রবিন হুড – ১৯

উনিশ

পরদিন অতি প্রত্যুষে রবিন হুড দলবল নিয়ে, বনের যতটা সম্ভব কাছে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন। সেখান থেকে শহরের পূর্বদিকের ফটক বেশ দেখতে পাওয়া যায়। রবিন হুডের পরিধানে টুকটুকে লাল রঙের পোশাক; অপর সকলে লিঙ্কান গ্রিন পরা। সকলেরই সঙ্গে এক-এক খানি তলোয়ার এবং ধনুর্বাণ, তার ওপর অস্ত্রশস্ত্র ঢেকে সকলেরই গায়ে সন্ন্যাসীর আলখাল্লার মতো একটি করে কোট।

রবিন হুড বললেন,–’দ্যাখো, আমার মনে হয় এই বনের পাশেই আমরা সব লুকিয়ে থাকি। আর একজন গিয়ে দেখে আসুক, শহরের কোনও খবর জানতে পারে কিনা। ফটক না খুললে তো আর কিছু করা যাবে না? ‘

এমন সময় দেখতে পাওয়া গেল, একটি যুবক সন্ন্যাসী শহরের দিক থেকে আসছে। বিধবার ছেলে উইল বলল,–’আজ্ঞে! সন্ন্যাসী দেখছি শহরের দিক থেকেই আসছে। আমি গিয়ে তাকে জিগ্যেস করে দেখি স্টাটলির কোনও খবর বলতে পারে কি না।’

রবিন হুডের অনুমতি নিয়ে উইল সন্ন্যাসীর দিকে এগিয়ে গেল। সন্ন্যাসীর কাছে গিয়ে নমস্কার করে বলল,—’সন্ন্যাসী ঠাকুর! আপনি কি নটিংহাম শহরের কোনও খবর জানেন? শেরিফ কি সত্যি-সত্যিই আজ একজন দস্যুকে ফাঁসি দেবেন?’

সন্ন্যাসী বলল,–’আরে ভাই সে কথা আর বলো কেন! যেখানে ফাঁসিকাঠ খাড়া করেছে আমি তার কাছ দিয়েই এসেছি। আজ দুপুরে উইল স্টাটলি নামে এক দস্যুকে ফাঁসি দেবে। ফাঁসিকাঠ দেখলেই আমার গা কেমন-কেমন করে, তাই তাড়াতাড়ি পালিয়ে এসেছি।’

‘বাঃ ঠাকুর! তুমি তো বেশ লোক দেখছি! তুমি যে চলে এলে, এখন ও বেচারিকে ফাঁসির সময় কে ভগবানের নাম শোনাবে?’

তাই তো ভাই, আমি তো এতটা খেয়াল করিনি। তুমি কী বলো যে আমিই গিয়ে সে কাজটা করি?’

‘নিশ্চয়ই বলি! নইলে কে আর করবে?’

‘কিন্তু ভাই, আমি একজন সামান্য সন্ন্যাসী, তারা কি আমাকে এ কাজ করতে দেবে? আমাকে বোধহয় ভেতরেই ঢুকতে দেবে না। আজ যে শহরের ফটক বন্ধ; ভেতর থেকে বাইরে আসা যায় বটে, কিন্তু ভেতরে কাউকে যেতে দেবে না।’

উইল তখন সন্ন্যাসীকে রবিন হুডের কাছে নিয়ে গেল। সন্ন্যাসী তাঁকে সব খবর জানিয়ে বলল,–মশাই! আমার বেয়াদবি মাপ করেন, তা একটা কথা বলি। এ দরজায় কাল থেকে যেমন পাহারা বসেছে, আমি হলে কখনই এদিক দিয়ে ঢুকবার চেষ্টা করতাম না। কিন্তু উলটো দিকে শত্রুর আশঙ্কা তেমন নেই বলে, পাহারার বড় একটা কড়াকড়িও নেই।’

রবিন হুড বললেন,–তোমাকে অনেক ধন্যবাদ সন্ন্যাসী ঠাকুর! তুমি কথাটা মন্দ বলোনি। আচ্ছা, আমরা তাহলে উলটো দিকেই যাচ্ছি।’

দস্যুদল তখন নিঃশব্দে শহরের পশ্চিম দরজার কাছে এসে হাজির হল। আর্থার-আ-ব্লান্ড রবিন হুডের অনুমতি নিয়ে, খবর নেওয়ার জন্য এগিয়ে গেল। দরজার সামনেই খাল কাটা ছিল, কিন্তু যুদ্ধের সময় নয় বলে খাল শুকনো, আর্থার বিনা কষ্টে তা পার হয়ে দরজার কাছে গিয়ে হাজির হল। সৌভাগ্যবশত ওপরের জানলা থেকে নীচ পর্যন্ত একটি ভাইন লতা ঝুলছিল, সেই লতার সাহায্যে আর্থার ওপরে ওঠে, আস্তে-আস্তে পিছন দিক থেকে একেবারে প্রহরীর টুটি টিপে ধরল। প্রহরী টু শব্দটি পর্যন্ত করতে পারল না। আর্থার তার হাত-পা বেঁধে, মুখে ছিপি এঁটে মাটিতে ফেলে রাখল। এবং তার সঙ্গে পোশাক বদল করে, তার কাছ থেকে চাবিগুলি হস্তগত করতে ভুলল না।

তারপর একটুও দেরি না করে দরজা খুলল, পোল নামিয়ে দিল। দস্যুদল তখন একেবারে শহরের ভেতর এসে হাজির। এদিকে কারাগারের দরজা খোলা হয়েছে, লোকজন এবং সৈন্যসামন্ত সকলেই তখন কয়েদিকে দেখবার জন্য চলে গেছিল।

উইল স্টাটলি কারাগার থেকে বের হয়ে, উৎসুক চিত্তে রাস্তার দুধার দেখে চলল, কিন্তু দুঃখের বিষয়, দলের কাউকেই দেখতে পেল না। তার মনে একটু নিরাশার ভাব হল। ফাঁসিকাঠের কাছে এসে শেরিফকে বলল,—’হুজুর! আমার একটি অনুরোধ রাখুন। আমার প্রভু রবিন হুডের কোনও লোক এ পর্যন্ত ফাঁসিকাঠে মরেনি! আমার হাতের বাঁধন খুলে দিয়ে আমাকে একটা তলোয়ার দিন, তারপর আপনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে আমি মরব।’

শেরিফ বললেন,—’—সেটি হবে না বাপু! তোমাকে এই ফাঁসিকাঠেই মরতে হবে! আর তোমার মনিবকে যখন ধরব, তাকেও ফাঁসিকাঠেই মারব, এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকো!’

স্টাটলি দেখল, আর উপায় নাই। তখন শেরিফকে গালাগালি দিতে আরম্ভ করল,—’হতভাগা কাপুরুষ! তোর এমন নীচ মন? যদি কখনও তুই আমার প্রভুর হাতে পড়িস, তবে এর শোধ পাবি। আমার প্রভুকে ধরা তোদের মতো গাধা-বলদের কাজ নয়।’

স্টাটলির এরকম স্পর্ধাতেও কোনও ফল হল না। শেরিফ তর্জন-গর্জন করে হুকুম করিলেন,–শিগগির ব্যাটাকে ফাঁসি কাঠে চড়াও।’ ফাঁসির সব তৈরি হল। গলায় দড়ি পরানো হলেই গাড়িখানা হঠাৎ টেনে সরিয়ে দেবে। এমন সময়। একজন অল্পবয়স্ক সন্ন্যাসী এগিয়ে এসে শেরিফকে বলল,—’ ‘হুজুর দোহাই আপনার! এ বেচারিকে এখন মরতে হবে, আপনার হুকুম হয় তো আমি একে একটু ভগবানের নাম শুনিয়ে দিই।’

শেরিফ বলল,–’ভগবানের নাম শুনিয়ে দরকার নেই! ওটাকে শেয়াল কুকুরের মতো মরতে হবে।’

সন্ন্যাসী বলল,–’হুজুর ধর্ম নিয়ে তামাশা করবেন না। এর পাপের বোঝা আপনার কাঁধে চাপবে।’ সেখানে বিশপ মহাশয়ও হাজির ছিলেন।

সন্ন্যাসী তাঁকে বলল,—’পাদরি মশাই! আপনি ধর্মের মা বাপ, আপনার সাক্ষাতে কখনই ধর্মের অপমান হতে দেবেন না।’

বিশপ মশাই ইতস্তত করতে লাগলেন। তাঁরও ইচ্ছা, যে, যত শীঘ্র সম্ভব ফাঁসি হয়ে যায়। কিন্তু সন্ন্যাসীর কথায় হাজির সকলেই যেন সায় দিতে লাগল দেখে, বিশপ শেরিফের কানে-কানে কী বললেন। শেরিফ তখন সন্ন্যাসীকে বললেন,–’আচ্ছা বাপু! তোমার কাজটা তাহলে খুব শিগগির শেষ করে ফেলো।’ এদিকে আবার সৈন্যদেরও বললেন—’তোমরা সাবধান! এই সন্ন্যাসীটার ওপর নজর রেখো। আমার সন্দেহ হচ্ছে, ব্যাটা দস্যুদের লোক।

সন্ন্যাসী শেরিফের কথা শুনেও যেন শুনল না। হাতের মালা ফিরিয়ে কয়েদির কানে-কানে কথা বলতে লাগল। এদিকে এক গোলমাল শেষ হতে না হতে নতুন বাধা এসে হাজির! একজন লোক পিছন থেকে ঠেলে এসে স্টাটলিকে চিৎকার করে বলল,–’ভাই স্টাটলি! মরবার আগে তোমার সব বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নাও।’ বক্তা অন্য কেউ নয়, আমাদের মাচ্চ!

শেরিফ মাচ্চের স্বর শুনেই চিনতে পারলেন। তিনিও চিৎকার করে বললেন,—’ ‘ধর ব্যাটাকে! এ বেটাও ডাকাত! আগে আমার বাবুর্চি ছিল। আমার রূপোর ডিশগুলো চুরি করে নিয়ে পালিয়ে যায়। আজ দুটো ডাকাতকে একসঙ্গে ফাঁসি দেব।’

মাচ্চ বলল,–’ব্যস্ত হবেন না হুজুর! আগে ধরুন, তারপর ফাঁসি দেবেন।’ এই কথা বলে চোখের নিমেষে স্টাটলির বাঁধন কেটে দেওয়ামাত্র, স্টাটলিও এক লাফে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল।

শেরিফ রাগে চিৎকার করে বললেন,–’পাকড়াও! রাজদ্রোহী পাজিদের শিগগির পাকড়াও করো।’ সঙ্গে-সঙ্গে তিনিও ঘোড়া চালিয়ে মাচ্চের মাথা লক্ষ করে তলোয়ার চালালেন।

মাচ্চ বিদ্যুৎবেগে তাঁর আঘাত বিফল করল। ঘোড়ার পেটের নীচ দিয়ে অপর পাশে গিয়ে বলল,–’না হুজুর, এতটা সহজ মনে করবেন না। এখন আপনার তলোয়ার যে চাই!’ এই কথা বলেই মাচ্চ শেরিফের হাতের তলোয়ার কেড়ে নিয়ে স্টাটলিকে বলল,–’এই নাও ভাই! শেরিফ তাঁর নিজের তলোয়ার তোমাকে দিয়েছেন। এখন এসো দেখি, দুজনে মিলে বেটাদের একটু শিখিয়ে দিই?’

শেরিফের সৈন্যরা প্রথমটা তো একেবারে অবাক! ক্রমে তারা স্থির হয়ে মাচ্চ এবং উইল স্টাটলিকে আক্রমণ করল। ঠিক এই সময়ে রবিন হুড বিউগল বাজিয়ে সংকেত করলেন। তখন ব্যাপারটা কী তা সৈন্যদের বুঝতে দেরি হল না। চারদিক থেকে তির এসে তাদেরকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলল।

দস্যুরা তখন গায়ের ওভারকোট ফেলে ‘জয় লকলির জয়! জয় লকলির জয়!’ বলে চিৎকার করতে-করতে সৈন্যদলের ওপর পড়ল।

হঠাৎ আক্রান্ত হয়েও শেরিফের সৈন্যরা কিছুতেই সরল না— মাচ্চ, স্টাটলি ও সন্ন্যাসীর চারদিক বেষ্টন করে তারা যুদ্ধ করতে লাগল। কিন্তু দস্যুদের আক্রমণ তারা কতক্ষণ সহ্য করবে? রবিন হুড তাদের মধ্য দিয়ে পথ করে, স্টাটলি, মাচ্চ, ও সন্ন্যাসীর দিকে এগোলেন। শেরিফের দুই জন সৈন্য স্টাটলি ও সন্ন্যাসীকে মারবার জন্য, তাদের অজ্ঞাতসারে পেছন দিক থেকে দুটি বল্লম তুলেছে। এমন সময় রবিন হুড, তলোয়ারের আঘাতে একজনের হাতের বল্লম ফেলে দিলেন, সঙ্গে-সঙ্গে অন্যজনও তির খেয়ে মাটিতে পড়ে গেল।

রবিন হুডকে দেখে স্টাটলি খুব সন্তুষ্ট হয়ে বলল,—’ভগবান আপনার মঙ্গল করুন প্রভু! আমার ভয় হয়েছিল, বুঝি বা আপনাকে আর দেখতে পেলাম না।’

এদিকে শেরিফের সৈন্যদল বেগতিক দেখে ক্রমে পিছোতে আরম্ভ করল বটে! কিন্তু তবুও দস্যুদলের জয় হল না। কারণ, সৈন্যরা পিছিয়ে ক্রমে দরজায় এসে হাজির। তাদের ইচ্ছা, পথ আটকে দস্যুদলকে শহরের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখবে। কিন্তু দস্যুদের অভিসন্ধি অন্যরকম। খানিকক্ষণ সৈন্যরা তাড়া করে, আবার হঠাৎ ফিরে তারা পশ্চিম দরজার দিকে চলল। পশ্চিম দরজায় যে তখনও পর্যন্ত আর্থার–আ-ব্লান্ড প্রহরী, শেরিফের সৈন্যদলের সেটি জানা ছিল না। দস্যুরা এবারে ফাঁদে পড়েছে মনে করে, উৎসাহে চিৎকার করতে-করতে, তাদের তাড়া করল। এদিকে আর্থার দরজা খুলে পোল নামিয়ে দেওয়াতে, দস্যুদল সহজেই শহরের বাইরে এসে পড়ল। শেরিফের সৈন্যরা তখনও এসে হাজির হল না বলে, আর্থার আবার দরজা বন্ধ করবার এবং পোল তুলে দেওয়ার অবসর পেল না। বেগতিক দেখে আর্থার দস্যুদলের সঙ্গে মিশে গেল। তখন পাহাড়ের ওপর দিয়ে দস্যুরা ধীরে-ধীরে বনের দিকে এগোতে লাগল।

শহরের পশ্চিমদিক থেকে সারউড বনে যাওয়ার জন্য যে রাস্তা ছিল, পালানোর পক্ষে সেটি একটুও নিরাপদ নয়। পাহাড়ের ওপর দিয়ে অনেকটা পথ যেতে হয়, এবং রাস্তাটি একেবারেই আশ্ৰয়শূন্য ও খোলা। শহরের প্রাচীরের ভেতর থেকে ছোট্ট-ছোট্ট জানলা দিয়ে শত্রুপক্ষ ক্রমাগতই দস্যুদলের ওপর তির চালাতে লাগল। দস্যুদল পথ চলতে-চলতে মাঝে-মাঝে ফিরে শত্রুদের লক্ষ করে তির চালাতে ছাড়ল না। যুবক সন্ন্যাসীটিও বিড়বিড় করে ভগবানের নাম করতে-করতে, রবিন হুড়ের পাশে-পাশে চলল।

এমন সময় হঠাৎ কোথা থেকে একটি তির এসে রবিন হুডের হাতে লাগায়, সন্ন্যাসী ভয়ে চিৎকার করে তাঁর দিকে ছুটে এল। শেরিফ ঘোড়ায় চড়ে দস্যুদলের পেছনে আসছিলেন। তিনি রবিন হুডের হাতে তির বিঁধতে দেখে আহ্লাদে বলে উঠলেন,–’কেমন জব্দ বাবা! এখন কিছুদিনের জন্য আর তোমায় তির চালাতে হবে না।’

রবিন হুড একটানে তাঁর হাতে বেঁধা তির তুলে নিলেন। হাত থেকে দরদর ধারে রক্ত পড়তে লাগল, তিনি তা গ্রাহ্যই করলেন না। শেরিফকে বললেন,–’তুমি মিথ্যা কথা বলছ! সমস্ত দিন তোমাকে খুঁজে পাইনি, একটি তির তোমার জন্য রেখেছি—এই নাও’ বলে সেই তিরটি শেরিফের মস্তক লক্ষ করে ছুড়লেন। শেরিফ ভয়ে জড়সড় হয়ে ঘোড়ার ওপর তক্ষনি উপুড় হয়ে পড়লেন কিন্তু তবুও তির তার মাথায় গভীর ক্ষত করে দিল।

শেরিফের পতন দেখে তাঁর সৈন্যদের আর উৎসাহ রইল না। এই অবসরে দস্যুদল পর্বতের অনেক ওপরে উঠে পড়ল। সন্ন্যাসী তখন একটি রুমাল বের করে রবিন হুড়ের রক্তপাত বন্ধ করবার চেষ্টা করল। তার হাতখানা দেখেই রবিন হুড চমকে ওঠে, তার মাথার হুডটি ফেলে দিয়ে দেখলেন—সন্ন্যাসী স্বয়ং ম্যারিয়ান!

রবিন হুড আশ্চর্য হয়ে বললেন—’এ কী, ম্যারিয়ান! তুমি এখানে কেমন করে এলে?’

ম্যারিয়ান রবিন হুডের কাছে ধরা পড়ে অপরাধীর মতো লজ্জিত হলেন এবং মাথা নীচু করে বললেন,–’রবিন! আমি না এসে থাকতে পারলাম না। জানতাম তুমি কিছুতেই আসতে দিতে না, তাই সন্ন্যাসী সেজে এসেছিলাম!’

এমন সময় উইল স্কারলেট চিৎকার করে বলে উঠল,–হায় ভগবান! এবার বুঝি আমরা সত্যি-সত্যিই ফাঁদে পড়লাম।’

তখন সকলেই ওপরের দিকে চেয়ে দেখল, পর্বতের ওপরের প্রাসাদ থেকে একদল নতুন সৈন্য, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চিৎকার করতে–করতে নীচের দিকে নেমে আসছে।

বেচারি ম্যারিয়ান একেবারে নিরাশ হয়ে বললেন,–’এবার দেখছি আমাদের আর পালাবার পথ রইল না।’

রবিন হুড ম্যারিয়ানকে তার কাছে টেনে এনে বললেন,–’কিছু ভয় নেই ম্যারিয়ান!’ ম্যারিয়ানকে সাহস দিলেন বটে, কিন্তু তাঁরও মন একেবারে দমে গেল, তিনি পালানোর রাস্তা ভাবতে লাগলেন।

তখন হঠাৎ ওপরের দিকে চেয়ে দেখলেন যে, নতুন সৈন্যদলের আগে একজন যোদ্ধা হাসতে-হাসতে আসছেন—তিনি স্যার-রিচার্ড–অব-দি-লি। রবিন হুড়ের তখন আনন্দের সীমা রইল না।

‘জয় রবিন হুডের জয়’ বলতে-বলতে স্যার রিচার্ড এসে হাজির হলেন। দস্যুদল নতুন বন্ধুর আগমনে আনন্দে অধীর হয়ে, ওপরের দিকে ছুটে চলল। দেখতে-দেখতে গোটা দস্যুদল লি-প্রাসাদের ভেতরে আশ্রয় নিল। শেরিফ তাঁর সৈন্যদলসহ প্রাসাদের বাইরে থেকে রাগে গর্জন করতে লাগলেন।


© 2024 পুরনো বই