সপ্তদশ পরিচ্ছেদ
পরদিন বৈকালে গয়ায় নামিয়া সে বিষ্ণুপাদমন্দিরে পিণ্ড দিল। ভাবিল, আমি এসব মানি বা না মানি, কিন্তু সবটুকু তো জানি নে? যদি কিছু থাকে, বাপ-মায়ের উপকারে লাগে! পিণ্ড দিবার সময়ে ভাবিয়া ভাবিয়া ছেলেবেলায় বা পরে যে যেখানে মারা গিয়াছে বলিয়া জানা ছিল, তাহাদের সকলেরই উদ্দেশে পিণ্ড দিল। এমন কি, পিসিমা ইন্দির ঠাকরুনকে সে মনে করিতে না পারিলেও দিদির মুখে শুনিয়াছে, তার উদ্দেশে-আতুরী ডাইনি বুড়ির উদ্দেশেও।
বৈকালে বুদ্ধগয়া দেখিতে গেল। অপুর যদি কাহাবও উপর শ্রদ্ধা থাকে তবে তাহার আবাল্য শ্রদ্ধা এই সত্যদ্রষ্টা মহাসন্ন্যাসীর উপর। ছেলের নাম তাই সে রাখিয়াছে অমিতাভ।
বামে ক্ষীণস্রোতা ফয়ু কটা রংয়ের বালুশয্যায় ক্লান্তদেহ এলাইয়া দিয়াছে, ওপারে হাজারিবাগ জেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়শ্রেণী, সারাপথে ভারি সুন্দর ছায়া, গাছপালা, পাখির ডাক, ঠিক যেন বাংলাদেশ, সোজা বাঁধানো রাস্তাটি ফর ধারে ধারে ডালপালার ছায়ায় ছায়ায় চলিয়াছে, সারাপথ অপু স্বপ্নাভিভূতের মতো এক্কার উপর বসিয়া রহিল। একজন হালফ্যাশানের কাপড়পরা তরুণী মহিলা ও সম্ভবত তাঁহার স্বামী মোটরে বুদ্ধগয়া হইতে ফিরিতেছিলেন, অপু ভাবিল হাজার হাজার বছর পরেও এ কোন্ নূতন যুগের ছেলেমেয়ে প্রাচীনকালের সেই পীঠস্থানটি এমন সাগ্রহে দেখিতে আসিয়াছিল? মনে পড়ে সেই অপূর্ব রাত্রি, নবজাত শিশুর চাদমুখ.হন্দক. গয়ার জঙ্গলে দিনের পর দিন সে কি কঠোর তপস্যা। কিন্তু এ মোটর গাড়ি? শতাব্দীর ঘন অরণ্য পার হইয়া এমন একদিন নামিয়াছে পৃথিবীতে পুরাতনের সবই চূর্ণ করিয়া, উলটাইয়া-পালটাইয়া নবযুগের পত্তন করিয়াছে। রাজা শুদ্ধোদনের কপিলাবস্তুও মহাকালের স্রোতের মুখে ফেনার ফুলের মতো কোথায় ভাসিয়া গিয়াছে, কোন চিহ্নও রাখিয়া যায় নাই কিন্তু তাহার দিগ্বিজয়ী পুত্র দিকে দিকে যে বৃহত্তর কপিলাবস্তুর অদৃশ্য সিংহাসন প্রতিষ্ঠা করিয়া গিয়াছেন—তাঁহার প্রভুত্বের নিকট এই আড়াই হাজার বৎসর পরেও কে না মাথা নত করিবে?
গয়া হইতে পরদিন সে দিল্লি এক্সপ্রেসে চাপিল—একেবারে দিল্লির টিকিট কাটিয়া। পাশের বেঞ্চিতেই একজন বাঙালি ভদ্রলোক ও তাঁহার স্ত্রী যাইতেছিলেন। কথায় কথায় ভদ্রলোকটির সঙ্গে আলাপ হইয়া গেল। গাড়িতে আর কোন বাঙালি নাই, কথাবার্তার সঙ্গী পাইয়া তিনি খুব খুশি। অপুর কিন্তু বেশি কথাবার্তা ভালো লাগিতেছিল না। এরা এ-সময় এত বকবক করে কেন? মারোয়াড়ি দুটি তো সাসারাম হইতে নিজেদের মধ্যে বকুনি শুরু করিয়াছে, মুখের আর বিরাম নাই।
খুশিভরা, উৎসুক, ব্যগ্র মনে সে প্রত্যেক পাথরের নুড়িটি, গাছপালাটি লক্ষ করিয়া চলিয়াছিল। বামদিকের পাহাড়শ্রেণীর পেছনে সূর্য অস্ত গেল, সারাদিন আকাশটা লাল হইয়া আছে, আনন্দে আবেগে সে দ্রুতগামী গাড়ির দরজা খুলিয়া দরজার হাতল ধরিয়া দাঁড়াইতেই ভদ্রলোকটি বলিয়া উঠিলেন, উহু, পড়ে যাবেন, পাদানিতে স্লিপ করলেই বন্ধ করুন মশাই।
অপু হাসিয়া বলিল, বেশ লাগে কিন্তু, মনে হয় যেন উড়ে যাচ্ছি।
গাছপালা, খাল, নদী, পাহাড়, কাকর-ভরা জমি, গোটা শাহাবাদ জেলাটা তাহার পায়ের তলা দিয়া পলাইতেছে। অনেক দূর পর্যন্ত শোণ নদের বালুর চড়া জ্যোৎস্নায় অদ্ভুত দেখাইতেছে। নীলনদ? ঠিক এটা যেন নীলনদ। ওপারে সাত-আট মাইল গাধার পিঠে চড়িয়া গেলে ফ্যারাও রামেসিসের তৈরি আবু সিম্বেলের বিরাট পাষাণ মন্দির-ধূসর অস্পষ্ট কুয়াশায় ঘেরা মরুভূমিব মধ্যে অতীতকালের বিস্মৃত দেবদেবীর মন্দির, এপিস, আইসিস, হোরাস, হাথর, রানীলনদ যেমন গতির মুখে উপলখণ্ড পাশে ঠেলিয়া রাখিয়া পলাইয়া চলে—মহাকালের বিরাট রথচক্র তাণ্ডব নৃত্যচ্ছন্দে সব স্থাবর অস্থাবর জিনিসকে পিছু ফেলিয়া মহাবেগে চলিবার সময়ে এই বিরাট গ্রানাইট মন্দিরকে পথের পাশে ফেলিয়া রাখিয়া চলিয়া গিয়াছে, জনহীন মরুভূমির মধ্যে বিস্মৃত সভ্যতার চিহ্ন মন্দিরটা কোন বিস্মৃত ও বাতিল দেবদেবীর উদ্দেশে গঠিত ও উৎসর্গীকৃত।
একটু রাত্রে ভদ্রলোকটি বলিলেন, এ লাইনে ভালো খাবার পাবেন না, আমার সঙ্গে খাবার আছে, আসুন খাওয়া যাক।
তাঁহার স্ত্রী কলার পাতা চিরিয়া সকলকে বেঞ্চির উপর পাতিয়া দিলেন—লুচি, হালুয়া ও সন্দেশসকলকে পরিবেশন করিলেন। ভদ্রলোকটি বলিলেন, আপনি খানকতক বেশি লুচি নিন, আমরা তো আজ মোগলসরাইয়ে ব্রেকজার্নি করব, আপনি তো সোজা দিল্লি চলেছেন।
এ-ও অপুর এক অভিজ্ঞতা। পথে বাহির হইলে এত শীঘ্রও এমন ঘনিষ্ঠতা হয়! এক গলির মধ্যে শহরে শত বর্ষ বাস করিলেও তো তাহা হয় না? ভদ্রলোকটি নিজের পরিচয় দিলেন, নাগপুরের কাছে কোন গবর্নমেন্ট রিজার্ভ ফরেস্টে কাজ করেন, দুটি লইয়া কালীঘাটে শ্বশুরবাড়ি আসিয়াছিলেন, ছুটি অন্তে কর্মস্থানে চলিয়াছেন। অপুকে ঠিকানা দিলেন। বার বার অনুরোধ করিলেন, সে যেন দিলি হইতে ফিরিবার পথে একবার অতি অবশ্য যায়, বাঙালির মুখ মোটে দেখিতে পান না–অপু গেলে তাহারা তো কথা কহিয়া বাঁচেন। মোগলসরাই-এ গাড়ি দাঁড়াইল। অপু মালপত্র নামাইতে সাহায্য করিল। হাসিয়া বলিল—আচ্ছা বৌ-ঠাকরুন, নমস্কার, শীগগিরই আপনাদের ওখানে উপদ্রব করছি কিন্তু।
দিল্লিতে ট্রেন পৌঁছাইল রাত্রি সাড়ে এগারোটায়।
গাজিয়াবাদ স্টেশন হইতেই সে বাহিরের দিকে ঝুঁকিয়া চাহিয়া দেখিল যে দিল্লিতে গাড়ি আসিতেছিল তাহা এস, কাপুর কোম্পানির দিল্লি নয়, লেজিসলেটিভ অ্যাসেমব্লির মেম্বারদের দিল্লি নয়, এসিয়াটিক পেট্রোলিয়মের এজেন্টের দিল্লি নয়-সে দিল্লি সম্পূর্ণ ভিন্ন-বহুকালের বহুযুগের নরনারীদের—মহাভারত হইতে শুরু করিয়া রাজসিংহ ও মাধবীকঙ্কণ,—সমুদয় কবিতা, উপন্যাস, গল্প, নাটক, কল্পনা ও ইতিহাসের মালমশলায় তাহার প্রতি ইটখানা তৈরি, তার প্রতি ধূলিকণা অপুর মনের রোমান্সে সকল নায়ক-নায়িকার পুণ্য-পাদপূত-ভীষ্ম হইতে আওরঙ্গজেব ও সদাশিব রাও পর্যন্ত গান্ধারী হইতে জাহানারা পর্যন্ত সাধারণ দিল্লি হইতে সে দিল্লির দূরত্ব অনেক। দিল্লি হনৌজ দূর অস্ত, বহুদূর-বহু শতাব্দীর দূর পারে, সে দিল্লি কেহ দেখে নাই।
আজ নয়, মনে হয় শৈশবে মায়ের মুখে মহাভারত শোনার দিন হইতে ছিরের পুকুরের ধারের বাঁশবনের ছায়ায় কাঁচা শেওড়ার ডাল পাতিয়া রাজপুত জীবনসন্ধ্যা ও মহারাষ্ট্র জীবন-প্রভাত পড়িবার দিনগুলি হইতে, সকল ইতিহাস, যাত্রা, থিয়েটার, কত গল্প, কত কবিতা, এই দিল্লি, আগ্রা, সমগ্র রাজপুতানা ও আর্যাবর্ত—তাহার মনে এক অতি অপরূপ, অভিনব, স্বপ্নময় আসন অধিকার করিয়া আছে—অন্য কাহারও মনে সে রকম আছে কিনা সেটা প্রশ্ন নয়, তাহার মনে আছে এইটাই বড়ো কথা।
কিন্তু বাহিরে ঘন অন্ধকার, কিছু দেখা যায় না—অনেকক্ষণ চাহিয়া কেবল কতকগুলো সিগন্যালের বাতি ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না, একটা প্রকাণ্ড ইয়ার্ড কেবিন, লেখা আছে দিল্লি জংশন ইস্ট—একটা গ্যাসোলিনের ট্যাঙ্ক—তাহার পরই চারিদিকে আলোকিত প্ল্যাটফর্মপ্রকাণ্ড দোতলা স্টেশন–সেই পিয়ার্স সোপ, কিটিংস পাউডার, হলস্ ডিসটেম্পার, লিপটনের চা। আবদুল আজিজ হাকিমের রৌশনেসেকাৎ, উৎকৃষ্ট দাদের মলম।
নিজের ছোট ক্যানভাসের সুটকেস ও ছোট বিছানাটা হাতে লইয়া অপু স্টেশনে নামিল-রাত অনেক, শহর সম্পূর্ণ অপরিচিত, জিজ্ঞাসা করিয়া জানিল, ওয়েটিংরুম দোতলায়, রাত্রি সেখানে কাটানোই নিরাপদ মনে হইল।
সকালে উঠিয়া জিনিসপত্র স্টেশনে জমা দিয়া সে বাহিরে আসিয়া দাঁড়াইল। অর্ধমাইলব্যাপী দীর্ঘ শোভাযাত্রা করিয়া সুসজ্জিত হস্তীপৃষ্ঠে সোনার হাওদায় কোন শাহাজাদী নগরভ্রমণে বাহির হইয়াছেন কি? দুধারে আবেদনকারী ও ওমরাহ দল আভূমি তসলিম করিয়া অনুগ্রহভিক্ষার অপেক্ষায় করজোড়ে খাড়া আছে কি? নব আগন্তুক নরেন্দ্রনাথ পাংশাবেগমের কোন্ সবাইখানায় ধূমপানরত বৃদ্ধ পারস্যদেশীয় শেখের নিকট পথের কথা জিজ্ঞাসা করিয়াছিল?
কিন্তু এ যে একেবারে কলকাতার মতই সব! এমন কি মণিলাল জুয়েলার্সের বিজ্ঞাপন পর্যন্ত। দুজন লোক কলিকাতা হইতে বেড়াইতে আসিয়াছিল, টাঙাভাড়া সস্তা পড়িবে বলিয়া তাহাকে তাহারা সঙ্গে সইবার প্রস্তাব করিল। কুতবের পথে একজন বলিল, মশাই, আরও বার-দুই দিল্লি এসেছি, কুতবের মুরগির কাটলেট—আঃ, সে যা জিনিস, খান নি কখনও, না? চলুন, এক ডজন কাটলেট অর্ডার দিয়ে তবে উঠব কুতবমিনারে।
বাল্যকালে দেওয়ানপুরে পড়িবার সময় পুরোনো দিল্লির কথা পড়িয়া তাহার কল্পনা করিতে গিয়া বার বার স্কুলের পাশের একটা পুরাতন ইটখোলার ছবি অপুর মনে উদয় হইত, আজ অপু দেখিল পুরাতন দিল্লি বাল্যের সে ইটের পাঁজাটা নয়। কুতবমিনার নতুন দিল্লি শহর হইতে যে এতদূর তাহা সে ভাবে নাই। তদুপরি সে দেখিয়া বিস্মিত হইল এই দীর্ঘ পথের দুধারে মরুভূমির মতো অনুর্বর কাঁটাগাছ ও ফণিমনসার ঝোপে ভরা রৌদ্রদগ্ধ প্রান্তরের এখানে-ওখানে সর্বত্র ভাঙা বাড়ি, মিনার-মসজিদ, কবর, খিলান, দেওয়াল। সাতটা প্রাচীন মৃত রাজধানীর মূক কঙ্কাল পথের দুধারে উঁচুনিচু জমিতে বাবলাগাছ ও ক্যাকটাস গাছের ঝোপ-ঝাপের আড়ালে হৃতগৌরব নিস্তব্ধতায় আত্মগোপন করিয়া আছে—পৃথ্বীরায় পির্থেীরার দিল্লি, লালকোট, দাসবংশের দিলি, তোগলকদের দিলি, আলাউদ্দীন খিলজির দিল্লি, শিরি ও জাহানপনাহ, মোগলদের দিল্লি। অপু জীবনে এ রকম দৃশ্য দেখে নাই, কখনও কল্পনাও করে নাই, সে অবাক হইল, অভিভূত হইল, নীরব হইয়া গেল, গাইডবুক উলটাইতে ভুলিয়া গেল, ম্যাপের নম্বর মিলাইয়া দেখিতে ভুলিয়া গেল—মহাকালের এই বিরাট শোভাযাত্রা একটার পর একটা বায়োস্কোপের ছবির মতো চলিয়া যাইবার দৃশ্যে সে যেন সম্বিহারা হইয়া পড়িল। আরও বিশেষ হইল এইজন্য যে মন তাহার নবীন আছে। কখনও কিছু দেখে নাই, চিরকাল আঁস্তাকুড়ের আবর্জনায় কাটাইয়াছে অথচ মন হইয়া উঠিয়াছে সর্বগ্রাসী, বুভুক্ষু। তাই সে যাহা দেখিতেছিল, তাহা যেন বাহিরের চোখটা দিয়া নয়, সে কোন তীক্ষদর্শী তৃতীয় নেত্র, যেটা না খুলিলে বাহিরের চোখের দেখাটা নিল হইয়া যায়।
ঘুরিতে ঘুরিতে দুপুরের পর সে গেল কুতব হইতে অনেক দূরে গিয়াসউদ্দিন তোলকের অসমাপ্ত নগর-তোগলকাবাদে। গ্রীষ্ম দুপুরের খররৌদ্রে তখন চারিধারের ঊষরভূমি আগুন-রাঙা হইয়া উঠিয়াছে। দূর হইতে তোগলকাবাদ দেখিযা মনে হইল যেন কোন দৈত্যের হাতে গাঁথা এক বিরাট পাষাণদুর্গ! তৃণবিরল উষরভূমি, পত্রহীন বাবলা ও কন্টকময় ক্যাক্টাসের পটভূমিতে খরবৌদ্রে সে যেন এক বর্বর-অসুরবীর্য সুউচ্চ পাষাণ দুর্গপ্রাচীর হইতে সিন্ধু, কাথিয়াবাড়, মালব, পাঞ্জাব,সারা আর্যাবর্তকে ভ্রুকুটি করিযা দাঁড়াইয়া আছে। কোথাও সূক্ষ্ম কারুকার্যের প্রচেষ্টা নাই বটে, নিষ্ঠুর বটে, রুক্ষ বটে, কিন্তু সবটা মিলিয়া এমন বিশালতার সৌন্দর্য, পৌরুষের সৌন্দর্য, বর্ববতাব সৌন্দর্য—যা মনকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করে, হৃদয়কে বজ্রমুষ্টিতে আঁকড়াইয়া ধরে। সব আছে, কিন্তু দেহে প্রাণ নাই, চারিধারে ধ্বংসস্তুপ, কাঁটাগাছ, বিশৃঙ্খলতা, বড়ো বড়ো পাথর গড়াইয়া উঠিবার পথ বুজাইয়া রাখিয়াছে-মৃতমুখের ভ্রূকুটি মাত্র।
সাধু নিজামউদ্দিনের অভিশাপ মনে পড়িল-ইয়ে বসে গুজর, ইয়ে রাহে গুজর–
পৃথ্বীরায়ের দুর্গের চবুতরার উপর যখন সে দাঁড়াইয়া—হি-হি, কি মুশকিল, কি অদ্ভুতভাবে নিশ্চিন্দিপুরের সেই বনের ধারের ছিরে পুকুরটা এ দুর্গের সঙ্গে জড়িত হইয়া আছে, বাল্যে তাহারই ধারের শেওড়াবনে বসিয়া জীবনপ্রভাত পড়িতে পড়িতে কতবার কল্পনা করিত, পৃথ্বীরায়ের দুর্গ ছিরে পুকুরের উঁচু ও-দিকের পাড়টার মতো বুঝি!…এখনও ছবিটা দেখিতে পাইতেছে—কতকগুলি গুগলি শামুক, ও-পারের বাঁশঝাড়। যাক, চবুতরার উপর দাঁড়াইয়া থাকিতে থাকিতে দূর পশ্চিম আকাশের চারিধারের মহাশ্মশানের উপর ধূসর ছায়া ফেলিয়া সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের কাহিনী আকাশের পটে আগুনের অক্ষরে লিখিয়া সূর্য অস্ত গেল। সে সব অতি পবিত্র গোপনীয় মুহূর্ত অপুর জীবনে দেবতারা তখন কানে কানে কথা বলেন, তাহার জীবনে এরূপ সূর্যাস্ত আর কটা বা আসিয়াছে? ভয় ও বিস্ময় দুই-ই হইল, সারা গায়ে যেন কাটা দিয়া উঠিল, কি অপূর্ব অনুভূতি। জীবনের চক্রবালনেমি এতদিন যে কত ছোট অপরিসর ছিল, আজকার দিনটির অপু তাহা জানিত না।
নিজামউদ্দীন আউলিয়ার মসজিদ প্রাঙ্গণে সম্রাট-দুহিতা জাহানারার তৃণাবৃত পবিত্র কবরের পার্শ্বে দাঁড়াইয়া মসজিদদ্বারে ক্রীত দু-চার পয়সার গোলাপফুল ছড়াইতে ছড়াইতে অপুর অশ্রু বাধা মানিল না। ঐশ্বর্যের মধ্যে, ক্ষমতার দম্ভের মধ্যে লালিত হইয়াও পুণ্যবতী শাহাজাদীর এ দীনতা, ভাবুকতা, তাহার কল্পনাকে মুগ্ধ রাখিয়াছে চিরদিন। এখনও যেন বিশ্বাস হয় না যে, সে যেখানে দাঁড়াইয়া আছে সেটা সত্যই জাহানারার কবরভূমি। পরে সে মসজিদ হইতে একজন প্রৌঢ় মুসলমানকে ডাকিয়া আনিয়া কবরের শিরোদেশের মার্বেল ফলকের সেই বিখ্যাত ফারসি কবিতাটি দেখাইয়া বলিল, মেহেরবানি করকে পড়িয়ে, হাম লিখ লেঙ্গে।
প্রৌঢ়টি কিঞ্চিৎ বকশিশের লোভে খামখেয়ালী বাঙালী বাবুটিকে খুশি করার জন্য জোরে জোরে পড়িল–
বিজুস গ্যাহ কসে ন-পোশদ মজার-ইমা-রা।
কি কবরপো-ই-গরীবান্ হামিন্ মীগ্যাহ বস্ অস্ত।
পরে সে কবি আমীর খসরুর কবরের উপরেও ফুল ছড়াইল।
পরদিন বৈকালে শাহজাহানের লাল পাথরের কেল্লা দেখিতে গিয়া অপরাহের ধূসর ছায়ায় দেওয়ান-ই-খাসের পাশের খোলা ছাদে একখানা পাথরের বেঞ্চিতে বহুক্ষণ বসিয়া রহিল। মনে হইল এসব স্থানের জীবনধারার কাহিনী কেহ লিখিতে পারে নাই। গল্পে, উপন্যাসে, নাটকে, কবিতায় যাহা পড়িয়াছে, সে সবটাই কল্পনা, বাস্তবের সঙ্গে তাহার কোন সম্পর্ক নাই। সে জেবউন্নিসা, সে উদিপুরী বেগম, সে মমতাজমহল, সে জাহানারা আবাল্য যাহাদের সঙ্গে পরিচয়, সবগুলিই কল্পনাসৃষ্ট প্রাণী, বাস্তবজগতের মমতাজ বেগম, উদিপুরী, জেবউন্নিসা হইতে সম্পূর্ণ পৃথক! কে জানে এখানকার সে সব রহস্যভরা ইতিহাস? মূক যমুনা তাহার সাক্ষী আছে, গৃহভিত্তির প্রতি পাষাণ-খণ্ড তার সাক্ষী আছে, কিন্তু তাহারা তো কথা বলিতে পারে না।
তিনদিন পরে সে বৈকালের দিকে কাটনী লাইনের একটা ছোট্ট স্টেশনে নিজের বিছানা ও সুটকেসটা লইয়া নামিয়া পড়িল। হাতে পয়সা বেশি ছিল না বলিয়া প্যাসেঞ্জার ট্রেনে এলাহাবাদ আসিতে বাধ্য হয়—তাই এত দেরি। কয়দিন স্নান নাই, চুল রুক্ষ উসকো-খুসকো-জোর পশ্চিমা বাতাসে ঠোঁট শুকাইয়া গিয়াছে।
ট্রেন ছাড়িয়া চলিয়া গেল। ক্ষুদ্র স্টেশন, সম্মুখে একটা ছোট পাহাড়। দোকানবাজারও চোখে পড়িল না।
স্টেশনের বাহিরের বাঁধানো চাতালে একটু নির্জন স্থানে সে বিছানার বান্ডিলটা খুলিয়া পাতিল। কিছুই ঠিক নাই, কোথায় যাইবে, কোথায় শুইবে, মনে এক অপূর্ব অজানা আনন্দ।
শতরঞ্চির উপর বসিয়া সে খাতা খুলিযা খানিকটা লিখিল, পরে একটা সিগারেট খাইয়া সুটকেসটা ঠেস দিয়া চুপচাপ বসিয়া রহিল। টোকা মাথায় একজন গোঁড় যুবককে কাঁচা শালপাতার পাইপ খাইতে খাইতে কৌতূহলী চোখে কাছে আসিয়া দাঁড়াইতে দেখিয়া অপু বলিল, উমেরিয়া হিয়াসে কেত্তা দূর হোগা?
প্রথমবার লোকটা কথা বুঝিল না। দ্বিতীয়বারে ভাঙা হিন্দিতে বলিল, তিশ মীল।
ত্রিশ মাইল রাস্তা! এখন সে যায় কিসে? মহামুশকিল! জিজ্ঞাসা করিয়া জানিল, ত্রিশ মাইল পথের দুধারে শুধু বন আর পাহাড়। কথাটা শুনিয়া অপুর ভারি আনন্দ হইল। বন, কি রকম বন? খুব ঘন? বাঘ পর্যন্ত আছে! বাঃ–কিন্তু এখন কি করিয়া যাওয়া যায়?
কথায় কথায় গোঁড় লোকটি বলিল, তিন টাকা পাইলে সে নিজের ঘোড়াটা ভাড়া দিতে রাজি আছে।
অপু রাজি হইয়া ঘোড়া আনিতে বলাতে লোকটা বিস্মিত হইল। আর বেলা কতটুকু আছে, এখন কি জঙ্গলের পথে যাওয়া যায়? অপু নাছোড়বান্দা। সামনের এই সুন্দর জ্যোৎস্নাভরা রাত্রে জঙ্গলের পথে ঘোড়ায় চাপিয়া যাওয়ার একটা দুর্দমনীয় লোভ তাহাকে পাইয়া বসিল-জীবনে এ সুযোগ কটা আসে, এ কি ছাড়া যায়?
গোঁড় লোকটি জানাইল, আরও একটাকা খোরাকি পাইলে সে তলপি বহিতে রাজি আছে। সন্ধ্যার কিছু পূর্বে অপু ঘোড়ায় চড়িয়া রওনা হইল—পিছনে মোটমাথায় লোটা।
মিন্ধ রাত্রি-স্টেশন হইতে অল্পদূরে একটি বস্তি, একটা পাহাড়ি নালা, বাঁক ঘুরিয়াই পথটা শালবনের মধ্যে ঢুকিয়া পড়িল! চারিধারে জোনাকি পোকা জ্বলিতেছে–রাত্রির অপূর্ব নিস্তব্ধতা, এয়োদশীর চাঁদের আলো শাল-পলাশের পাতার ফাঁকে ফাঁকে মাটির উপর যেন আলো-আঁধারের বুটিকাটা জাল বুনিয়া দিয়াছে। অপু পাহাড়ি লোকটার নিকট হইতে একটা শালপাতার পাইপ ও সে দেশী তামাক চাহিয়া লইয়া ধরাইল বটে, কিন্তু দুটান দিতেই মাথা কেমন ঘুরিয়া উঠিল—শালপাতার পাইপটা ফেলিয়া দিল।
বন সত্যই ঘন-পথ আঁকা-বাঁকা, ছোট ঝরনা এখানে-ওখানে, উপল বিছানো পাহাড়ি নদীর তীরে ঘোট ফার্নের ঝোপ, কি ফুলের সুবাস, রাত্রিচর পাখির ডাক। নির্জনতা, গভীর নির্জনতা!
মাঝে মাঝে সে ঘোড়াকে ছুটাইয়া দেয়, ঘোড়া-চড়া অভ্যাস তাহার অনেকদিন হইতে আছে। বাল্যকালে মাঠের ছুটা ঘোড়া ধরিয়া কত চড়িয়াছে, চাপদানিতেও ডাক্তারবাবুটির ঘোড়ায় প্রায় প্রতিদিনই চড়িত।
সারারাত্রি চলিয়া সকাল সাড়ে সাতটায় উমেরিয়া পৌঁছিল। একটা ছোট গ্রাম-পোস্টাফিস, ছোট বাজার ও কয়েকটা গালার আড়ত। ফরেস্ট রেঞ্জার ভদ্রলোকটির নাম অবনীমোহন বসু। তিনি তাহাকে দেখিয়া বিস্মিত হইলেন—আসুন, আসুন, আপনি পত্র দিলেন না, কিছু না, ভাবলুম বোধ হয় এখনও আসবার দেরি আছে–এতটা পথ এলেন রাতারাতি? ভয়ানক লোক তো আপনি!
পথেই একটা ছোট নদীর জলে স্নান করিয়া চুল আঁচড়াইয়া সে ফিটফাট হইয়া আসিয়াছে। তখনই চা খাবারের বন্দোবস্ত হইল। অপু লোকটিকে নিজের মনিব্যাগ শূন্য করিয়া চাব টাকা দিয়া বিদায় দিল।
দুপুরের আহারের সময় অবনীবাবুর স্ত্রী দুজনকে পরিবেশন করিয়া খাওয়াইলেন। অপু হাসিমুখে বলিল, এখানে আপনাদের জ্বালাতন করতে এলুম বৌঠাকরুন!
অবনীবাবুর স্ত্রী হাসিয়া বলিলেন, না এলে দুঃখিত হতাম—আমরা কিন্তু জানি আপনি আসবেন। কাল ওঁকে বলছিলাম আপনার আসবার কথা, এমন কি আপনার থাকবার জন্যে সাহেবেব বাংলোটা ঝাট দিয়ে ধুয়ে রাখার কথাও হল—ওটা এখন খালি পড়ে আছে কিনা।
—এখানে আর কোন বাঙালি কি অন্য কোন দেশের শিক্ষিত লোক নিকটে নেই?
অবনীবাবু বলিলেন, আমার এক বন্ধু খুরিয়ার পাহাড়ে তামাব খনির জন্যে প্রসপেক্টিং করছেন—মিঃ রায়চৌধুরী, জিওলজিস্ট, বিলেতে ছিলেন অনেকদিন—তিনি ওইখানে তাঁবুতে আছেন-মাঝে মাঝে তিনি আসেন।
অল্প দিনেই ইহাদের সঙ্গে কেমন একটা সহজ মধুর সম্বন্ধ গড়িয়া উঠিল—যাহা কেবল এই সব স্থানে, এই সব অবস্থাতেই সম্ভব, কৃত্রিম সামাজিকতার হুমকি এখানে মানুষের সঙ্গে মানুষেব স্বাভাবিক বন্ধুত্বের দাবিকে ঘাড় খুঁজিয়া থাকিতে বাধ্য করে না বলিয়াই। একদিন বসিয়া বসিযা সে খেয়ালের বশে কাগজে একটা কথকতার পালা লিখিয়া ফেলিল। সেদিন সকালে চা খাইবার সময় বলিল, দিদি, আজ ওবেলা আপনাদের একটা নতুন জিনিস শোনাব।
অবনীবাবুর স্ত্রীকে সে দিদি বলিতে শুরু করিয়াছে। তিনি সাগ্রহে বলিলেন,-কি, কি বলুন না? আপনি গান জানেন না? আমি অনেকদিন ওঁকে বলেছি আপনি গান জানেন।
—গানও গাইব, কিন্তু একটা কথকতার পালা শোনাব, আমার বাবার মুখে শোনা জড়ভরতের উপাখ্যান।
দিদির মুখ আনন্দে উজ্জ্বল হইয়া উঠিল। তিনি হাসিয়া স্বামীকে কহিলেন, দেখলে গোদ্যাখো। বলি নি আমি, গলার স্বর অমন, নিশ্চয়ই জানেন—খাটল না কথা?
দুপুরবেলা দিদি তাহাকে তাস খেলার জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করিলেন।
–লেখা এখন থাক। তাস জোড়াটা না খেলে খেলে পোকায় কেটে দিলে—এখানে খেলার লোক মেলে না-যখন ওঁর বন্ধু মিঃ রায়চৌধুরী আসেন তখন মাঝে মাঝে খেলা হয়—আসুন আপনি। উনি, আর আপনি-–
–আর একজন?
–আর কোথায়? আমি আর আপনি বসব-উনি একা দুহাত নিয়ে খেলবেন।
জ্যোৎস্না রাত্রে বাংলোর বারান্দাতে সে কথকতা আরম্ভ করিল। জড়ভরতের বাল্যজীবনের করুণ কাহিনী নিজেরই শৈশব-স্মৃতির ছায়াপাতে সত্য ও পূত হইয়া উঠে, কাশীর দশাশ্বমেধ ঘাটে বাবার গলার স্বর কেমন করিয়া অলক্ষিতে তাহার গলায় আসে—শালবনের পত্রমর্মরে, নৈশ পাখির গানের মধ্যে রাজর্ষি ভরতের সরল বৈরাগ্য ও নিস্পৃহ আনন্দ যেন প্রতি সুর-মূর্ঘনাকে একটি অতি পবিত্র মহিমাময় রুপ দিয়া দিল। কথকতা থামিলে সকলেই চুপ করিয়া রহিল। অপু খানিকটা পর হাসিয়া বলিল—কেমন লাগল?
অবনীবাবু একটু ধর্মপ্রাণ লোক, তাহার খুবই ভালো লাগিয়াছে—কথকতা দু-একবার শুনিয়াছেন বটে, কিন্তু এ কি জিনিস! ইহার কাছে সে সব লাগে না।
কিন্তু সকলের চেয়ে মুগ্ধ হইলেন অবনীবাবুর স্ত্রী। জ্যোৎস্নাব আলোতে তাহার চোখে ও কপোলে অশ্রু চিকচিক করিতেছিল। অনেকক্ষণ তিনি কোন কথা বলিলেন না। স্বদেশ হইতে দূরে এই নিঃসন্তান দম্পতির জীবনযাত্রা এখানে একেবারে বৈচিত্র্যহীন, বহুদিন এমন আনন্দ তাহাদের কেহ দেয় নাই।
দিন দুই পরে অবনীবাবুর বন্ধু মিঃ রায়চৌধুরী আসিলেন, ভাবি মনখোলা ও অমায়িক ধরনের লোক, বয়স চল্লিশের কাছাকাছি, কানের পাশে চুলে পাক ধরিয়াছে, বলিষ্ঠ গঠন ও সুপুরুষ। একটু অতিরিক্ত মাত্রায় মদ খান। জব্বলপুর হইতে হুইস্কি আনাইয়াছেন কিরুপ কষ্ট স্বীকার করিয়া, খানিকক্ষণ তাহার বর্ণনা করিলেন। অবনীবাবুও যে মদ খান, অপু তাহা ইতিপূর্বে জানিত না। মিঃ রায়চৌধুরী অপুকে বলিলেন, আপনার গুণের কথা সব শুনলাম, অপূর্ববাবু। সে আপনাকে দেখেই আমার মনে হয়েছে। আপনার চোখ দেখলে যে কোন লোক আপনাকে ভাবুক বলবে। তবে কি জানেন, আমরা হয়ে পড়েছি ম্যাটার-অফ-ফ্যাক্ট। আজ আপনাকে আর একবার কথকতা করতে হবে, ছাড়চি নে আজ!
কথাবার্তায়, গানে, হাসিখুশিতে সেদিন প্রায় সারারাত কাটিল। মিঃ রায়চৌধুরী চলিয়া যাইবার দিন তিনেক পবে একজন চাপরাশী তাহার নিকট হইতে অপুর নামে একখানি চিঠি আনিল। তাহার ওখানে একটা ড্রিলিং তাঁবুর তত্ত্বাবধানের জন্য একজন লোক দরকার। অপূর্ববাবু কি আসিতে রাজি আছেন? আপাতত মাসে পঞ্চাশ টাকা ও বাসস্থান। অপুর নিকট ইহা একেবারে অপ্রত্যাশিত। ভাবিয়া দেখিল, হাতে আনা দশেক পয়সা মাত্র অবশিষ্ট আছে, উহাবা অবশ্য যতই আত্মীয়তা দেখান, গান ও কথকতা করিয়া চিরদিন তো এখানে কাটানো চলিবে না? আশ্চর্যের বিষয়, এতদিন কথাটা আদৌ তাহার মনে উদয় হয় নাই যে কেন!
মিঃ রায়চৌধুরীর বাংলো প্রায় মাইল কুড়ি দূর। তিনদিন পরে ঘোড়া ও লোক আসিল। অবনীবাবু ও তাহার স্ত্রী অত্যন্ত দুঃখের সহিত তাহাকে বিদায় দিলেন। পথ অতি দুর্গম, উমেরিয়া হইতে তিন মাইল উত্তর-পশ্চিমদিকে গেলেই ঘন জঙ্গলের মধ্যে ডুবিয়া যাইতে হয়। দুই-তিনটা ছোট ছোট পাহাড়ি নদী, আবার ছোট ছোট ফার্ন ঝোপ, ঝরনা—একটার জলে অপু মুখ ধুইয়া দেখিল জলে গন্ধকের গন্ধ। পাহাড়িয়া করবী ফুটিয়া আছে, বাতাস নবীন মাদকতায় ভরা, খুব মিন্ধ, এমন কি যেন একটু গা শিরশির করে—এই চৈত্র মাসেও।
সন্ধ্যার পূর্বে সে গন্তব্য স্থানে পৌঁছাইয়া গেল। খনির কার্যকারিতা ও লাভালাভের বিষয় এখনও পরীক্ষাধীন, মাত্র খান চার-পাঁচ চওড়া খড়ের ঘর। দুইটা বড়ো বড়ো তাঁবু, কুলিদের থাকিবার ঘর, একটা অফিস ঘর। সবসুদ্ধ আট-দশ বিঘা জঁমির উপর সব। চারিধার ঘেরিয়া ঘন দুর্গম অরণ্য, পিছনে পাহাড়, আবার পাহাড়।
মিঃ রায়চৌধুরী বলিলেন—খুব সাহস আছে আপনার তা আমি বুঝেছি যখন শুনলাম আপনি রাত্রে ঘোড়ায় চড়ে উমেরিয়া এসেছিলেন, ও পথে রাত্রে এদেশের লোকও যেতে সাহস পায় না।