একদল ইংরেজ সৈন্য মাঠের পাশ দিয়ে লড়ায়ের জায়গায় যাচ্ছে, এমন সময় তাদের একজন হঠাৎ দেখতে পেল, মাঠের কিনারায় একটা খুকি ঘুমাচ্ছে। আশেপাশে কোথাও লোকজন নাই, ঘর বাড়ি যা কিছু ছিল কোন কালে গোলা লেগে ছাতু হয়ে গেছে—এমন জায়গায় খুকি আসল কোথা থেকে? খুকির বয়স বছর দুই, টুকটুক করে হেঁটে বেড়ায়, অতি মিষ্টি ক’রে দু-চারটি কথা বলে ফরাসী ভাষায়। সে যে কোথা থেকে এল তা সে বুঝিয়ে বলতে পারে না। সৈন্যরা ঠিক করল, তাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া যাক, পরে খোঁজ করে যা হয় একটা করা যাবে। লড়াইয়ের জায়গায় মাটির মধ্যে খাদ কেটে সৈন্যরা সব সময় হুঁশিয়ার হয়ে বসে থাকে—কখনো একদিন, কখনো দুদিন কখনো বা সপ্তাহ ধরে এক-এক দলকে সেই খাদের মধ্যে থাকতে হয়। সন্ধ্যার অন্ধকারে তারা খুকিকে নিয়েই আস্তে আস্তে খাদের মধ্যে ঢুকল।
সামনে জার্মানদের খাদ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, মাঝে মাঝে এদিক-ওদিক গোলা ফাটার শব্দ হচ্ছে, কখনো-বা দুটো-একটা বন্দুকের গুলি সোঁ করে মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু খুকুমনির তাতে ভ্রুক্ষেপ নাই। সৈন্যরা তার জন্য খড় দিয়ে আর বালির বস্তা দিয়ে সুন্দর বিছানা করে দিয়েছে তার মধ্যে সে নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমাচ্ছে! সকাল হতেই কামানের লড়াই আরম্ভ হল-প্রথমটা অল্প-স্বল্প-তার পরে ক্রমেই বেশি। খুকি তখন ঘুম থেকে উঠেছে, সে প্রথম প্রথম দুমদাম্ শব্দে বোধহয় একটু ভয় পেয়েছিল কিন্তু খানিকক্ষণ শুনে শুনে আপনা হতেই তার ভয় ভেঙে গেল। সে তখন খাদের মধ্যে ঘুরে ঘুরে সকলের সঙ্গে আলাপ করতে লাগল, তাদের বন্দুক,দুরবীন অস্ত্রশস্ত্র দেখিয়ে, ‘এটা কি?’ ‘ওটা কি?’ জিজ্ঞাসা করতে লাগল।
তার পর একদিন যায়, দুদিন যায়, সৈন্যরা তখনো সেখান থেকে বদলি হয় নি। তিন দিনের দিন জার্মানরা খাদের উপর প্রকাণ্ড এক বোমা ফেলল। বোমা ভয়ানক শব্দে ফাটবামাত্র খাদের খানিকটা ধ্বসে গিয়ে কতগুলো লোক চাপা পড়ল। অমনি সকলে একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল, “আগে খুকিকে দেখ।” খুকি এক কোণে পুঁটুলি পাকিয়ে দিব্যি ঘুমিয়ে আছে। পরদিন সকালবেলা সকলে খাওয়া-দাওয়া করছে—এমন সময় একজন চেঁচিয়ে উঠল “দেখ, খুকিটা কোথায় গেল”, সকলে চেয়ে দেখে খুকিটা জার্মান খাদের দিকে খুটখুট করে হেঁটে যাচ্ছে। জার্মানরা তো ব্যাপার দেখে অবাক! খানিক বাদে তারা খুকিটাকে ডাকতে লাগল। খুকিও তাদের খাদে গিয়ে অনেক চকলেট লজঞ্চুস আদায় করে ভারি খুশি হয়ে ফিরে এল। এমনি করে তারা এক সপ্তাহ কাটাল। তার পর দু বছর কেটে গেছে—সেই খুকির বাবা-মার কোনো খবর পাওয়া যায় নি। সেই সৈন্যদলই এখনো তাকে খরচ দিয়ে খাইয়ে পরিয়ে মানুষ করছে। অবশ্য এখন সে আর লড়াইয়ের জায়গায় থাকে না—সে থাকে লণ্ডনে—সকলে তার নাম রেখেহে ফিলিস্।