কত যত্ন করে, ভাল আহার দেয়, স্নান করাইয়া দেয়। প্রভুও, কখনও কখনও, আদর করিয়া, আমার গায় হাত বুলাইয়া দেন। দেখ দেখি, কেমন সুখে থাকি। বাঘ কহিল, ভাই হে! তোমার সুখ তোমারই থাকুক, আমার অমন সুখে কাজ নাই। নিতান্ত পরাধীন হইয়া, রাজভোগে থাকা অপেক্ষা, স্বাধীন থাকিয়া, আহারের ক্লেশ পাওয়া সহস্র গুণে ভাল। আর আমি তোমার সঙ্গে যাইব না। এই বলিয়া বাঘ চলিয়া গেল।