কিছু দিন পূর্ব্বে, ইংলণ্ডের অদ্বিতীয কবি শেকসপীয়রের প্রণীত ভ্রান্তিপ্রহসন পাঠ করিয়া আমার বোধ হইয়াছিল, এতদীয় উপাখ্যানভাগ বাঙ্গালাভাষায় সঙ্কলিত হইলে, লোকের চিত্তরঞ্জন হইতে পারে। তদনুসারে ঐ প্রহসনের উপাখ্যানভাগ বাঙ্গালাভাষায় সঙ্কলিত ও ভ্রান্তিবিলাস নামে প্রচারিত হইল।
শেকসপীয়র, পঁয়ত্রিশখানি নাটক রচনা করিয়া, বিশ্ববিখ্যাত ও চিরস্মরণীয় হইয়া গিয়াছেন। তাঁহার প্রণীত নাটকসমূহে কবিত্বশক্তির ও রচনাকৌশলের পরা কাষ্ঠা প্রদর্শিত হইয়াছে। এতদ্ব্যতিরিক্ত, তিনি চারিখানি খণ্ড কাব্য ও কতকগুলি ক্ষুদ্রকাব্য রচনা করিয়াছেন। অনেকে বলেন, তিনি যে কেবল ইংলণ্ডের অদ্বিতীয় কবি ছিলেন, এরূপ নহে; এ পর্য্যন্ত ভূমণ্ডলে যত কবি প্রাদুর্ভূত হইয়াছেন, কেহই তাঁহার সমকক্ষ নহেন। এই সিদ্ধান্ত অভ্রান্ত বা পক্ষপাতবিবর্জিত কি না, মাদৃশ ব্যক্তির তদ্বিচারে প্রবৃত্ত হওয়া নিরবচ্ছিন্ন প্রগল্ভতাপ্রদর্শন মাত্র।
ভ্রান্তিপ্রহসন কাব্যাংশে শেকসপীয়রের প্রণীত অনেক নাটক অপেক্ষা অনেক অংশে নিকৃষ্ট; কিন্তু উহার উপাখ্যানটি যার পর নাই কৌতুকাবহ। তিনি এই প্রহসনে হাস্যরস উদ্দীপনের নিরতিশয় কৌশল প্রদর্শন করিয়াছেন। পাঠকালে হাস্য করিতে করিতে শ্বাসরোধ উপস্থিত হয়। ভ্রান্তিবিলাসে শেকসপীয়রের সেই অপ্রতিম কৌশল নাই, সুতরাং, ইহা পাঠ করিয়া লোকের তাদৃশ চিত্তরঞ্জন হইবেক, তাহার সম্ভাবনা নাই।
বাঙ্গালাপুস্তকে ইয়ুরোপীয় নাম সুশ্রাব্য হয় না; বিশেষতঃ, যাঁহারা ইঙ্গরেজী জানেন না, তাদৃশ পাঠকগণের পক্ষে বিলক্ষণ বিরক্তিকর হইয়া উঠে। এই দোষের পরিহারবাসনায়, ভ্রান্তিবিলাসে সেই সেই নামের স্থলে এতদ্দেশীয় নাম নিবেশিত হইয়াছে। উপাখ্যানে এবংবিধ প্রণালী অবলম্বন করা কোনও অংশে হানিকর বা দোষাবহ হইতে পারে না। ইতিহাসে বা জীবনচরিতে নামের যেরূপ উপযোগিতা আছে, উপাখ্যানে সেরূপ নহে।
যদি ভ্রান্তিবিলাস পাঠ করিয়া, এক ব্যক্তিরও চিত্তে কিঞ্চিন্মাত্র প্রীতিসঞ্চার হয়, তাহা হইলেই শ্রম সফল বোধ করিব।
শ্রীঈশ্বরচন্দ্র শর্ম্মা