ফড়িং

ফড়িং পাওয়া যায় না, এমন দেশ খুব কমই আছে। যেদেশে লতাপাতা আছে আর সবুজ মাঠ আছে, সেদেশেই ফড়িং পাওয়া যাবে। নানান দেশে নানানরকমের ফড়িং তাদের রঙ এবং চেহারাও নানানরকমের, কিন্তু একটি বিষয়ে সবারই মধ্যে খুব মিল দেখা যায়। সেটি হচ্ছে লাফ দিয়ে চলা। এই বিদ্যায় ফড়িঙের একটু বিশেষরকম বাহাদুরি দেখা যায়, কারণ অন্যান্য অনেক পোকার তুলনায় ফড়িঙের চেহারাটি বেশ বড়োই বলতে হবে। আরো অনেক বড়ো পোকা আছে, যেমন আরশুলা, যারা একটু-আধটু লাফাতে পারে; কিন্তু তাদের লাফানির চাইতে উড়বার ঝোঁকটাই বেশি। ফড়িঙের যদিও ডানা আছে, কিন্তু সেটা সে ঠিক উড়বার জন্য অর্থাৎ বাতাস ঠেলে উঠবার জন্য ব্যবহার করে। তাতে কেবল লাফ দিবার সময় বাতাসে ভর করে শরীরটাকে কিছু হালকা করার সুবিধা হয় মাত্র। ফড়িঙের শরীরটা দেখলেই বোঝা যায় যে, ঐরকম লাফ দিবার আয়োজন করেই তাকে গড়া হয়েছে। তার শরীরের ভিতরটা বাতাসে পোরা বললেও হয়—অন্য। কোনো পোকার মধ্যে এতগুলা ফাপা নল প্রায়ই দেখা যায় না। শরীরটা হালকা হওয়ায় বির সুবিধা হয় তা সহজেই বুঝতে পার। তার উপর ফড়িঙের পা দুটিতেও একটু বিশেষরকমের কেরামতি আছে। পায়ের অগাটি যেন বঁড়শির মতো বাঁকানো। সাফাবার সময় সে ঐ বঁড়শি দিয়ে সুবিধামতো গাছের ডালপালা কিছু একটা বেশ করে আঁকড়িয়ে ধরে। তার পর পা-টাকে জোর করে গুটিয়ে হঠাৎ টান ছেড়ে দেয়, আর সেইসঙ্গে সমস্ত শরীরটা ধনকের ছিলার মতো ছিটকিয়ে যায়। এরকম সাংঘাতিকভাবে লাফাতে গিয়ে যাতে হাত- পা জখম না হয়, তার জন্যও ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রথম ব্যবস্থা, তার ডানা দুটি। লাফ দিয়ে পড়বার সময় ঐ ডানার উপর ভর দিয়ে সে লাফানির ঝুঁকিটা সামলিয়ে নেয়। তার পর সামনের পাগুলোর অগায় যে পুঁটুলি রয়েছে ঐগুলোতে পড়বার চোট কমিয়ে দেয়। ফড়িঙের ইংরাজি নামটিতেও তার ঐ লাফানির পরিচয় পাওয়া যায়। (Grasshopper অর্থাৎ যিনি ঘাসের উপর লাফিয়ে বেড়ান’)।

মাঠের মধ্যে ফড়িঙের ‘চির-চির’ শব্দ অনেক সময়ে খুব স্পষ্ট শোনা যায়। এই আওয়াজটি কিন্তু তার গলা থেকে বেরোয় না—তার যন্ত্রটি থাকে ডানার মধ্যে। ডানা দুটির গোড়া ‘উকা’র মতো খড় খড়ে দুটি সরু তাঁতের উপর একটি পাতলা ‘চামড়া’র ছাউনি। ঐ তাঁতের ঘষাঘষিতে আওয়াজ হয় আর ঐ পাতলা চামড়াটিতে সেই আওয়াজটাকে বাড়িয়ে তোলে। এইরকম আওয়াজ করে তাদের কি লাভ হয়? একটা লাভ হয় এই যে তারা এমনি করে পরস্পরকে ডাকতে পারে। ভালো খাবার পেলে বা মনে খুব ফর্তি হলেও তারা। ভয় পেলে চুপ করে থাকে। আশ্চর্য এই যে, স্ত্রী ফড়িংদের আওয়াজ নাই। কিন্তু তাদের ‘কান’ খুব ভালো।

 

‘কান’ বললাম বটে, কিন্তু একটা ফড়িং ধরে যদি তার কান খুঁজতে যাও, হয়তো খুঁজেই পাবে না। কারণ কানটি থাকে তার হাঁটুর কাছে না হয় পিঠের উপর। কানেরও আবার নামান রকম-বেরকম আছে। কোনোটা একেবারে খোলা দুটো পাতলা চামড়ার খোলা, কোনোটা গর্তের মধ্যে ঢুকিয়ে বসানো—কোনোটার মুখে রীতিমতো ঢাকনি দেওয়া।

সন্দেশ-শ্রাবণ, ১৩২৩


© 2024 পুরনো বই