(১৩৫০/১৯৪৩)।
যে আবিষ্কার বা উদ্ভাবন আমাদের সমকালীন তার মূল্য আমরা সহজে ভুলি না। রেলগাড়ি টেলিফোন মোটর সিনেমা রেডিও প্রভৃতির আশ্চর্য এখনও আমাদের মন থেকে লুপ্ত হয় নি। আধুনিক সভ্যতার এইসব ফল ভোগ করছি বলে আমরা ধন্যজ্ঞান করি, যদিও মনের গোপন কোণে একটু দীনতাবোধ থাকে যে উদ্ভাবনের গৌরব আমাদের নয়।
কিন্তু যে আবিষ্কার অত্যন্ত পুরাতন, কিংবা যে বিষয়ের পরিণতি প্রাচীনকালের বহু মানবের চেষ্টায় ধীরে ধীরে হয়েছে, তার সম্বন্ধে এখন আর আমাদের বিস্ময় নেই। দীর্ঘকাল ব্যবহারে আমরা এতই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে তার উপকারিতা মোটর সিনেমা রেডিওর চেয়ে লক্ষগুণ বেশী হলেও আমরা তা অকৃতজ্ঞচিত্তে আলো বাতাসের মতই সুলভ জ্ঞান করি। আগুন কৃষি আর বয়নবিদ্যার আবিষ্কার কে করেছিল তা জানবার উপায় নেই। এগুলির উপর আমরা একান্ত নির্ভর করি, কিন্তু এদের অভাবে আধুনিক জীবনযাত্রা যে অসম্ভব হত তা খেয়াল হয় না। এইসব বিষয়ের চেয়েও যা আশ্চর্য, যার জন্য মানবসভ্যতা ক্রমশ উন্নতিলাভ করেছে, যার প্রভাবে শুধু ঐশ্বর্যবৃদ্ধি নয়, বুদ্ধি আর চিত্তেরও উৎকর্ষ হয়েছে, যার উপযুক্ত প্রয়োগে হয়তো একদিন সমগ্র মানবজাতি একসত্তায় পরিণত হবে–এমন একটি বিষয়ের উদ্ভাবন পুরাকালে হয়েছিল, এবং তার প্রসার এখনও হচ্ছে। এই অসীম শক্তিশালী পরম সহায়ের নাম ‘সাহিত্য’।
Literature শব্দের মৌলিক অর্থ–লিখিত বিষয়। ‘সাহিত্য’ শব্দের মৌলিক অর্থ–সহিতের ভাব বা সম্মেলন, যার ফলে বহু মানব একক্রিয়ায়ী বা এক ভাবে ভাবিত হয়। এমন সার্থক আর ব্যাপক নাম বোধ হয় অন্য ভাষায় নেই। ভাব প্রকাশের আদিম উপায় অঙ্গভঙ্গী ও শব্দভঙ্গী, তার পর এল বাক্য। সুভাষিত বাক্য যখন বলা হল এবং শুনে মনে রাখা হল তখনই সাহিত্যের উৎপত্তি; শ্রুতি আর স্মৃতিই এদেশের প্রথম সাহিত্য। প্রথম যুগে যখন বাক্যই সম্বল ছিল তখন সাহিত্যের দেবী হলেন বাণী বা বাগদেবী। সংগীত আর লেখার উৎপত্তির পর বাগদেবী বীণাপুস্তকধারিণী হলেন। এখন সাহিত্যের দেবী রাশি রাশি মুদ্রিত পুস্তকে অধিষ্ঠান করে বিশ্বব্যাপিনী হয়েছেন।
প্রথমে যখন লেখার উদ্ভাবন হল তখন তার উদ্দেশ্য ছিল অতি স্থূল নিজের জিনিস চিহ্নিত করা, সম্পত্তির হিসাব রাখা, দান-বিক্রয়াদির দলিল করা ইত্যাদি। তারপর সংবাদ পাঠাবার জন্য চিঠির এবং রাজাজ্ঞা ঘোষণার জন্য অনুশাসনলিপির প্রচলন হল। ক্রমশ লিপির প্রয়োগ আরও ব্যাপক হল, যে সাহিত্য পূর্বে শ্রুতিবদ্ধ ছিল তা লিপিবদ্ধ এবং অবশেষে মুদ্রিত হওয়ায় প্রচারের আর সীমা রইল না।
মুখের কথার প্রভাব অল্প নয়, কিন্তু বেশী লোকে তা শুনতে পায় না, যারা শোনে তারাও চিরদিন মনে রাখতে পারে না। লিপি আবিষ্কারের পূর্বে সকল বিদ্যাই গুরমুখে শুনে বার বার আবৃত্তি করে স্মৃতিপটে নিবদ্ধ করতে হত। প্রাচীন প্রথায় শিক্ষিত টোলের পণ্ডিতদের মধ্যে এখনও স্মরণশক্তির অসাধারণ উৎকর্ষ দেখা যায়, কিন্তু শুতবিদ্যা কণ্ঠস্থ করা সাধারণ লোকের সাধ্য নয়। লেখা অক্ষয় হয়ে থাকতে পারে, দরকার হলেই পড়া যেতে পারে। রচয়িতার মৃত্যু হয় কিন্তু তাঁর লেখা বহু শত বৎসর পরেও জীবিত থাকে। লেখা যদি ছাপা হয় তবে তার প্রভাব সর্ব মানবসমাজে ব্যাপ্ত হতে পারে।
আমি একটি উত্তম কাব্য বা গল্প বা ভ্রমণবৃত্তান্ত বা তথ্যমূলক গ্রন্থ পড়ছি। পড়তে পড়তে লেখকের ভাব, রসবোধ, ইন্দ্রিয়ানুভূতি, যুক্তি আর জ্ঞান আমাতেও সঞ্চারিত হচ্ছে। লেখক যা অনুভব করেছেন, কল্পনা করেছেন, দেখেছেন, বা জেনেছেন, আমিও তা যথাসাধ্য উপলব্ধি করছি। এই আশ্চর্য ব্যাপারের সাধনযন্ত্র কি? শুধুই কাগজের উপর কালির চিহ্নশ্রেণী। শুতিগ্রাহ্য বাঙ্ময় সাহিত্য দৃষ্টিগ্রাহ্য সংকেতময় হয়েছে। মুখের ভাষাও সংকেত, কিন্তু মাতৃভাষা শেখবার একটা সহজ প্রবণতা আমাদের আছে। শিশুকালে কথা বুঝতে আর বলতে সহজেই শিখেছি, লেশমাত্র আয়াস হয় নি। কিন্তু বাক্যের কৃত্রিম প্রতীক স্বরূপ অক্ষরমালা আয়ত্ত করতে কতই না কষ্ট পেয়েছি। প্রথমে লেখার অর্থ একবারেই অগ্রাহ্য ছিল, একমাত্র লক্ষ্য এক-একটি চিহ্নের পরিচয় এবং তার নাম। তার পর ধীরে ধীরে চিহ্নপরম্পরা আয়ত্ত হল, পাঠের জন্য চেষ্টার প্রয়োজন রইল না, লিখিত বাক্যের উচ্চারণ সহজ হল, অবশেষে ক্রমশ অর্থবোধ এল। শিশু রবীন্দ্রনাথ ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ পাঠ করে সাহিত্যের যে প্রথম আস্বাদ পেয়েছিলেন সকল ভাগ্যবান শিশুই তা একদিন পায়। পাখি যেমন করে তার বাচ্চাকে উড়তে শিখিয়ে আকাশচারী করে, মানুষও সেই রকমে তার সন্তানকে সংকেতের প্রয়োগ শিখিয়ে সাহিত্যচারী অর্থাৎ বিদ্যার্জনের যোগ্য করবার চেষ্টা করে। উপযুক্ত শিক্ষা এবং অভ্যাসের ফলে সংকেতের কৃত্রিমতা আর লক্ষ্য হয় না, পড়া ও লেখার শক্তি ওঠা-হাঁটার মতই স্বভাবে পরিণত হয়।
এদেশে অসংখ্য হতভাগ্য অক্ষর পরিচয়েরও সুযোগ পায় না, অনেকে কোনও রকমে অক্ষর চেনে কিন্তু অর্থ বোঝে না। সামান্য লেখাপড়া শিখেও যে শক্তিলাভ হয় তার মর্ম আমরা সহজে বুঝি না, ছেলেবেলায় অনেকের সঙ্গ থেকে যা পাওয়া যায় তা তুচ্ছ মনে হয়। কয়েক বৎসর পূর্বে একজন উড়িয়া ব্রাহ্মণকে যখন রাঁধবার কাজে বহাল করি তখন সে একটাকা বেশী মাইনে চেয়েছিল, কারণ সে চতুঃশাস্ত্রে পণ্ডিত। জানতে চাইলাম কি কি শাস্ত্র। উত্তর দিলে–পড়তে জানি, লিখতে জানি, যোগ দিতে পারি, এ-বি সি-ডি চিনি। লোকটির শাস্ত্রজ্ঞান যতই অল্প হোক, সে তার নিরক্ষর আত্মীয়স্বজনের তুলনায় শিক্ষিত–এই অসামান্যতার গৌরব সে বুঝেছিল।
স্মরণশক্তি এবং বিচারশক্তির সাহায্যের জন্য মানুষ নানারকম প্রতীক বা সংকেতের উদ্ভাবন করেছে। পদার্থবিজ্ঞানী তার আলোচ্য পদার্থের ধর্ম ও সম্বন্ধের প্রতীকস্বরূপ বিবিধ অক্ষর প্রয়োগ করেন। রসায়নী শাখাপ্রশাখাময় ফরমুলার দ্বারা বস্তুর গঠন নির্দেশ করেন। বিজ্ঞানচর্চার জন্য এই সব সংকেত অপরিহার্য কিন্তু এদের প্রকাশশক্তি অতি সংকীর্ণ। কোনও বস্তু যখন উপর থেকে নীচে পড়ে তখন তার বেগের ক্রমবৃদ্ধির হার বোঝাবার জন্য g অক্ষরটি চলে। কিন্তু এই অক্ষর দেখলে কোনও বস্তুর পতন আমাদের মনে প্রত্যক্ষবৎ অনুভূত হয় না। জলের সংকেত H20 দেখলে তৃষ্ণাহারক পানীয় বা বৃষ্টিধারা বা মহাসাগর কিছুই, মনে আসে না। সংগীতের জন্য স্বরলিপি উদ্ভাবিত হয়েছে। তা দেখে অভিজ্ঞ জন তালমান-লয়ের বিন্যাস বুঝতে পারেন, কিন্তু তাতে গান বাজনা শোনার ফল হয় না। হয়তো খুব অভ্যাস করলে স্বরলিপি পড়েই সংগীতের স্বাদ পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু সম্ভবত এরকম অভ্যাসের প্রয়োজন কোনও কালে হবে না। সংগীত যতই কাম্য হোক তা এমন আবশ্যক নয় যে শুতিগত সাক্ষাৎ উপলব্ধির অভাবে সংকেতজনিত কল্পনার শরণ নিতে হবে।
সত্যমূলক বা কাল্পনিক কোনও ব্যাপার প্রতিরূপিত করবার যত উপায় আছে তার মধ্যে নাটকাভিনয় শ্রেষ্ঠ গণ্য হয়, কারণ তা দেখাও যায় শোনাও যায়। তার পরেই মুখর চলচ্চিত্রের স্থান। শুনতে পাই এখন আর talkie যথেষ্ট নয়, smellie উদ্ভাবিত হচ্ছে, যাতে চিত্রার্পিত ঘটনার আনুষঙ্গিক গন্ধও পাওয়া যাবে। পরে হয়তো tastie আর touchie-র আবিষ্কারে পঞ্চেন্দ্রিয়ের তর্পণ পূর্ণ হবে, ভোজের দৃশ্যে দর্শককে খাওয়ানো এবং দাঙ্গার দৃশ্যে কিঞ্চিৎ প্রহার দেওয়া হবে। কিন্তু অভিনয় বা সিনেমা কোনটিও সহজলভ্য নয়, বিশেষ বিশেষ বিদ্যার সংকেতও আমাদের কাছে প্রত্যক্ষতুল্য নয়। লিখিত সাহিত্যই একমাত্র উপায় যাতে জ্ঞান বা অনুভূতি সঞ্চারের জন্য কোনও আড়ম্বরের দরকার হয় না, নূতন সংকেতও অভ্যাস করতে হয় না।
সাহিত্যের যা বিষয় তা এতই বিচিত্র আর জটিল যে তার প্রত্যেকটি প্রত্যক্ষ করবার সুযোগ পাওয়া অসম্ভব। কবিবর্ণিত নিসর্গদৃশ্য বা মানবচরিত্র, অথবা ভূগোলবর্ণিত বিভিন্ন দেশ-নদী-পর্বত-সাগরাদি, আমরা ইচ্ছা করলেই দেখতে পারি না। ঐতিহাসিক ঘটনা বা গ্রহনক্ষত্রের রহস্য আমাদের দৃষ্টিগম্য নয়। মৃত মহাপুরুষদের মুখের কথা শোনবার উপায় নেই। বিজ্ঞান বা দর্শনের সকল তথ্যের সাক্ষাৎ জ্ঞানলাভ অসম্ভব। অথচ অনেক। বিদ্যা অল্পাধিক পরিমাণে শিখতেই হবে, নতুবা মানুষ পঙ্গু হয়ে থাকবে। হিতোপদেশে আছে–
অনেকসংশয়োচ্ছেদি পরোক্ষার্থস্য দর্শক।
সর্বস্য লোচনং শাস্ত্রং যস্য নাস্ত্যন্ধ এব সঃ।।
–অনেক সংশয়ের উচ্ছেদক, অপ্রত্যক্ষ বিষয়ের প্রদর্শক, সকলের লোচনস্বরূপ শাস্ত্র যার নেই সে অন্ধই। শাস্ত্র অর্থাৎ বিদ্যা শেখবার এই প্রবল প্রয়োজন থেকেই সংকেতময় লিখিত সাহিত্যের উৎপত্তি। যা সাক্ষাৎভাবে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বা মনোগ্রাহ্য হতে পারে না তা সভ্য মানবের পূর্বপুরুষদের চেষ্টায় কৃত্রিম উপায়ে চিরস্থায়ী এবং সকলের অধিগম্য হয়েছে। একজন যা জানে তা সকলে জানুক সাহিত্যের এই সংকল্প মুদ্রণের আবিষ্কারে পূর্ণতা পেয়েছে।
যে ভাষা অবলম্বন করে সাহিত্য রচিত হয় সেই ভাষাও সংকেতের সমষ্টি। এই সংকেত শব্দাত্মক ও বাক্যাত্মক; কিন্তু বিজ্ঞানাদির পরিভাষার তুল্য স্থির নয়, প্রয়োজন অনুসারে শব্দের ও বাক্যের অর্থ পরিবর্তিত হয়। আমাদের আলংকারিকগণ শব্দের ত্রিবিধ শক্তির কথা বলেছেন–অভিধা, লক্ষণা, ব্যঞ্জনা। প্রথমটি কেবল আভিধানিক অর্থ প্রকাশ করে, আর দুটি থেকে প্রকরণ অনুসারে গৌণ অর্থ পাওয়া যায়। শব্দের যেমন ত্রিশক্তি, বাক্যের তেমন উপমা রূপক প্রভৃতি বহুবিধ অলংকার। সাহিত্যের বিষয়ভেদে শব্দ ও বাক্যের অভিপ্রায় এবং প্রকাশশক্তি বদলায়। স্থূল বিষয়ের বর্ণনা বা বৈজ্ঞানিক প্রসঙ্গের ভাষা অত্যন্ত সরল না হলে চলে না, তাতে শব্দের অভিধা বা বাচ্যার্থই আবশ্যক, লক্ষণা আর ব্যঞ্জনা বাধাস্বরূপ। উপমার কিছু প্রয়োজন হয়, কদাচিৎ একটু রূপকও চলতে পারে, কিন্তু উৎপ্রেক্ষা অতিশয়োক্তি প্রভৃতি অন্যান্য অলংকার একবারেই অচল। ‘হিমালয় যেন পৃথিবীর মানদণ্ড’-এ ভাষা কাব্যের উপযুক্ত কিন্তু ভূগোলের নয়।
যন্ত্রাদি বা মানবদেহের গঠন বোঝাবার জন্য যে নকশা আঁকা হয় তা অত্যন্ত সরল, তার প্রত্যেক রেখার মাপ মূলানুযায়ী, তা দেখে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অবস্থান, আকৃতি আর আয়তন সহজেই মোটামুটি বোঝা যায়। যন্ত্রবিদ্যা শারীরবিদ্যা প্রভৃতি শেখবার জন্য নকশা অত্যাবশ্যক, কিন্তু তা শুধুই একসমতলাশ্রিত মানচিত্র বা diagram, তাতে মূলবস্তু প্রত্যক্ষবৎ প্রতীয়মান হয় না। তার জন্য এমন ছবি চাই যাতে অঙ্গের উচ্চতা নিম্নতা দূরত্ব নিকটত্ব প্রভৃতি পরিস্ফুট হয়। ছবিতে চিত্রকর পরিপ্রেক্ষিতের নিয়মে রেখা বিকৃত করেন, উচ্চাবচতা বা আলো-ছায়ার ভেদ প্রকাশের জন্য মসীলেপের তারতম্য করেন, ফলে মাপের হানি হয় কিন্তু বস্তুর রূপ ফুটে ওঠে। ঠিক
অনুরূপ প্রয়োজনে লেখককে ভাষার সরল পদ্ধতি বর্জন করতে হয়। যেখানে বর্ণনার বিষয় মানবপ্রকৃতি বা হর্ষ বিষাদ অনুরাগ বিরাগ দয়া ভয় বিস্ময় কৌতুক প্রভৃতি অতীন্দ্রিয় চিত্তবৃত্তি, সেখানে শুধু শব্দের বাচ্যার্থ আর নিরলংকার বৈজ্ঞানিক ভাষায় চলে না। নিপুণ রচয়িতা সে স্থলে ত্রিবিধ শব্দবৃত্তি এবং নানা অলংকার প্রয়োগে ভাষার যে ইন্দ্রজাল সৃষ্টি করেন তাতে অতীন্দ্রিয় বিষয়ও পাঠকের বোধগম্য হয়।
অনেক আধুনিক লেখক নূতনতর সাংকেতিক ভাষায় কবিতা লিখছেন। এই বিদেশাগত রীতির সার্থকতা সম্বন্ধে বহু বিতর্ক চলছে, অধিকাংশ পাঠক এসব কবিতা বুঝতে পারেন না, অন্তত আমি পারি না। জনকতক নিশ্চয়ই বোঝেন এবং উপভোগ করেন, নয়তো ছাপা আর বিক্রয় হত না। চিত্রে cubism আর sur-realism-এর তুল্য এই সংকেতময় কবিতা কি শুধুই মুষ্টিমেয় লেখকের প্রলাপ, না অনাস্বাদিতপূর্ব রসসাহিত্য? বোধ হয় মীমাংসার সময় এখনও আসে নি। নূতন পদ্ধতির লেখকরা বলেন–এককালে রবীন্দ্রকাব্যও সাধারণের অবোধ্য ছিল, অবনীন্দ্র-প্রবর্তিত চিত্রকলাও উপহাস্য ছিল; ভাবী গুণগ্রাহীদের জন্য সবুর করতে আমরা রাজী আছি। হয়তো এঁদের কথা ঠিক, কারণ নূতন সংকেতে অভ্যস্ত হতে লোকের সময় লাগে। হয়তো এঁদের কথা ভুল, কারণ সংকেতেরও সীমা আছে। নূতন কবিদের কেউ কেউ হয়তো সীমার মধ্যেই আছেন, কেউ বা সীমা লঙ্ঘন করেছেন। বিতর্ক ভাল, তার ফলে সস্তুর প্রতিষ্ঠা অথবা অসস্তুর উচ্ছেদ হতে পারে। যারা বিতর্কে যোগ দিতে চান না তাদের পক্ষে এখন সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখাই উত্তম পন্থা।