রাশি রাশি

রাশি রাশি (১৮৮১/১৯৫৯)

শ্রীপ্রমথনাথ বিশীর কোনও বইএ পড়েছি, অক্ষয়কুমার দত্ত অহরহ ভাবতেন, ব্রহ্মাণ্ড কি প্রকাণ্ড! শেষ বয়সে তার মাথার অসুখ হয়েছিল, নিরামিষ ছেড়ে আমিষ খেতে শুরু করেছিলেন। প্রকাণ্ড ব্রহ্মাণ্ডের চিন্তাই বোধ হয় তার অসুখের কারণ।

বিপুল, বিশাল, বিরাট, ভূমা, অসীম ইত্যাদি শব্দের একটা মোহিনী শক্তি আছে। অত্যন্ত বৃহতের চিন্তা আমাদের একটু অভিভূত করে, তার উপলব্ধিতে আমরা বিস্ময়াবিষ্ট হই, আনন্দিত হই, কিঞ্চিৎ ভয়ও পাই। অদৃষ্টপূর্ব বিশ্বরূপ দর্শন করে অর্জুন হর্ষিত অর্থাৎ রোমাঞ্চিত হয়েছিলেন, তাঁর মন ভয়ে প্ৰব্যথিত হয়েছিল। আবার কেউ কেউ বিপুলতা থেকে আশ্বাসও পান। ভবভূতি তার জীবদ্দশায় অবজ্ঞাত ছিলেন। মালতীমাধব নাটকের প্রস্তাবনায় এই বলে তিনি নিজেকে সান্ত্বনা দিয়েছেন কাল নিরবধি, পৃথিবীও বিপুলা; কোনও কালে কোনও দেশে এমন লোক থাকতে পারেন যিনি আমার সমানধর্মা এবং এই রচনার গুণগ্রহণে সমর্থ।

.

আকাশ সমুদ্র হিমালয় ইত্যাদির বিশালতা কবিকে ভাবাবিষ্ট করে। দেশ আর কাল নিয়ে দার্শনিকরা চিরকাল মাথা ঘামিয়েছেন, এই দুই বিরাট পদার্থের কি স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে, না শুধুই আমাদের অধ্যাস বা illusion? এখনও তারা এ রহস্যের সমাধান খুঁজে পান নি। বিজ্ঞানীরা সমস্তই মাপতে চান, তাদের মানদণ্ড একদিকে বেড়ে চলেছে, আর একদিকে সূক্ষ্মাদপি সূক্ষ্ম হচ্ছে, আগে যে সংখ্যা পর্যাপ্ত মনে হত এখন তাতে কুলয় না। সেকালেও লোকের ধারণা ছিল যে আকাশে অসংখ্য তারা আছে, কিন্তু শুধু চোখে যা দেখা যায় তার সংখ্যা তিন হাজারের বেশী নয়, লোকে তাই অসংখ্য মনে করত। এখন যন্ত্রের যত উৎকর্য হচ্ছে ততই বেশী তারা দেখা যাচ্ছে, লক্ষ থেকে কোটি, তার পর বহু কোটি।

এক শ বৎসর আগে পাশ্চাত্ত্য দেশের অধিকাংশ শিক্ষিত লোক বাইবেলের উক্তি অনুসারে বিশ্বাস করতেন যে খ্রীষ্টজন্মের প্রায় চার হাজার বৎসর পূর্বে পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছিল। উনিশ শতকের মধ্যভাগে ভূবিজ্ঞানী লায়েল বললেন, পৃথিবীর বয়স কয়েক হাজার নয়, কয়েক কোটি বৎসর। তার পর ডারউইন আর ওআলেস প্রচার করলেন, লক্ষ লক্ষ বৎসর ব্যাপী ক্রমিক পরিবর্তনের ফলে পুরাতন জীব থেকে নব নব জীবের উদ্ভব হয়েছে। তখনকার গোঁড়া খ্রীষ্টানরা (মায় বিলাতের প্রধান মন্ত্রী গ্ল্যাডস্টোন) এই মতের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগলেন, কিন্তু তর্কযুদ্ধে পরাস্ত হলেন। আধুনিক গবেষণায় স্থির হয়েছে, পৃথিবীর বয়স কয়েক কোটি নয়, বহু কোটি বৎসর।

আমাদের শাস্ত্রোক্ত সৃষ্টিতত্ত্বের কালপরিমাণ আরও বিপুল। চতুর্যগ = ৪৩ লক্ষ ২০ হাজার বৎসর। এক মন্বন্তর = ৩০ কোটি ৬৭ লক্ষ ২০ হাজার বৎসর। ব্রহ্মার এক অহোরাত্র = ২৮,৮০০ কোটি বৎসর। ব্রহ্মার আয়ু = ১০,৩৬৮র পর ১২ শূন্য দিলে যত হয় তত বৎসর।

প্রচলিত ধারাপাতে সংখ্যার এই তালিকা দেখা যায়–এক, দশ, শত, সহস্র, অযুত, লক্ষ, নিযুত (million), কোটি, অবুদ, বৃন্দ, খর্ব, নিখর্ব, শঙ্খ (billion), পদ্ম, সাগর, অন্ত্য, মধ্য, পরাধ। বৃন্দএর অন্য নাম অজ। Prof N W Pirie, FRS ১৯৫৪ সালে লিখিত Origin of Life প্রবন্ধে অজ শব্দ প্রয়োগ করেছেন।

পরার্ধ মানে ১এর পিঠে ১৭ শূন্য। ছেলেবেলায় আমরা যে ধারাপাত পড়তুম তাতে পরার্ধের পরেও অনেক সংখ্যা ছিল। তাদের নাম ভুলে গেছি, শুধু শেষের দুটি মনে আছে–পার, অপার। আমাদের যিনি অঙ্ক শেখাতেন তাকে জিজ্ঞাসা করলুম, অপারের পরে কোন্ সংখ্যা? তার বিদ্যা বেশী ছিল না, উত্তর দিলেন, অপার সব চাইতে বড়, তার পরে আর সংখ্যা নেই। আমি বললুম, কেন, অপারের পিঠে তো আরও শূন্য জুড়ে দেওয়া যায়। তিনি বললেন, তাতে তোর লাভটা কি? অপারের বেশী টাকাও তোর হবে না, কইবিচিও হবে না। মাস্টারমশাই রিয়ালিস্ট ছিলেন, শ্রীরামকৃষ্ণ-কথিত পিঁপড়ের মতন। চিনির এক কণায় যদি পেট ভরে তবে বস্তার সন্ধান করা বোকামি।

বিজ্ঞানীরা টাকা গোনবার জন্য সংখ্যা চান না, যেসব বৃহৎ বা সূক্ষ্ম বা রাশি রাশি বস্তু নিয়ে তাদের কারবার, তার পরিমাপের জন্যই সংখ্যা দরকার। লক্ষ, কোটি, মিলিয়ন, বিলিয়ন ইত্যাদিতে এখন কাজ চলে না। তারায় তারায় দূরত্ব মাপা হয় আলোকবর্ষ (প্রায় ৬এর পর ১২ শূন্য মাইল), অথবা parsec (প্রায় ১৯ এর পর ১২ শূন্য মাইল) দিয়ে, অতি সূক্ষ্ম বস্তু মাপা হয় Angstrom unit দিয়ে (১ সেন্টিমিটারের ১০ কোটি ভাগের ১ ভাগ)।

খ্যাতনামা গণিতজ্ঞ দার্শনিক A N Whitehead লিখেছেন-Let us grant that the pursuit of mathematics is a divine madness of the human spirit, a refuge from the goading emergency of contingent happenings। অর্থাৎ ধরা যেতে পারে, গণিতের চর্চা এক রকম দিব্যোন্মাদ, ঝঞ্জাট থেকে নিষ্কৃতি পাবার উপায়। হোআইটহেডের যদি ভারতীয় অলংকার শাস্ত্র পড়া থাকত তা হলে হয়তো লিখতেন–গণিতচর্চায় যে আনন্দ লাভ হয় তা ব্রহ্মস্বাদসহোদর।

যাঁরা খাঁটী গাণিতিক তারা সংখ্যা নির্ধারণ করেই খুশী, তা দিয়ে কি মাপা হবে সে চিন্তা তাদের নেই। Edward Kasner একজন বিখ্যাত মার্কিন গণিতজ্ঞ। খেয়ালের বশে একদিন তিনি একটা সংখ্যা স্থির করলেন–১এর পিঠে ১০০ শূন্য। তাঁর ন বছরের ভাইপোকে বললেন, ওরে, একটা নাম বলতে পারিস? ভাইপো বলল, googol। নামটি গ্রীক লাটিন বা ইংরেজী নয়, ছোট ছেলের স্বচ্ছন্দ বালভাষিত, যেমন হাটটিমাটিমটিম। কিন্তু এই গুগল নাম এখন সর্বস্বীকৃত হয়েছে। কাসনার তার ভাইপোকে আবার বললেন, গুগলের চাইতে ঢের বড় একটা সংখ্যা বলতে পারিস? ভাইপো বলল, পারি, একের পিঠে দেদার শূন্য বসিয়ে যেতে হবে যতক্ষণ না হাতে ব্যথা হয়। কাসনার বললেন, তা হলে তো একটা মূর্খ পালোয়ানের কাছে। আইনস্টাইনকে হেরে যেতে হবে, সংখ্যার নির্ধারণ গায়ের জোরে হতে পারে না। তখন ভাইপো চিন্তা করে বলল, একের পিঠে এক গুগল শূন্য, এর নাম হক googolplex। কাসনার বললেন, তথাস্তু, গাণিতিক সমাজও তাই মেনে নিলেন।

আপনি অঙ্কপাত করে অনায়াসে এক গুগল অর্থাৎ ১এর পর ১০০ শূন্য লিখতে পারেন, লাইনটি লম্বায় চার-পাঁচ ইঞ্চির বেশী হবে না। কিন্তু গুগলপ্লেক্স লেখবার চেষ্টা করবেন না, পাগল হয়ে যাবেন। কাগজে কুলোবে না, ঘরেতেও নয়, পৃথিবীতেও নয়, আকাশের অতিদূরস্থ নক্ষত্র পর্যন্ত শূন্যের পর শূন্য বসিয়ে যেতে হবে।

গন্ধর্ব পুষ্পদন্ত যে মহিম্নস্তব রচনা করেছেন তার একটি শ্লোকে আছে–

সমুদ্র যদি মসীপাত্র হয়, তাতে যদি অসিতগিরিসম স্তূপীকৃত কজ্জল গোলা হয়, সুরতরুর শাখা যদি লেখনী হয়, ধরণী যদি পত্র হয় এবং শারদা যদি সর্বকাল লিখতে থাকেন, তথাপি হে মহেশ, তোমার গুণাবলীর পারে পৌঁছতে পারবেন না। পুষ্পদন্ত যদি আধুনিক গণিতের সংখ্যা জানতেন তা হলে সংক্ষেপে বলতে পারতেন, হে মহেশ, তোমার গুণরাশি গুগলপ্লেক্সের চাইতেও বেশী।

সংখ্যাবিশারদরা অনেক রকম অদ্ভুত হিসাব করেছেন। মানবজাতি যখন প্রথম বলতে শিখল তখন থেকে এখন পর্যন্ত মোট কত কথা বলেছে? শিশুর আধ-আধ কথা প্রেমালাপ গালাগালি রাজনীতিক বক্তৃতা ইত্যাদি সব নিয়ে ১এর পিঠে মোটে ১৬টা শূন্য, গুগলের চাইতে ঢের কম।

নোবেল-পুরস্কৃত এডিংটন হিসাব করেছেন, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যত প্রোটন আছে তার সংখ্যা ১৩৬.২x১এর পর ২৫৬ শূন্য। ইলেকট্রনের সংখ্যাও তাই। অর্থাৎ গুগলের চাইতে বেশী কিন্তু গুগলপ্লেক্সের চাইতে কম।

আমাদের গ্যালাক্সি বা ছায়াপথে কত তারা আছে? জ্যোতিষীরা অনুমান করেন, ৩,০০০ কোটি থেকে ১০,০০০ কোটির মধ্যে, অর্থাৎ ৩এর পর ১০ শূন্য এবং ১এর পর ১১ শূন্যর মধ্যে। গুগলের চাইতে ঢের কম।

দাবা খেলার যত চাল হতে পারে তার সংখ্যা কত? আগে ১এর পর ৫৯ শূন্য বসান। যে সংখ্যা পাবেন তত শূন্য ১এর পর বসান। গুগলের চাইতে বেশী কিন্তু গুগলপ্লেক্সের চাইতে কম।

এইবার অতি ক্ষুদ্র রাশি সম্বন্ধে কিঞ্চিৎ বলে এই প্রবন্ধ শেষ করব। আমাদের শাস্ত্রোক্ত অণু-পরমাণু কি বস্তু তা বোঝা যায় না। সংস্কৃত অভিধানে এসরেণুর অর্থ–ছয় পরমাণুর সমষ্টি, অথবা গবাক্ষচ্ছিদ্রাগত রৌদ্রে দৃশ্যমান চঞ্চল সূক্ষ্ম পদার্থ। জীববিজ্ঞানে কীটের চাইতে কীটাণু ছোট, তার চাইতে জীবাণু বা মাইক্রোব ছোট, তার চাইতে ভাইরস ছোট (অণুবীক্ষণে অদৃশ্য)। রসায়নের অণু আরও ছোট, পরমাণু তার চাইতে ছোট, প্রোটন আরও ছোট, ইলেকট্রন সব চাইতে ছোট।

সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মের উত্তম উদাহরণ হোমিওপ্যাথিক ঔষধ। মাদার টিংচারে যে মূল বস্তু থাকে তার ১০ ভাগের ১ ভাগ থাকে প্রথম ডাইলিউশনে। তৃতীয় ডাইলিউশনে ১,০০০ ভাগের ১ ভাগ! দ্বাদশ ডাইলিউশনে লক্ষ কোটি ভাগের ১ ভাগ। শততম ডাইলিউশনে থাকে ১ গুগলের ১ ভাগ। হোমিওপ্যাথরা বলেন, ডাইলিউশন বৃদ্ধিতে ঔষধের পোটেন্সি বৃদ্ধি হয়। অবিশ্বাসীরা বলেন, ১০০ ডাইলিউশনে পৌঁছবার আগেই এমন অবস্থা হয়। যে এক শিশিতে অণু-প্রমাণ ঔষধও থাকে না। বিশ্বাসী বলেন, তোমার অঙ্কশাস্ত্র যাই বলুক, অণু-প্রমাণ ঔষধও থাকুক বা না থাকুক, স্পষ্ট দেখছি উপকার হয়, অতএব তর্ক না করে খেয়ে যাও, বিশ্বাসেই কৃষ্ণলাভ হয়।

অতি সূক্ষ্মের আর একটি উদাহরণ–ব্যাঙের আধুলির গল্প। ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের কঙ্কাবতীতে তার ভাল বর্ণনা আছে। ব্যাঙ তার বন্ধুকে একটি আধুলি ধার দিয়েছিল। শর্ত এই ছিল যে প্রতি কিস্তিতে অর্ধেক শোধ। করতে হবে। প্রথম কিস্তিতে চার আনা, দ্বিতীয়তে দু আনা, তার পর যথাক্রমে এক আনা, দু পয়সা, এক পয়সা আধা পয়সা ইত্যাদি। ব্যাঙ হিসাব করে দেখল, তার পাওনা কোনও দিন শোধ হবে না, একটু বাকী থাকবেই। সে মনের দুঃখে কাঁদতে লাগল। ব্যাঙ যদি বুদ্ধিমান হত তবে বুঝত যে কয়েক কিস্তি পরেই বাকীর পরিমাণ নগণ্য হয়ে যাবে, অনন্তকাল তাকে অপেক্ষা করতে হবে না।

অন্তরকলন বা differential calculusএর আবিষ্কর্তা লাইবনিৎস সম্বন্ধে একটি গল্প আছে। একদিন তিনি পুশিয়ার রানীকে বললেন, যদি অনুমতি দেন তবে আজ আপনাকে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র infinitesimal রাশির রহস্য বুঝিয়ে দেব। রানী বললেন, আপনাকে বোঝাতে হবে না, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কাকে বলে তা এখানকার এই সভাসদের আচরণ থেকেই আমি টের পাই।

[পরশুরামএর শেষ রচনা–দাঁড়কাগ, ১-৬-১৯৫৯এ লেখা। ১৫-৬এ আর একটি গল্প–জামাইষষ্ঠী–আরম্ভ করেও কোনদিন তা শেষ করেন নি। এর পর প্রায় দশ মাস জীবিত ছিলেন পরশুরাম; কিন্তু তাঁর কুঠার অবনমিত ছিল।

রাজশেখর বসু কিন্তু এই সময়ে পাঁচটি প্রবন্ধ লেখেন। তার কলম থামে মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা আগে–রবীন্দ্রকাব্যবিচার লিখে।

রবীন্দ্ৰশতবর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে, কলকাতা বেতারএর পক্ষে শ্রীঅমল হোমের অনুরোধে এই প্রবন্ধ রচনা আরম্ভ করেন ১৭-৪-১৯৬০এ, তার চিরাচরিত নিয়মে পেনসিলে লিখে; শেষ হয় ২৬ এপ্রিল। (এও তাঁর চিরকালীন অভ্যাস–সব কিছুরই তারিখ লিখে রাখা।) ২৭ এপ্রিল সকালে এর একপাতা ফেআর কপিও করেন। বেলা একটা নাগাদ অকস্মাৎ নিঃশব্দ নিষ্ক্রমণ।

লেখাটা আর হল না–অমল হোমকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু কয়েকমাস পরে কাগজপত্রের মধ্যে এটির আবিষ্কর্তা-রাজশেখরের সব রচনার দিশারী–আমি। রবীন্দ্ৰশতবর্ষে যথাসময়ে এটি কলকাতা বেতারে পঠিত হয়।

এটি পড়ে দশ বৎসর আগে আমার ধারণা হয়েছিল আসন্ন মৃত্যুর আভাস এতে আছে, একটি শৃংখলাবদ্ধ সূচনা মাঝপথে দিশা হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে লিখেছিলুম–এও কি সেই রাজশেখরীয় সংক্ষিপ্ততা?

আসলে তখনও, পরশুরাম গল্পসমগ্র প্রায় কণ্ঠস্থ করলেও রাজশেখর প্রবন্ধাবলী ক্কচিৎ পড়েছি। আজ সমস্ত পড়ে উপলব্ধি করছি দুজনের রচনার গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য। পরশুরামের প্রতিটি গল্পে শেষরক্ষা দৃঢ় শৃংখলিত; রাজশেখর বসুর সব প্রবন্ধে সমগ্র বক্তব্য উপস্থাপনের পরেই আকস্মিক abrupt সমাপ্তি। রবীন্দ্রকাব্যবিচারেও তা স্খলিত হয় নি।

রবীন্দ্রনাথের পরম স্নেহধন্য রাজশেখরের–যার অধিকাংশই আজও সাধারণের অজানা-রবীন্দ্রনাথের প্রতি শেষ ঐহলৌকিক শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে রবীন্দ্রলোকে প্রত্যাবর্তন মোটেই সমাপতন নয়। বোধহয় বহুপূর্বনির্ধারিত ছিল।

–দীপংকর বসু]


© 2024 পুরনো বই