নানা বর্ণের বস্তু অবলোকন করিলে নয়নের যে রূপ প্রীতি জন্মে, সর্ব্বদা এক বর্ণের বস্তু দেখিলে সে রূপ হয় না, বরং বিরক্তিই জন্মে। এই নিমিত্ত জগদীশ্বর জগতের যাবর্তীয় পদার্থ এক বর্ণের না করিয়া ননা বর্ণের করিয়াছেন। সকল বর্ণ অপেক্ষা হরিত বর্ণ অধিক মনোরম ও অধিক ক্ষণ দেখিতে পারা যায়; এজনা জগতে অনা অন্য বর্ণের অপেক্ষা হরিত বর্ণের বস্তুই অধিক।
কি স্বাভাবিক, কি কৃত্রিম, উভয়বিধ পদার্থেই নানা প্রকার বর্ণ দেখিতে পাওয়া যায়। কিন্তু যেখানে যত বর্ণ আছে, সকলই তিনটী মাত্র মূল বর্ণ হইতে উৎপন্ন; সেই তিন মূল বর্ণ এই; নীল, পীত, লোহিত এই তিন মুলীভূত বর্ণকে যত ভিন্ন ভিন্ন প্রকারে মিশ্রিত করা যায় তত প্রকার বর্ণ উৎপন্ন হয়। ঐ সকল উৎপন্ন বর্ণকে মিশ্র বর্ণ কহে। মিশ্র বর্ণের মধ্যে হরিত, পাটল, ধূমল এই তিনটী প্রধান। নীল ও পীত এই দুই মূলবর্ণ মিশ্রিত করিলে হরিত বর্ণ উৎপ্রশ্ন হয়। পীত ও লোহিত এই দুই মিশ্রিত করিলে পাটল বর্ণ হয়। নীল ও লোহিত এই দুই বর্ণের মিলনে ধূমল বর্ণ হয়। তদ্ভিন্ন কপিনধূসর, পিঙ্গল ইত্যাদি নানা মিশ্র বর্ণ আছে। সে সকলও ঐ তিন মুলীভূত বর্ণের মিশ্রণে উৎপন্ন হয়।
সর্ব্ব বর্ণের অভাব, অর্থাৎ সেখানে কোন বর্ণ নাই সেই শুক্ল বর্ণ। আর নিরবচ্ছিন্ন অন্ধকারই কৃষ্ণ বর্ণ। ফলতঃ শুক্ল ও কৃষ্ণ বর্ণ রঙ্গে পরিগণিত নহে। কিন্তু জগতে শুক্ল ও কৃষ্ণ বস্তু অনেক দেখিতে পাওয়া যায়। বরফ গু কার্পাসসূত্রনির্ম্মিত ধৌত বস্ত্র শুক্লের উত্তম উদাহরণ স্থল। রাত্রিকালীন প্রগাঢ় অন্ধকার কৃষ্ণ বর্ণের উত্তম দৃষ্টান্ত।
রামধনু ও ময়ূর পুচ্ছে এক কালে নানা বর্ণ দেখিতে পাওয়া যায়। কখন কখন গগনমণ্ডলে ধনুকের মত নানা বর্ণের অভি সুন্দর যে বস্তু দেখিতে পাওয়া যায়, তাহাকে লোকে রামধনু ও ইন্দ্রধনু বলে। কিন্তু সে কেবল কম্পন মাত্র। উহা কাহারও ধনুক নহে। ধনুকের মত দেখায় এই নিমিত্ত লোকে ধনুক কহে। উহা আর কিছুই নয়, কেবল বৃষ্টিকালীন জলবিন্দু সমূহে সুর্যের কিরণ পড়িয়া ঐরূপ নানা বর্ণের পরম সুন্দর ধনুকের আকার উৎপন্ন হয়। রামধনুকে তিন মুলবর্ণ ও চারি মিশ্র বর্ণ, সমুদায়ে সাত বর্ণ থাকে। ধনুকের উপরি ভাগ হইতে আরম্ভ করিয়া যথা ক্রমে লোহিত, পাটল, পীত, হরিত, নীল, ধূমল, বায়লেট এই সকল বর্ণ শোভা পায়।