বারিক অপেরা পার্টি

বারিক অপেরা পার্টি

সকালবেলা।

একজন কাঁচা-পাকা দাড়িওয়ালা মুসলমান আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললে —সালাম বাবু।

–কে তুমি?

—আমার নাম বারিক মণ্ডল, বাড়ি চালদী। আপনার কাছে এটু আলাম—

–কেন?

—ধানি জমি কিনবেন? পঞ্চাশের মন্বন্তর তখনো উগ্র হয়ে ওঠেনি, দিকে দিকে ওর আগমনবার্তা অল্পে অল্পে ঘোষিত হচ্ছে। একটা ব্যাপার শেষ না-হয়ে গেলে বোঝা যায় না সেটা কত বড়ো হল। সবাই ভাবছে, এ দুর্দিনের অভাব-অনটন শিগগির কেটে যাবে। এ সময়ে ধানের জমি কেনা মন্দ নয়, সামনেই শ্রাবণ মাস, জলবৃষ্টিও বেশ হচ্ছে, কিনেই ধান রোয়া হতে পারে এবারই। চালের দাম পঁচিশ টাকা মণ, তাও সহজপ্রাপ্য নয়। কলকাতা থেকে বোমার ভয়ে পালিয়ে এসে বাড়ি বসে আছি। হয়তো কলকাতা শহর জাপানি বোমার ঘায়ে ছত্রাকার হয়ে যাবে, দেশেই থাকতে হবে বরাবর। দেশে ধানি জমির নিতান্ত অভাব, যা আছে তা নিয়ে কাড়াকাড়ি চলচে।

বললাম—জমি কোথায়? কতটা?

—চালদীর মাঠে। তা বলি আপনার কাছেই যাই, ওঁর জমির যদি দরকার থাকে। সাত বিঘে জমি বাবু। বিক্রি করবে আমাদের গাঁয়ের সোনাই মণ্ডল।

—তুমি তার কেউ হও?

—না বাবু। ওর মধ্যে দু-বিঘে ভিটে জমি আছে, সে জমিটুকুতে আমি খাজনা দিয়ে বাস করি। জমিটা কিনলে আমি আপনার ভিটের প্রজা হব। দু-টাকা করে খাজনা করি। ধানের জমিটা আপনাকে সস্তায় করে দোব বাবু। আমাকে ধানের জমিগুলো কিন্তু ভাগে দিতে হবে। আর যদি আপনি নিজে চাষ করেন তো আলাদা কথা—

কলকাতা থেকে নতুন এসে বহুদিন পরে দেশে বসেছি, জমিজমার ব্যাপার তত বুঝিনে। ব্যাপারটা তলিয়ে বুঝবার চেষ্টা করলাম। চালদীর বারিক মণ্ডল আমার কাছে এসেচে কিছু জমি বেচতে। ওর জমি নয়, সোনাই মণ্ডলের জমি। ও এসেছে কেন, এতে ওর স্বার্থ কী? না, ও আগে থেকেই এই জমার অন্তর্ভুক্ত দু-বিঘে জমিতে বাস করে, জমি নিলে ও আমার প্রজা হবে এবং আমি ওকে ধানের জমির ভাগীদার করব। বেশ কথা। বারিকের চেষ্টায় ও আমার ইচ্ছায় তিনদিনের মধ্যে জমি কেনা হয়ে গেল।

রেজেষ্ট্রি অফিসে যে দলটি জমি রেজেষ্ট্রি করতে গিয়েছিল বারিক মুসলমান দেখলুম তার মোড়ল। মহা ফুর্তিবাজ লোক সে। আধ-বুড়ো লোক হলে কী হয়। দাড়ি নেড়ে নেড়ে পান খাচ্চে, বিড়ি খাচ্চে, বেগুনি খাচ্চে, ফুলুরি খাচ্চে। রেজেস্ট্রি শেষ হয়ে গেলে বারিক আমায় ডেকে বললে—বাবু, এটুখানি দোকানে চলুন।

—কোন দোকান?

—জল খাবেন এট্টু।

জল খাওয়ানোর প্রথা আছে এদেশে, যে জমি কেনে, সে-ই মনের ফুর্তিতে সাক্ষী ও শনাক্তকারীকে মিষ্টিমুখ করায়। যে জমি বেচে সে তো রিক্ত হয়ে গেল, সে খাওয়াবে কেন? এ কথা তো এদেশে নেই। কিন্তু বারিকের আনাড়ি ধরনের বিনীত গ্রাম্য অনুরোধ এড়াতে না-পেরে খাবারের দোকানে বসলাম।

—দ্যাও, ও দোকানি বাবুরি (অর্থাৎ বাবুকে) নিমকি, সেঙ্গারা, সন্দেশ দ্যাও। আর ওই যে হ্যাদে গোল গোল তোমার, ওকী কী বলে, ওই দ্যাও একপোয়া নুচি খাবেন বাবু? হ্যাদে বাবুরি নুচি দ্যাও আটখানা—ভাজা নেই? তা ভেজে দ্যাও—

দেড় টাকা খরচ গেল শুধু আমার পিছু। খাবার খরচ গেল টাকাচারেক। বারিক মহাফুর্তিতে এক টাকার খাবার নিজেই খেলে।

সন্ধ্যা হয়ে গেল। সবাই মিলে অন্ধকারে বাড়ির দিকে রওনা হই। বারিক অন্ধকার পথে গান জুড়ে দিলে চেঁচিয়ে–

‘ওগো হরি বংশীধারী শ্যাম লটবর—‘

সোনাই মণ্ডল বাজার থেকে বড়ো দেখে দুটো ইলিশ মাছ কিনেচে, কারণ আজ তার হাতে কড়কড়ে আড়াইশো টাকা। জমি ওরা নাকি খুব সস্তায় দিয়েছে আমাকে। দলিল-লেখক আমাকে আড়ালে বলেছিল—আড়াইশো টাকায় সাত-আট বিঘের জমি কিনেছেন, তার মধ্যে পাঁচ বিঘে আমন ধানের জমি। সাব রেজিস্ট্রারবাবু এ দলিল এখন মঞ্জুর করলে হয়, দামটা কম বলে মনে হচ্ছে কিনা–

যা হোক, রেজিস্ট্রি হয়ে গেল, কোনো গোলমাল হয়নি।

বারিক মণ্ডল বললে—বাবু, আমাদের গাঁ আগে, তারপর আপনাদের গাঁ। এই অন্ধকারে কী করে যাবেন? সোনাই ইলিশ মাছ কিনেচে, আমাদের গ্রামে আজ থাকুন। ইলিশ মাছ রান্না করুন পেঁজ দিয়ে। আজ চলুন একটু ফুর্তি করা যাক—

আমি রাজি হলাম না। বাড়ি চলে এলাম অন্ধকারে।

বারিক আমার প্রজা হল। তখন শুনলাম বারিক অপরের জমিতে বাস করত, সে ভিটের খাজনা বহুদিন না-দেওয়াতে জমিদার ওর বাড়ি (অর্থাৎ একখানা চালাঘর) এবং একজোড়া বলদ বিক্রি করে ক্রোক দেবার উপক্রম করেছিল। তাই ও সে জমি ছেড়ে আমার জমিতে নতুন করে চালাঘর বাঁধল। আমার নতুন কেনা ধানের জমি ও-ই ভাগে চাষ করবার জন্যে বন্দোবস্ত করে নিলে। সেবার ধান রোয়া শেষ করলে।

বারিক রোজ সকালে একবার করে আমার বাড়ি ঠিক আসবে। এসে এ-গল্প ও গল্প করে ওঠবার সময় কিছু-না-কিছু ছুতোয় টাকা চাইবে।

—বাবু—

-–এসো বারিক। তামাক খাও।

—বাবু, বড্ড দায়ে পড়ে অ্যালাম। পাঁচটা টাকা দিতে হবে—

—কেন, হঠাৎ?

—আপনার জমিতি বারোমেসে চাষ দিয়ে রেখেচি। মুসুরি বোনতাম। যা হবে আপনার আর্ধেক, আমার আর্ধেক।

—বেশ নিয়ে যাও—

তারপর শুনলাম মুসুরি বুনবার টাকা দিয়ে বারিক ওর গানের দলের ডুগি তবলা কিনেচে।

একদিন বললাম—মুসুরি বুনলে বারিক?

—আজ্ঞে বাবু।

–ক-বিঘে?

—এক বিঘে।

—আর দু-বিঘে?

—বাবু, আর দু-টো টাকা দিতি হবে। খরচে কুলোচ্চে না।

—মিথ্যে কথা। তুমি তোমার গানের দলের ডুগি-তবলা কিনেচ সেই পয়সা দিয়ে। কোথায় তোমার গানের দল?

—ওই জেলেপাড়ার জেলে ছোঁড়াদের নিয়ে বসি। রোজ আখড়াই হয়। গান বাজনা ভালোবাসি বাবু। এবার পুজোর সময় ‘সাধন সমর’ বা ‘অজামিলের বৈকুণ্ঠলাভ’ নামাব বারোয়ারির আসরে—দেখি যদি খোদার মর্জি হয়—আমার ছোটো ছেলে কেষ্ট সাজে, দেখবেন কী গানের গলা—কী অ্যাক্টো—

—বেশ, বেশ—

—দেন বাবু দু-টো টাকা।

—নিয়ে যাও, কিন্তু মুসুরি ঠিক বুনবে।

—তা আর বলতি? কাল সকালেই বাকি দু-বিঘে সাঙ্গ করব।

ধানের সময় আমার ভাগে যে ধান দেওয়ার কথা, বারিক আমাকে তা দিলে না, অনেক কম দিলে। লোকে বললে—বাবু, ও ওইরকম। কত লোককে ফাঁকি দিয়েছে, আপনাকে ভালো মানুষ পেয়ে ফাঁকি তো দেবেই।

খুব রেগে বারিকের বাড়ি গেলাম। গিয়ে দেখে-শুনে বেশি রাগ রইল না। কী মুশকিল, এইরকম বাড়িঘর ওর! মাত্র একখানা চারচালা ঘর। ঘরের দরজা জানালার ফাঁকগুলো বাঁশের ঝাঁপ দিয়ে আটকানো, দোর পর্যন্ত নেই ঘরের। ওর দলিজে বিছানো আছে একখানা বেদে-চটা অর্থাৎ খেজুরপাতার বোনা পাটি, একটা কলঙ্কধরা তামার বদনা, একটা হুঁকো আর তামাক, টিকে রাখবার মাটির পাত্র। একখানা অত্যন্ত হেঁড়া ও ময়লা রাঙা নরুন-পাড় শাড়ি চালে শুকুচ্চে। চালের অন্যস্থানে একটা কুমড়োগাছ উঠেছে। উঠোনে একখানা ভাঙা গোরুরগাড়ি। সবসুদ্ধ মিলে অত্যন্ত ছন্নছাড়া অবস্থা।

কিন্তু বিষয়সম্পত্তি রাখতে গেলে ভাবপ্রবণ হলে চলে না। আমি কড়া সুরে বললাম, মোটে দু-বিশ ধান পেলাম তিন বিঘে জমিতে? আমার সবসুদ্ধ বাইশ তেইশ টাকা নিয়ে এসেচ, তার বদলে ধান দাও। আর বছরের ভিটের খাজনা দু টাকা তাও শোধ করো। নইলে কালই নালিশ ঠুকে দেব।

বারিকের দুটি ছেলে, বড়োটির বয়স আঠারো-উনিশ, ছোটোটির চোদ্দো পনেরো। তারা বাবার কাছেই দলিজে বসে গল্পগুঁজব করছিল। চট করে একখানা খুরসি পিঁড়ি এনে বড়ো ছেলেটা আমায় বসতে দিলে।

বারিক বললে—যা, কাঁঠালপাতা কী কলার পাতা নিয়ে আয়, বাবু তামাক খাবেন। ওরে আলি, শিগগির ছোট।

–থাক, আমার তামাকের দরকার নেই। ধান বের করো বাকি টাকার—

—ঠাণ্ডা হোন বাবু। তামুক খান আগে—

বারিক নিজে তামাক সেজে দিলে।

বললাম—তোমার ছেলেরা কী করে?

–বড়োটি গোরু চরায়। ওরা দুজনে ভালো গান গায়, শুনিয়ে দে বাবুকে একখানা গান।

-–থাক, গান এখন দরকার নেই, তুমি ধান বের করো।

—দেব বাবু দেব।

—আর খাজনা? আজ সব শোধ করে দিতে হবে। নইলে নালিশ হবে জানো?

—দেব বাবু, দেব, তামাক খান।

একটু পরে বারিক ও তার দুই ছেলেতে ধরাধরি করে দু-বস্তা ধান বার করে নিয়ে এল। বারিক বললে, বাবুর এই ধানগুলো ওঁর বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসতি হবে—গোরু দুটো খুঁজে নিয়ে এসে গাড়ি জুতে দে।

আমি বাধা দিয়ে বললাম—কত ধান?

—আড়াই বিশ।

–সাড়ে সাত মণ? এতে তো শোধ হবে না দেনা।

–বাবু, আল্লার কিরে, ঘরে আর ধান নেই। সব দেলাম আপনাদের। আর কিছু নেই, আপনি দেখে আসুন ঘরে।

—তোমার ধান রইল না?

—না বাবু, সব দেলাম।

—তুমি ছেলে-পিলে নিয়ে খাবে কী?

—তা আর কী করব বাবু। আমি নালিশকে বড্ড ভয় করি।

ওর কথা আমার বিশ্বাস হল না।

দুই বস্তা ধান গোরুরগাড়ি করে ওরা আমার বাড়ি পৌঁছে দিলে।

 

দু-দিন পরে বারিক তার দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে সন্ধ্যাবেলা আমার বাড়ির সামনে দিয়ে দেখি কোথায় যাচ্ছে। বারিকের বগলে বেহালা।

বললাম, ও বারিক, কোথায় চললে?

–আজ্ঞে বাবু সালাম। মহল্লা দিতে যাচ্ছি।

—তুমি কী বেহালা বাজাও?

—ওই অমনি একটু একটু। খোদার মর্জিতে।

 

জেলেপাড়ায় ওদের দলের ঘরে একদিন গিয়ে বেড়াতে বেড়াতে হাজির হলাম। বাঁওড়ের ধারে একটা জামগাছের ছায়ায় লম্বা দোচালা ঘর, কঞ্চির বেড়ার দেওয়াল, বসবার জন্যে খানচারেক পুরোনো মাদুর, এককোণে দু-জোড়া ডুগি তবলা, একখানা খোল, একজোড়া মন্দিরা, গোটা দুই থেলো হুঁকো টাঙানো বাঁশের খুঁটির গায়ে। জন-পাঁচ-ছয় লোক জুটেছে, বাকি এখনও আসেনি। আমাকে ওরা সরবে অভ্যর্থনা জানাল। বটতলাতে বসলাম। সামনে বাঁওড়ের স্বচ্ছ জলে পদ্মফুল আছে। লম্বা লম্বা জলজ ঘাসের মধ্যে দিয়ে সুড়ি বালি মাটির পথ গিয়ে জলের ঘাটে নেমেচে, পানকৌড়ি বসে আছে পাটা-শ্যাওলার দামে। ওপারে কাজি সাহেবের দরগা, ভাঙা পাঁচিলে মস্তবড়ো জিউলি গাছ বেড়ে উঠে সমস্ত দরগা ঘরের ওপর ঝুপসি ছায়া পড়ে আছে, আঠা ঝরে পড়চে গাছটার কাঁধ থেকে— খানিকটা সাদা, খানিকটা লাল—আঠা ঝরে ঝরে দরগাঘরের পশ্চিম দিকের পাঁচিলের কোণটা একেবারে ঢেকে গিয়েছে। দরগাতলার ঘাটের ওপারে আমিনপুর গ্রামের কৃষক-বধূরা মাটির কলসি কাঁখে জল নিতে যাওয়া-আসা করচে!

একজন তামাক সেজে কলকে আমার হাতে দিয়ে বললে—তামুক সেবা করুন —একটা কলার ডাঁটা কী এনে দেব?

আমি তামাক খেতে খেতে বললাম—তা একটু গান-বাজনা হোক শুনি।

সে বললে, বারিক এখনো আসেনি। সে না-এলে আরম্ভ হবে না বাবু। সে হল বেয়ালাদার। এ দলই তার। এর নাম বারিক অপেরা পার্টি।

—বাঃ বাঃ, নাম দিয়েচে কে?

—বাবু, মোরা তো ইংরেজি জানিনে। অন্য অন্য যাত্রাদলের কাগজে যেমন লেখা থাকে, তাই দেখে মোরা একটা মিল খাটিয়ে করিচি। ভালো হয়নি?

একটু পরে বারিক এসেও সেই কথা জিজ্ঞেস করলে।

আমি বললাম—নামের মতো নাম একটা হয়েছে বটে। খাসা নাম।

—গান শুনিয়ে দে, বাবুরি তামুক সেজে দে। ব্যস্তসমস্ত বারিককে ঠাণ্ডা করে আমি তাকে বেহালা বাজাতে বললাম। ওর দুই ছেলে বেশ গান গায়। ছোটো ছেলে কৃষ্ণ সাজে, বেশ কালো নধর চেহারাটি। তাকে বারিক বললে গান করে আমায় শুনিয়ে দিতে। সে রগে হাত দিয়ে তারস্বরে সোনাই যাত্রার এক গান আরম্ভ করলে :—

ওরে ও কিছান ভাই,
আমি হেথা বলে যাই
গওরেতে শোন সেই বাণী—

বললাম—বেশ, বেশ। কৃষ্ণের গান?

বারিক ধমক দিয়ে বললে—মানভঞ্জর পালার সেই গানখানা গা—আমার সঙ্গে ধর।

বলেই নিজেই রগে হাত দিয়ে আরম্ভ করলে—

ধনি, কী সুখে রাখিব পরাণ,
কানু হেন গুণনিধি, গ্রেহে না আইল যদি
অঝোরে বহিল দু-লয়ান—
(ও) লয়ান যে বহে যায়।
গুণমণির বিরহ-জ্বালায়
লয়ান যে বহে যায়—

বারিক গান করে মন্দ নয়। খানিকক্ষণ থেকে আমি চলে এলাম। জ্যোৎস্নারাত ছিল। বারিক কী আসতে দেয়? বসুন বসুন, চন্দ্রাবলীর গান একটা শুনে যান না? আমি নিজে শিখিয়েছি।

রাত এগারোটার সময় দেখি আমার বাড়ির সামনে দিয়ে ছেলে দুটিকে সঙ্গে নিয়ে বারিক বাড়ি ফিরচে বন-জঙ্গলের পথ দিয়ে। বারিকের বাড়ি চালদী গ্রামে, ওদের যেখানে বাঁওড়ের ধারে গান-বাজনা হয়, বারিকের বাড়ি থেকে সে জায়গা দেড় মাইলের ওপর। এই পথের অধিকাংশই ঘন বন-জঙ্গলে ভরা, সাপখোপের ভয় তো নিশ্চয়ই আছে এত রাত্রে।

বারিককে ডেকে বললাম—আলো নিয়ে যাও না কেন বারিক? বারিক রাস্তায় দাঁড়িয়ে বললে—কে, বাবু? এখানো জাগন্ত আছেন? আর বাবু আলো! কেরাচিন তেল কনে পাব? কেরাচিন তেল অভাবে অন্ধকারে ভাত খেতে হচ্চে রোজ রোজ। গান কেমন শোনলেন? আগাগোড়া নিজে শেখানো বাবু। ওরা সব জেলে-মালো, বেতালা বেসুরো গান গাইত। হাতে-নাতে শেখালাম বাবু

বারিক এমন ভাব প্রকাশ করলে যেন সে স্বয়ং ফৈয়াজ খাঁ। আমি তাকে এক আঁটি পাকাটি দিয়ে মশাল জ্বেলে নিয়ে বাড়ি যেতে বললাম। হাটে ওদের গ্রামের সোনাই মণ্ডলের সঙ্গে দেখা—যে সোনাই মণ্ডল তার ধানের জমি আমার কাছে বিক্রি করেছিল। বেগুন বিক্রি করছে দেখে বললাম— সোনা ভালো আছ?

–আজ্ঞে হাঁ, একরকম বাবু।

—বেগুন দেও দু-সের।

—বাবু, একটা কথা আপনাকে বলতাম। বারিকের অবস্থা যে খুব খারাপ হল, আপনি মনিব, আপনাকে না-বললি আর কাকে বলি?

ভাবলাম, বারিকের বোধ হয় খুব অসুখ হয়েছে। কিন্তু দু-চার দিন আগে তাকে গান করে বাড়ি ফিরতে দেখলাম যে? কী হয়েছে তার?

সোনাই বললে, তা না বাবু। ওর বড়ো দুর্দশা হয়েছে। আপনার কাছে এক মুঠো টাকা দেনা ছিল। আপনি ধানগুলো নিয়ে গেলেন—আর ঘরে খোরাকির ধান রইল না। যার কাছে নেবে, তা আর ফেরত দেবে না এই ওর দোষ। নলে নাপিতের আর রামচরণ ময়রার গোলা থেকে আর-বছর সমানে ধান কর্জ নিয়েছে, একটি দানা শোধ করেনি। সেদিন নালিশ করে রামচরণ ময়রা ওর বলদ ক্রোক দিয়ে নিয়ে গিয়েচে গত সোমবারে। ধান কর্জ পাচ্ছে না কারো কাছে, একবেলা খেতে পাচ্চে একবেলা খাওয়া জোটচে না। বস্তুর আবানে ওর ইস্তিরির ঘরের বার হওয়ার উপায় নেই। ছেলে দুটো আহম্মদ দফাদারের বাড়ি ওবেলা দুটো ভাত খেয়েছে। স্বামী-ইস্তিরির বোধ হয় খাওয়াও হয়নি আজ।

আশ্চর্য হয়ে বললাম—সে কী কথা! গত সোমবারে ওর গোরু ক্রোক হয়েছে বলছ, সেই সোমবার সন্দের সময়েই যে ওকে বারিক অপেরা পার্টির ঘরে মহাআনন্দে দুই ছেলেকে নিয়ে গান করতে দেখিচি!

—তা দেখবেন বাবু। ও যে ওইরকম লোক। কাল কী খাবে সে ভাবনা নেই —দেখুন গিয়ে দুই ছেলে নিয়ে বেহালা বাজাচ্চে–

-–ধান নেই ঘরে?

—এক দানা নেই বাবু।

—ওর মহাজনের কাছে কর্জ করে না কেন?

–ওই যে বললাম বাবু, সেদিকি যাবার যো আছে? মহাজনের ঘরে সতেরো শলি ধান কর্জ নিয়েছিল, তার এক খুঁচি ধান শোধ করেনি। দেনায় মাথার চুল বিক্রি। যার নেবে তারে আর দেবে না। কথার একদম ঠিক নেই। কেউ বিশ্বেস করে আর দেয় না।

এর কিছুদিন পরে বারিক আমার কাছ থেকে দশটা টাকা ধার নিয়ে গেল। কলাই বেচে টাকা শোধ করবে এই শর্তে তাকে টাকা ধার দিলাম। খেতের কলাই-মুগ সব যে যার বিক্রি করে ফেললে, বারিক আমার সঙ্গে আর দেখাও করলে না। একদিন হাটে খবর পেলাম বারিকের কলাই-মুগ আহম্মদ দফাদার সব কিনে নিয়েছে। শুনে আমার ভয়ানক রাগ হল। বারিকের বাড়ি পরের দিন সকালেই গেলাম। বারিকের প্রতিবেশী তোফাজ্জেল বললে—বাবু শিগগির যান, সে এখনো তার দলিজে বসে তামুক খাচ্ছে, আপনি যাচ্ছেন শুনলি পেলিয়ে যেতে পারে। পাওনাদার এলেই পালাবে—ওর স্বভাবই ওই।

বারিকের ঘরদোরের অবস্থা আরও ছন্নছাড়া। চালের খড় গত বর্ষায় পচে ঝুলে পড়েছে, উঠোনের মাঝখানে মুগ-কলাই মাড়বার খামার, এক পাশে ভুসি পাকার হয়ে আছে! গাড়ি-গোরু নেই উঠোনে।

বারিক আমাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠল। মুখ ওর শুকিয়ে গেল।

—আসুন বাবু, সালাম। দলিজে ওঠে বসুন। ওরে আলি, খুরসি পিঁড়িখানা বাবুরি পেতে দে—

—থাক গে পিড়ি। আমি এসেছিলাম তোমার কাছে—মুগ-কলাই বিক্রি হয়েছে?

—হ্যাঁ বাবু।

—আমার টাকা দাও—

—ট্যাকা এখনো মোর হাতে আসেনি বাবু।

—মিথ্যে কথা। কার কাছে বিক্রি করেচ? আহম্মদ দফাদারের কাছে তো? সে সংবাদ আমি রাখি। আহম্মদ কারো পয়সা বাকি রাখবার লোক নয়। টাকা বের করো—

বারিক নির্বিকারভাবে আমার জন্যে তামাক সাজতে লাগল। তামাক সাজা শেষ। করে আমার দিকে কলকে এগিয়ে দিয়ে বললে, তামুক সেবন করুন—

—আমার কথার উত্তর দাও।

—আপনি নেয্য বলেচেন। টাকা ওরা দিইছিল, তা সংসারের জ্বালায়—সে টাকা মোর খরচ হয়ে গিয়েছে। তবলা ছাইতে খরচ হল তিন টাকা, বেহালার তার এনেলাম মুকুন্দ তেলির দোকান থেকে

—ওসব বাজে কথা শুনতে চাইনে। খেতে পাও না, মহাজনের দেনা শোধ করবার যখন ক্ষমতা নেই, তখন অত শখ কেন? বাড়িঘরের তো এই অবস্থা— গাড়ি-গোরু কী হল?

আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে ওর প্রতিবেশীদের মধ্যে কে একজন। আমার চড়া সুর শুনে অনেকে জড়ো হয়েছিল ওর ঘরের সামনে। বললে—ওরে আর কিছু বলবেন না বাবু। লোকটার আর কিছু নেই—

—গাড়ি-গোরু কী হল?

—রামচরণ ময়রা গোরু ক্রোক দিয়ে নিয়ে গেল, গাড়িও বিক্রি করে ফেলেছে আহম্মদ দফাদারের কাছে। গাড়ি-গোরু না-থাকলে চাষার উঠোন মানায়? বলি ও চাচা, বাবুর কাছে থেকে টাকা আনলে কেন, যদি শোধ করতে পারবা না? ভদ্রলোকের কাছে কথা ভাঙো কেন তুমি? একেবারে দশায় ধরেচে তোমায় ছ্যাঃ, জুয়েচুরি করো কেন?

বারিক মুখ চুন করে বসে রইল, আর সকলের হাতে হাতে কলকে পরিবেশন করতে লাগল। আমি নিরুপায় হয়ে চলে এলাম। বারিক কোনো কথা গায়ে মাখে না, কে যেন কাকে বলচে।

 

বারিকের বাড়ি কিছুদিন আর গেলাম না। টাকা আদায় হবে না জানি, ওর সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক রাখব না। টাকাকড়ির সম্পর্ক নয়ই।

বারিকের সঙ্গে মাসদুই পরে একদিন হাটে হঠাৎ দেখা। কাঁধে একখানা ময়লা গামছা, পরণে হেঁড়া আধময়লা ধুতি লুঙ্গির মতো করে পরা। সদাহাস্যমুখ বারিক আমাকে দেখে বল্লে, বাবু, সালাম। আমাদের ওদিকি আর যান না?

—না। আমার অন্য কাজ আছে।

—আজ একবার মহল্লাঘরে যাবেন বাবু ও-বেলা? দুটো গান শোনাতাম আর দেখতেন আমাদের ‘সাধন সমর’ পালাটা কীরকম হল। আজ পুরো মহল্লা হবে।

পরশু গান হবে আরামডাঙায় বিশ্বেসদের বাড়ি।

—আমার সময় হবে না।

—ও কথা বললি বাবু শুনচিনে। আসুন দয়া করে। আপনারে গান শোনাতে বড় ভালো লাগে। যাবেন বাবু।

ওর অনুরোধ এড়াতে পারলাম না। সন্ধ্যার কিছু আগেই বাঁওড়ের ধারে ওদের বারিক অপেরা পার্টির মহলাঘরে গিয়ে বসলাম। বারিক ও তার দুই ছেলে ঠিক সন্ধ্যার সময়ে এল। তখন বাঁওড়ের দিক থেকে ফুরফুরে হাওয়ায় বড্ড শীত করছে, সময়টা মাঘ মাসের প্রথম সপ্তাহ। বারিকের গায়ে একখানা বহু পুরোনো কুষ্টিয়ার চাদর। জ্যোৎস্না-রাত্রি। আমি বাইরেই বসে রইলাম। বারিক মহাব্যস্ত অবস্থায় কখনো গান করে, কখনো এর গানের ভুল ধরে, ওর তালের ভুল ধরে, হাসি ঠাট্টা ও অঙ্গভঙ্গি কীভাবে করতে হবে বিদূষকের ভূমিকায় তা শিক্ষা দেয়, ছেলেকে শিখিয়ে দেয় কৃষ্ণের ভূমিকায় কীরকম বেঁকে দাঁড়াতে হবে, এর দোষ ধরে, ওর গুণ গায়—মোটকথা এই বয়সে তার উৎসাহ, আমোদ, লম্ভঝম্প একটা দেখবার জিনিস।

আবার বাইরে এসে আমার কাছে বলে, বাবু, বিড়ি খান একটা। দ্যাখচেন কেমন? আমার নামে যখন এ দল, তখন বারিক অপেরা পার্টির যাতে বাইরে নাম ভালো হয়, তা আমাকেই দেখতে হবে, না কী বাবু? অজামিল ক্যামন দ্যাখলেন? চলবে? কেষ্ট? বেশ, আপনারা ভালো বললিই ভালো।

কে বলবে এই সেই বারিক, যার দু-বেলা খাওয়া হয় না, যার গাড়ি-গোরু পর্যন্ত মহাজন ক্রোক দিয়েছে, দেনায় যার মাথার চুল বিক্রি, যার বয়েস পঞ্চান্নর কোঠা ছাড়াতে চলছে। এই মহল্লায় ও একাই একশো।

 

পরদিনই হাটে আহম্মদ দফাদার ওকে কী করে অপমান করলে আমার সামনে। চেঁচামেচি শুনে গিয়ে দেখলাম, আহম্মদ ওর গলায় গামছা দিয়ে টানাটানি করছে। আহম্মদ চালদীগ্রামের অবস্থাপন্ন লোক, লম্বা দাড়ি রাখে, বেশ একটু গর্বিত, ঘোড়ায় চড়ে বেড়ায়। এবার ধানের দাম সাড়ে ষোলো টাকা পর্যন্ত উঠেছিল, দুটি গোলা ভরতি প্রায় হাজার মণ ধান চড়া দরে বিক্রি করে আহম্মদ টিনের বাড়ি ঘুচিয়ে দোতলা কোঠাবাড়ি করেছে।

আমি গিয়ে বললাম—কী করো আহম্মদ? ওকে ছেড়ে দাও, ছি, তোমার চেয়ে বয়েসে কত বড়ো না!

আহম্মদ হাতে পয়সা করেছে, কাউকে মানে না। আমার দিকে ফিরে বললে— আজ জুতিয়ে ওর ইয়ে দেখিয়ে দেব বাবু, এত বড়ো আস্পদ্দা, আমার সঙ্গে জুয়াচুরি কথা বলে। মুগ দেব বলে বায়নার টাকা নিয়েচে সেই আর-বছর। দু-মণ কলাই দিয়ে আর টাকাও দেয় না, কলাইও দেয় না। রোজ বলে দিচ্ছি দেব, আজ আমি ওরে—আমার সঙ্গে কিনা ঠকামি কথা বলে বাবু? এত বড়ো ওর সাহস? (যেন সাক্ষাৎ ভাইসরয় কিংবা মহাত্মা গান্ধি কিংবা গৌরগোপাল ভক্তিবিনোদ গোস্বামী কিংবা বশিষ্ঠ মুনি কিংবা জুলু সর্দার লোচবক্ষুলা)।

বারিক তখন বলছে—ছেড়ে দ্যান বাবু, আমি ও সুমুন্দিকে একবার দেখে। নেতাম! আপনি ধরলেন কেন?

আহম্মদ আবার সবেগে ঠেলে উঠে বললে—তবে রে—

আবার তাকে কোনোরকমে ঠাণ্ডা করি।

আহম্মদকে বললাম—কত টাকা পাবে?

—তা বাবু অনেক। খেতি পায় না, দু-বিশ ধান দেলাম আশ্বিন মাসে। সাতাশ টাকা নিলে মুগির দাম, মোটে দু-মণ কলাই দিলে, এখনো পনেরো টাকা তার দরুন বাকি। ঝিঙের ভুই করে গাঙের ধারে, তার দু-বছরের খাজনা সাড়ে চার টাকা। আমার গাছ থেকে ব্যাবসা করবে বলে দেড়কুড়ি নারিকেল পেড়ে আনে, তার দরুন একটা পয়সা দেয়নি—ওর মতো মিথ্যেবাদী ফেরেববাজ জুয়াচোর এ দিগরে পাবেন না—আপনিও তো শুনি পাবেন—এক মুঠো টাকা—

বারিকের প্রতিবেশী সোনাই মণ্ডল আমাকে আড়ালে বললে—বাবু, দু-কাঠা মুসুরি আর দু-টো মানকচু বেচতি এনলে বারিক, তা সব আহম্মদ কেড়ে নিয়েছে। হাটে ওই বেচে চাল কিনে নিয়ে যাবে, তবে ওদের খাওয়া হত। কী অন্যায় কাণ্ড দেখুন দিকি? ছ-আনা পয়সা হবে আপনার কাছে? বেগুন-পটলটা ওকে কিনে দি—

সেই দিনই রাত প্রায় দশটার সময় শুনলাম বারিক উচ্চৈ:স্বরে রাগিণী ভাঁজতে ভাঁজতে বারিক অপেরা পার্টির মহল্লা দিয়ে ফিরছে—

‘তুমি কোন অংশে বলো কোন বংশে
কারে-এ-এ করেচ সুখী–
নামটি তোমার দয়াময়
কথায় বটে কাজে নয়”—ইত্যাদি।

এর পরে অনেক দিন আমার সঙ্গে ওর দেখা হয়নি।

একদিন সোনাই মণ্ডলের সঙ্গে আমার দেখা। তাকে বলি—বারিক কেমন আছে?

—আর বাবু! আপনি শোনেননি? তার যে সব্বনাশ হয়ে গিয়েছে!

—কী-কী-কী ব্যাপার? কী হল?

—ওর সেই বড়ো ছেলেটা আজ সাত দিন হবে মরে গিয়েছে!

—সে কী কথা? কি হয়েছিল?

—বাবু, পুরোনো জ্বরে ভুগছিল। পেটে পিলে। রোজ সন্দেবেলা জ্বর হত। ওষুধ নেই, পথ্যি নেই। জ্বর সেরে গেল তো পান্তা ভাত আর পটল পেঁজপোড়া খেলে! সে দিন রাত্তিরে জ্বর হয়েছে ওর সেই অপেরা পার্টি থেকে গান সেরে এসে। ভোরবেলা মারা গেল। কাফনের কাপড় জোটে না শেষে, এই তো অবস্থা। বুড়ো বয়েসে ওই ছেলেডা তবুও মাথাধরা হয়ে ঠেলে উঠছিল। আর একটা ছেলে, সে তো বাচ্চা, তার ভরসা কী?

অত্যন্ত মর্মাহত হলাম বলাবাহুল্য। মনের কোণে ঘোর মিথ্যেবাদী, জুয়াচোর, সদাপ্রফুল্ল, বৃদ্ধ বারিকের প্রতি একটু অনুকম্পার ভাব সঞ্চিত ছিল। কাল সকালে একবার বারিকের বাড়ি যাব। ভাগের জমি দু-বছর কেড়ে নিয়েছিলাম ওর কাছ থেকে, এবার ওর সঙ্গেই আবার বন্দোবস্ত করব। পুত্র-শোকাতুর বৃদ্ধকে সান্ত্বনা দেওয়া উচিত, সাহায্য করা উচিত।

সেই দিনই রাত দশটা-এগারোটা। গোঁসাইবাড়িতে জন্মাষ্টমীর নিমন্ত্রণ খেতে যেতে যেতে শুনি কোথা থেকে বাঁশি, বেহালা, ডুগি-তবলা ও মানুষের গলার একটা সম্মিলিত রব ভেসে আসছে। নিমচাঁদ গারই বললে—বাবু, গোঁসাইবাড়ির নাটমন্দিরে আজ জন্মাষ্টমীর দিন বারিক অপেরা পার্টির গাওনা হচ্চে। বেশ ভালো পালা হবে, গিয়ে শুনুন।

আসরে গিয়ে দেখি বারিক বিদূষকের ভূমিকায় দাড়ি নেড়ে নেড়ে খুব লোক হাসাচ্চে। পালা হচ্ছে ‘সাধন সমর’ বা ‘অজামিলের বৈকুণ্ঠলাভ’।


© 2024 পুরনো বই