পারিস নগরে মিজিয়ন নামে এক ব্যক্তি ছিলেন। তিনি সামান্যরূপ ব্যবসায় দ্বারা জীবিকা নির্ব্বাহ করিতেন। কিছু দিন পরে, বিস্তর ক্ষতি হওয়াতে, তাঁহার ব্যবসায় বন্ধ হইয়া গেল। তিনি অত্যন্ত কষ্টে পড়িলেন। লা ব্লোন্দ নামে তাঁহার এক তরুণী পরিচারিকা ছিল। তাঁহার দুঃসময় ঘটাতে, কেবল সেই তাঁহাকে পরিত্যাগ করিয়া গেল না, আর সকলে চলিয়া গেল।
কিছুদিন পরে, মিজিয়নের মৃত্যু হইল। তাঁহার স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান রহিল। কিন্তু তাহাদের ভরণপোষণের কোনও উপায় ছিল না। তাহাদের দুরবস্থা দেখিয়া, লা ব্লোন্দের অত্যন্ত দয়া উপস্থিত হইল। সে, দাসীবৃত্তি করিয়া, ক্রমে ক্রমে পনর শত ফ্রাঙ্ক[১] সঞ্চয় করিয়াছিল, সমুদয় তাহাদের ভরণপোষণে সমর্পণ করিল। ইহা ভিন্ন, তাহার কিছু পৈতৃক ভূসম্পত্তি ছিল, তাহা হইতে সে দুই শত ফ্রাঙ্ক[১] উপস্বত্ব পাইত, তাহাও তাহাদের ব্যয়ে নিয়োজিত হইল। এইরূপে, সে ঐ অনাথ পরিবারের প্রতিপালন করিতে লাগিল। এই দয়াশীলা পরিচারিকাকে নিযুক্ত করিবার নিমিত্ত অনেকে অভিলাষ করিতেন। কিন্তু সে, এইমাত্র উত্তর দিত, আমি যদি ইহাদিগকে পরিত্যাগ করিয়া যাই, কে ইহাদের ভরণপোষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করিবে।
কিছু দিন পরে, মিজিয়নের পত্নীর উৎকট রোগ জন্মিল। ইতঃপূর্ব্বে লা ব্লোন্দ এই নিরুপায় পরিবারের ভরণপোষণে সর্ব্বস্ব ব্যয় করিয়াছিল, তাহার হস্তে আর কিছুই ছিল না। তাহাদের নিমিত্ত, অবশেষে সে, বসন, ভূষণ প্রভৃতি যাহা কিছু ছিল, সমস্ত বিক্রয় করিল।
যে সকল স্ত্রীলোক, হাস্পাতালে গিয়া, রোগীদের পরিচর্য্যা করে, তাহারা কিছু কিছু পাইয়া থাকে। লা ব্লোন্দ, দিবাভাগে, মিজিয়নের পত্নীর শুশ্রূষা করিত, এবং তাহাদের ব্যয় নির্ব্বাহ করিবার নিমিত্ত, রজনীতে হাস্পাতালে গিয়া, রোগীর পরিচর্য্যায় নিযুক্ত হইত।
১৭৮৭ খৃষ্টাব্দের, এপ্রিল মাসের শেষভাগে, মিজিয়নের পত্নীর মৃত্যু হইল। পারিস নগরে, অনাথ বালক বালিকাদিগের ভরণপোষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের নিমিত্ত, দীনাশ্রয় নামে স্থান আছে। কেহ কেহ লা ব্লোন্দকে এই পরামর্শ দিল, অতঃপর তুমি এই দুটি শিশুকে দীনাশ্রয়ে পাঠাইয়া দাও। সে এই প্রস্তাবে অত্যন্ত রোষ ও ঘৃণা প্রদর্শন করিয়া কহিল, আমি ইহাদিগকে কখনও পরিত্যাগ করিতে পারিব না, ইহাদিগকে আমার বাসস্থানে লইয়া যাইব, আমার যে দুই শত ফ্রাঙ্ক আয় আছে, সেখানে থাকিলে, তদ্দ্বারা আমার নিজের ও ইহাদের ভরণপোষণ অনায়াসে সম্পন্ন হইবে।