অমলবাবু সভয়ে বলে উঠলেন, ‘কী ভয়ানক! দেখুন জয়ন্তবাবু দেখুন! সত্যিই তো, ও বাড়ির বারান্দায় একটা লোক দাঁড়িয়ে রয়েছে! এই শেষ রাতে, এমন দুর্যোগে রাস্তার দিকে অত আগ্রহে ঝুঁকে পড়ে ও লোকটা কী দেখছে?’
জয়ন্ত বললে, ‘এতক্ষণ ও লোকটা নিজের অন্ধকার ঘরে বসে আমাদের ঘরের সমস্ত দৃশ্য লক্ষ করছিল৷ এখন ও বেরিয়ে এসে দেখছে যে, চাবি আর চাকতি নিয়ে আমরা পথে বেরিয়েছি কি না! আমরা পথে বেরুলেই বোধ হয় আমাদের উপরে আক্রমণ হবে!’
-‘সর্বনাশ! তাহলে আপনারা কী করবেন?’
জয়ন্ত হেসে বললে, ‘অমলবাবু, আমার চেহারা দেখছেন তো? আমরা শত্রুদের গায়ে কত জোর আছে জানি না, তবে আমি যে একবার একটা খ্যাপা ষাঁড়কে ধরে মাটির উপর কাত করেছিলুম, মানিক সে সাক্ষ্য দিতে পারে! কুস্তি-বক্সিং আমরা দু-জনেই জানি৷ সুতরাং পথে বেরুতে আমাদের কোনো ভয় নেই৷ কিন্তু অকারণে অশান্তি সৃষ্টি না করে আজ আমরা এইখানেই রাতটা কাটাতে চাই৷ এতে আপনার আপত্তি নেই তো?’
অমলবাবু বললেন, ‘অশান্তি? বিলক্ষণ! আপনারা কাছে থাকলে আমি তো ধড়ে প্রাণ পাই! যদি চ্যান আবার আসে?’
জয়ন্ত বললে, ‘আজ আর সে এখানে বেড়াতে আসবে না৷ বরং কাল সকালে আমরাই ওই সামনের বাড়িটায় বেড়াতে যাব৷’
-‘বলেন কী, ওই বাঘের বাসায়?’
-‘কেন, আপনি তো বললেন ওটা হচ্ছে মেসবাড়ি! তা যদি হয়, তাহলে ওখানে আরও অনেক লোক নিশ্চয়ই বাস করে? আমরা ওখানে ঘর ভাড়া করতে বা কোনো চেনা লোককে খুঁজতে যাব! দিনের বেলায় পাঁচজনের বাসায় নিশ্চয়ই কেউ আমাদের গলায় ছুরি বসাতে সাহস করবে না৷’
মানিক বললে, ‘কিন্তু ওখানে গিয়েই বা আমাদের কী লাভ হবে?’
-‘প্রথম লাভ হবে এই যে চ্যান ওখানে আছে কি না সেটা জানতে পারব৷ অমলবাবু তার চেহারার যে বর্ণনা দিয়েছেন, চ্যানকে চিনে নিতে আমাদের একটুও বিলম্ব হবে না৷ দ্বিতীয় লাভ হবে, চ্যান ওখানে থাকলে কাল সকালেই তার হাতে হাতকড়ি দেবার ব্যবস্থা করব৷’
-‘কী অপরাধে, আর কী প্রমাণে?’
-‘চ্যানই যে সুরেনবাবুকে খুন করেছে, আমাদের হাতে আপাতত তার কোনো প্রমাণ নেই বটে৷ কিন্তু চ্যান যে এই বাড়িতে দেওয়াল বেয়ে উঠে চুরি করতে এসেছিল আর অমলবাবুকে খুন করবার চেষ্টা করেছিল তার স্পষ্ট প্রমাণ হচ্ছে বারান্দায় ওই পদচিহ্নগুলো৷ এই প্রমাণের জোরেই তাকে এখন অনেককালের জন্যে জেল খাটানো যেতে পারে৷ প্রধান শত্রুকে সরাতে পারলে আমরা নিশ্চিন্ত হয়ে কাম্বোডিয়ায় গিয়ে বনবাসী হতে পারব৷’
অমলবাবু বললেন, ‘কিন্তু জয়ন্তবাবু, আপনি ইনের কথা ভুলে যাচ্ছেন কেন? সন্ন্যাসীর কথা মানলে বলতে হয়, ইনও আমাদের মস্ত শত্রু৷ সে কোথায় আছে?’
জয়ন্ত বললে, ‘তারও চেহারার সঙ্গে আমাদের পরিচয় থাকা দরকার তো! অমলবাবু, অঃতপর আপনি ইনের রূপবর্ণনা করুন!’
অমলবাবু বললেন, ‘চ্যান যেমন অসাধারণ ঢ্যাঙা, ইন তেমনি অসাধারণ বেঁটে, মাথায় সে চার ফুটের বেশি তো হবেই না, বরং কম হওয়া সম্ভব৷ কিন্তু নিজের দীর্ঘতার অভাব সে মিটিয়ে নিয়েছে অসাধারণ মোটা হয়ে! দূর থেকে তাকে দেখলে মনে হয়, যেন একটি গোলাকার পদার্থ জাদুকরের মন্ত্রে হঠাৎ জ্যান্ত হয়ে পৃথিবীর উপর দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে চলেছে! কিন্তু এত মোটা ও বেঁটে হলেও ইন অত্যন্ত চটপটে আর চুলবুলে৷ সে ছোটো ক্রিকেট বলের মতো আর মাটি থেকে লাফ মারে টেনিস বলের মতো৷ চ্যানের লম্বা-চওড়া চেহারা সকলেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করে বটে, কিন্তু ইনকে দেখলে একেবারেই অবাক হয়ে যেতে হয়! আবার চ্যান ও ইনকে একসঙ্গে দেখলেই মনে হয় ভগবানের অপূর্ব সৃষ্টি বৈচিত্র্যের কথা!’
জয়ন্ত বললে, ‘চমৎকার! মানিক, এমন উজ্জ্বল বর্ণনা শোনবার পর আর কি ইনকে চিনে নিতে আমাদের কষ্ট হবে?’
মানিক বললে ‘নিশ্চয়ই নয়! অমলবাবু একখানা কথার ফোটোগ্রাফ তুলে আমাদের দান করলেন!’
-‘ফোটোগ্রাফ নয় মানিক, এ হচ্ছে এক্সপ্রেশানিস্ট চিত্রকরের আঁকা ছবি; এ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে এঁকে এঁকে কিছু দেখালে না, কিন্তু মূল ভাবটি হুবহু প্রকাশ করলে৷ তুমি যদি ইনের সত্যিকার একখানা ফোটোগ্রাফও হাতে পেতে, তাহলেও তার স্বরূপ এত সহজে ধরতে পারতে না! কিন্তু যাক সেকথা! ভোরের পাখি ডাকবার আগে আপাতত একটুখানি স্বপ্নলোকটা দেখবার চেষ্টা করা দরকার!’
পরদিন বেলা সাতটার সময়ে আকাশের বিরাট কুম্ভ শূন্য হয়ে গেল-এখন আর এক ফোঁটাও বৃষ্টি নেই৷ এবং সূর্যের তাপে মেঘগুলোও মোমের মতন গলে মিলিয়ে গেল৷ রাস্তার ময়লা জল কমেছে বটে, কিন্তু এখনও জুতো না ভিজিয়ে পথ চলবার উপায় নেই৷
অন্যদিনে এ সময়ে বিচিত্র জনতার অনৈক্যতানে রাজপথের তন্দ্রা ছুটে যায়, আর এখনও তার ঘুম ঘুম ভাব দূর হয়নি৷ যার নিতান্ত দায়, সেই-ই পথে পা বাড়িয়েছে৷ অনেক দোকান এখনও বন্ধ, ফিরিওয়ালাদের আর্তনাদ প্রায় স্তব্ধ, মোটররা এখনও মানুষ মৃগয়ার লোভে উৎসাহিত হয়নি৷
জয়ন্ত ও মানিক যখন রাস্তার ওপাশের মস্ত বাড়িখানার সুমুখে গিয়ে দাঁড়াল, তখনও তার ভিতর থেকে জীবনের কোনো কচকচিই জাগেনি৷
একটা বুড়ো হিন্দুস্থানি দ্বারবান সদর দরজার চৌকাঠে বসে দাঁতন কাঠি চর্বণ করছিল, জয়ন্ত তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলে, ‘দ্বারবানজি, এ বাড়িতে ঘর ভাড়া পাওয়া যায়?’
দ্বারবান একটু বিস্মিত ভাবে জানালে যে এখানে ঘর আছে বটে, কিন্তু বাঙ্গালিবাবুদের থাকবার সুবিধা হবে না৷
জয়ন্ত বললে, ‘সেকথা আমিও বুঝি দ্বারবানজি! কিন্তু আমি তো এখানে পরিবার নিয়ে থাকব না, খান দুই-তিন ঘর ভাড়া নিয়ে আমি এখানে আপিস করব, মাড়োয়ারি আর পশ্চিমা লোক নিয়েই আমার কারবার কিনা!’
দ্বারবান জানালে, তিনতলার চারখানা ঘর খালি আছে, বাবুরা উপরে গিয়ে দেখতে পারেন৷
-‘তিনতলায়? সেখানে আর ক-ঘর ভাড়াটে আছে?’
শোনা গেল তিনতলায় রাস্তার দিকে দু-খানা ঘর নিয়ে পাঁচ-ছয় জন বর্মি লোক আছে৷ ভিতরের দিকে আছে একঘর মাদ্রাজি৷ বর্মিদের ঘরের পাশেই দু-খানা ঘর খালি আছে৷
জয়ন্ত আর কিছু জিজ্ঞাসা না করে দ্বারবানের কাছ থেকে চাবি নিয়ে মানিকের সঙ্গে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করল৷
সিঁড়ি দিয়ে তারা উপরে উঠতে লাগল৷ কলকাতার অধিকাংশ মেসবাড়ির-বিশেষত যেখানে অবাঙালির বাস-সিঁড়ি হচ্ছে অত্যন্ত ঘৃণাকর স্থান৷ তার ধাপে চোখে পড়ে কুকুরের বিষ্ঠা, মানুষের মূত্র ও যত রাজ্যের দুর্গন্ধ জঞ্জাল এবং তার দেওয়াল হয় থুতু, পানের পিক ও অন্যান্য নানা নক্কারজনক মলিনতার দ্বারা চিত্রবিচিত্র৷ শ্বাস ও চক্ষু বন্ধ করে এবং যতটা সম্ভব জড়োসড়ো হয়ে সেখান দিয়ে ওঠানামা করতে হয়৷
জয়ন্ত ও মানিক এইভাবেই দোতলায় গিয়ে উঠল৷ দোতলায় চারিদিকে বারান্দা ও তারপর সারি সারি ঘর৷ বারান্দা দিয়ে মুখ বাড়ালে ডাস্টবিনের চেয়েও নোংরা একতলার উঠান দেখা যায়৷ অধিকাংশ ঘরের দরজা-জানলাই সারারাত্রব্যাপী বৃষ্টির জন্যে এখনও বন্ধ এবং তাদের ভিতর থেকে একাধিক নাসিকার তর্জন-গর্জন বাইরে বেগে ছুটে আসছে৷
তারা তিনতলায় উঠতে শুনতে পেলে, তিন-চার জন লোকের দ্রুত পদধ্বনি! কিন্তু তিনতলায় উঠে জনপ্রাণীকে দেখতে পেলে না এবং সেখানেও বারান্দার ধারের প্রত্যেক ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ রয়েছে৷
তারা চারিদিকের বারান্দা ঘুরে এল-তবু কারুর দেখা বা সাড়া নেই, এমনকী এখানে কারুর নাক পর্যন্ত ডাকছে না!
মানিক মৃদুস্বরে বললে, ‘কিন্তু উপরে এখনি যাদের পায়ের শব্দ পেলুম তারা কে, আর গেলই বা কোথায়?’
জয়ন্ত বললে, ‘হয়তো তারাই হচ্ছে চ্যান ও ইন কোম্পানির লোক, আমাদের সাড়া পেয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে! মানিক এখানে সাবধানে চলাফেরা করতে হবে!’
একটা ঘরের দরজা বাহির থেকে তালা লাগানো রয়েছে৷ দ্বারবানের দেওয়া চাবি সেই কুলুপে লাগল৷ দু-জনে ঘরের ভিতরে ঢুকল৷ ঘরের মধ্যে একটা দরজা দিয়ে আর একখানা ঘরে যাওয়া যায়৷ তারপর রাস্তার ধারের বারান্দা৷
সেখানে গিয়ে সুমুখের দিকে তাকিয়ে জয়ন্ত বললে, ‘দেখো মানিক, এখান থেকে অমলবাবুর ঘরের ভিতরটা পর্যন্ত বেশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে!’
বারান্দার যেখান থেকে কাল রাত্রেই সেই মূর্তিটা পথের উপরে পাহারা দিচ্ছিল, জয়ন্ত সেইদিকে পায়ে পায়ে অগ্রসর হচ্ছে, এমন সময়ে আস্তে আস্তে একটা জানলা বন্ধ করার আওয়াজ হল৷
মানিক চুপিচুপি বললে, ‘বারান্দার ধারের একটা ঘরের জানলা খোলা ছিল আমাদের সাড়া পেয়ে কেউ বন্ধ করে দিলে!’
জয়ন্ত বললে, ‘হুঁ৷ বেশ বোঝা যাচ্ছে, এরা আমাদের সন্দেহ করেছে৷ হয়তো আমাদের মতলব ধরে ফেলেছে!’
যেখান থেকে আওয়াজটা এসেছিল সেইখানেই গিয়ে তারা দেখলে, একটা জানলা ও একটা দরজা রয়েছে৷ দুই-ই বন্ধ৷
দরজার কড়া ধরে জয়ন্ত বারকয়েক নাড়া দিলে৷ কোনো সাড়া নেই৷
জয়ন্ত বললে, ‘এরা বোধ হয় প্রতিজ্ঞা করেছে যে, আমাদের সঙ্গে দেখা করবে না৷ চলো, নীচে নেমে অন্য উপায় চিন্তা করি গে৷’
দু-জনে আবার ভিতর-বারান্দায় ফিরে এল৷ আর একবার এদিকে-ওদিকে উকিঝুঁকি মেরে তারা সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগল-আগে মানিক, তারপর জয়ন্ত৷
হঠাৎ হুড়মুড় করে একটা বিষম শব্দ হল-মানিক চমকে পিছনে তাকাতে-না-তাকাতে জয়ন্তের বিপুল দেহ একেবারে তার ঘাড়ের উপরে এসে পড়ল এবং পর মুহূর্তেই ভয়ানক ধাক্কা খেয়ে মানিক সিঁড়ির উপরে আছাড় খেয়ে পড়ল৷
দৈবগতিকে মানিক হাত বাড়িয়ে রেলিং ধরে ফেললে তাই আর নীচের দিকে নেমে গেল না, কিন্তু যন্ত্রণায় সে যেন অন্ধ হয়ে গেল এবং সেই অবস্থাতেই সে শুনতে পেলে যে, জয়ন্তের দেহ গড়াতে গড়াতে দুম দুম শব্দে নীচে নেমে যাচ্ছে! তারপরই চারিদিকে ব্যস্ত পদধ্বনি, চ্যাঁচামেচি, হুড়োহুড়ি! সে বুঝলে, জয়ন্ত হঠাৎ পা-হড়কে সিঁড়ির উপর পড়ে গেছে!
প্রায় দুই মিনিটকাল সেইখানে আচ্ছন্নের মতো বসে থেকে মানিক অতিকষ্টে উঠে দাঁড়াল এবং আস্তে আস্তে আবার সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগল৷
দোতলায় নেমে সে দেখলে সেখানে মাদ্রাজি, পাঞ্জাবি ও মাড়োয়ারির ভিড়! জয়ন্ত বারান্দার রেলিংয়ে ঠেসান দিয়ে পা ছড়িয়ে অর্ধমূর্ছিতের মতন বসে আছে, তার মুখ বুকের উপরে ঝুলে পড়েছে এবং কেউ তার মাথায় জলের ঝাপটা দিচ্ছে ও কেউ পাখা নেড়ে বাতাস করছে!
মানিক তার কাছে গিয়ে ডাকলে, ‘জয়, জয়, তোমার কি বড্ড বেশি লেগেছে?’
অভিভূতের মতো জয়ন্ত খালি বললে, ‘হুঁ৷’
মিনিট পাঁচেক পরে জয়ন্ত কতকটা প্রকৃতিস্থ হল, তার চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আবার ফিরে এল৷ সে মুখ তুলে ভিড়ের ভিতরে যেন কাকে খুঁজতে লাগল৷ মানিক বুঝলে, জয়ন্ত এ অবস্থাতেই চ্যান বা ইনকে ভোলেনি! কিন্তু ভিড়ের ভিতরে মগের মুল্লুকের কোনো নমুনাই দেখা গেল না৷
মানিক বললে, ‘জয়, আমি একখানা ট্যাক্সি ডেকে আনব কি?’
জয়ন্ত কষ্টেসৃষ্টে উঠে দাঁড়িয়ে বললে, ‘না, আমি হেঁটে যেতেই পারব৷ আগে এখান থেকে বেরিয়ে পড়ি৷’
সকলকে সাহায্য করার জন্যে ধন্যবাদ দিয়ে জয়ন্ত ও মানিক ধীরে ধীরে আবার সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগল৷
রাস্তায় এসে জয়ন্ত নিজের জামার ভিতরকার পকেটে হাত দিয়েই থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল৷ শুষ্ক স্বরে বললে, ‘মানিক, ভিড়ের ভিতরে তুমি কোনো বর্মি লোককে দেখনি?’
-‘না৷ তবে তোমার কাছে যেতে আমার মিনিট দুয়েক দেরি হয়েছিল৷ তার মধ্যে কেউ এসেছিল কি না জানি না৷’
-‘নিশ্চয় এসেছিল!’
-‘কী করে জানলে?’
জয়ন্ত গম্ভীর স্বরে বললে, ‘মানিক, আমি পা পিছলে পড়ে যাইনি!’
-‘তবে?’
-‘আমাদের সুচতুর বন্ধু এক ঢিলে দুই পক্ষী বধ করেছে!’
-‘জয়ন্ত, তোমার কথার অর্থ আমি বুঝতে পারছি না!’
জয়ন্ত খুব শুকনো হাসি বললে, ‘মানিক, তোমার পরে আমি নামছিলুম৷ হঠাৎ পিছন থেকে কেউ এমন ভাবে আমাকে একটা প্রবল ধাক্কা মারলে যে, তোমাকে নিয়ে আমিও হুড়মুড়িয়ে পড়ে গেলুম৷’
মানিক সচকিত কন্ঠে বললে ‘বল কী জয়! কে ধাক্কা মারলে? তাকে দেখেছ?’
-‘না, দেখবার সময় পাইনি৷ তবে তার গায়ে যে ভীষণ জোর আছে, ধাক্কা খেয়ে সেটা বেশ বুঝতে পেরেছি৷ তারপর আমি যখন দোতলার বারান্দায় পড়ে প্রায় অজ্ঞানের মতন হয়ে আছি সেই সময়ে আমাকে সাহায্য করবার অছিলায় অজানা বন্ধু আমার পকেট থেকে সেই বড়ো চাবিটা আর নকশা-আঁকা সোনার চাকতিটা নিয়ে দিব্যি সরে পড়েছে!’
-‘সর্বনাশ! এখন উপায়?’
জয়ন্ত বললে, ‘অমলবাবুর বাড়িতে ফোন আছে৷ তুমি এখনি গিয়ে ইনস্পেক্টার সুন্দরবাবুকে একদল কনস্টেবল নিয়ে এখানে আসতে বলো৷ এই বাড়িতে খানাতল্লাস করা ছাড়া অন্য উপায় দেখছি না৷ তুমি যাও, আমি এখানে দাঁড়িয়ে পাহারা দিই৷’