গোপীনাথের মহাপ্রস্থান

একদল পাহারাওয়ালা নিয়ে ইনস্পেক্টার সুন্দরবাবু যখন মানিকের সঙ্গে এসে হাজির হলেন, জয়ন্ত তখন অস্থির পদে ফুটপাথের উপরে পায়চারি করছে৷

অধীর কন্ঠে সে বললে, ‘এত দেরি হল কেন সুন্দরবাবু?’

সুন্দরবাবু তাঁর মাথাজোড়া ঘর্মাক্ত টাকের উপরে রুমাল চালনা করতে করতে বললেন ‘হুম! দেরি হবে না? শুনলাম বাড়ি খানাতল্লাস করতে হবে, উপরওয়ালার কাছ থেকে হুকুমনামা আনতে হল যে! . . . কিন্তু ব্যাপার কী জয়ন্ত? সত্যিই কি তুমি সুরেনবাবুর হত্যাকারীর খোঁজ পেয়েছ?’

-‘আমার তো তাই বিশ্বাস৷ অন্তত যাকে আমরা ধরতে চাই, সে আজ প্রত্নতাত্ত্বিক অমলবাবুকে খুন করতে উদ্যত হয়েছিল৷’

-‘হুম৷ মানিকের মুখে সব আমি শুনেছি৷ শুনে মনে হচ্ছে, তুমি আবার এক নতুন রহস্যসাগর আবিষ্কার করেছ! পদ্মরাগ বুদ্ধ, নকশা-আঁকা সোনার চাকতি, একটা চাবি! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না!’

জয়ন্ত বললে, ‘এখন ওসব বোঝাবুঝির চেষ্টা ছেড়ে দিয়ে আমাকে সাহায্য করুন৷ চলুন, ওই বাড়ির ভিতর যাই৷’

-‘কিন্তু অপরাধী কি এখনও ওখানে আছে?’

-‘বর্মিদের উপরেই আমার সন্দেহ! কিন্তু এবাড়ির ভেতর থেকে কোনো বর্মি লোক বাইরে বেরোয়নি৷ আমি খবর নিয়ে জেনেছি, এখান থেকে বেরুতে গেলে এই সদর দরজা দিয়েই বেরুতে হবে৷’

-‘বেশ, তবে চলো৷’

এত পাহারাওয়ালা দেখে দ্বারবানের দুই চক্ষু বিস্ময়ে ছানাবড়ার মতন হয়ে উঠল!

সুন্দরবাবু পুলিশসুলভ কর্কশ কন্ঠে বললেন, ‘এই পাঁড়ে!’ দ্বারবান মস্ত একটা সেলাম ঠুকে বললে, ‘আমি পাঁড়ে নয় হুজুর, আমি হনুমান চোবে!’

-‘তুমি হনুমান চোবেই হও, আর জাম্বুবান পাঁড়েই হও, সে কথা আমি জানতে চাই না! আমাদের তাড়াতাড়ি ওপরে নিয়ে চলো!-তারপর পাহারাওয়ালাদের দিকে ফিরে সুন্দরবাবু হুকুম দিলেন, ‘এই সেপাই! আমার সঙ্গে জন-ছয়েক লোক এসো, বাকি সবাই এইখানে পাহারা দাও,-কেউ যেন এই বাড়ির বাইরে যেতে না পারে!’

জয়ন্ত ও মানিক সবাইকে নিয়ে একেবারে তেতলায় গিয়ে উঠল৷ বর্মিদের ঘরের দরজা তখনও বন্ধ ছিল৷ সুন্দরবাবু পাল্লার উপরে এক লাথি মারতেই ভিতর থেকে কে দরজা খুলে দিলে৷

ঘরের ভিতরে ঢুকে দেখা গেল, চারজন বর্মি বিবর্ণ মুখে দাঁড়িয়ে আছে৷

সুন্দরবাবু রুক্ষ স্বরে বললেন, ‘এই মগের বাচ্ছারা! দেশ ছেড়ে তোরা কলকাতায় কী করতে এসেছিস?’

একটা লোক ভাঙা হিন্দিতে বললে, ‘আমরা এখানে ব্যাবসা করতে এসেছি৷’

-‘হুম৷ মানুষ মারবার ব্যাবসা? ওহে জয়ন্ত, এ বেটাদের কোনটাকে তুমি চাও?’

বর্মিদের কাছে এগিয়ে এসে জয়ন্ত তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে প্রত্যেকের আপাদমস্তক লক্ষ করে বললে, ‘তোমরা ক-জন এখানে থাকো?’

তারা জবাব দেবার আগেই দ্বারবান হনুমান চোবে বললে, ‘হুজুর, এখানে দুটো ঘর নিয়ে ছ-জন বর্মি থাকে৷’

জয়ন্ত বললে, ‘এরা তো মোটে চার জন দেখছি৷ আর দু-জন কোথায়?’

একজন বর্মি বললে, ‘আধ ঘণ্টা আগে তারা বাইরে বেরিয়ে গেছে৷’

জয়ন্ত চুপিচুপি সুন্দরবাবুকে বললে, ‘এ লোকটা মিছে কথা কইল৷ আমি হলপ করে বলতে পারি, আজ সকাল থেকে কোনো বর্মি লোক বাড়ির বাইরে পা বাড়ায়নি৷’

-‘হুম, মিছে কথা, না? তাহলে বেটাদের মনে নিশ্চয়ই পাপ আছে! চলো ভেতরের ঘরটা খুঁজে দেখি!’

কিন্তু অন্য ঘরে ঢুকেও বাকি দু-জনের দেখা পাওয়া গেল না৷

সুন্দরবাবু ফিরে বললেন, ‘এই জাম্বুবান পাঁড়ে!’

দ্বারবান হাত জোড় করে বললে, ‘হুজুর, আমার নাম হনুমান চোবে!’

-‘ও একই কথা৷ সকাল থেকে তুমি দেউড়িতে আছ?’

-‘হাঁ হুজুর!’

-‘দু-জন বর্মিকে তুমি বাইরে যেতে দেখেছ?’

-‘না হুজুর!’

-‘তাহলে তারা কি হুস করে আকাশে উড়ে গেল?’

-‘বড়োই তাজ্জবের কথা হুজুর! আরও দু-জন লোক এ ঘরে থাকে-একজন ভয়ানক ঢ্যাঙা, আর একজন ভয়ানক বেঁটে!’

মানিক জয়ন্তের কানে কানে বললে, ‘চ্যান আর ইন-এর চেহারার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে!’

জয়ন্ত কেবল বললে, ‘হুঁ৷’

সুন্দরবাবু বললেন, ‘জয়ন্ত, এখন আমাদের কী করা উচিত?’

জয়ন্ত বললে, ‘সেই চাকতি আর চাবির খোঁজ৷ যদিও ও দুটো জিনিস খুব সম্ভব সেই অদৃশ্য লোক দুটোর সঙ্গেই আছে, তবু একবার এই ঘর দুটো খুঁজে দেখা যাক৷’

খানাতল্লাস শুরু হল৷ দুটো ঘরের সমস্ত ওলটপালট করে, এমনকী বিছানার বালিশ পর্যন্ত ছিঁড়েখুঁড়ে দেখা হল, কিন্তু চাবি আর চাকতি পাওয়া গেল না৷

ঘর থেকে বাইরে এসে সুন্দরবাবু বললেন, ‘সে মগ দুটো তাহলে বাড়ির অন্য কোথাও লুকিয়ে আছে৷ জাম্বুবান-‘

-‘হুজুর হনুমান-‘

-‘না আমি তোমাকে জাম্বুমান বলেই ডাকব! বারান্দার ওপাশের ওই ঘরে কে থাকে?’

-‘একজন মাদ্রাজি সদাগর৷’

-‘আচ্ছা, আগে ওই ঘরখানাই দেখা যাক৷ এসো জয়ন্ত! এই সেপাই, হুঁশিয়ার! মগের বাচ্ছাগুলো যেন সরে না পড়ে!’

বারান্দার ওপাশের ঘরের দরজাও ভিতর থেকে বন্ধ ছিল, সুন্দরবাবুর ধাক্কাধাক্কিতেও কেউ খুলে দিলে না৷

জয়ন্ত শুধোলে, ‘হনুমান চোবে, এ ঘরে যে মাদ্রাজি থাকে তার নাম জানো?’

-‘জানি হুজুর! গোপীনাথ নায়ডু৷’

সুন্দরবাবু হাঁকলেন, ‘গোপীনাথ! গোপীনাথ!’

কোনো সাড়া নেই৷

দ্বারবান একটু আশ্চর্য হয়ে বললে, ‘গোপীনাথরা তো খুব ভোরে ওঠেন, তবে এখনও দরজা বন্ধ কেন?’

সুন্দরবাবু আবার পদযুগল ব্যবহার করলেন, চার-পাঁচ বার লাথি মারবার পরেই খিল ভেঙে দড়াম করে দরজার পাল্লা দুটো খুলে গেল!

হুড়মুড় করে ঘরের ভিতরে ঢুকেই সুন্দরবাবু সবিস্ময়ে ‘হুম’ বলে চিৎকার করে বেগে আবার পিছিয়ে এলেন৷

মানিক বললে, ‘কী হল সুন্দরবাবু, কী হল?’

সুন্দরবাবু আবার বললেন, ‘হুম!’

জয়ন্ত তাড়াতাড়ি ঘরের ভিতরে ঢুকেই যে দৃশ্য দেখলে, তা ভয়াবহ!

দরজার ঠিক সামনেই মেঝের উপরে চিত হয়ে চারিদিকে হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে রয়েছে একটা লম্বা-চওড়া মাদ্রাজি, -তার বুকের উপরে আমূলবিদ্ধ একখানা মস্ত ছোরা! এবং ক্ষত দিয়ে তখনও রক্তস্রোত বেরিয়ে আসছে!

দ্বারবান বিহ্বল স্বরে ডাকলে, ‘গোপীনাথবাবু!-গোপীনাথবাবু!’

জয়ন্ত মাথা নেড়ে বললে, ‘গোপীনাথবাবু এ জীবনে আর কথা কইবে না!’

সুন্দরবাবু বললেন, ‘গোপীনাথকে এখনি কেউ খুন করেছে! সাবধান খুনি ঘরের ভিতরেই আছে, কারণ দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল!’

জয়ন্ত ঘরের চতুর্দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললে, ‘জানলার দিকে চেয়ে দেখুন৷ খুনি পালিয়েছে!’

একটা খোলা জানলার দুটো লোহার গরাদ দুমড়ে ফাঁক হয়ে রয়েছে!

জানলার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে সুন্দরবাবু বললেন, ‘বাপ! গায়ে কত জোর থাকলে এমন লোহার গরাদ তারের মতন দুমড়ে ফাঁক করে পালানো যায়?’

মানিক বললে, ‘এ চ্যান ছাড়া আর কেউ না! কিন্তু চ্যান এই গোপীনাথ বেচারাকে খুন করলে কেন?’

সুন্দরবাবু এদিকে-ওদিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে বললেন, ‘দেখো মানিক, ঘরের সমস্ত জিনিস লণ্ডভণ্ড! যেন কেউ এখানে মালপত্তর উলটেপালটে কিছু খুঁজেছিল!’

ঘরের সর্বত্রই রাশি রাশি চটিজুতো, কাঠের পুতুল, ল্যাকারের কৌটো প্রভৃতি ছড়ানো রয়েছে!

মানিক বললে, ‘দেখছি, সমস্ত জিনিসই বর্মায় তৈরি! গোপীনাথ কি বর্মা থেকেই এগুলো আনিয়ে ব্যাবসা করত?’

দ্বারবান বললে, ‘হাঁ বাবুজি!’

সুন্দরবাবু বিরক্ত কন্ঠে বললেন, ‘আবার দেখছি একটা নতুন মামলা ঘাড়ে চাপল৷ যাই উপরওয়ালাদের কাছে খবর পাঠাবার ব্যবস্থা করে আসি গে!’

সুন্দরবাবু বাইরে গেলেন৷ মানিক বললে, ‘জয়, তুমি বোবা হয়ে কী ভাবছ বলো দেখি?’

জয়ন্ত দুই হাতের ভিতরে মাথা রেখে একখানা চেয়ারের উপরে বসেছিল৷ সে মুখ তুলে বললে, ‘মানিক, আমি মনে মনে অঙ্ক কষছিলুম৷ দুই আর দুই যোগ দিয়ে দেখলুম, চার হয়৷’

-‘অর্থাৎ?’

-‘মন দিয়ে আমার কথা শোনো৷ আমার কথা সত্য হওয়া উচিত৷ নইলে গোপীনাথের মৃত্যুর কোনো অর্থই হয় না৷ এই যে গোপীনাথবাবু, যিনি এইমাত্র স্বর্গারোহণ করেছেন, এঁর ব্যাবসা ছিল ব্রহ্মদেশ থেকে মাল আমদানি করা৷ অতএব ধরে নেওয়া যাক, গোপীনাথ নিজেও অনেকবার বর্মায় গিয়েছে আর বর্মি ভাষাও তার অজানা নয়৷ গোপীনাথ হঠাৎ একদিন এই ঘরে বসে দেখলে যে একদল বর্মি লোক সামনের ওই ঘর দু-খানা ভাড়া নিলে৷ কলকাতার এই পাড়ায় এটা খুব স্বাভাবিক নয়৷ তারপর সে দেখলে বর্মিদের হাবভাব রহস্যময়৷ তারা কোনো কাজ করে না, কেবল রাস্তার ওপাশে অমলবাবুর বাড়ির দিকে নজর রাখে, আর বর্মি ভাষায় কী পরামর্শ করে৷ গোপীনাথও তখন কৌতূহলী হয়ে তাদের উপরে আড়ি পাতলে, তাদের গুপ্তকথা জেনে ফেলে! তখন সেও তাদের উপরে- আর অমলবাবুর বাড়ির উপরে পাহারা দিতে লাগল৷ কাল রাত্রের সমস্ত ব্যাপার সে স্বচক্ষে দেখেছিল৷ আমার পকেটে যে চাকতি আর চাবি আছে, গোপীনাথ তা জানত৷ চ্যান আর ইন কোম্পানি আজ সকালে ভয়ে আমাদের আক্রমণ করতে পারেনি বটে, কিন্তু গোপীনাথ তাদের চেয়েও সাহসী, এমন সুযোগ সে ছাড়লে না৷ সে মারলে আমাকে ধাক্কা, আমি পড়ে প্রায় অজ্ঞান হয়ে গেলুম, সেই ফাঁকে গোপীনাথ আমার চাকতি আর চাবির অধিকারী হল৷ কিন্তু তার দুর্ভাগ্যক্রমে উপরের বারান্দা থেকে চ্যান আর ইন কোম্পানির কেউ সেই দৃশ্যটা দেখে ফেলে৷ তারই ফলে গোপীনাথকে এখন ইহলোক ত্যাগ করতে হয়েছে! মানিক, আমি কি অঙ্ক কষতে ভুল করেছি বলে মনে কর?’

ইতিমধ্যে কখন সুন্দরবাবু আবার ঘরের ভিতরে এসে ঢুকেছেন এবং জয়ন্তের কথা কিছু কিছু শুনেছেন! তিনি বললেন, ‘না, জয়ন্ত! তুমি তো অঙ্ক কষছ না, তুমি কল্পনার আকাশে মেঘের প্রাসাদ তৈরি করছ! হুম, ওই তো হচ্ছে শখের গোয়েন্দাদের বদ স্বভাব! তারা যখন কবিত্ব করে, আসল অপরাধী তখন কেল্লা ফতে করে সরে পড়ে!’

সে কথায় কান না দিয়ে মানিক বললে, ‘তাহলে তোমার মত হচ্ছে গোপীনাথকে খুন করে চ্যান আর ইন এই ঘর খানাতল্লাস করে চাবি আর চাকতি নিয়ে ওই জানলা দিয়ে অদৃশ্য হয়েছে?’

জয়ন্ত কিছু বললে না, সামনের দেয়ালের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল৷

তার দৃষ্টির অনুসরণ করে মানিক দেখলে, সামনের দেয়ালের গায়ে একখানা বড়ো ব্রমাইড এনলার্জমেন্ট ছবি টাঙানো রয়েছে! ছবিখানা মৃত গোপীনাথের, কিন্তু উলটো করে টাঙানো রয়েছে৷

মানিক বললে, ‘চ্যান আর ইন দেখছি ছবিখানা নিয়েও টানাটানি করেছিল, তারপর তাড়াতাড়ি উলটো টাঙিয়ে পালিয়ে গিয়েছে!’

জয়ন্ত মাথা নেড়ে বললে, ‘তারা যদি ওই ছবিখানা নামাত তাহলে আবার ওখানা টাঙিয়ে রেখে যাবার মাথাব্যথা তাদের হত না বোধ হয়! দেখো না, ঘরের যেসব জিনিস তারা ঘেঁটেছে, কোনোটাই গুছিয়ে রেখে যায়নি৷’

-‘তবে?’

সুন্দরবাবু বললেন, ‘আমার মাথা আর মুন্ডু! এখন উলটো আর সোজা ছবি নিয়ে গোলমাল করবার সময় নয়, আমাকে কাজ করতে দাও!’

জয়ন্ত বললে, ‘এ হচ্ছে সম্ভবত গোপীনাথেরই কাজ! সে ছবিখানা নামিয়ে আবার খুব তাড়াতাড়ি টাঙিয়ে রেখেছিল, সোজা হল কি উলটো হল সেটা দেখবার সময় আর পায়নি৷’

-‘কিন্তু তার এতটা তাড়াতাড়ির কারণ কী?’

-‘ছবিখানা আর একবার নামালেই হয়তো কারণ বোঝা যাবে!’ -এই বলে জয়ন্ত উঠে গিয়ে ছবিখানা দেয়াল থেকে নামিয়ে নিলে৷ তারপর সেখানা উলটে দেখলে, ছবির পিছনে পিচবোর্ডের একজায়গা উঁচু হয়ে আছে এবং দুটো কাঁটা-পেরেকও তুলে ফেলা হয়েছে!

জয়ন্ত পিচবোর্ড ফাঁক করে ভিতরে আঙুল চালিয়ে দিয়ে টেনে বার করলে, একটা চাবি ও একখানা সোনার চাকতি!

মানিক ও সুন্দরবাবুর দৃষ্টি একেবারে চমৎকৃত!

জয়ন্ত খুশি কন্ঠে বললে, ‘চাবি আর চাকতি চুরি করে গোপীনাথ ঘরে এসে ঢুকল৷ তাড়াতাড়ি জিনিস দুটো ছবির পিছনে ঢুকিয়ে রেখে দিলে৷ এমন সময়ে চ্যান আর ইনের প্রবেশ৷ গোপীনাথ বধ৷ খুনিরা খানাতল্লাসিতে প্রবৃত্ত৷ সদলবলে আমাদের পুনরাগমন৷ জানলা-পথে চ্যান আর ইনের পলায়ন৷ সুন্দরবাবু দেখছেন, কল্পনার আকাশে মেঘের প্রাসাদ সব সময়ে ব্যর্থ হয় না? আলেকজান্দার একবারেই পৃথিবী জয় করেননি, প্রথমে তিনি কল্পনাতেই পৃথিবী জয়ের উপায় স্থির করেছিলেন! যার কল্পনাশক্তি নেই দুনিয়ায় তার পরাজয় পদে পদে!’

সুন্দরবাবু বললেন, ‘দৈবগতিকে যখন জিতে গেছ, তখন দু-কথা শুনিয়ে দাও ভায়া, শুনিয়ে দাও৷ এই জাম্বুমান পাঁড়ে-‘

-‘হুজুর, হনুমান চোবে-‘

-‘ও একই কথা! নীচে গোলমাল শুনছি! বোধ হয় বড়ো সাহেব এলেন! তোমরা এখন এখান থেকে চলে যাও!’

জয়ন্ত বললে, ‘আমাদের হারানিধি আবার ফিরে পেয়েছি, আমাদেরও এখানে থাকবার আর দরকার নেই! কিন্তু সুন্দরবাবু, যাবার আগে আপনাকে একটা কথা বলে যাই৷ এই মামলাটা আপনি অন্য ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে মাস খানেক ছুটি নিন৷’

-‘কেন?’

-‘আর আমরা কলকাতায় থাকছি না! এই নাটকের পরের দৃশ্য শুরু হবে একেবারে কাম্বোডিয়ার জঙ্গলে, ওঙ্কারধামের ধ্বংসস্তূপে৷ আপনিও আমাদের সঙ্গে চলুন৷’

সুন্দরবাবু বললেন, ‘হুম৷’


© 2024 পুরনো বই