বিন্ধ্য পাহাড়ের এই নির্জনতাই হচ্ছে আমার ভূতুড়ে কাজের পক্ষে অত্যন্ত অনুকূল। এখানে কৌতূহলী দৃষ্টির উৎপাত নেই।
বাংলো থেকে খানিক তফাতে ছিল একটি অন্ধকার গভীর গুহা। নানা জায়গা থেকে গোপনে আমার অপার্থিব মূর্তি গঠনের নানা উপাদান একে একে এনে ওহার ভেতরে জড়ো করতে লাগলুম। এই উদ্যোগ-পর্বই হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন ব্যাপার এবং এই কাজ শেষ করতেই কেটে গেল পনেরো দিন।
তারপর আরম্ভ হল গঠন কার্য। প্রথম প্রথম এই বিশ্রী কাজে কিছুতেই মন বসতে চাইত। যে অপূর্ব মরীচিকা আগের বারে আমাকে জগৎ ভুলিয়ে তার দিকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল, এবারে তেমন কোনও আকর্ষণ নেই। আমি কাজে হাত দিয়েছি নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই।
কিন্তু আর এক প্রকাণ্ড মূর্তির কাঠামো যখন কতকটা তৈরি হল, আবার আমি নিজেকে ভুলে গেলুম। বিকারগ্রস্ত রোগীর মতো ভুলে গেলুম আমি নিখিল বিশ্ব! কাজের মধ্যে ড়ুবে কোনওদিন আঠারো এবং কোনওদিন বা উনিশ-কুড়ি ঘণ্টা কোথা দিয়ে যে কেটে যেতে লাগল, কিছুই বুঝতে পারতুম না। দেখতে দেখতে দানবীর কাঠামো সম্পূর্ণ আকার ধারণ করলে।
কিন্তু মূর্তি গঠন তো তুচ্ছ ব্যাপার, যে কোনও সাধারণ কারিগর অনায়াসেই যে কোনও মূর্তি গড়তে পারে। যার মধ্যে জীবন নেই তা গড়া তো সহজসাধ্য ব্যাপার! আমাকে আনতে হবে জীবনের গতি, চাঞ্চল্য, তপ্ততা—আসল সমস্যা হচ্ছে এইখানেই।
হাতে সময় আছে মাত্র পনেরো দিন—তারপরেই পিতৃকৃত্য পালনের জন্য আমাকে যাত্রা করতে হবে নিজের দেশে। বাবাকে যখন কথা দিয়েছি, সে কথা আমি রাখব। বিবাহ করব।
একদিন মূর্তির হৃৎপিণ্ড রচনায় একাগ্রমনে নিযুক্ত হয়ে আছি, আচম্বিতে গুহার একমাত্র প্রবেশ পথে পড়ল যেন কার বৃহৎ ছায়া। আমি কৃত্রিম আলোতে কাজ করতুম—বাইরের স্বাভাবিক আলোকের কতকটা উজ্জ্বলতা আসত কেবল গুহার প্রবেশ পথ দিয়েই। সেখানটা অন্ধকার হতেই আমি চমকে ফিরে দেখলুম। একখানা অতি বীভৎস প্রকাণ্ড সুখ সাঁৎ করে সেখান থেকে সরে গেল।
হুঁ! তাহলে দানবটা এখনও আমার ওপরে তার সজাগ দৃষ্টির পাহারা জাগিয়ে রেখেছে। তাহলে আমি হচ্ছি তার হুকুমের চাকর আর সে আড়াল থেকে দেখছে আমি তার হুকুম তামিল করছি কি না! তাহলে আমি এখন বিজ্ঞানের ছাত্র নেই, একটা অমানুষের খেয়াল চরিতার্থ করবার যন্ত্র মাত্র!
তখনই স্বপ্ন ছুটে গেল! আর কাজ করতে ভালো লাগল না। গুহার ভেতর থেকে বেরিয়ে পড়লুম।
বাইরে গিয়ে কিন্তু জনপ্রাণীকে দেখতে পেলুম না। সূর্য অস্ত যাওয়ার আয়োজন করছে—পশ্চিম আকাশে বিচিত্র রঙের প্রদর্শনী শুরু হতে আর দেরি নেই।
দূরে গঙ্গার ওপরে নীলাকাশে শুভ্র বেলফুলের মালার মতন বকের সারি উড়ে যাচ্ছে। কোন বনে কোন তরুকুঞ্জে রাতের বাসার সন্ধানে।
একখানা পাথরের ওপরে বসে পড়লুম, হঠাৎ মনে জাগল এক নতুন ভাবনা।
একদিন মনের ভুলে জ্ঞানান্ধ হয়ে গড়েছিলুম এক ভীষণ দানব-যে আজ আমার সমস্ত জীবনকে করে তুলেছে দুঃস্বপ্নময়! আমার সহোদর—এতটুকু শিশু অশোক পর্যন্ত যার হিংসার চিতায় করেছে আত্মদান!
আজ আমি আবার তারই জন্যে তৈরি করতে বসেছি নতুন এক দানবীর দেহ। কারণ তার দাবি, এই দানবী তার দোসর হবে!
সে প্রতিজ্ঞা করেছে, দানবীকে লাভ করলে আর মানুষের কাছে ফিরে আসবে না। দানবের প্রতিজ্ঞার মূল্য থাকতেও পারে, না থাকতেও পারে।
কিন্তু আজ যে দানবীকে গড়ছি, তার প্রকৃতি কীরকম হবে আমি তা জানি না। হয়তো সে হবে দানবের চেয়ে ঢের বেশি মারাত্মক, ঢের বেশি হিংস্র। সে আমার কাছে কোনও প্রতিজ্ঞার বন্ধনে বাঁধা থাকবে না। দানবী যদি মানুষের শত্রু হয়, আমি তাকে কেমন করে নিবারণ করব?
কুৎসিত হলেই সে কুৎসিতকে পছন্দ করবে, এমন কোনও কথা নেই। হয়ত দানবী পছন্দ করবে না দানবকে। তখন দুজনেই ধেয়ে আসবে হয়তো মানুষের দেশে, নিজেদের হিংস্র প্রবৃত্তি চরিতার্থ করবার জন্যে।
কিন্তু তার ওপরেও দুশ্চিন্তার কারণ আছে। এই দানব আর দানবীর সন্তান হবে— তারপর বছরে বছরে জন্মগ্রহণ করবে তাদেরও বংশধর এবং তারা কেউ হবে না আমার কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ভবিষ্যতে দলে দলে দানব-দানবী এসে যদি মানুষদের আক্রমণ করে— চতুর্দিকে ছড়িয়ে দেয় ধ্বংস আর মৃত্যু, কে তখন তাদের বাধা দেবে? হয়তো একদিন তারা পৃথিবী থেকে মানুষ-জাতির অস্তিত্বই বিলুপ্ত করে দেবে।
দানবের কবল থেকে মুক্তিলাভ করবার জন্যে, নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্যে শেষটা কি আমাকেই হতে হবে মানুষ-জাতির ধ্বংসের কারণ? তখন যে আমার ধিক্কারনিনাদে পৃথিবীর আকাশ-বাতাস হয়ে উঠবে শব্দিত! ভাবতে ভাবতে আমি শিউরে উঠলুম!
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ চোখ তুলে দেখলুম, পূর্ণিমার আলো ঝকমক করছে চারদিকে।
কিন্তু সেই সমুজ্জ্বল জ্যোৎস্লা তখনই পরিম্লান হয়ে গেল—যখন দেখলুম একটা অতিকায় মূর্তি আমায় লক্ষ করতে করতে হঠাৎ পাহাড়ের একটা শিখরের আড়ালে হল অদৃশ্য!
তাহলে দানবও আমায় বিশ্বাস করে না! নইলে কেন এত লুকোচুরি? নিশ্চয় তার অবিশ্বাসের মূলে আছে কূর কপটতা! সে আমায় পেয়েছে তার হাতের খেলনা। দানবীকে লাভ করলেই ধারণ করবে নিজের বিভীষণ মৃর্তি! তখন আমি তো মরবই—সঙ্গে সঙ্গে মরবে নির্দোষ মানুষরাও!
নিশ্চয় আমি পাগল! দানবের কাছে অঙ্গীকার! এর কোনোই মূল্য নেই।
তখনই ঝড়ের মতন ছুটে আবার গুহার ভেতরে গিয়ে ঢুকলুম। টেবিলের ওপরে শুয়েছিল দানবীর বিপুল মূর্তি—কিন্তু তখনও জীবনহীন। একটা প্রকাণ্ড হাতুড়ি নিয়ে আমি তখনই নিজের হাতে যত্নে গড়া সেই মূর্তিকে করলুম খণ্ড-বিখণ্ড।
তারপরেই পিছনে শুনলুম একটা ভয়াবহ চিঙ্কার। ফিরেই দেখি, দানব এসে দাঁড়িয়েছে আমার সম্মুখেই।
মেঘের মতন গম্ভীর কণ্ঠে সে বললে, আমার সঙ্গীর মূর্তি তুমি ভেঙে ফেললে! তোমার ইচ্ছেটা কী শুনি? তুমি কি তোমার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করতে চাও? সারাজীবন আমি কষ্ট স্বীকার করে এসেছি—কেবল তোমার খেয়ালের জন্যেই! এত যাতনার পর তুমি কি আমার শেষ আশার বাতিও নিবিয়ে দিতে চাও?
প্রচণ্ড ক্রোধে পাগলের মতন হয়ে আমি চিৎকার করে বলে উঠলুম, দূর হ, দূর হ! পৃথিবীকে—মানুষ জাতিকে ধ্বংস করবার জন্যে আবার আমি তোর মতন কিংবা তোর চেয়ে একটা সৃষ্টিছাড়া মূর্তিকে সৃষ্টি করব? দূর হ, দূর হয়।
দানবের মুখ বিকৃত হয়ে উঠল ভীষণ এক উত্তেজনায়—তার দেহ হঠাৎ হয়ে উঠল। সোজা, তার দুই হাত হল মুষ্টিবদ্ধ। মনে হল সে আমায় আক্রমণ করতে চায়। কিন্তু কোনওরকমে সে ভাব সামলে দানব বললে, গোলাম, দেখছি তোমার কাছে যুক্তির বা। প্রতিজ্ঞার কোনোই মূল্য নেই! উত্তম! শক্তিমান হচ্ছি আমিই! তোমাকে আমি খণ্ডবিখণ্ড করে লুপ্ত করতে পারি! তুমি নাকি আমার সৃষ্টিকর্তা? কিন্তু আজ আমিই তোমার প্রভু! পালন করো আমার হুকুম। ভাবছ আমার চেয়েও তুমি হতভাগ্য? কিন্তু তোমাকে আমি দুর্ভাগ্যের এমন চরম সীমায় নিয়ে যেতে পারি, যেখানে গিয়ে তুমি ভাববে সূর্যের পবিত্র আলোকও ঘৃণাকর!
আমি হা হা করে হেসে বলে উঠলুম, চমৎকার! যা খুশি বলতে চাও, বলো—আৰ আমি অস্থির হব না! তুই আমাকে ভয় দেখাতে চাস? কিন্তু আমি ভয় পাব না, আমি মানুষদের ধ্বংস করবার জন্যে তোর মতন আর দ্বিতীয় মূর্তি সৃষ্টি করব না-দূর হ এখান থেকে তোর গর্জন বা অনুরোধ, কিছুই আমাকে সংসারচ্যুত করতে পারবে না!
রাক্ষসের মুখ-চোখ যেরকম করে উঠল, ভাযায় তা বর্ণনা করা যায় না। আমি ভাবলুম, সে বুঝি আমায় আক্রমণ করবে! কিন্তু সে কোনওরকমে আবার নিজেকে সামলে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল, আমি সব খবর রাখি! তুমিও এত সঙ্গী থাকতে আবার বিয়ে করবে? পশুরও সঙ্গী আছে! আর আমি একলাই কেবল সঙ্গীহীন হয়ে এই পৃথিবীর মরুভূমির ওপরে পাগলের মতন ছুটে বেড়াব? ধিক তোমাকে!.এর পরে আর আমাকে কোনও দোষ দিয়ো না। মানুষ! আমি তোমায় ঘৃণা করি! আমি নরকের আগুনে জ্বলব, আর তুমি পরম সুখে জীবন যাপন করবে? কখনও নয়, কখনও নয়। আমি তো একদিন মরবই—কিন্তু তার আগে তোমায় মারব! আজ থেকে গোখরো সাপের মতন তোমার ওপর দৃষ্টি রাখব, তারপর দংশন করব একদিন। মানুষ! তোমাকে আমি শিক্ষা দেব!
তার বড়াই শুনে আমার রাগ আরও বেড়ে উঠল। চিৎকার করে বললুম, শয়তান, চুপ। কর! আর এখানকার বাতাসকে বিষাক্ত করিসনি। যা বলবার, আমি তা বলেছি। তোর কথায় আর আমি মত বদলাব না। চলে যা এখান থেকে!
বেশ, বেশ। তাহলে এই কথাই রইল। আমি আবার আসব তোমার বিবাহের রাত্রে।
আমি উন্মত্তের মতো তার দিকে ছুটে গেলুম, কিন্তু তাকে ধরতে পারলুম না। চেঁচিয়ে বলে উঠলুম, তুই আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস? তার আগে ভেবে দ্যাখ, তুই নিজেই নিরাপদ কিনা!
কিন্তু কার সঙ্গে আমি কথা কইছি? আমি কিছু বলবার আগেই দানবের মূর্তি হয়েছে। অদৃশ্য!
চারদিক আবার চুপচাপ। নিষ্ফল আক্রোশে আমি গুহার ভেতরে পায়চারি করতে লাগলুম।
যদি তাকে ধরতে পারতাম! কেন তাকে পালাতে দিলুম? কেন লোহার ডান্ডা মেরে গুঁড়িয়ে দিলুম না তার মাথাটা!
আমার বিবাহের রাত্রে আবার তার আবির্ভাব হবে! তার মানে, সেইদিনই সে আমাকে হত্যা করবে। তার বউ জুটল না, অথচ আমি বিবাহ করব- এই হচ্ছে তার অভিযোেগ! কী স্পর্ধা! সে কি ভাবছে তার মতন একটা জন্তুর ভয়ে আমি বিবাহ করব না? দেখা যাক।
পরদিন দু-খানি পত্ৰ পেলুম। একখানি প্রণবের, একখানি বাবার।
প্রণব জানিয়েছে, অনেকদিন আমাকে না দেখে তার মন কেমন করছে, তাই খুব শীঘ্রই এখানে এসে হাজির হবে।
বাবা জানিয়েছেন, দুই মাস পূর্ণ হতে আর দেরি নেই। অতএব পরের মাসের দশ তারিখে তিনি আমার বিবাহের দিন ধার্য করতে চান।
পত্রোত্তরে বাবাকে আমার সম্মতি জানালাম। কিন্তু সম্মতি জানাবার সময় এ কথাও মনে হল, বাবা যদি ঘুণাক্ষরেও টের পান দানবের কথা, তাহলে আর কি ওই তারিখে আমার বিবাহ দিতে চাইবেন?
দিন-তিনেক কেটে গেল নানা দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে। তারপর এ জায়গাটা আর ভালো লাগল না-দানবের আবির্ভাবের পর থেকেই এখানকার বাতাস যেন বিষাক্ত হয়ে উঠেছে! স্থির করলুম, আবার দেশে ফিরে যাব। কিন্তু তার আগে একটা কাজ শেষ করে যেতেই হবে।
গুহার ভেতরে এখনও পড়ে আছে দানবী মূর্তিটার ধ্বংসাবশেষ। আমি চলে যাওয়ার পর যদি কেউ এই দেহাবশেষ আবিষ্কার করে তবে বিশেষ গোলমাল সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা। তার ফলে নানা খবরের কাগজে রাক্ষসী হত্যা নিয়ে হরেকরকম চমকদার গল্প পর্যন্ত প্রকাশিত হতে পারে।
সে অভিশপ্ত গুহার ভেতরে আর ঢােকবার ইচ্ছা হচ্ছিল না। তবু কোনওরকমে বিদ্রোহী মনকে সংযত করে আবার গুহার মধ্যে প্রবেশ করলুম।
চারদিকে ছড়া রয়েছে যেন কোনও রক্তমাংসে গড়া মৃতদেহের খণ্ডবিখণ্ড অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। নিজেকে মনে হল হত্যাকারী বলে!
দেহের ভগ্ন-চূর্ণ অংশগুলো একটা মস্তবড়ো থলের ভেতরে ভরে ফেললুম। যন্ত্রপাতি যা ছিল সব পুরলুম বাক্সের ভেতরে।
সন্ধ্যার আগে গঙ্গার ধারে গিয়ে একখানা জেলে ডিঙি ভাড়া করলুম। বললুম, আমার গঙ্গায় বেড়াবার শখ হয়েছে। আমি নিজেই নৌকা বাইব; সঙ্গে তোমাদের কারুকেই থাকতে হবে না।
রাত্রি হল। আমার ভয়াবহ বোঝা নিয়ে নৌকোয় গিয়ে উঠলুম।
কী সুন্দর চন্দ্রালোক! আকাশ জ্যোৎস্নায় ঝলমল, গঙ্গাকেও মনে হচ্ছে যেন জ্যোত্যপ্রবাহ। খানিক তফাতে জলের ওপরে জেগে আছে একটি বালুচর যেন রুপোলি দ্বীপ, পরিদের খেলার জমি!
ছোটো একখানা মেঘ ভেসে এসে চাঁদের মুখে পরিয়ে দিলে ঘোমটা। সেই ফাঁকে রাক্ষসীর দেহকে দিলুম বিসর্জন। সঙ্গে সঙ্গে আচম্বিতে চারদিক কেঁপে উঠল ভীষণ এক হাহাকারে! আমার বুক কাঁপতে লাগল—কে কেঁদে উঠল অমন করে?…ও কি সেই দানব? তার শেষ আশা লাভ করল সলিল সমাধি? তাই কি এই ক্রন্দন? তাহলে সে এখনও আমার। কার্যকলাপ লক্ষ করছে? কিন্তু কোথায় সে? চারদিকে চেয়ে দেখলুম, কিন্তু কোথাও তাকে আবিষ্কার করতে পারলুম না।
আর কিছুক্ষণ গঙ্গায় বেড়িয়ে নৌকো নিয়ে ফিরলুম। ডাঙায় নৌকো লাগার সঙ্গে সঙ্গে শুনলুম আবার এক করুণ আর্তনাদ তারপরেই অনেক লোকের গোলমাল আর ছুটোছুটি।
কারা চ্যাঁচাতে লাগল, খুন! খুন! পুলিশ, পুলিশ!
ছুটে সেইদিকে গেলুম। ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখি, রাস্তার ওপরে উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে একটা দেহ। আমি দেহটাকে চিত করে শুইয়ে দিয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়েই সচমকে চিৎকার করে উঠলুম।
এ যে আমার বন্ধু প্রণব! তার কণ্ঠের ওপরে মোটা মোটা অমানুষিক আঙুলের চিহ্ন!
প্রণব—প্রণব, আমাকে বন্ধুহীন করবার জন্যে দানব শেযটা তোমাকেও বলি দিলে—বলতে বলতে আমি মূৰ্ছিত হয়ে পড়লুম।