কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ১৫

১৫

পরের দিন থেকে সুলতা, আমি অর্চনার বিয়ের জন্যেই সবকিছু ফেলে দিলাম। ওই বিয়ের জন্যেই উঠে-পড়ে লাগলাম।

সেদিন আমি বসে চিঠি লিখছিলাম। লিখছিলাম কলকাতায় জানবাজারের ম্যানেজারকে, লিখছিলাম—একজন বিচক্ষণ ঘটক অবিলম্বে যেন পাঠিয়ে দেন এখানে। বিশেষ প্রয়োজন আছে।

এমন সময় খুড়ীমা এলেন, অর্চনাকে সঙ্গে নিয়ে খুড়ীমা আমার সামনে এই প্রথম এলেন বিবিমহলে। ভিতর মহলে আমি অনেকবার গেছি কিন্তু তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছে কদাচ কখনো। এবং আমাকে দেখবামাত্র সরে যেতেন। কখনো আমি আগে-ভাগে কথা কইলে, সংক্ষিপ্ত উত্তর দিয়ে চলে যেতেন ভিতর মহলে।

আমি এগিয়ে তাঁকে সম্বর্ধনা করে নিয়ে এলাম। প্রণাম করলাম। অন্য সময় তিনি পায়ে হাত দিতে দিতেন না। বলতেন—ছুঁয়ো না বাবা, তোমাদের কাপড়-চোপড় শুদ্ধ নয়, আমি পুজোর কাপড় পরে আছি! মাটিতে প্রণাম কর।

তাঁর পুজোর কাপড় আগে দেখেছিলাম, একখানা অতিজীর্ণ লালপেড়ে গরদের শাড়ী। ব্রজদা বউ নিয়ে মাস ছয়েক আগে যখন এসেছিল, তখন একখানা নতুন দামী গরদের শাড়ী দিয়েছিল, আজ সেইখানা পড়ে এসেছিলেন।

তাঁকে সসম্ভ্রমে প্রণাম করলাম মাটিতে হাত দিয়ে। তিনি আমার মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করে বললেন–তোমাকে আশীর্বাদ করতে এসেছি বাবা। এবার ব্রজ এসে তোমার অনেক সুখ্যাত করে গিয়েছিল। কিন্তু ব্রজকে তো আমি জানি চিনি। ও যত মন্দ, তত ভাল। ভালও বাসতে পারে, কিন্তু ওর স্বার্থ যেখানে সেখানে সে চোর-জোচ্চোর সব। আমি ভেবেছিলাম, তুমি কলকাতায় বড়লোকি করতে, তাই ও তোমার মোসাহেবি করত। তাই প্রশংসা করছে। তুমিও হয়তো রায়বংশের ছেলেদের মত। তোমার বাপ আমার ভাসুর। তাঁর কীর্তিও শুনেছি। তাই এলে-গেলে-খেলে-নিলে ভাল আছ মঙ্গল হোক এই বলেই কথা সেরেছি। কাল অৰ্চনা গিয়ে আমার পা দুটো জড়িয়ে ধরে কেঁদে পড়ল। বললে আমাকে সব। ন-বউ বিমলেশ্বর ঠাকুরপোর বউও এসেছিল, ওর কাছেও সব শুনলাম। তার আগে ঘরে পুরে যে মারটা অর্চনাকে মেরেছে সেজঠাকুরপো, তাও শুনেছিলাম। সব শুনে তোমাকে আশীর্বাদ করতে এসেছি, তুমি দীর্ঘজীবী হও বাবা। যে সঙ্কল্প করেছ, তা তুমি যত শিগগির হয় করে ফেল। পূর্বপুরুষেরা তোমাকে আশীর্বাদ করবেন।

সুলতা, আমি অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম ধনেশ্বর কাকার মতো নাটুকে চরিত্র, ভণ্ড তান্ত্রিকের স্ত্রীর এমন কথা শুনে। ইনিই মিথ্যেবাদী, মিষ্টমুখ ব্রজদার মা, ইনিই দৈত্যের মত পশুচরিত্র ছেলেটার মা। এঁকেই সারা রায়বাড়ীতে প্রতিটি জন বলে, মা চামুণ্ডা।

বললাম—আমি এক্ষুনি চিঠি লিখছিলাম খুড়ীমা।

—কোথায় লিখছিলে বাবা? জানাশুনো কেউ?

—না কলকাতায় লিখছি ওখানকার ম্যানেজারকে, একজন ঘটক পাঠাবার জন্যে। খুড়ীমা বললেন—তা ভালই করছ বাবা। তাও লেখ। তবে আমি একটি পাত্রের কথা বলতে এসেছি, তুমি চেষ্টা করে দেখ না। জানা ঘর; বলতে গেলে আমাদের আপনার ঘর; তবে বিষয় তো বিষ বাবা। বিষয়ের ঝগড়ায় অতি আপনার হয়েও পর। এক রকম তিন পুরুষ মুখ-দেখাদেখি নেই।

শঙ্কিত হয়েই বললাম —বলুন।

শঙ্কা হল সুলতা, রায়বংশের যারা তারাও আজ মহাকাল প্রভুর গদার ঘায়ে ভগ্ন উরু দুর্যোধনের মত সংসার-দ্বৈপায়ন হ্রদের তটভূমিতে পড়ে কাতরাচ্ছে। অশ্বত্থামাও নেই এ-যুগে যে সে পঞ্চ-পাণ্ডবের বংশধরদের মুণ্ড এনে দেবে। হর্ষ বিষাদে দুর্যোধনের মৃত্যু হয়েছিল, কিন্তু এ দুর্যোধনের সবারই মৃত্যু হবে বিষাদে।

খুড়ীমা বললেন—আমার দাদাশ্বশুর রায়বাহাদুরের বোন ছিল জান তো। ফন্নপূর্ণা দিদিশাশুড়ি। রায়বাহাদুর তো এ বংশে পুষ্যিপুত্তুর। কিন্তু সতীবউরাণীর কাশীতে গিয়ে কন্যা হল। কন্যা হয়েই মারা গেলেন। সেই কন্যা ফন্নপূর্ণা দেবীর বিয়ে হয়েছিল কলকাতায়। বিয়ের পর শ্বশুররা ছাড়বে কেন? মামলা করলে তারা। দানপত্তর নাকচ হবে। শেষ মিটমাট করে দিলেন বিমলাকান্ত চাটুজ্যেমশায়, ফিরেশ্বর রায়ের ভগ্নীপতি। পঞ্চাশ হাজার টাকা, কলকাতায় জমি আর তাঁর নিজের সম্পত্তি দিয়ে। মামলা মিটল কিন্তু মানের মামলা মিটল না। ভাই-বোনে সম্পর্কই মুছে গেল। তাই শুধু নয় ফন্নপুন্না ঠাকরুণের স্বামী রাগের বশে আর একটা বিয়ে করলেন। ভাই মানে রায়বাহাদুর তত্ত্ব পাঠালে ফন্নপুন্না ঠাকুমার শ্বশুররা ফিরিয়ে দিতেন। কখনো আসতে দেন নি। শেষ পর্যন্ত নিজের ছেলে নিয়ে ঠাকুরুণ স্বামী-ভিন্ন হয়ে গেলেন। টাকার তাঁর অভাব ছিল না। বাপের বাড়ীর পঞ্চাশ হাজার টাকা। কলকাতায় জমি। সেই ফন্নপুন্না ঠাকরুণ আজও বেঁচে আছেন। পঁচাত্তর-আশী বছর বয়স। ছেলে নেই। নাতিদের দুজন মারা গিয়েছে। একজন আছে। বড় নাতির একটি ছেলে আছে। বাবা, আমার মেয়ে বড় হয়েছে—প্রতিমা। তা আমি চেষ্টা করেছিলাম। ছেলেটি ডাক্তারি পড়ছিল তখন। তা এ বাড়ীর নাম শুনে রাজী তিনি হয়েছিলেন, তাঁর ছেলেরা হয় নি। ওরা মস্ত বড়লোক। জমিদার তো নয়। ওরা সব কেউ উকিল কেউ ইন্জিনিয়ার কেউ ডেপুটি এই রকম বংশ। তা একবার তার কাছে তুমি নিজে গিয়ে পড় না। টাকা তো তুমি দেবে। আর এ মেয়েটাকে সবাই বলে সতীবউ ঠাকরুণ ফিরে এসেছে। যদি ঐ কথাটা তুমি বল, তবে হয়তো রাজীও হতে পারেন। ফন্নপুন্না ঠাকুমাও কথাটা জানেন। হয়তো আগ্রহ করেই নেবেন।

সুরেশ্বর বললে-অন্নপূর্ণা দেবীর নাম আমি আমার বাবার কাছে শুনেছি। আমার বাবা সাহেব মানুষ—মা ছিলেন সে কালের আধুনিকা। তবুও তাঁরা বিজয়ার পর একবার প্রণাম করতে যেতেন। তার কারণ ছিল। অন্নপূর্ণা দেবী আর রত্নেশ্বর রায়ের বড় ছেলে দেবেশ্বর এক বয়সী। মাস কয়েকের ছোট বড়।

অন্নপূর্ণা দেবী মানুষ হয়েছিলেন বিমলাকান্তের কাছে কাশীতে, আর দেবেশ্বর বড় হয়েছিলেন কলকাতায়। জানবাজারের এই বাড়ীতে রত্নেশ্বর পাকাপোক্ত এস্টাব্লিশমেন্ট করেছিলেন। প্রথম প্রথম জানবাজারের বাড়ীতেই থাকতেন, বছর দুয়েক ছিলেন। ছেলে পড়ত কলকাতার ইস্কুলে, আর তাদের সুখ-দুঃখ দেখবার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন ঠাকুরদাস পালকে। লেখাপড়া শেখাবার জন্য সেকালের গ্রাজুয়েট মাস্টার নিযুক্ত করেছিলেন। তার সঙ্গে ঘোড়ায় চড়া শেখাবার ব্যবস্থা, ডন-বৈঠক শেখাবার জন্য ছিল একজন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান। পুজোর ছুটিতে গরমের ছুটিতে যেতেন কীর্তিহাট। ওদিকে কাশী থেকে আসতেন অন্নপূর্ণাকে নিয়ে সস্ত্রীক বিমলাকান্ত। গোটা একটা মাস কীর্তিহাটের রাজত্বে রাজপুত্র এবং রাজকন্যা—সহোদর সহোদরার প্রীতিতে পিসি আর ভাইপো ছুটোছুটি করতেন, হাতী চড়ে বেড়াতেন, পুজোর সময় আশ্বিন-কার্তিক মাসে ভরা কাঁসাইয়ে বজরায় ঘুরতেন। গোয়ানপাড়ায় যেতেন।

দুর্গাপুজোর পর কালীপুজো—রায়বাড়ীর প্রধান উৎসব। সে উৎসবে-সেকালে তিন-চারদিন উৎসবে পাঁচ হাজার টাকা খরচ একবারে বাজেটে নির্দিষ্ট করা ছিল। কম কখনো হত না। বরং বেশীই হত। তাছাড়া সরস্বতী-বউরাণী বা রায়বাহাদুর রত্নেশ্বর রায়ের অথবা বিমলাকান্তের মানসিক পুজোর খরচ তাঁরা আলাদা দিতেন।

কালীপুজোয় দেবেশ্বর অন্নপূর্ণা পাশাপাশি যাত্রার আসরে বসত। নিয়ম ছিল রায়বংশের যাঁরা তাঁরা বসতেন চেয়ারে, আর বসতেন অতিথি-অভ্যাগত। রত্নেশ্বর রায়ের শ্বশুরবাড়ীর লোক। জেলার দু-চারজন হাকিম। তার সঙ্গে দারোগা-ইন্সপেক্টর সাবরেজিস্ট্রার আর দু’চারজন বন্ধু-বান্ধব। তার মধ্যে অন্নপূর্ণা আর দেবেশ্বর ঠিক মাঝখানে বসতেন দুখানা চেয়ারে।

বিসর্জন ছিল না। পাষাণময়ী কালী। তবু বিসর্জনের রাত্রে বাজি পুড়ত। তারও অঙ্ককখনো দু’শোর নিচে নামেনি। ক্রমে ক্রমে বেড়ে গেছে। সেখানেও এইসব অতিথি-অভ্যাগতদের জন্য একটা চাঁদোয়া হত। তার নিচে বসতেন এইসব লোকেরাই। সেখানেও অন্নপূর্ণা দেবেশ্বরের আসন ছিল সামনের সারিতে পাশাপাশি। আর একটা ঘটনা কয়েক বছরই ঘটেছিল; সেটা ভাই-দ্বিতীয়ার দিন। দেবেশ্বরের বোন ছিল না। রত্নেশ্বরকে বোন হিসেবে ফোঁটা দিতেন অন্নপূর্ণা দেবী। তাই দেখে দেবেশ্বর কাঁদতেন—আমিও ফোঁটা নেব।

গ্রাম-সম্পর্কের বোন বের করতে দেরী হয়নি। কিন্তু তা না, দেবেশ্বরের আবদার—ওই অন্নপিসির কাছে ফোঁটা নেবে।

অন্নপূর্ণাও ফোঁস ফোঁস করে কাঁদতেন- আমি দেবু ভাইপোকে ফোঁটা দেব।

এদের সঙ্গে আর একজন অহরহ ঘুরত সুলতা। তাঁর নাম হল- গোপাল পাল, দেবেশ্বরের ঠাকুরদাস জ্যাঠামশায়ের ছেলে।

তাই খুড়ীমা মানে ধনেশ্বর কাকার স্ত্রী আমাকে বললেন—তুমি নিজে যাও বাবা, তিনি নিজে আজও বেঁচে, তোমার কথা রাখবেন বোধহয়। অর্চনার একখানা ফটো নিয়ে যেয়ো, তাতে কাজ দেবে। তাঁর মায়ের অয়েল পেন্টিং তাঁর কাছে আছে। অর্চনার সঙ্গে মিল দেখলে মন তাঁর নরম হবে বলেই আমার বিশ্বাস।

ঘড়িতে ঢং ঢং শব্দে ঘণ্টা বাজছিল। সুলতা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলে দশটা। ওদিকের খাবার ঘরের টেবিলের উপর বাসনপত্রের ঠুঙঠাঙ শব্দ হচ্ছে। অর্চনার গলা পাওয়া যাচ্ছে। সম্ভবত বাসন সাজানো হচ্ছে। খাবার তৈরী হয়ে গেছে। সুরেশ্বর বললে —এখন এখানেই ছেদ টানতে হবে হয়তো। ১৯৩৭ সালে সেদিন মেজতরফের বড় খুড়ীমার একটা কথা বলেই ছেদটা টানি সুলতা। তাঁকে আমার বড় ভাল লাগল। বললাম- এ বাড়ীতে এলেন খুড়ীমা, কিছু খাবেন না?

হাসলেন তিনি। বললেন—খাব না কেন বাবা। তবে তোমার রঘুর হাতে তো খাব না। অর্চনা এতক্ষণ আমাদের পানে পিছন ফিরে কাঁসাইয়ের ধারের বারান্দায় ঠিক দরজাটার সামনেই দাঁড়িয়েছিল। সে এবার বললে—আমি চা করে আনব জ্যেঠাইমা!

—তা আন। কিন্তু এত বেলায় চা কেন? শরবৎ করে আন

—শীতের দিনে শরবৎ খাবে?

—তা হলে চা করেই আন্। তোরাও খাবি।

অৰ্চনা চলে গেল। খুড়ীমা এবার কথা বন্ধ করে উঠে চারিদিক ঘুরে দেখতে দেখতে হঠাৎ বললেন—জান বাবা সুরেশ্বর, এই বিবিমহলে আমি আজ প্রায় ত্রিশ বছর আসি নি। এসেছিলাম সেই বিয়ের পর–কনে বউ আমি তখন, তেরো পার হয়ে চৌদ্দতে পড়েছি। তখন আর একরকম ছিল। এমন সুন্দর ছিল না। তোমার বাবা আমার ভাসুর। কিন্তু তোমার কাকার বিয়ে আগে হয়েছিল। তোমার বাবা বিয়ে করলেন, ক’রে এখানকার ভেতর মহলে তোমাদের অংশ আর বিবিমহল একরকম নতুন করে গড়লেন। তখন থেকে আর ঢুকি নি।

বলে হাসলেন। সে হাসি ঠিক সহজ হাসি নয়। তার অর্থ ঠিক হাসি নয়। তার মধ্যে অনেক কিছু ছিল।

সুরেশ্বর বললে-আমি ঠিক বুঝিনি। তাই জিজ্ঞাসা করে বসলাম —কেন খুড়ীমা? সঙ্গে সঙ্গে মনেও পড়ল যে, বাবার মৃত্যুর পর যখন প্রথম মায়ের সঙ্গে এসেছিলাম বাবার শ্রাদ্ধ করতে, তখন খুড়ীমা এ বাড়ীতে আসেন নি। তাঁর সঙ্গে মা দেখা করে এসেছিলেন ও-বাড়ীতে গিয়ে। আমিও মার সঙ্গে ছিলাম। শুনেছিলাম মেজঠাকুমা বলেছিলেন—“বড়বউমার কথা ছেড়ে দাও মা, বড় জমিদারবাড়র মেয়ে অবস্থা হীন হয়েছে কিন্তু দম্ভ যায়নি। চব্বিশঘণ্টা দম্ভে ফেটে পড়ছে। মা ধনেশ্বরকে ভয় করে এবাড়ীর সবাই। জগদীশ্বর তো সারা গাঁয়ের লোকের কাছে বাঘ ভালুকের মত। কিন্তু বড়বউমার কাছে সব জুজু। মন হ’ল তো মা—দেবতা। আর মেজাজ বেগড়াল তো মহিষমর্দিনী!

আমার প্রশ্ন শুনে খুড়ীমা চুপ করে রইলেন। কোন উত্তর না দিয়ে ঘরের দেওয়ালে টাঙানো আমার বাবা এবং মায়ের অয়েল পেন্টিংটার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর বললেন–এ ছবি তোমার বাবার একটু বেশী বয়সের ছবি। বিয়েই তো করেছিলেন সাতাশ বছর পার ক’রে।

বললাম-হ্যাঁ।

—হ্যাঁ, বিশ একুশ বছর বয়সের সে রূপ এতে নেই। এতে ফ্রেঞ্চছাঁট দাড়ি রয়েছে গোঁফ সুচলো ক’রে পাকানো, যেন ভারিক্কি মানুষ। মায়ের তোমার পূর্ণ যুবতী বয়স। বোধহয় এর থেকে ভাল চেহারা কখনো হয় নি। বিশ একুশ বছরে তোমার বাবার সে রূপ ভোলবার নয় বাবা। আমার ঠাকুমা দেখে বলেছিলেন—এ যে কন্দৰ্প লো।

আমি জিজ্ঞাসা করলাম-আপনি দেখেছিলেন?

সলজ্জ হেসে মাথায় কাপড় একটু টেনে দিয়ে খুড়ীমা বললেন—দেখেছি বই কি বাবা। না হলে আর বলছি কি ক’রে? আমার বাপের বাড়ী গিয়েছিলেন বেড়াতে। উনিই তো আমার বিয়ের ঘটক বাবা।

আমি কৌতুকবোধ ক’রে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম সুলতা—তাই নাকি! কই শুনিনি তো?

—শুনবে কি ক’রে বল। একথা তো বেশী কেউ জানত না!

একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললেন -আমার তখন বয়স তেরো চলছে। গোবরডাঙ্গার মুখুজ্জেবাড়ীর দৌহিত্র শরিক হলেন বাপ আর গড়ের বাঁড়ুজ্জেবাড়ীর মেয়ে হলেন আমার মা। দুদিক থেকে সম্পত্তি পেয়ে বাবা আমার কেষ্টবিষ্টু লোক। চাল-চলন একেবারে রাজরাজড়ার মত। আর আমার রূপ ছিল বাবা। তেরো বছর বয়সে আমার রূপের খ্যাতি রটেছিল। সম্বন্ধ আপনি আসছিল। বাপের বড় আদুরে মেয়ে ছিলাম আমি। রাগলে জ্ঞান থাকত না। আমাদের বাগান ছিল খুব ভাল। সাবু গাছ, হরেক রকমের পাম গাছ, অর্কিড পাতাবাহার থেকে গোলাপ, জুঁই, বেল, জবা, চামেলী, গন্ধরাজ, চাঁপা—কি গাছ ছিল না। তার মধ্যে গোটাকয়েক মতিয়াবেল ছিল, তার ফুল হত এই বড় বড় আর কুঁড়িগুলো হত বড় বড় মুক্তোর মত। ঠাকুমা শিবপুজো করাতেন। আমি মতিয়াবেলের কুঁড়ি তুলে মালা গেঁথে পরাতাম। কিন্তু পাড়ার সব গেরস্ত ঘরের মেয়েরা খুব ভোরে উঠে এসে ফুল চুরি করে নিয়ে পালাত। আমার বাতিক ছিল এদের পাকড়ে খুব বকাঝকা করে তারপর মালীকে ডেকে ফুল দিতে বলতাম। তারা নিয়ে যেত। ওটা আমার স্বভাব ছিল। এখনো আছে। কেউ গরীব এসে কাপড় চাইলে প্রথমে খানিকটা খুব বকতাম, তারপর তারা যখন চলে যেতে চাইত তখন ডেকে কাপড় দিতাম।

একদিন বাবা ভোরে উঠে এমনি কতকগুলো মেয়েকে ধরে বকাবকি করছি, হঠাৎ নজরে পড়ল বাগানের পাঁচিলের ওপার থেকে একখানা হাত তুলে কেউ মার্শাল নীল গোলাপের লতার একটা ডাল আস্তে আস্তে নোয়াচ্ছে। মস্তবড় মার্শাল নীলের লতা। আর ফুলগুলো খুব ভাল।

আমি মালীকে বললাম—দেখেছিস?

সে বললে—হ্যাঁ।

বললাম—আস্তে আস্তে যা। গিয়ে দুহাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরবি হাতখানা। তারপর দেখছি আমি। যা।

মালী গিয়ে খপ করে চেপে ধরলে হাতখানা।

তারপর কি কথা হল মালীর সঙ্গে, মালী হাত ছেড়ে দিলে।

আমার রাগ হ’ল, বললাম —হাত যে ছেড়ে দিলি হারামজাদা!

মালী বললে—খুব একজন বড়বাবু দিদিমণি—

—যেই হোক। যে ফুলচুরি করছে সে চোর। তুই কেন ছাড়লি তাকে?

মালী বললে—বাবু আসছে দিদিমণি। বললে—আরে হাত ছাড়। আমি হাতটা এখুনি টেনে ছাড়িয়ে নিতে পারি। তোমার থেকে আমার জোর বেশী। ছেড়ে দাও আমি ফুল তুলেছি, তা যখন মালিকের আপত্তি, তখন আমি নিজেই যাচ্ছি তাঁর সামনে। ওই উনি আসছে। ওই ফটকে দাঁড়িয়েছে। বাবা, তোমার বাবাকে দূর থেকে দেখেই আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। একেবারে সাক্ষাৎ রাজপুত্র। তোমাদের বংশের লম্বা তো সবাই। আর তেমনি রূপ। তখন ফুনফুনে দাড়ি বলে দাড়ি কামানো। গোঁফ সদ্য গজিয়েছে আর যেমন পোশাক তেমনি কেতাদুরস্ত। দারোয়ানকে বলে তিনি ফটকের ভেতরে ঢুকলেন তাঁর হাতে তিন চারটে মার্শাল নীল গোলাপ।

বাবা আমার লজ্জার সীমা রইল না, আমি একেবারে দে ছুট; বাড়ীর ভিতরে গিয়ে হাজির। বাড়ির ঝি-চাকরেরা উঠেছে আর উঠেছেন ঠাকুমা। আমাকে দেখে বললেন—কি লা, এমন হাঁপাচ্ছিস কেন?

—ছুটে পালিয়ে এসেছি ঠাক্‌মা।

—কেন কি হল?

আমি বললাম—বাবা! ঠাকুমার সঙ্গে আমার খুব ভাব ছিল, খুব ভালোবাসতেন। এমন সময় মালী এসে বললে—উ বাবু দাঁড়িয়ে আছেন।

আমি বললাম—যেতে বলে দে।

ঠাক্‌মা বললেন—না। আমি যাচ্ছি দাঁড়া। দেখি নবাবনন্দিনী আমার আবার কাকে কি বলে এলেন। কি ফ্যাসাদ বাঁধালেন।

ঠাকুমা খিড়কীর দরজা দিয়ে বাগানে গেলেন। আমি দরজার আড়ে লুকিয়ে রইলাম।

একটু থামলেন খুড়িমা। তারপর হেসে ওই বাবার ছবির দিকে তাকিয়ে বললেন–কি হাসি বাবা। হো-হো-হো করে হেসে একেবারে সারা। তখন ঠাকুমার সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেছে। ঠাকুমা পরিচয় পেয়েছেন—একেবারে অপ্রস্তুতের শেষ। কীর্তিহাটের রায়বাড়ীর বড় রায়মশায়ের ছোট ছেলে, বি-এ পাশ করেছে অনার্স নিয়ে। এম-এ পড়ছে। এসেছে গোবরডাঙ্গার মূল মুখুজ্জেবাড়ীতে, এসেছে শিকারের নেমন্তন্নে। গোবরডাঙ্গার মুখুজ্জেবাড়ীতে শিকারের ধুম ছিল। গোটা বাংলাদেশের লোক জানে। জ্ঞানদা মুখুজ্জে তখন নতুন উঠেছেন, ভারী নাম। ওর সঙ্গে আলাপ হয়ে গোবরডাঙ্গা এসে ভোরবেলা উঠে একলা বেরিয়ে আমাদের বাগানের ধারে মার্শাল নীলের ঝুঁকে পড়া ডাল নুইয়ে ফুল তুলছিলেন। তাঁকেই আমি মালী দিয়ে পাকড়েছি। কি লজ্জা বল তো! ঠাকুমা এসে আমাকে টেনে ধরে নিয়ে গেলেন বললেন—এই এনেছি ভাই এ-বাড়ীর পুলিশসাহেবকে। এ মেয়ে ভাই পুলিশ সাহেব। তা ধরবি তো ধর রাজার ছেলেকে! আমি লজ্জায় মাথা হেঁট করে দাঁড়িয়ে রইলাম। তোমার বাবা খুব হাসলেন। বাবা এলেন। আমাকেই চা জলখাবার আনতে হল। খেয়ে বিদায় নিয়ে এলেন।

তারপর—।

একটু চুপ করে থেকে বললেন—এরপর বাবা তোমার ঠাকুরদার কাছে এলেন বিয়ের কথা নিয়ে। তোমার ঠাকুরদা তো সাহেবী মেজাজের লোক ছিলেন। বললেন—যোগেশ্বরের বিয়ে এখন তো দেবই না। এম-এ পাশ করার পর ভাবব। আর বিয়েও করবে নিজে দেখে। বড়ছেলের বিয়ে দিয়েছি জনাইয়ে। তাতে ছেলে সুখী হয়েছে। কিন্তু শ্বশুরবাড়ীর চাপে অন্যরকম হয়ে গেল। যা ঠিক আমার পছন্দ নয়। যোগেশ্বরকে আমি অন্যরকম তৈরী করব। হয়তো বিলেত পাঠাব। এখন থেকে বিয়ে দিয়ে ওর হাতপা বেঁধে পঙ্গু করে দেব না। আর আমার ইচ্ছে ওর বউ হয় লেখাপড়া জানা মেয়ে। আপনার মেয়ে তেরো বছরের হতেই ব্যস্ত হয়ে হয়েছেন বিয়ে দেবার জন্যে। সুতরাং মতে মিলবে না। আপনারা বড়লোক, মানী লোক, মেয়ে সুন্দরী, আপনারা চেষ্টা করুন, যোগেশ্বরের থেকে ভাল পাত্র মিলবে।

বাবা ফিরে এলেন মুখ ভার করে। ঠাকুমাকে বললেন—তুমি পাঠালে জোর ক’রে, এখন হ’ল তো!

তারপরই বাবা তোমার বাবাকে চিঠি দিলেন তোমার খুড়োমশায়ের সন্ধান দিয়ে। আমার শ্বশুর তখন কীর্তিহাটে দেবোত্তরের ভার নিয়ে রাজত্বি করছেন জমিদারদের বনেদী চালে। তোমার খুড়ো তখন এন্ট্রান্স পাশ করে কলকাতায় পড়ছেন। পুজো আহ্নিকে খুব ঝোঁক। চেহারাতে তিনি তোমার বাপের থেকে উজ্জ্বলই ছিলেন। লিখলেন—আমার খুড়তুতো ভাই আছে, বড়কাকার বড়ছেলে, লেখাপড়া করছে, হিন্দুয়ানীতে ঝোঁক আছে। সুন্দরী কন্যা খুঁজছেন। আপনি যদি পছন্দ মনে করেন তবে চেষ্টা করুন, আমার বিশ্বাস হয়ে যাবে। আমি আমার ভাইকে বলেছি আপনার মেয়ের রূপের কথা। আর ভবিষ্যতে রায়বাড়ীতে সে উপযুক্ত গৃহিণী হতে পারবে।

ঠাকুমা বললেন—তাই কর রমানাথ। আমার বাবার নাম রমানাথ বাঁড়ুজ্জে। অন্তত রায়বাড়ীর শরিক হয়ে থাক আমাদের মেয়ে। বড়ভাই ফিরিয়ে দিয়েছে, মেজভাইয়ের পূত্রবধূ হয়ে থাক, জেদটা তাতে আমার বজায় থাকবে।

তাই হল—মেজতরফের বড়বউ হয়ে এলাম। আমার টানে তোমার কাকা লেখাপড়া ছেড়ে বাড়ী এসে বসলেন। জুড়ি হাঁকালেন, প্রজাশাসন করলেন, থিয়েটার করলেন, মদ ধরলেন। আমার কোলে দু বছর অন্তর ওই সব ছেলের পাল এল। বড় ব্রজ তাকে জান; সেজটা যা করেছে তা জান। ওদিকে তোমার বাপের নামে দেশ ছাইল। তবু উনি বলতেন—খবরের কাগজওয়ালা। বাঁধা মাইনের চাকর। মাতাল। ফিরিঙ্গী মেয়ে নিয়ে ঘোরে। তারপর যখন বিয়ে ক’রে এখানে তোমার মাকে নিয়ে এলেন তখন মেজতরফের দেনা হয়েছে, সম্পত্তি বিক্রী হচ্ছে, কিনছে তোমার বাপ আর জ্যেঠা। বাবা, তখন থেকে আমার রাগ হল। মনে হ’ল আমার সর্বনাশের হেতু ওই তোমার বাপ। সেদিন থেকে বিবিমহল আমি মাড়াই নি। তোমার কথা শুনেছিলাম, মেলা টাকা তোমার। ছবি আঁক। আর টাকা ওড়াও। এখানকার চালচলন তাও ভাল লাগেনি। আমার ছেলেরা ব্রজ বাদে, সবাই তোমার নামে অনেক কথা বলে। কিন্তু কাল অৰ্চনা গিয়ে যখন পড়ল আমার পায়ে আর তোমার কথা বললে, তখন চোখ খুলল। ভাবলাম ভালই হয়েছে। ছেলে তো মা-বাপ দুয়ের গুণেই হয়। আমার গর্ভে তুমি হলে তুমি এমন হতে না। অন্যরকম হতে। তোমার মা লেখাপড়া জানা মেয়ে, বড় উকীলের ভাগ্নী। তার গুণ পেয়েই না তুমি এমনি। আজ অর্চনার বিয়ের সব ভার নিতে চেয়েছ। দেবোত্তরকে বাঁচিয়ে রেখেছ। ছোটমা—আমার শাশুড়ির জন্যে এত করেছ। ভালই হয়েছে। সারারাত ভেবে সকালে অর্চনাকে বললাম—চল তো সুরেশ্বরের সঙ্গে দেখা করে আসি। কথা বলে আসি। তা মনটা জুড়োলো বাবা।

আমি অভিভূতের মত দাঁড়িয়ে শুনছিলাম—দাঁড়িয়েই রইলাম।

অৰ্চনা চা হাতে নিয়ে এসে দাঁড়াল।

চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বললেন—পান দেখ দেখি? সুরেশ্বরের এখানে পানের কারবার আছে—না নেই? কলকাতায় মানুষ আজকালকার ছেলে সিগারেট খায়, মদও হয়তো খায়, কিন্তু পান তো ওরা খায় না। বলে খুড়ীমা হাসলেন।

অর্চনা বললে—দোক্তা আনতে রঘুকে আমি পাঠিয়ে দিয়েছি। পান এখানে আছে। জর্দাও আছে, তা জর্দায় তো তোমার হবে না! সুরোদার সেদিকে ত্রুটি নেই। সায়েবী কেতা থেকে দেশী কেতার বন্দোবস্তের ত্রুটি নেই।

খুড়ীমা বললেন-তা তো এ-বাড়ীর চিরকালের রেওয়াজ মা। আমি যখন প্রথম বউ হয়ে এলাম তখন গাড়ী ঘোড়া লোকলস্কর, সাহেবী বাসন কাঁটা চামচে, মুসলমানদের বাসন বাবুর্চি সব ছিল। শ্বশুরের আমলের হাতীটাও তখন বেঁচে। তা যা, পান সেজে নিয়ে আয়। যা, দাঁড়াস নে, চা খেয়েই আমার পান চাই। খাওয়ার পর মিষ্টিমুখ থাকলে আমার ন্যাকার আসে।

অর্চনা চলে গেল। খুড়ীমা চা নিয়ে কর গুণে নিবেদন করে নিয়ে চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন-চমৎকার চা হয়েছে। এমন চা অনেকদিন খাইনি। হঠাৎ হেসে বললেন—আমাদের বাড়ীতে দু পয়সা প্যাকেটের চা, আর একটা পুরনো অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়িতে জল গরম হয়—ফুটতে শুরু করলে প্যাকেট সুদ্ধ চা ফেলে দিয়ে ফুটল। তাই নামিয়ে দুধ দিয়ে পেতলের হাতায় ঘেঁটে চা তৈরী হল। তারপর কাঁসার গেলাসে একগেলাস করে নিয়ে বসল মেয়ে-পুরুষ ছেলেতে বিশ-পঁচিশজন। যেমন গন্ধ তেমনি স্বাদ।

আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না সুলতা, এসব কথার কি উত্তর দেব। শুধু শুনেই যাচ্ছিলাম। কিন্তু খুড়ীমার সেদিকে গ্রাহ্য ছিল না। তিনি যেন শুধু কথা বলতেই এসেছিলেন এবং আমাকেই বলতে চেয়েছিলেন।

হঠাৎ এবার বলে ফেললেন —আমার হিংসে ছিল বাবা, রাগ ছিল, দারুণ রাগ ছিল। দেখ এসব তো আমার হ’তে পারত। তুই তো আমার পেটে হতে পারতিস! তা হ’ল না—বেশ, হ’ল না। আমি লেখাপড়া জানা ছিলাম না, বিবি ছিলাম না। বেশ। কিন্তু ঘটকালি করে আমার কপালে এই এমন একটা মানুষ—

অর্চনা এসে ঢুকল পান হাতে করে। সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেলেন খুড়ীমা। খুড়ীমা হেসে বললেন—পান, প্রাণটা বাঁচল। এ তো বেশ বড় ঢলকো পান রে! খুব মোটা খিলি করেছিস। অর্চনার সেই এক উত্তর- তোমার ভাসুরপো একেবারে আমীর গো। পানের সরঞ্জাম, সেই কলকাতার কাটা সুপারি, সুগন্ধী খয়ের, কমলানেবুর শুকনো খোসা, খুব সুগন্ধী জর্দা, ছোট এলাচ, বড় এলাচ সব আছে।

—ছোট এলাচ দিয়েছিস নাকি?

তুমি খাও না আমি জানি। জর্দাও দিই নি।

—আন। জর্দা খাইনে পাইনে বলে রে। নইলে সেকালে কাশী থেকে জর্দা আসত মেজতরফের কর্তার নামে। তাই ভাগ ক’রে দিতেন। এখন কড়া তামাকপাতা আর দুটো জোয়ান মৌরী দিয়ে ভেজে নামিয়ে নিই। আন জর্দা আন।

এতক্ষণে সুলতা, আমি কথা খুঁজে পেয়ে বাঁচলাম। বললাম—কৌটোটা আপনি নিয়ে যান খুড়ীমা।

—নিয়ে যাব? আমার মুখের দিকে তাকালেন খানিকক্ষণ, তারপর বললেন—দে। তোকে আজ বড় ভাল লাগল রে।

তারপরই চলে গেলেন। যেতে যেতে ফিরে দাঁড়িয়ে বললেন—যা বললাম তার চেষ্টা তুই অবিলম্বে কর বাবা! তোর ঠাকুরদার ওপর ফন্নপূর্ণা ঠাকুমার একটা মায়া ছিল। হয়তো তোর কথা রাখলেও রাখতে পারেন। সে ছেলের বিয়ে এখনো হয়নি। এ বাড়ীতে বিয়ে দেবেন না বলে চিঠি লিখেছিলেন অগ্রহায়ণ মাসে। আজ তো মাঘ মাসের ৪ঠা।


© 2024 পুরনো বই