যত প্রকার উৎকৃষ্ট প্রস্তর আছে হীরার জ্যোতিঃ সর্ব্বাপেক্ষা অধিক। হীরা আকরে জন্মে। পৃথিবীর প্রায় সকল প্রদেশেই হীরার আকর আছে। আকর হইতে তুলিবার সময় হীরা অতিশয় মলিন থাকে, এজন্য পরিষ্কার করিয়া লয়। এ পর্য্যন্ত পৃথিবীতে ষত বস্তু জানা গিয়াছে হীরা সর্ব্ব অপেক্ষা কঠিন; সুতরাং হীরার গুঁড়া ব্যতিরেকে আর কিছুতেই উহা পরিষ্কৃত করিতে পারা যায় না।
বিশুদ্ধ হীরক অতি পরিষ্কৃত জলের ন্যায় নির্ম্মল; সেইরূপ হীরাই অতি সুন্দর ও প্রশংসনীয়। তদ্ভিন্ন রক্ত, পীত, নীল, হরিত প্রভৃতি নানা বর্ণেরও হীরা আছে। বর্ণ ও রঙ যত গাঢ় হয়, হীরার মুল্য তত অধিক হয়! কিন্তু বর্ণহীন নির্ম্মল হীরা সর্ব্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট ও মহামূল্য। আকার, বর্ণ ও নির্ম্মলতা অনুসারে মূল্যের তারতম্য হয়।
হীরার মুল্য এত অধিক, যে শুনিলে চমৎকার বোধ হয়। পোর্টু গালের রাজার নিকট এক হীরা আছে তাহার মুল্য ৫৬৪৪৮০০০ পাঁচ কেটি চৌষট্টি লক্ষ আট চল্লিশ সহস্র টাকা নির্দ্দিষ্ট আছে। আমাদিগের দেশে কোহিনুর নামে এক উৎকৃষ্ট হীরা ছিল। সচরাচর সকলে কহে তাহার মূল্য ৩৫০০০০০০ তিন কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা। এক্ষণে এই মহামূল্য হীরা ইংলণ্ডে আছে।
বিবেচনা করিয়া দেখিলে হীরা অতি অকিঞ্চিৎকর পদার্থ; ঔজ্জ্বল্য ব্যতিরিক্ত ইহার আর কোন গুণ নাই। কাচ কাট বই আর কোন বিশেষ উপকারে আইসে না। অতএব, এরূপ এক খণ্ড প্রস্তর গৃহে রাখিবার নিমিত্ত, অনর্থ এত অর্থ ব্যয় করা কেবল মনের অহঙ্কার দেখান। মুঢ়তা প্রকাশ মাত্র।
ইহা অত্যন্ত আশ্চর্য্যের বিষয়, যে, এই মহামূল্য মণি ও কয়লা দুই এক পদার্থ। কিছু দিন হইল, ডেপ্রে লামক এক ফরাসিদেশীয় পণ্ডিত, অনেক যত্ন পরিশ্রম ও অনুসন্ধানের পর, কয়লাতে হীরা প্রস্তুত করিয়াছেন। পূর্ব্বে কেহ কথন হীরা গলাইতে পারে নাই; কিন্তু তিনি বিদ্যাবলে ও বুদ্ধিকৌশলে তাহাতে কৃতকার্য্য হইয়াছেন।