ষোড়শী – ১.৪

চতুর্থ দৃশ্য

নাটমন্দির

[গড়চণ্ডীর মন্দির ও সংলগ্ন প্রশস্ত অলিন্দ। সম্মুখে দীর্ঘ প্রাকারবেষ্টিত বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গণ। প্রাঙ্গণে নাটমন্দিরের কিয়দংশ দেখা যাইতেছে। মন্দিরের দ্বার উন্মুক্ত। দক্ষিণদিকে প্রাঙ্গণে প্রবেশ করিবার পথ। সকালে কাঁচা রোদের আলো চারিদিকে পড়িয়াছে; মন্দিরের অলিন্দে ও প্রাঙ্গণে উপস্থিত জনার্দন রায়, শিরোমণি ঠাকুর, নির্মল বসু, ষোড়শী, হৈম এবং আরও কয়েকজন নরনারী]

শিরোমণি। (ষোড়শীকে) আজ হৈমবতী তাঁর পুত্রের কল্যাণে যে পূজা দিতেছেন তাতে তোমার কোন অধিকার থাকবে না, তাঁর এই সঙ্কল্প তিনি আমাদের জানিয়েছেন। তাঁর আশঙ্কা তোমাকে দিয়ে তাঁর কার্য সুসিদ্ধ হবে না।

ষোড়শী। (পাণ্ডুর-মুখে) বেশ, তাঁর কাজ যাতে সুসিদ্ধ হয় তিনি তাই করুন।

শিরোমণি। কেবল এইটুকুই ত নয়! আমরা গ্রামস্থ ভদ্রমণ্ডলী আজ স্থির-সিদ্ধান্তে উপস্থিত হয়েচি যে, দেবীর কাজ আর তোমাকে দিয়ে হবে না। মায়ের ভৈরবী তোমাকে রাখলে আর চলবে না। কে আছ, একবার তারাদাস ঠাকুরকে ডাক ত।

[একজন ডাকিতে গেল

ষোড়শী। কেন চলবে না?

জনৈক ব্যক্তি। সে তোমার বাবার মুখেই শুনতে পাবে।

জনার্দন। আগামী চৈত্রসংক্রান্তিতে নতুন ভৈরবীর অভিষেক হবে, আমরা স্থির করেছি।

[তারাদাস একটি দশ বছরের মেয়ে সঙ্গে করিয়া প্রবেশ করিল]

হৈম। (তারাদাসের দিকে চাহিয়া) যা সমস্ত শুনচি বাবা, তাতে কি ওঁর কথাই সত্যি বলে মেনে নিতে হবে?

জনার্দন। নয়ই বা কেন শুনি?

হৈম। (ছোট মেয়েটিকে দেখাইয়া) ঐটিকে যখন উনি যোগাড় করে এনেছেন তখন মিথ্যে বলা কি ওঁর এতই অসম্ভব? তা ছাড়া সত্যি মিথ্যে ত যাচাই করতে হয় বাবা, ও ত একতরফা রায় দেওয়া চলে না।

[সকলেই বিস্মিত হইল]

শিরোমণি। (স্মিতহাস্যে) বেটী কৌঁসুলীর গিন্নী কিনা, তাই জেরা ধরেচে! আচ্ছা, আমি দিচ্চি থামিয়ে, (হৈমকে) এটা দেবীর মন্দির—পীঠস্থান! বলি এটা ত মানিস?

হৈম। (ঘাড় নাড়িয়া) মানি বৈ কি!

শিরোমণি। তা যদি হয়, তা হলে তারাদাস বামুনের ছেলে হয়ে কি দেবমন্দিরে দাঁড়িয়ে মিছে কথা কইচে পাগলী? (প্রবল হাস্য করিলেন)

হৈম। আপনি নিজেও ত তাই শিরোমণিমশাই! অথচ এই দেবমন্দিরে দাঁড়িয়েই ত মিছে কথার বৃষ্টি করে গেলেন। আমি ত একবারও বলিনি ওঁকে দিয়ে কাজ করালে আমার সিদ্ধ হবে না।

[শিরোমণি হতবুদ্ধির মত হইলেন]

জনার্দন। (কুপিত হইয়া তীক্ষ্ণকণ্ঠে) বলনি কি রকম?

হৈম। না বাবা বলিনি। বলা দূরে থাক, ও-কথা আমি মনেও করিনে। বরঞ্চ ওঁকে দিয়েই আমি পূজো করাব, এতে ছেলের আমার কল্যাণই হোক, আর অকল্যাণই হোক। (ষোড়শীর প্রতি) চলুন মন্দিরের মধ্যে—আমাদের সময় বয়ে যাচ্চে।

জনার্দন। (ধৈর্য হারাইয়া অকস্মাৎ উঠিয়া দাঁড়াইয়া ভীষণ-কণ্ঠে) কখখনো না, আমি বেঁচে থাকতে ওকে কিছুতেই মন্দিরে ঢুকতে দেব না। তারাদাস, বল ত ওর মায়ের কথাটা! একবার শুনুক সবাই।

শিরোমণি। (সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়াইয়া উঠিয়া) না তারাদাস থাক। ওর কথা আপনার মেয়ে হয়ত বিশ্বাস করবে না রায়মশায়। ও-ই বলুক। চণ্ডীর দিকে মুখ করে ও-ই নিজের মায়ের কথা নিজে বলে যাক। কি বল চাটুয্যে? তুমি কি বল হে যোগেন ভট্‌চায? কেমন? ও-ই নিজে বলুক।

[ষোড়শীর মুখ বিবর্ণ হইয়া গেল]

হৈম। আপনারা ওঁর বিচার করতে চান নিজেরাই করুন, কিন্তু ওঁর মায়ের কথা ওঁর নিজের মুখ দিয়ে কবুল করিয়ে নেবেন, এতবড় অন্যায় আমি কোনমতে হতে দেব না। (ষোড়শীর প্রতি) চলুন আপনি আমার সঙ্গে মন্দিরের মধ্যে—

ষোড়শী। না বোন, আমি পূজো করিনে, যিনি এ কাজ নিত্য করেন তিনিই করুন, আমি কেবল এইখানে দাঁড়িয়ে তোমার ছেলেকে আশীর্বাদ করি, সে যেন দীর্ঘজীবী হয়, নীরোগ হয়, মানুষ হয়! (পূজারীর প্রতি) কিন্তু—ছোট্‌ঠাকুরমশাই, তুমি ইতস্ততঃ করচ কিসের জন্যে? আমার আদেশ রইল দেবীর পূজা যথারীতি সেরে তুমি নিজের প্রাপ্য নিয়ো। বাকী মন্দিরের ভাঁড়ারে বন্ধ করে চাবি আমাকে পাঠিয়ে দিয়ো। (হৈমর প্রতি) আমি আবার আশীর্বাদ করে যাচ্চি, এতেই তোমার ছেলের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ হবে।

[ষোড়শী প্রাঙ্গণ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া গেল এবং পুরোহিত পূজার জন্য মন্দিরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করিলেন]

জনার্দন। (নির্মল ও হৈমর প্রতি) যাও মা তোমরাও পূজারী ঠাকুরের সঙ্গে যাও—পূজোটি যাতে সুসম্পন্ন হয় দেখো গে।

[নির্মল ও হৈম মন্দিরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করিলেন]

জনার্দন। যাক বাঁচা গেছে শিরোমণিমশায়, ষোড়শী আপনিই চলে গেল। ছুঁড়ি জিদ করে যে আমার নাতির মানস-পূজাটি পণ্ড করে দিলে না এই ঢের।

শিরোমণি। এ যে হতেই হবে ভায়া, মা মহামায়ার মায়া কি কেউ রোধ করতে পারে? এ যে ওঁরই ইচ্ছে। (এই বলিয়া তিনি যুক্তকরে মন্দিরের উদ্দেশে প্রণাম করিলেন)

যোগেন ভট্‌চায। (গলা বাড়াইয়া দেখিয়া) অ্যাঁ, এ যে স্বয়ং হুজুর আসছেন।

[সকলেই ত্রস্ত এবং চকিত হইয়া উঠিল, জীবানন্দ ও তাঁহার পশ্চাতে কয়েকজন পাইক ও ভৃত্য প্রভৃতি প্রবেশ করিল]

শিরোমণি ও জনার্দন। আসুন, আসুন, আসুন।

[কেহ নমস্কার করিল, অনেকেই প্রণাম করিল]

জনার্দন। আমার পরম সৌভাগ্য যে আপনি এসেছেন। আজ আমার দৌহিত্রের কল্যাণে মায়ের পূজা দেওয়া হচ্চে।

জীবানন্দ। বটে? তাই বুঝি বাইরে এত জন-সমাগম?

[জনার্দন সবিনয়ে মুখ নত করিলেন]

শিরোমণি। হুজুরের দেহটি ভাল আছে?

জীবানন্দ। দেহ? (হাসিয়া) হাঁ, ভালই আছে। তাই ত আজ হঠাৎ বেরিয়ে পড়লাম। দেখি, বহুলোকে ভিড় করে এইদিকে আসচে। সঙ্গ নিলাম। অদৃষ্ট প্রসন্ন ছিল, দেবতা ব্রাহ্মণ এবং সাধু-সঙ্গ তিনটেই বরাতে জুটে গেল। কিন্তু রায়মশায়কে জানি, আপনাকে ত বেশ চিনতে পারলাম না ঠাকুর?

জনার্দন। ইনি সর্বেশ্বর শিরোমণি। প্রাচীন নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ। গ্রামের মাথা বললেই হয়।

জীবানন্দ। বটে? বেশ, বেশ, বড় আনন্দ লাভ করলাম। তা এইখানেই একটু বসা যাক না কেন।

[বসিতে উদ্যত হইলে সকলেই ব্যস্ত হইয়া উঠিল]

শিরোমণি। (চিৎকার করিয়া) আসন, আসন, বসবার একটা আসন নিয়ে এস কেউ—

জীবানন্দ। ব্যস্ত হবেন না শিরোমণিমশাই, আমি অতিশয় বিনয়ী লোক, সময়বিশেষে রাস্তায় শুয়ে পড়তেও অভিমান বোধ করিনে—এ ত ঠাকুরবাড়ি। বেশ বসা যাবে।

[জীবানন্দ উপবেশন করিলেন]

জনার্দন। একটা গুরুতর কার্যোপলক্ষে আমরা সবাই আপনার কাছে যাব স্থির করেছিলাম, শুধু আপনি পীড়িত মনে করেই যেতে পারিনি।

জীবানন্দ। গুরুতর কার্যোপলক্ষে?

শিরোমণি। হাঁ হুজুর, গুরুতর বৈ কি। ষোড়শী ভৈরবীকে আমরা কেউ চাইনে।

জীবানন্দ। চান না?

শিরোমণি। না, হুজুর।

জীবানন্দ। একটুখানি জনশ্রুতি আমার কানেতেও পৌঁছেচে। ভৈরবীর বিরুদ্ধে আপনাদের নালিশটা কি শুনি?

[সকলেই নীরব রহিল]

জীবানন্দ। বলতে কি আপনাদের করুণা বোধ হচ্ছে?

জনার্দন। হুজুর সর্বজ্ঞ, আমাদের অভিযোগ—

জীবানন্দ। কি অভিযোগ?

জনার্দন। আমরা গ্রামস্থ ষোল-আনা ইতর-ভদ্র একত্র হয়ে—

জীবানন্দ। (একটু হাসিল) তা দেখতে পাচ্ছি। (অঙ্গুলি-নির্দেশ করিয়া) ওইটি কি সেই ভৈরবীর বাপ তারাদাস ঠাকুর নয়?

[তারাদাস সাড়া দিল না, মাটিতে দৃষ্টি-নিবদ্ধ করিল]

শিরোমণি। (সবিনয়ে) রাজার কাছে প্রজা সন্তান-তুল্য, তা সে দোষ করলেও সন্তান, না করলেও সন্তান। আর কথাটা একরকম ওরই। ওর কন্যা ষোড়শীকে আমরা নিশ্চয় স্থির করেছি, তাকে আর মহাদেবীর ভৈরবী রাখা যেতে পারে না। আমার নিবেদন, হুজুর তাকে সেবায়েতের কাজ থেকে অব্যাহতি দেবার আদেশ করুন।

জীবানন্দ। (চকিত) কেন? তার অপরাধ?

দু’তিনজন ব্যক্তি। (সমস্বরে) অপরাধ অতিশয় গুরুতর।

জীবানন্দ। তিনি হঠাৎ এমন কি ভয়ানক দোষ করেছেন রায়মশায়, যার জন্যে তাঁকে তাড়ানো আবশ্যক!

[জনার্দন শিরোমণিকে বলিতে চোখের ইঙ্গিত করিল]

জীবানন্দ। না, না, উনি অনেক পরিশ্রম করেছেন, বুড়ো মানুষকে আর কষ্ট দিয়ে কাজ নেই, ব্যাপারটা আপনিই ব্যক্ত করুন।

জনার্দন। (চোখে ও মুখে দ্বিধা ও সঙ্কোচের ভাব আনিয়া) ব্রাহ্মণ-কন্যা—এ আদেশ আমাকে করবেন না।

জীবানন্দ। গো-ব্রাহ্মণে আপনার অচলা ভক্তির কথা এদিকে কারও অবিদিত নেই। কিন্তু এতগুলি ইতর-ভদ্রকে নিয়ে আপনি নিজে যখন উঠেপড়ে লেগেছেন, তখন ব্যাপার যে অতিশয় গুরুতর তা আমার বিশ্বাস হয়েছে। কিন্তু সেটা আপনার মুখ থেকেই শুনতে চাই।

জনার্দন। (শিরোমণির প্রতি ক্রুদ্ধদৃষ্টি হানিয়া) হুজুর যখন নিজে শুনতে চাচ্ছেন তখন আর ভয় কি ঠাকুর? নির্ভয়ে জানিয়ে দিন না।

শিরোমণি। (ব্যস্ত হইয়া) সত্যি কথায় ভয় কিসের জনার্দন? তারাদাসের মেয়েকে আর আমরা কেউ রাখব না হুজুর! তার স্বভাব-চরিত্র ভারী মন্দ হয়ে গেছে—এই আপনাকে আমরা জানিয়ে দিচ্ছি।

[জীবানন্দের পরিহাস-দীপ্ত প্রফুল্ল মুখ অকস্মাৎ গম্ভীর ও কঠিন হইয়া উঠিল]

জীবানন্দ। তাঁর স্বভাব-চরিত্র মন্দ হবার খবর আপনারা নিশ্চয় জেনেছেন?

[সকলে ঘাড় নাড়িল]

জীবানন্দ। তাই সুবিচারের আশায় বেছে বেছে একেবারে ভীষ্মদেবের শরণাপন্ন হয়েছেন রায়মশায়?

শিরোমণি। আপনি দেশের রাজা—সুবিচার বলুন, অবিচার বলুন, আপনাকেই করতে হবে। আমাদেরও তাই মাথা পেতে নিতে হবে। সমস্ত চণ্ডীগড় ত আপনারই।

জীবানন্দ। (মৃদু হাসিয়া) দেখুন শিরোমণিমশায়, অতি-বিনয়ে আপনাদেরও খুব হেঁট হয়ে কাজ নেই, অতি-গৌরবে আমাকেও আকাশে তোলবার প্রয়োজন নেই। আমি শুধু জানতে চাই, এ অভিযোগ কি সত্য?

[অনেকেই উত্তেজনায় চঞ্চল হইয়া উঠিল]

শিরোমণি। অভিযোগ? সত্য কিনা!—আচ্ছা, আমরা না হয় পর, কিন্তু তারাদাস, তুমিই বল ত। রাজদ্বার, যথাধর্ম বলো—

[তারাদাস একবার পাংশু একবার রাঙ্গা হইয়া উঠিতে লাগিল। জনার্দনের ক্রুদ্ধ একাগ্র দৃষ্টি খোঁচা মারিয়া যেন তাহাকে বারংবার তাড়না করিতে লাগিল। সে একবার ঢোঁক গিলিয়া একবার কণ্ঠের জড়িমা সাফ করিয়া অবশেষে মরিয়ার মত বলিয়া উঠিল]

তারাদাস। হুজুর—

জীবানন্দ। (হাত তুলিয়া তাহাকে থামাইয়া দিয়া) ওর মুখ থেকে ওর নিজের মেয়ের কলঙ্কের কথা আমি যথাধর্ম বললেও শুনব না। বরঞ্চ আপনাদের কেউ পারেন ত যথাধর্ম বলুন।

[ভৃত্য অন্তরালে ছিল, সে টম্‌ব্লার ভরিয়া হুইস্কি সোডা প্রভুর হাতে আনিয়া দিল। তিনি এক নিশ্বাসে পান করিয়া বেয়ারার হাতে ফিরাইয়া দিলেন]

জীবানন্দ। আঃ—বাঁচলাম। আপনাদের অজস্র বাক্য-সুধা পান করে তেষ্টায় বুক পর্যন্ত কাঠ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু চুপচাপ যে! কি হলো আপনাদের যথাধর্মের?

[শিরোমণি নাকে কাপড় দিয়াছিলেন]

জীবানন্দ। (সহাস্যে) শিরোমণিমশায় কি ঘ্রাণে অর্ধভোজনের কাজটা সেরে নিলেন নাকি?

[অনেকেই হাসিয়া মুখ ফিরাইল]

শিরোমণি। (হতবুদ্ধি হইয়া) এই যে বলি হুজুর। আমি যথাধর্মই বলব।

জীবানন্দ। (ঘাড় নাড়িয়া) সম্ভব বটে। আপনি শাস্ত্রজ্ঞ প্রবীণ ব্রাহ্মণ, কিন্তু একজন স্ত্রীলোকের নষ্ট-চরিত্রের কাহিনী তার অসাক্ষাতে বলার মধ্যে আপনার যথাটা যদিই বা থাকে, ধর্মটা থাকবে কি? আমার নিজের কোন বিশেষ আপত্তি নেই—ধর্মাধর্মের বালাই আমার বহুদিন ঘুচে গেছে—তবু আমি বলি, ওতে কাজ নেই। বরঞ্চ আমি যা জিজ্ঞাসা করি তার জবাব দিন। বর্তমান ভৈরবীকে আপনারা তাড়াতে চান—এই না?

সকলে। (মাথা নাড়িয়া) হাঁ, হাঁ।

জীবানন্দ। এঁকে নিয়ে আর সুবিধা হচ্ছে না?

জনার্দন। (প্রতিবাদের ভঙ্গীতে মাথা তুলিয়া) সুবিধে-অসুবিধে কি হুজুর, গ্রামের ভালর জন্যেই প্রয়োজন।

জীবানন্দ। (হাসিয়া ফেলিয়া) অর্থাৎ গ্রামের ভালমন্দের আলোচনা না তুলেও এটা ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, আপনার ভালমন্দ কিছু একটা আছেই। তাড়াবার আমার ক্ষমতা আছে কিনা জানিনে, কিন্তু আপত্তি বিশেষ নেই। কিন্তু আর কোন একটা অজুহাত তৈরি করা যায় না? দেখুন না চেষ্টা করে। বরঞ্চ আমাদের এককড়িটিকেও না হয় সঙ্গে নিন, এ বিষয়ে তার বেশ একটু হাতযশ আছে।

[সকলে অবাক হইয়া রহিল]

জীবানন্দ। এঁদের সতীপনার কাহিনী অত্যন্ত প্রাচীন এবং প্রসিদ্ধ; সুতরাং তাকে আর নাড়াচাড়া করে কাজ নেই। ভৈরবী থাকলেই ভৈরব এসে জোটে এবং ভৈরবদেরও ভৈরবী নইলে চলে না, এ অতি সনাতন প্রথা—সহজে টলানো যাবে না। দেশসুদ্ধ ভক্তের দল চটে যাবে, হয়ত বা দেবী নিজেও খুশী হবেন না—একটা হাঙ্গামা বাধবে।মাতঙ্গী ভৈরবীর গোটা-পাঁচেক ভৈরব ছিল, এবং তাঁর পূর্বে যিনি ছিলেন তাঁর নাকি হাতে গোনা যেত না। কি বলেন, শিরোমণিমশাই, আপনি ত এ অঞ্চলের প্রাচীন ব্যক্তি, জানেন ত সব?

শিরোমণি। (শুষ্কমুখে জনান্তিকে) কি জানি, শুনেছি নাকি?

[প্রফুল্ল প্রবেশ করিল, তার হাতে ইংরিজি-বাংলা কয়েকখানা সংবাদপত্র ও কতকগুলো খোলা চিঠিপত্র]

জীবানন্দ। কিহে প্রফুল্ল, এখানেও ডাকঘর আছে নাকি? আঃ—কবে এইগুলো সব উঠে যাবে?

প্রফুল্ল। (ঘাড় নাড়িয়া) সে ঠিক। গেলে আপনার সুবিধে হতো। কিন্তু সে যখন হয়নি তখন এগুলো দেখবার কি এখন সময় হবে? অত্যন্ত জরুরি।

জীবানন্দ। তা বুঝেছি, নইলে এখানে আনবে কেন? কিন্তু দেখবার সময় আমার এখনও হবে না, অন্য সময়েও হবে না। কিন্তু ব্যাপারটা বাইরে থেকেই উপলব্ধি হচ্ছে। ওই যে হীরালাল-মোহনলালের দোকানের ছাপ। পত্রখানি তাঁর উকিলের, না একেবারে আদালতের হে? ও খামখানা ত দেখচি সলোমন সাহেবের। বাবা, বিলিতি সুধার গন্ধ যেন কাগজ ফুঁড়ে বার হচ্চে। কি বলেন সাহেব? ডিক্রি জারি করবেন, না এই রাজবপুখানি নিয়ে টানা-হেঁচড়া করবেন—জানাচ্চেন? আঃ—সেকালের ব্রাহ্মণ্যতেজ যদি কিছু বাকী থাকত ত এই ইহুদি ব্যাটাকে একেবারে ভস্ম করে দিতাম। মদের দেনা আর শুধতে হতো না।

প্রফুল্ল। (ব্যাকুল হইয়া) কি বলচেন দাদা? থাক, থাক, আর একসময়ে হবে। (ফিরিতে উদ্যত হইল)

জীবানন্দ। (সহাস্যে) আরে লজ্জা কি ভায়া, এঁরা সব আপনার লোক, জ্ঞাতগোষ্ঠী, এমন কি মণিমাণিক্যের এপিঠ-ওপিঠ বললেও অত্যুক্তি হয় না! তা ছাড়া তোমার দাদাটি যে কস্তুরী-মৃগ; সুগন্ধ আর কতকাল চেপে রাখবে ভাই? প্রফুল্ল, রাগ করো না ভায়া, আপনার বলতে আর কাউকে বড় বাকী রাখিনি, কিন্তু এই চল্লিশটা বছরের অভ্যাস ছাড়তে পারব বলেও ভরসা নেই, তার চেয়ে বরঞ্চ নোট-টোট জাল করতে পারে এমন যদি কাউকে যোগাড় করে আনতে পারতে হে—

প্রফুল্ল। (অত্যন্ত বিরক্ত হইয়াও হাসিয়া ফেলিয়া) দেখুন, সবাই আপনার কথা বুঝবে না। সত্য ভেবে যদি কেউ—

জীবানন্দ। (গম্ভীর হইয়া) সন্ধান করে নিয়ে আসেন? তা হলে ত বেঁচে যাই প্রফুল্ল। রায়মশায়, আপনি ত শুনি অতি বিচক্ষণ ব্যক্তি, আপনার জানাশুনা কি এমন কেউ—

জনার্দন। (ম্লানমুখে উঠিয়া) বেলা হলো যদি অনুমতি করেন ত—
জীবানন্দ। বসুন, বসুন, নইলে প্রফুল্লর জাঁক বেড়ে যাবে। তা ছাড়া ভৈরবীর কথাটা শেষ হয়ে যাক। কিন্তু আমি যাও বললেই কি সে যাবে?

জনার্দন। সে ভার আমাদের।

জীবানন্দ। কিন্তু আর কাউকে ত বাহাল করা চাই। ও ত খালি থাকতে পারে না।

অনেকে। সে ভারও আমাদের।

জীবানন্দ। যাক বাঁচা গেল, তবে সে যাবেই। এতগুলো মানুষের বিশ্বাসের ভার একা ভৈরবী কেন, স্বয়ং মা-চণ্ডীও সামলাতে পারেন না। আপনাদের লাভ-লোকসান আপনারাই জানেন, কিন্তু আমার এমন অবস্থা যে, টাকা পেলে আমার কিছুতেই আপত্তি নেই। নতুন বন্দোবস্তে আমার কিছু পাওয়া চাই। ভালো কথা, কেউ দেখ্‌ ত রে এককড়ি আছে না গেছে? কিন্তু গলাটা এদিকে যে মরুভূমি হয়ে গেল।

বেয়ারা। (প্রবেশ করিয়া প্রভুর ব্যগ্র-ব্যাকুল হস্তে পূর্ণপাত্র দিয়া) তিনি রান্নাবাড়ার ঘরগুলো দেখচেন।

জীবানন্দ। এর মধ্যেই? ডাক্‌ তাকে। (মদ্যপান)

[ইহার পর হইতে পূজার্থীরা মন্দিরে প্রবেশ করিতে লাগিল ও পূজা শেষ করিয়া বাহির হইয়া যাইতে লাগিল—তাদের সংখ্যা ক্রমশই বাড়িতে লাগিল। এককড়ি প্রবেশ করিল]

জীবানন্দ। আজ যে ভৈরবীকে তলব করেছিলাম, কেউ তাঁকে খবর দিয়েছিল?

এককড়ি। আমি নিজে গিয়েছিলাম।

জীবানন্দ। তিনি এসেছিলেন?

এককড়ি। আজ্ঞে না।

জীবানন্দ। না কেন? (এককড়ি অধোমুখে নীরব) তিনি কখন আসবেন, জানিয়েছেন?

এককড়ি। (তেমনি অধোমুখে) এত লোকের সামনে আমি সে কথা হুজুরে পেশ করতে পারব না।

জীবানন্দ। এককড়ি তোমার গোমস্তাগিরি কায়দাটা একটু ছাড়। তিনি আসবেন না,—না?

এককড়ি। না।

জীবানন্দ। কেন?

এককড়ি। তিনি আসতে পারবেন না। তিনি বললেন, তোমার হুজুরকে বলো এককড়ি, তাঁর বিচার করবার মত বিদ্যে-বুদ্ধি থাকে ত নিজের প্রজাদের করুন গে—আমার বিচার করবার জন্যে আদালত খোলা আছে।

জীবানন্দ। (অন্ধকার-মুখে) হুঁ। আচ্ছা তুমি যাও।

[এককড়ির প্রস্থান

জীবানন্দ। প্রফুল্ল, সেই যে চিনির কোম্পানির সঙ্গে হাজার বিঘে জমি বিক্রির কথা হয়েছিল, তার দলিল লেখা হয়েছে?

প্রফুল্ল। আজ্ঞে হয়েছে।

জীবানন্দ। এক্ষুণি তুমি গিয়ে সেটা পাকাপাকি কর গে। লিখে দাও জমি তারা পাবে।

প্রফুল্ল। তাই হবে।

[পূজার্থী ও পূজার্থিনীরা যাইতেছে আসিতেছে]

জীবানন্দ। আজ যে পূজার বড় ভিড় দেখছি। না, রোজই এইরকম?

জনার্দন। আজকের একটু বিশেষ আয়োজন ত আছেই, তা ছাড়া এই চড়কের সময়টায় কিছুদিন ধরে এমনিই হয়। লোকজনের ভিড় এখন বাড়তেই থাকবে।

জীবানন্দ। তাই নাকি? বেলা হলো এখন তা হলে আসি। (হাসিয়া) একটা মজা দেখেছেন রায়মশায়, চণ্ডীগড়ের লোকগুলো প্রায়ই ভুলে যায় যে, জমিদার এখন কালীমোহন নয়—জীবানন্দ চৌধুরী। অনেক প্রভেদ, না?

[জনার্দন কি যে জবাব দিবে ভাবিয়া পাইল না। শুধু তাঁহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল]

জীবানন্দ। এখানে বীজগাঁ’র প্রজা নয় এমন একটা প্রাণীও নেই। ঠিক না শিরোমণিমশায়?

শিরোমণি। তাতে আর সন্দেহ কি হুজুর!

জীবানন্দ। না, আমার সন্দেহ নেই, তবে আর কারও না সন্দেহ থাকে। আচ্ছা, নমস্কার শিরোমণিমশায়, চললাম। (হাসিয়া) কিন্তু ভৈরবী-বিদায়ের পালাটা শেষ করা চাই। প্রফুল্ল, যাওয়া যাক।

[প্রস্থান

শিরোমণি। (জমিদার সত্যই গেল কিনা উঁকি মারিয়া দেখিয়া) জনার্দন, কিরূপ মনে হয় ভায়া?

জনার্দন। মনে ত অনেক কিছুই হয়।

শিরোমণি। মহাপাপিষ্ঠ—লজ্জা-শরম আদৌ নেই।

জনার্দন। (গম্ভীরমুখে) না।

শিরোমণি। ভারী দুর্মুখ। মানীর মান-মর্যাদার জ্ঞান নেই।

জনার্দন। না।

শিরোমণি। কিন্তু দেখলে ভায়া কথার ভঙ্গী? সোজা না বাঁকা, সত্য না মিথ্যা, তামাশা না তিরস্কার, ভেবে পাওয়াই দায়। অর্ধেক কথা ত বোঝাই গেল না, যেন হেঁয়ালি। পাষণ্ড সত্যি বললে, না আমাদের বাঁদর নাচালে ঠিক ঠাহর করা গেল না। জানে সব, কি বল?

[জনার্দন নিরুত্তর]

শিরোমণি। যা ভাবা গিয়েছিল ব্যাটা হাবা-গোবা নয়—বিশেষ সুবিধে হবে না বলেই যেন শঙ্কা হচ্চে, না?

জনার্দন। মায়ের অভিরুচি।

শিরোমণি। তার আর কথা কি! কিন্তু ব্যাপারটা যেন খিচুড়ি পাকিয়ে গেল। না গেল একে ধরা, না গেল তাকে মারা। তোমার কি ভায়া, পয়সার জোর আছে, ছুঁড়ী যক্ষের মত আগলে আছে, গেলে সুমুখের বাগান-বেড়াটা তোমার টানা দিয়ে চৌকোস হতে পারবে।কিন্তু বাঘের গর্তের মুখে ফাঁদ পাততে গিয়ে না শেষে আমি মারা পড়ি।

জনার্দন। আপনি কি ভয় পেয়ে গেলেন নাকি?

শিরোমণি। না না, ভয় নয়,—কিন্তু তুমিও যে খুব ভরসা পেলে তা ত তোমারও মুখ দেখে অনুভব হচ্ছে না। হুজুরটি ত কানকাটা সেপাই—কথাও যেমন হেঁয়ালি, কাজও তেমনি অদ্ভুত। ও যে ধরে গলা টিপে মদ খাইয়ে দেয়নি এই আশ্চর্য। এককড়ির মুখে ভৈরবী ঠাকরুনের হুমকিও ত শুনলে? তোমরা চুপ করে ছিলে, আমিই মেলা কথা কয়েছি—ভাল করিনি। কি জানি, এককোড়ে ব্যাটা ভেতরে ভেতরে সব বলে দেয় নাকি। দুয়ের মাঝখানে পড়ে শেষকালে না বেড়াজালে ধরা পড়ি।

জনার্দন। (উদাস-কণ্ঠে) সকলই চণ্ডীর ইচ্ছে। বেলা হলো, সন্ধ্যের পর একবার আসবেন।

শিরোমণি। তা আসব। কিন্তু ঐ যে আবার এঁরা ফিরে আসচেন হে!

[মন্দির-প্রাঙ্গণের একটা দ্বার দিয়া ষোড়শী ও তাহার পশ্চাতে সাগর ও তাহার সঙ্গী প্রবেশ করিল। অন্য দ্বার দিয়া জীবানন্দ, প্রফুল্ল, ভৃত্য ও কয়েকজন পাইক প্রবেশ করিল]

জীবানন্দ। চলে যাচ্ছিলাম, শুধু তোমাকে আসতে দেখে ফিরে এলাম। এককড়িকে দিয়ে তোমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম এবং তারই মুখে তোমার জবাবও শুনলাম। তোমার বিরুদ্ধে রাজার আদালতে গিয়ে দাঁড়াবার বুদ্ধি আমার নেই, কিন্তু নিজের প্রজাদের শাসনে রাখবার বিদ্যেও জানি। সমস্ত গ্রামের প্রার্থনা-মত তোমার সম্বন্ধে কি আদেশ করেছি শুনেছ?

ষোড়শী। না।

জীবানন্দ। তোমাকে বিদায় করা হয়েছে। নতুন ভৈরবী করে, তাকে মন্দিরের ভার দেওয়া হবে। অভিষেকের দিনও স্থির হয়ে গেছে। তুমি রায়মশায় প্রভৃতির হাতে দেবীর সমস্ত অস্থাবর সম্পত্তি বুঝিয়ে দিয়ে আমার গোমস্তার হাতে সিন্দুকের চাবি দেবে। এ বিষয়ে তোমার কিছু বলবার আছে?

ষোড়শী। আমার বক্তব্যে আপনার কি কিছু প্রয়োজন আছে?

জীবানন্দ। না, নেই। তবে আজ সন্ধ্যার পরে এইখানেই একটা সভা হবে। ইচ্ছে কর ত দশের সামনে তোমার দুঃখ জানাতে পার। ভালো কথা, শুনতে পেলাম আমার বিরুদ্ধে আমার প্রজাদের নাকি তুমি বিদ্রোহী করে তোলবার চেষ্টা করচ?

ষোড়শী। তা জানিনে। তবে আমার নিজের প্রজাদের আপনার উপদ্রব থেকে বাঁচাবার চেষ্টা করছি।

জীবানন্দ। (অধর দংশন করিয়া) পারবে?

ষোড়শী। পারা না পারা মা-চণ্ডীর হাতে।

জীবানন্দ। তারা মরবে।

ষোড়শী। মানুষ অমর নয় সে তারা জানে।

[ক্রোধে ও অপমানে সকলের চোখ-মুখ আরক্ত হইয়া উঠিল। এককড়ি এমন ভাব দেখাইতে লাগিল যে সে কষ্টে আপনাকে সংযত করিয়া রাখিয়াছে]

জীবানন্দ। (একমুহূর্ত স্তব্ধ থাকিয়া) তোমার নিজের প্রজা আজ কেউ নাই। তারা যাঁর প্রজা তিনি নিজে দস্তখত করে দিয়েছেন। তাঁকে কেউ ঠেকাতে পারবে না।

ষোড়শী। (মুখ তুলিয়া) আপনার আর কোন হুকুম আছে? নেই? তা হলে দয়া করে এইবার আমার কথাটা শুনুন।

জীবানন্দ। বল।

ষোড়শী। আজ দেবীর অস্থাবর সম্পত্তির বুঝিয়ে দেবার সময় আমার নেই, এই সন্ধ্যায় মন্দিরের কোথাও সভা-সমিতির স্থানও হবে না। এগুলো এখন বন্ধ রাখতে হবে।

শিরোমণি। (সহসা চিৎকার করিয়া) কখনো না! কিছুতেই নয়! এ-সব চালাকি আমাদের কাছে খাটবে না বলে দিচ্চি—

[জীবানন্দ ছাড়া সকলেই ইহার প্রতিধ্বনি করিয়া উঠিল]

জনার্দন। (উষ্মার সহিত) তোমার সময় এবং মন্দিরের ভেতর জায়গা কেন হবে না শুনি ঠাকরুন?

ষোড়শী। (বিনীত-কণ্ঠে) আপনি ত জানেন রায়মশাই, এখন চড়কের উৎসব। যাত্রীর ভিড়, সন্ন্যাসীর ভিড়, আমারই বা সময় কোথায়, তাদেরই বা সরাই কোথায়?

জনার্দন। (আত্মবিস্মৃত হইয়া সগর্জনে) হতেই হবে! আমি বলচি হতে হবে!

ষোড়শী। (জীবানন্দকে) ঝগড়া করতে আমার ঘৃণা বোধ হয়। তবে ও-সব করবার এখন সুযোগ হবে না, এই কথাটা আপনার অনুচরদের বুঝিয়ে বলে দেবেন। আমার সময় অল্প; আপনাদের কাজ মিটে থাকে ত আমি চললাম।

জীবানন্দ। (তপ্তস্বরে) কিন্তু আমি হুকুম দিয়ে যাচ্ছি, আজই এ-সব হতে হবে এবং হওয়াই চাই।

ষোড়শী। জোর করে?

জীবানন্দ। হাঁ, জোর করে।

ষোড়শী। সুবিধে-অসুবিধে যাই-ই হোক?

জীবানন্দ। হাঁ, সুবিধে-অসুবিধে যাই-ই হোক।

ষোড়শী। (পিছনে চাহিয়া ভিড়ের মধ্যে সাগরকে অঙ্গুলি-সঙ্কেতে আহ্বান করিয়া) সাগর, তোদের সমস্ত ঠিক আছে?

সাগর। (সবিনয়ে) আছে মা, তোমার আশীর্বাদে অভাব কিছুই নেই।

ষোড়শী। বেশ। জমিদারের লোক আজ একটা হাঙ্গামা বাধাতে চায়, কিন্তু আমি তা চাইনে। এই গাজনের সময়টায় রক্তপাত হয় আমার ইচ্ছে নয়, কিন্তু দরকার হলে করতেই হবে। এই লোকগুলোকে তোরা দেখে রাখ্‌, এঁদের কেউ যেন আমার মন্দিরের ত্রিসীমানায় না আসতে পারে। হঠাৎ মারিস্‌ নে—শুধু বার করে দিবি।

[প্রস্থান


© 2024 পুরনো বই