চার
পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বড় সত্য এই যে, মানুষকে সদুপদেশ দিয়া কখনো ফললাভ হয় না। সৎপরামর্শ কিছুতেই কেহ শুনে না। কিন্তু সত্য বলিয়াই দৈবাৎ ইহার ব্যতিক্রমও আছে। সেই ঘটনাটা বলিব।
ঠাকুর্দা দাঁত বাহির করিয়া আশীর্বাদ করিয়া অতি হৃষ্টচিত্তে প্রস্থান করিলেন, পুঁটু বিস্তর পায়ের ধূলা গ্রহণ করিয়া আদেশ পালন করিল, কিন্তু তাহারা চলিয়া গেলে আমার পরিতাপের অবধি রহিল না। সমস্ত মন বিদ্রোহী হইয়া কেবলি তিরস্কার করিতে লাগিল যে, কে ইহারা যে বিদেশে চাকরি করিয়া বহু দুঃখে যাহা-কিছু সঞ্চয় করিয়াছি তাহাই দিয়া দিব? ঝোঁকের মাথায় একটা কথা বলিয়াছি বলিয়াই দাতাকর্ণগিরি করিতেই হইবে, তাহার অর্থ কি? কোথাকার কে এই মেয়েটা গাড়িতে অযাচিত প্যাঁড়া এবং দই খাওয়াইয়া আমাকে ত আচ্ছা ফাঁদে ফেলিয়াছে! একটা ফাঁস কাটিতে আর একটা ফাঁসে জড়াইয়া পড়িলাম। পরিত্রাণের উপায় চিন্তা করিতে মাথা গরম হইয়া উঠিল এবং এই নিরীহ মেয়েটার প্রতি ক্রোধ ও বিরক্তির সীমা রহিল না। আর ঐ শয়তান ঠাকুর্দা। ইচ্ছা করিতে লাগিল লোকটা যেন না আর বাড়ি পৌঁছায়, রাস্তাতেই সর্দিগর্মি হইয়া মারা যায়। কিন্তু আশা ভিত্তিহীন, নিশ্চয় জানি, লোকটা কিছুতেই মরিবে না এবং একবার যখন আমার বাসার ঠিকানা জানিয়াছে তখন আবার আসিবে এবং যেমন করিয়া পারে টাকা আদায় করিবে। হয়ত এবার সেই হাকিম পিসেমশায়কে সঙ্গে করিয়া আনিবে। এক উপায়—যঃ পলায়তি। টিকিট কিনিতে গেলাম, কিন্তু জাহাজে স্থানাভাব—সমস্ত টিকিট পূর্বাহ্নেই বিক্রি হইয়া গেছে, সুতরাং পরের মেলের জন্য অপেক্ষা করিতে হইবে। সে ছয়-সাত দিনের ব্যাপার।
আর এক পন্থা—বাসা বদল করা। ঠাকুর্দা না খুঁজিয়া পায়। কিন্তু এমন একটি ভাল জায়গা এত শীঘ্র পাওয়াই বা যায় কোথায়? কিন্তু অবস্থা এমন দাঁড়াইয়াছে যে, ভালমন্দর প্রশ্নই অবান্তর—যথারণ্যং তথা গৃহম্—শিকারীর হাত হইতে প্রাণ বাঁচানর দায়।
ভয় ছিল আমার গোপন উদ্বেগটা পাছে রতনের চোখে পড়ে। কিন্তু বিপদ হইয়াছে তাহার নড়িবার গা নাই, কাশীর চেয়ে কলিকাতা তাহার বেশি মনে ধরিয়াছে। জিজ্ঞাসা করিলাম, চিঠির জবাব নিয়ে কি তুমি কালই যেতে চাইচো রতন?
রতন তৎক্ষণাৎ উত্তর দিল, আজ্ঞে না। আজ দুপুরে মাকে একখানা পোস্টকার্ড লিখে দিলাম, আমার দু’-পাঁচদিন দেরি হবে। মরা সোসাইটি, জ্যান্ত সোসাইটি না দেখে আর ফিরচি নে। আবার কবে কোন্ কালে আসা হবে তার তো কোন ঠিক নেই।
বলিলাম, কিন্তু তিনি তো উদ্বিগ্ন হতে পারেন—
আজ্ঞে না। গাড়ির ধকলটা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। সেকথা লিখে দিয়েছি।
কিন্তু চিঠির জবাবটা—
আজ্ঞে, দিন না। কালই রেজেস্ট্রী করে পাঠিয়ে দেবোখন। সে বাড়িতে মার চিঠি যমে খুলতেও সাহস করবে না।
চুপ করিয়া বসিয়া রহিলাম। নাপিত ব্যাটার কাছে কোন ফন্দিই খাটিল না। সব প্রস্তাবই নাকচ করিয়া দিল।
যাবার সময় ঠাকুর্দা টাকার কথাটা প্রচার করিয়াই গেছেন। তাহা চিত্তের ঔদার্য অথবা সারল্যের প্রাচুর্য—এ ভ্রম যেন কেহ না করেন। তিনি সাক্ষী রাখিয়া গেছেন।
রতন ঠিক সেই কথাই পাড়িল, বলিল, যদি কিছু মনে না করেন তো একটা কথা বলি বাবু।
কি কথা রতন?
রতন একটু দ্বিধা করিয়া বলিল, আড়াই হাজার টাকা তো নিতান্ত তুচ্ছ নয় বাবু—ওরা কে যে ওদের মেয়ে বিয়েতে এতটা টাকা আপনি খামকা দান করবেন বললেন! তা ছাড়া, ঠাকুর্দাই হোক আর যাই হোক, বুড়োটা লোক ভাল নয়। ওকে বলাটা ভাল হয়নি বাবু।
তাহার মন্তব্য শুনিয়া যেমন অনির্বচনীয় আনন্দ লাভ করিলাম, মনের মধ্যে তেমনি জোর পাইলাম—ইহাই চাহিতেছিলাম।
তথাপি কণ্ঠস্বরে কিঞ্চিৎ সন্দেহের আভাস দিয়া কহিলাম, বলাটা ভাল হয়নি, না রতন?
রতন বলিল, নিশ্চয় ভাল হয়নি বাবু। টাকাটা তো কম নয়। তা ছাড়া, কিসের জন্য বলুন তো?
ঠিক ত! কহিলাম, তাহলে না দিলেই হবে। রতন সবিস্ময়ে ক্ষণকাল চাহিয়া থাকিয়া কহিল, সে ছাড়বে কেন?
কহিলাম, না ছেড়ে করবে কি? লেখাপড়া করে তো দিইনি। আর, তখন আমি এখানে থাকব কি বর্মায় চলে যাব, তাই বা কে জানে।
রতন একমুহূর্ত চুপ করিয়া থাকিয়া একটু হাসিল, বলিল, বুড়োকে আপনি চিনতে পারেন নি বাবু, ওদের লজ্জা-শরম মান-অপমান নেই। কেঁদেকেটে ভিক্ষে করেই হোক, আর ভয় দেখিয়ে জুলুম করেই হোক, টাকা ও নেবেই। আপনার দেখা না পেলে মেয়েটাকে সঙ্গে নিয়ে ও কাশী গিয়ে মার কাছ থেকে আদায় করে ছাড়বে। মা বড় লজ্জা পাবেন বাবু, ও মতলবে কাজ নেই।
শুনিয়া নিস্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিলাম। রতন আমার চেয়ে ঢের বেশি বুদ্ধিমান। অর্থহীন আকস্মিক করুণার হঠকারিতার জরিমানা আমাকে দিতেই হইবে। নিস্তার নাই।
রতন পাড়াগাঁয়ের ঠাকুর্দাকে যে চিনিতে ভুল করে নাই, বুঝা গেল যখন চতুর্থ দিবসে তিনি ফিরিয়া আসিলেন। কেবল আশা করিয়াছিলাম এবার নিশ্চয় হাকিম পিসেমশাই সঙ্গে আসিবেন—কিন্তু একাই আসিয়া উপস্থিত হইলেন। বলিলেন, দশখানা গ্রামের মধ্যে ধন্য ধন্য পড়ে গেছে দাদা, সবাই বলচে, কলিকালে এমন কখনো শোনা যায় না। গরীব ব্রাহ্মণের কন্যাদায় এভাবে উদ্ধার করে দিতে কেউ কখনো চোখে দেখেনি। আশীর্বাদ করি চিরজীবী হও।
জিজ্ঞাসা করিলাম, বিয়ে কবে?
এই মাসের পঁচিশে স্থির হয়েচে, মধ্যে কেবল দশটা দিন বাকী। কাল পাকাদেখা, আশীর্বাদ—বেলা তিনটের পরে বারবেলা, এর ভেতরেই শুভকর্ম সমাধা করে নিতে হবে। কিন্তু তুমি না গেলে বরঞ্চ সব বন্ধ থাকবে, তবু কিছুই হতে পারবে না। এই নাও তোমার পুঁটুর চিঠি—সে নিজের হাতে লিখে পাঠিয়েছে। কিন্তু তাও বলি দাদা, যে রত্ন তুমি স্বেচ্ছায় হারালে তার জোড়া কখনো পাবে না। এই বলিয়া তিনি ভাঁজ-করা একখণ্ড হলদে রঙের কাগজ আমার হাতে দিলেন।
কৌতূহলবশতঃ চিঠিখানা পড়িবার চেষ্টা করিলাম, ঠাকুর্দা হঠাৎ একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করিয়া বলিলেন, কালিদাসের পয়সা থাকলে হবে কি, একেবারে ছোটলোক—চামার। চোখের চামড়া বলে তার কোন বালাই নেই। কালই টাকাকড়ি সব নগদ চুকিয়ে দিতে হবে, গহনাপত্র নিজের সেকরা দিতে গড়িয়ে নেবে—ওর কাউকে বিশ্বাস নেই—এমন কি, আমাকে পর্যন্ত না।
লোকটার মস্ত দোষ। ঠাকুর্দাকে পর্যন্ত বিশ্বাস করে না—আশ্চর্য!
পুঁটু স্বহস্তে পত্র লিখিয়াছে। একপাতা দু’পাতা নয়, চার-পাতাজোড়া ঠাস বুনানি। চার-পাতাই সকাতর মিনতি। ট্রেনে রাঙাদিদি বলিয়াছিলেন। আজকালকার নাটক-নভেল হার মানে। কেবল আজকালকার নয়, সর্বকালের নাটক-নভেল হার মানে তাহা অস্বীকার করিব না। এই লেখার জোরে নন্দরাণীর স্বামী চৌদ্দ দিনের ছুটি লইয়া সাতদিনের দিন আসিয়া হাজির হইয়াছিল কথাটা বিশ্বাস হইল।
অতএব, আমিও পরদিন সকালেই যাত্রা করিলাম। টাকাটা সত্যই সঙ্গে লইয়াছি এবং ভাঙচুর করিয়া প্রতারণা করিতেছি না—ঠাকুর্দা নিজের চক্ষে তাহা যাচাই করিয়া লইলেন, বলিলেন, পথ চলবে জেনে, টাকা নেবে গুণে। আমরা দেবতা নই তো রে ভাই, মানুষ—ভুল হতে কতক্ষণ।
সত্যই ত! রতন কাল রাত্রেই কাশী রওনা হইয়া গেছে। তাহার হাতে চিঠির জবাব দিয়াছি, লিখিয়া দিয়াছি—তথাস্তু। ঠিকানা দিতে পারি নাই ঠিক নাই বলিয়া। এ ত্রুটি যেন সে নিজগুণে ক্ষমা করে, এ প্রার্থনাও জানাইয়াছি।
যথাসময়ে গ্রামে পৌঁছিলাম, বাড়িসুদ্ধ লোকের দুশ্চিন্তা ঘুচিল। যত্ন ও সমাদর যাহা পাইলাম তাহা প্রকাশ করিবার ভাষা অভিধানে নাই।
পাকাদেখা ও আশীর্বাদ করার উপলক্ষে কালিদাসবাবুর সহিত পরিচয় হইল। লোকটা যেমন রুক্ষ মেজাজের, তেমনি দাম্ভিক। তাঁহার অনেক টাকা এই কথাটা সকলকে সর্বক্ষণ স্মরণ করানো ছাড়া জগতে তাঁহার যে আর কোন কর্তব্য আছে মনে হয় না। সমস্ত স্বোপার্জিত। সদম্ভে বলিলেন, মশাই, বরাত আমি মানিনে, যা করব তা নিজের বাহুবলে। দেব-দেবতার অনুগ্রহ আমি ভিক্ষে করিনে। আমি বলি দৈবের দোহাই দেয় কাপুরুষে।
বড়লোক বলিয়া এবং ছোটখাটো তালুকদার বলিয়া গ্রামের প্রায় সকলেই উপস্থিত ছিলেন এবং অধিকাংশেরই বোধ করি তিনি মহাজন, এবং দুর্দান্ত মহাজন—অতএব সকলেই একবাক্যে তাঁহার কথাগুলা স্বীকার করিয়া লইলেন। তর্করত্ন মহাশয় কি একটা সংস্কৃত শ্লোক আবৃত্তি করিলেন এবং আশপাশ হইতে তাঁহার সম্বন্ধে দুই-একটা পুরাতন কাহিনীরও সূত্রপাত হইল।
অপরিচিত ও সামান্য ব্যক্তি অনুমানে তিনি অবহেলাভরে আমার প্রতি কটাক্ষপাত করিলেন। টাকার শোকে আমার অন্তরটা তখন পুড়িতেছিল, দৃষ্টিটা সহ্য হইল না, হঠাৎ বলিয়া ফেলিলাম, বাহুবল আপনার কি পরিমাণ আছে জানিনে, কিন্তু টাকা উপায়ের ব্যাপারে দৈব এবং বরাতের জোর যে যথেষ্ট প্রবল তা আমিও স্বীকার করি।
তার মানে?
বলিলাম, মানে আমি নিজেই। বরকেও চিনিনে, কনেকেও না, অথচ টাকা যাচ্ছে আমার এবং সে ঢুকছে গিয়ে আপনার সিন্দুকে। একে বরাত বলে না ত বলে কাকে? এই বললেন, আপনি দেব-দেবতারও অনুগ্রহ নেন না, কিন্তু আপনার ছেলের হাতের আঙটি থেকে বৌয়ের গলার হার পর্যন্ত তৈরি হবে যে আমারই অনুগ্রহের দানে। হয়ত-বা বৌভাতের খাওয়ানোটা পর্যন্ত আমাকেই যোগাতে হবে।
ঘরের মধ্যে বজ্রপাত হইলেও বোধ করি সকলে এত বিচলিত ও ব্যাকুল হইয়া উঠিত না। ঠাকুর্দা কি-সব বলিবার চেষ্টা করিলেন, কিন্তু কিছুই সুস্পষ্ট বা সুব্যক্ত হইয়া উঠিল না। কালিদাসবাবু ক্রোধে ভীষণ মূর্তি ধারণ করিয়া বলিলেন, আপনি টাকা দিচ্চেন তা আমি জানব কি করে? এবং দিচ্চেনই বা কেন?
বলিলাম, কেন দিচ্চি সে আপনি বুঝবেন না, আপনাকে বোঝাতেও চাইনে। কিন্তু দেশসুদ্ধ সকলে শুনেচে, আমি টাকা দিচ্চি, কেবল আপনিই শোনেন নি? মেয়ের মা আপনাদের বাড়িসুদ্ধ সকলের হাতেপায়ে ধরেচে, কিন্তু আপনি বি এ পাশ-করা ছেলের দাম আড়াই হাজারের এক পয়সা কম করতে রাজী হননি। মেয়ের বাপ চল্লিশ টাকা মাইনের চাকরি করে, তার চল্লিশটা পয়সা দেবার শক্তি নেই—এটা ভেবে দেখেন নি আপনার ছেলে কেনবার অত টাকা হঠাৎ তারা পায় কোথায়? যাই হোক, ছেলে-বেচা টাকা অনেকেই নেয়, আপনি নিলেও দোষ নেই, কিন্তু এর পরে গাঁয়ের লোককে বাড়িতে ডেকে টাকার অহঙ্কার আর করবেন না এবং একজন বাইরের লোকের ভিক্ষের দানে ছেলের বিয়ে দিয়েচেন এ কথাটাও মনে রাখবেন।
উদ্বেগ ও ভয়ে সকলের মুখ কালিবর্ণ হইয়া উঠিল। বোধ হয় সবাই ভাবিলেন, এবার ভয়ঙ্কর কিছু একটা ঘটিবে এবং ফটক বন্ধ করিয়া সকলকে লাঠিপেটা না করিয়া কালিদাসবাবু আর কাহাকেও ঘরে ফিরিতে দিবেন না।
কিন্তু তিনি কিছুক্ষণ নিঃশব্দে বসিয়া থাকিয়া মুখ তুলিয়া বলিলেন, টাকা আমি নেব না।
বলিলাম, তার মানে ছেলের বিয়ে আপনি এখানে দেবেন না?
কালিদাসবাবু মাথা নাড়িয়া কহিলেন, না, তা নয়, আমি কথা দিয়েচি বিবাহ দেবো—তার নড়চড় হবে না। কালিদাস মুখুয্যে কথার খেলাপ করে না। আপনার নামটি কি?
ঠাকুর্দা ব্যগ্রকণ্ঠে আমার পরিচয় দিলেন।
কালিদাসবাবু চিনিতে পারিয়া কহিলেন, ওঃ—তাই বটে। এর বাপের সঙ্গেই না একবার আমার ভয়ানক ফৌজদারী মামলা বাঁধে?
ঠাকুর্দা বলিলেন, আজ্ঞে হাঁ—কিছুই আপনি বিস্মৃত হন না। এ তারই ছেলে বটে, সম্পর্কে আমারও নাতি হয়।
কালিদাসবাবু প্রসন্নকণ্ঠে বলিলেন, তা হোক। আমার বড়ছেলে বেঁচে থাকলে এমনি বয়সই হ’ত। শশধরের বিয়েতে এসো বাবা। আমার পক্ষ থেকে সেদিন তোমার নিমন্ত্রণ রইল।
শশধর উপস্থিত ছিল, সে শুধু সকৃতজ্ঞচক্ষে আমার প্রতি একটিবারমাত্র দৃষ্টিপাত করিয়াই পুনরায় মুখখানি আনত করিল।
আমি উঠিয়া আসিয়া প্রণাম করিলাম, বলিলাম, যেখানেই থাকি, অন্ততঃ বৌভাতের দিন এসে নববধূর হাতে অন্ন খেয়ে যাব। কিন্তু অনেক রূঢ় কথা বলেচি, আমাকে আপনি ক্ষমা করবেন।
কালিদাসবাবু বলিলেন, রূঢ় কথা যে বলেচ তা সত্যি, কিন্তু আমি ক্ষমাও করেচি। কিন্তু উঠলে চলবে না শ্রীকান্ত, শুভকর্ম উপলক্ষে সামান্য কিছু খাবার আয়োজন করে রেখেচি, তোমাকে খেয়ে যেতে হবে।
যে আজ্ঞে, তাই হবে, বলিয়া পুনরায় বসিয়া পড়িলাম।
সেদিন পাত্রকে আশীর্বাদ করা হইতে আরম্ভ করিয়া সভাস্থ অভ্যাগতগণের খাওয়া-দাওয়া পর্যন্ত সমস্ত কার্যই নির্বিঘ্নে সুসম্পন্ন হইল। এই অধ্যায়ের প্রারম্ভে সদুপদেশ সম্বন্ধে যে নিয়মের উল্লেখ করিয়াছিলাম, পুঁটুর বিবাহটা তাহারই একটা ব্যতিক্রমের উদাহরণ। জগতে এই একটিমাত্রই নিজের চোখে দেখিয়াছি। কারণ নিঃসম্পর্কীয় অপরিচিত হতভাগ্য মেয়ের বাপের কান মলিলেই যেখানে টাকা আদায় হয় সেখানে বৈষ্ণব সাজিয়া হাতজোড় করিয়া বাঘের গ্রাস হইতে নিস্তার পাওয়া যায় না। নিষ্ঠুর নির্দয় বলিয়া গালিগালাজ করিয়া সমাজ ও অদৃষ্টকে ধিক্কার দিয়া ক্ষোভ কিঞ্চিৎ মিটিতে পারে, কিন্তু প্রতিকার মিলে না। কারণ, প্রতিকার বরের বাপের হাতে নাই, সে আছে মেয়ের বাপেরই নিজের হাতে।