জয়তু জয়ন্ত!

এক

গোয়েন্দা-পুলিশের পদস্থ কর্মচারী সুন্দরবাবু হয়েছেন অত্যন্ত অপ্রসন্ন! স্নেহাস্পদ সুহৃদের এতটা অঃধপতন তিনি সহ্য করতে প্রস্তুত নন আদৌ৷ জয়ন্তকে তিনি যে সহোদরের মতোই ভালোবাসেন সে বিষয় সন্দেহ নাস্তি৷ অপরাধবিদ্যা বিশারদ বলে বাজারে তার খ্যাতি-প্রতিপত্তির সীমা নেই৷ অথচ সে নাকি তার এই দুর্লভ খ্যাতির মূলে কুঠরাঘাত করতে উদ্যত হয়েছে-অন্তত সুন্দরবাবুর মত হচ্ছে তাই৷

জয়ন্তের অপরাধ, অপরাধবিদ্যা ছেড়ে সে পড়েছে সম্মোহনবিদ্যার মোহে৷ সব কাজ ভুলে সে ‘হিপ্নোটিজম’ বা সম্মোহনবিদ্যাকে আয়ত্তে আনতে নিযুক্ত হয়েছে এবং সর্বদাই তার মুখে শোনা যায় ওই একই আলোচনা৷ এমনকী চিত্তাকর্ষক হত্যা বা ডাকাতি বা চুরির মামলার কথা তুললেও সে একটুও আকৃষ্ট হতে চায় না৷

ফলে সুন্দরবাবু দস্তুরমতো অসুবিধায় পড়েছেন৷ জটিল মামলা হাতে পেলে জয়ন্তের সঙ্গে পরামর্শ না করলে তাঁর পেটের ভাত হজম হত না৷ কিন্তু আজকাল এ সম্পর্কীয় কোনো প্রশ্ন করলে সে নিরুত্তর হয়ে থাকে এবং বেশি পীড়াপীড়ি করলে উঠে যায় বিরক্ত মুখে৷

তার বন্ধু মানিককে ডেকে সুন্দরবাবু আহত স্বরে বললেন, ‘দেখলে ভায়া, জয়ন্তের আচরণটা দেখলে! মুখের উপরে অপমান, হুম!’

মানিক বলে, ‘আরে মশাই, আপনি কি জয়ন্তকে চেনেন না? সে যখন যা নিয়ে মাতে, একেবারে তার মধ্যে তলিয়ে গিয়ে তল খুঁজতে চায়৷ সে এখন ‘হিপ্নোটিজম’ সম্বন্ধে রাশি রাশি বই আনিয়ে পড়ছে, এ বিষয়ে যাঁরা পণ্ডিত তাঁদের কাছে গিয়ে ধরনা দিচ্ছে, নিজেও যখন-তখন হাতেনাতে পরীক্ষা চালাচ্ছে, সুতরাং এই সঙ্গে অন্য যা-তা কথা নিয়ে অন্যমনস্ক হতে চাইবে কেন?’

সুন্দরবাবু তপ্তকন্ঠে বলেন, ‘যা-তা কথা মানে? অপরাধবিদ্যার চেয়ে সম্মোহনবিদ্যার মর্যাদা বেশি নাকি? কী যে বল মানিক, ছিঃ!’

মানিক বলে, ‘আপাতত জয়ন্ত তাই মনে করে বটে! হয়তো জয়ন্ত সম্মোহনবিদ্যাকে নিজের কোনো কাজে লাগাতে চায়৷’

-‘নিজের কাজে লাগাতে চায়? হুম, জয়ন্তের কাজ তো অপরাধ নিয়েই, বাজারে শখের গোয়েন্দা বলেই তার যা কিছু খাতির৷ সম্মোহনবিদ্যা তার কোন কাজে লাগবে শুনি?’

-‘আমি জানি না, জয়ন্ত জানে৷ তাকেই জিজ্ঞাসা করুন না!’

-‘তাকে জিজ্ঞাসা করব? জবাব না পেয়ে আবার অপদস্থ হব? ধ্যেৎ, আমার বয়ে গেছে, আমি এই চললুম’-বলেই টেবিলের উপর থেকে টুপিটা তুলে রাগে গসগস করতে করতে সুন্দরবাবু জুতো মসমসিয়ে সবেগে প্রস্থান৷

আর একদিন সন্ধ্যাকালে এসে দরজার কাছে দাঁড়িয়েই তিনি অসন্তুষ্ট নেত্রে দেখলেন, ঘরের ভিতরে কে একটা লোক ইজিচেয়ারের উপরে রয়েছে অর্ধশয়ান অবস্থায় এবং তার সামনের টেবিলের উপরে ঝুঁকে পড়ে জয়ন্ত নিম্নস্বরে বলছে, ‘ঘরের আলো কমিয়ে দিয়েছি৷ এইবারে আপনি চোখ মুদে ফেলুন৷ এখনি আপনার ঘুম আসবে৷’

ঘরের এক কোণ থেকে সুন্দরবাবুকে দেখতে পেয়েই মানিক সন্তর্পণে বাইরে এসে তাঁকে নিয়ে খানিক তফাতে গিয়ে বললে, ‘এখন আর জয়ন্তের সঙ্গে কথা কইবার চেষ্টা করবেন না৷’

-‘কেন?’

-‘যোগনিদ্রায় গোলযোগ হতে পারে!’

-‘ওরে বাবা, যোগনিদ্রা আবার কী চিজ?’

-‘হিপ্নোটিজম-এর আর এক বাংলা নাম হচ্ছে যোগনিদ্রা৷’

-‘হুম৷’

-‘যোগনিদ্রায় কৃত্রিম উপায়ে ঘুম পাড়াবার চেষ্টা হয়৷ ঘরের ভিতরে লোকটিকে যোগনিদ্রায় অভিভূত করা হচ্ছে৷ এর পরে লোকটি হবে জয়ন্তের হাতে কলের পুতুলের মতো৷’

-‘জানি হে জানি, ওরকম ম্যাজিক ঢের দেখেছি৷ বলি, এই ছেলেখেলা আরও কতদিন চলবে?’

-‘আমি জানি না, জয়ন্ত জানে৷’

সেই একঘেয়ে বুলি-‘আমি জানি না, জয়ন্ত জানে!’ সুন্দরবাবু এতটা ক্রোধাবিষ্ট হলেন যে তাঁর মুখ দিয়ে আর বাক্য নিঃসরণ হল না৷ স্বল্পালোকিত ঘরের দিকে একটা বিষাক্ত দৃষ্টিবাণ ছুড়ে তিনি তৎক্ষণাৎ ভুঁড়ি দুলিয়ে গটগটিয়ে সে স্থান ত্যাগ করলেন৷

দুই

সম্মেহন বা যোগনিদ্রা নিয়ে তখনও জয়ন্তের পরীক্ষাকার্য চলছে একটানা৷ সেদিনও সকালে চা পান করবার সময়ে সে হিপ্নোটিজম সংক্রান্ত কী একখানা ইংরেজি পুস্তকের উপরে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছিল৷

এমন সময়ে ঘরের ভিতরে সুন্দরবাবুর আবির্ভাব৷ তিনি অভিমান করে জয়ন্তের সঙ্গে কথা কওয়া ছেড়েছেন বটে, কিন্তু ওখানকার জিভে-জল-আনা প্রভাতি চায়ের আসরটি ছাড়তে পারেননি৷ প্রতিদিন যথাক্রমে এসে পড়েন, প্রচুর তরল ও নিরেট পদার্থ উদরদেশে পাঠিয়ে দেন, মানিকের সঙ্গে খেতে খেতে বাক্য বিনিময় করেন এবং ডানহাতের কাজ ফুরিয়ে গেলেই দাঁড়িয়ে উঠে বলেন, ‘তাহলে আসি ভাই মানিক, আর বসবার সময় নেই-ডিউটি ইজ ডিউটি!’

আজ যেন সুন্দরবাবুকে কেমন চিন্তান্বিত বলে মনে হল৷ তিনি মাত্র দুই পেয়ালা চা, চারখানা টোষ্ট ও চারটে এগপোচ গলাঃধকরণ করেই উঠে পড়বার উপক্রম করলেন৷

বিস্মিত কন্ঠে মানিক শুধোলে, ‘সে কী দাদা, এর মধ্যেই? ব্যাপার কী?’

-‘হুম! ডিউটি ইজ ডিউটি!’

-‘এমন কী ডিউটি?’

-‘একটা মহা ধড়িবাজ আসামির পাল্লায় পড়ে একেবারে জব্দ হয়ে আছি৷’

-‘মামলাটা কীসের?’

জয়ন্তের দিকে চকিতে একটা চোরা কটাক্ষ নিক্ষেপ করে সুন্দরবাবু বললেন, ‘বাপরে এই যোগনিদ্রার আশ্রমে ফৌজদারি মামলার কথা তুললে কি আর রক্ষা আছে? হাতে মাথা কাটা যেতে পারে যে!’

সুন্দরবাবুকে অভাবিত ভাবে চমকিত করে জয়ন্ত বই থেকে মুখ তুলে আচম্বিতে প্রশ্ন করলে, ‘আপনি কি মনে করেন, ফৌজদারি মামলার সঙ্গে সম্মোহনের কোনোই সম্পর্ক থাকতে পারে না?’

-‘কেবল আমি কেন, তুমিও কি তাই মনে কর না?’

-‘না, না, এক-শো বার না!’

-‘তবে সম্মোহনের খাতিরে আমাদের তুমি বয়কট করেছ কেন?’

-‘আমি পরীক্ষা করে দেখছি ‘হিপ্নোটিজম’ বা সম্মোহনবিদ্যার সাহায্যে ক্রিমিনোলজি বা অপরাধবিদ্যা আরও খানিকটা অগ্রসর হতে পারে কি না?’

-‘তা সম্ভবপর হলেও পুলিশের কাজে লাগবে না৷’

-‘কেন?’

-‘আদালতের আইন সম্মোহনবিদ্যাকে মানবে না৷’

-‘জানি সুন্দরবাবু, জানি৷ তবু যে সম্মোহনবিদ্যাকে গোয়েন্দার কাজে খাটানো যায়, আমার হাতের এই বইখানা পড়লে আপনারও সে সন্দেহ থাকবে না৷’

সুন্দরবাবু কৌতূহলী কন্ঠে বললেন, ‘বটে, বটে, তাই নাকি?’

-‘আজ্ঞে হ্যাঁ৷ অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরির অপরাধ-বিশেষজ্ঞদের কৃপায় আমরা এ সম্পর্কে অনেক নতুন নতুন তথ্য জানতে পেরেছি৷ ভিয়েনা শহরের ডা. ম্যাক্সিমিলিয়ান ল্যাঙ্গ সনার সম্মোহনবিদ্যার মহিমায় দেশবিদেশের পুলিশকে নানাভাবে সাহায্য করেছেন৷ লিওনার্ড হ্যারেলসন নামে আমেরিকার আর এক বিখ্যাত গোয়ান্দাও সম্মোহনকে নিজের কাজে লাগিয়ে আশ্চর্যরূপে উপকৃত হয়েছেন৷ এই কেতাবে তাঁদের কীর্তির কাহিনি লেখা আছে৷ পড়ে দেখবেন?’

সুন্দরবাবু মুখভঙ্গি করে বললেন, ‘ও আমার পোড়াকপাল, মামলার পর মামলার হামলা সামলাতে সামলাতেই জীবন জরজর হয়ে উঠল, কেতাব পড়বার ফুরসত কোথায় ভাই, ওসব তোমাদেরই শোভা পায়৷ কিন্তু কী বললে? হিপ্নোটিজম পুলিশের কাজেও লাগে? কিন্তু আমার হাতের এই মামলাতে তোমার ওই যোগনিদ্রা বোধ হয় কিছু সুবিধা করে উঠতে পারবে না৷’

-‘সংক্ষেপে মামলাটার কথা বলুন না, তাহলেই বুঝতে পারব৷’

এতদিন পরে জয়ন্ত তার উদাসীনতার খোলস ত্যাগ করলে বলে সুন্দরবাবুর মুখে ফুটল খুশির হাসি৷ মামলার বিবরণ বলবার আগে তিনি খোশমেজাজে একটা চুরোটে অগ্নিসংযোগ করলেন৷

তিন

-‘জয়ন্ত, খুব সংক্ষেপেই তোমাকে মামলার বিবরণ বলব৷

‘যামিনীকান্ত চক্রবর্তীর দেশ হচ্ছে পূর্ববঙ্গে, কিন্তু কলকাতা শহরে এসে কাপড়ের ব্যাবসা ফেঁদে তিনি রোজগার করেন বেশ দু-পয়সা৷ এখানে বাসা বেঁধেছেন শ্যামবাজার অঞ্চলে৷

‘তাঁর মেয়ের নাম হাসিনী, বয়স সতেরো৷ পিতার একমাত্র সন্তান৷ রং, গড়ন আর মুখশ্রী-সব দিক দিয়ে দেখবার মতো সুন্দরী৷ তাকালে লোকে আর চোখ ফেরাতে পারে না৷ হাসিনী কুমারী৷

‘অর্ধশিক্ষিত পিতার একমাত্র দুলালি কন্যা হাসিনী, লেখাপড়া নামমাত্র জানলেও কেবলমাত্র চোখে দেখে এমন হালফ্যাশনের সাজগোজ করতে শিখেছিল যে অনায়াসেই তাকে বিদুষী ও আপ-টু-ডেট শহুরে মেয়ে বলে চালিয়ে দেওয়া চলত৷

‘সে উচ্চাঙ্গ সাহিত্যের আনন্দ আবিষ্কার করত সচিত্র চলচ্চিত্র-পত্রিকাগুলোর মধ্যে এবং প্রায় নিত্যই সন্ধ্যার পর সাগ্রহে যাত্রা করত শহরের কোনো-না-কোনো থিয়েটার বা চলচ্চিত্রালয়ের দিকে৷ সিনেমা-অভিনেত্রীদের জীবনের মধ্যেই লাভ করত সে যা-কিছু অ্যাডভেঞ্চার ও রোমান্সের সন্ধান এবং অদূর ভবিষ্যতে একদিন-না-একদিন সিনেমার পর্দার উপরে নিজেও দেখবে নিজেকে-এই ছিল তার একমাত্র উচ্চাকাঙ্খা!’

জয়ন্ত বাধা দিয়ে বললে, ‘সংক্ষেপে মোদ্দা ব্যাপারটা বলুন না দাদা, গৌরচন্দ্রিকাতেই এত বর্ণনা কেন?’

-‘তা একটু বর্ণনা দিতে হবে বই কী ভায়া, এটা যে হাসিনী-হরণ-কাহিনি!’

-‘হরণের কারণ?’

-‘খুব স্পষ্ট৷ অর্থলোভ৷’

-‘বটে! তা হরণ করলে কে?

-‘নকুল বিশ্বাস৷ পুলিশ-জানিত অতি চতুর পুরাতন পাপী, একবার জালনোট, আর একবার ভুয়ো চেক চালাতে গিয়ে ধরা পড়েছে, কিন্তু আইনের ফাঁকিতে জেল না খেটে বেঁচে গিয়েছে দুই বারই৷ নচ্ছারটার উপর অনেকদিন থেকেই আমার বড়ো আক্রোশ, কিন্তু এবারেও সে হয়তো আমাদের কলা দেখাবে, কারণ তাকে গ্রেপ্তার করে বোধ হয় জেল খাটাতে পারব না, আবার সে আমাদের ভোগা দেবে৷’

-‘কেন?’

-‘নকুল যে হাসিনীকে নিয়ে পালিয়েছে, এবিষয়ে কোনোই সন্দেহ নেই৷ কেবল হাসিনী নয়, সেইসঙ্গে অদৃশ্য হয়েছে- হাসিনীর গায়ের দশ হাজার টাকার জড়োয়া গহনা আর তার বাপের নগদ পাঁচ হাজার টাকা৷ পালাবার সময়ে দু-জন সাক্ষী স্বচক্ষে তাদের দেখেছে৷ আরও সাক্ষী আছে৷ কিন্তু নকুল বলে, তারা হচ্ছে পুলিশের সাজানো সাক্ষী, ঘটনার দিন সে ছিল শ্রীরামপুরে তার মামার বাড়িতে৷ সেখানেও তদন্ত করতে যাওয়া হয়-কিন্তু যেমন ভাগনে তেমনি মামা, ঘুঁটের এপিঠ-ওপিঠ, সেও নকুলের কথায় সায় দেয়৷’

-‘আর হাসিনী?’

-‘তার পাত্তা নেই, নকুল তাকে কোথায় গুম করে ফেলেছে কেউ তা বলতে পারে না৷ এখন আমার অবস্থাটা বুঝছ তো জয়ন্ত? নকুলকে আমি কেবল ছেড়ে দিতেই বাধ্য হব না, আমার দুর্নাম হবে যে, মিথ্যা সাক্ষী সাজিয়ে আমি একজন নিরপরাধীকে জেলে পাঠাতে চেয়েছি৷ এমন মামলায় তোমার সম্মোহনবিদ্যা আমার কোন কাজে লাগবে বলো? একে তো ও বিদ্যাটা আইনের ক্ষেত্রে ঘষা টাকার মতো অচল, তার উপরে নকুলের মতো ধড়িবাজ ব্যক্তিকে কেউ সম্মোহিত করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস নেই৷ কারণ আমি অভিজ্ঞ ব্যক্তির মুখেই শুনেছি, দুর্বল যার ইচ্ছাশক্তি, সেই-ই সম্মোহিত হয় প্রবল ইচ্ছাশক্তির প্রভাবে৷ কিন্তু আমি জোর করেই বলতে পারি, নকুলের ইচ্ছাশক্তি আর কারুরই চেয়ে দুর্বল নয়৷’

জয়ন্ত বললে, ‘ওসব সেকেলে ধারণা ছেড়ে দিন দাদা, কারণ বহু পরীক্ষার পর আজকাল প্রমাণিত হয়েছে যে, বুদ্ধি যার যতই প্রখর আর ইচ্ছাশক্তি যতই প্রবল, তত বেশি তাড়াতাড়ি সে যোগনিদ্রার প্রভাবে নিজের সত্তা হারিয়ে ফেলে৷ কিন্তু ওকথা যাক৷ এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আজ সন্ধ্যার পর অর্থাৎ রাত দশটার সময়ে শ্রীমান নকুলকে খুব ভালো করে খাইয়ে-দাইয়ে পূর্ণোদরে একবার আমার সামনে নিয়ে আসতে পারবেন কি?’

সুন্দরবাবু চমৎকৃত ভাবে বললেন, ‘হুম, এ আবার তোমার কী খেয়াল?’

-‘খেয়াল নয়, বলুন না পারবেন কি না?’

-‘কেন পারব না-আলবত পারব!’

-‘বেশ, ওই কথাই রইল! আমি একলা থাকব আমার পাঠাগারে নকুলকেও একলা ভিতরে পাঠিয়ে দেবেন, কিন্তু তার হাতে যেন হাতকড়া না থাকে৷’

-‘বা রে, যদি চম্পট দেয়?’

-‘নিশ্চয়ই সে এত বোকা নয় যে, পালিয়ে গিয়ে নিজেই নিজেকে অপরাধী বলে প্রমাণিত করবে৷ তা ছাড়া বাইরে দরজার পাশেই মানিকের সঙ্গে স্বয়ং আপনি ওত পেতে থাকবেন, সে পালাবে কেমন করে?’

-‘কিন্তু কোন ওজরে তাকে এখানে নিয়ে আসব?’

-‘তাকে বলবেন, সরকার তার পক্ষ সমর্থনের জন্য আমাকে উকিল নিযুক্ত করেছেন৷ জানেন তো, ছাত্রজীবনে আমি ওকালতিটাও পাস করে রেখেছিলুম৷’

সুন্দরবাবু প্রায় হতভম্বের মতো বললেন, ‘তোমার উদ্দেশ্য আমি কিছুই বুঝতে পারছি না৷’

-‘আপাতত কিছুই বোঝবার দরকার নেই৷ কিন্তু মনে রাখবেন, মাছ, মাংস, ডিম আর ভালো মিষ্টান্নে নকুলচন্দ্রের উদরগহ্বর একেবারে কানায় কানায় ভরপুর করে ফেলতে হবে৷ সে যদি চায়, দু-তিন পেগ পর্যন্ত হুইস্কি কি ব্রান্ডি দিতেও নারাজ হবেন না! ঠিক রাত দশটার সময় আমার পাঠাগারে পানভোজনে পরিতৃপ্ত নকুলচন্দ্রকে আমি দর্শন করতে চাই৷’

চার

কাঁটায় কাঁটায় রাত দশটার সময়ে প্রবেশ করলে জয়ন্তের পাঠাগারের মধ্যে৷

একের নম্বরের উন্মার্গগামী উড়ুক্কু বখাটে-মার্কা চেহারা- যদিও তার মুখশ্রী ও দেহের রং-গড়ন মন্দ নয়৷ চোখের তলায় গাঢ় কালিমা জমাট হয়ে যেন তার উচ্ছৃঙ্খল জীবনের পরিচয় দিতে চায়৷ দৃষ্টি কঠিন, কুটিল ও চাতুর্যপূর্ণ৷ বয়স পঁইত্রিশের বেশি নয়৷

সন্দিগ্ধ নজরে সে ঘরের চারিদিকটা একবার ভালো করে দেখে নিলে৷ দূরে টেবিলের উপরে একটা আবরণ-ঢাকা অল্পশক্তি বিজলিবাতির ম্লান আলোকে অস্পষ্ট দেখা যায়, সারা দেওয়ালে রয়েছে সারি সারি বইভরা আলমারি৷ পাওয়া যায়, ধূপের স্নিগ্ধ সুগন্ধ; সেইসঙ্গে যোগ দিয়ে বাতাসকে ভারাক্রান্ত করে তুলেছে ফুলদানিতে রক্ষিত গুচ্ছ গুচ্ছ সুরভিগন্ধা রজনীগন্ধা৷ সেই শান্ত পরিবেশকে সংগীতপূর্ণ করে তুলে এক কোণে চেয়ারে বসে একটি লোক নিজের মনে অঙ্গুলিচালনা করছে সেতারের তারে এবং ছন্দে ছন্দে ধ্বনিত হয়ে উঠছে কোনো ঝিমিয়ে-পড়া নিদ্রালু রাগিণীর রিনিরিনি, চারিদিকে বিলিয়ে দিচ্ছে যেন একটা রহস্য অলস নিদুটিমন্ত্র!

সেতারের ঘুমপাড়ানি সুর থামিয়ে জয়ন্ত বললে, ‘আসুন! বসুন!’

বিদ্রোহপূর্ণ উদ্ধত স্বরে নকুল বললে, ‘আমাকে কেন এখানে আনা হয়েছে?’

জয়ন্ত স্থির নেত্রে তার পানে তাকিয়ে বললে, ‘কেন, আপনি কি শোনেননি? সরকার আপনাকে সাহায্য করতে চান৷’

-‘সাহায্যের প্রয়োজন নেই৷ আমার নিজের উকিল আছে৷’

-‘তাই নাকি? তা আমি জানতুম না৷ বেশ, বেশ৷ কিন্তু এলেন যখন একটু বিশ্রাম করে যান৷’ জয়ন্ত সামনের ইজিচেয়ারের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করলে৷

নকুল বসে পড়ল যেন নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই৷ অনুভব করলে, জয়ন্তের দৃষ্টি তখনও তার উপরে স্থির হয়ে আছে-সে দৃষ্টি যেন মর্মচ্ছেদী, অত্যন্ত অস্বস্তিকর!

কিছুক্ষণের স্তব্ধতা৷ সেতারের রাগিণী বোবা হয়েছে বটে, কিন্তু জয়ন্তের আঙুল তারে তারে তুলতে লাগল ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং-

সে ধ্বনি আর থামল না-বাক্যলাপের ভিতরেও সমান জেগে রইল!

জয়ন্ত খুব মৃদুস্বরে শুধোলে, ‘আপনার মুখ এমন শ্রান্ত কেন?’

নীরস হাসি হেসে নকুল বললে, ‘মুরগিকে জবাই করবার আগে ভালো করে খাইয়ে-দাইয়ে মোটা করে তোলা হয়৷ হয়তো সেই উদ্দেশেই পুলিশ আজ আমার জন্যে রাজভোগের ব্যবস্থা করেছিল৷ এমন দমসম করে খাওয়া হয়েছে যে এখন কেবল ঘুমোতে পারলেই বাঁচি৷ কিন্তু পুলিশ আমাকে ঘুমোতে দিলে না, একরকম জোর করেই এখানে টেনে আনলে৷ এ বোধ হয় যন্ত্রণা দেবার নতুন পদ্ধতি৷’

ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং-সেতারের ধ্বনি জেগে রইল, জেগে রইলই৷ সেই ক্রিং ক্রিং ধ্বনি আগেকার নিদ্রালু রাগিণীরই কোনো- না-কোনো পর্দা ধরে বেজে উঠছে!

জয়ন্ত বললে, ‘না, না, যন্ত্রণা পাবেন কেন, আপনি অনায়াসেই ঘুমিয়ে পড়তে পারেন৷’

-‘মাথার উপরে পুলিশের ডান্ডা নিয়ে? আর এই অস্থানে? এই আনকো জায়গায়?’

-‘ওসব কথা ভুলে যান৷ ঘুম পেয়েছে, ঘুমিয়ে পড়ুন৷ কেউ আপনাকে বিরক্ত করতে আসবে না! ঘুমিয়ে পড়ুন৷’

ক্রিং, ক্রিং, ক্রিং, ক্রিং!

অবাক হয়ে নকুল ভাবতে লাগল, সবই যেন অস্বাভাবিক! লোকটার মতলব কী? ও অমন করে একদৃষ্টিতে আমার পানে তাকিয়ে কেন? এ ঘরটার সবখানেই থমথম করছে কেমন যেন ঘুম-ঘুম ভাব! ওই আলো-আঁধারি, ওই ফুল আর ধূপের গন্ধ, সেতারের ওই ক্রিং ক্রিং-সবই যেন ঘুমকে ডেকে আনে! লোকটাও চুপিচুপি খালি খালি বলে কেন-ঘুমিয়ে পড়ুন, ঘুমিয়ে পড়ুন? না, ওর অপলকে চোখের দিকে আর তাকানো যায় না! ওই লোলুপ চোখ দুটো যেন আমারই চোখের ভিতর দিয়ে আমার মনের গহনে অনধিকার প্রবেশ করতে চায়-না, না, প্রবেশ করতে চায় কি, ওই দীপ্ত দৃষ্টির খানিকটা অংশ যেন এর মধ্যেই সার্চলাইটের মতো বুকের ভিতরে ঢুকে পড়ে আমার মনের গুমটিঘরে উঁকিঝুঁকি মারবার চেষ্টা করছে-যেন যাকে লুকিয়ে রেখেছি, পাহারা এড়িয়ে তাকে খুঁজে বার করবে বলে৷ না, না, ওই সর্বনেশে সর্বগ্রাসী দৃষ্টির দিকে তার তাকানো উচিত নয়-উচিত নয়!

নকুল নিমীলিত করে ফেললে নিজের দৃষ্টি৷

ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং-এ যেন ঘুম-পাড়ানিয়া ঘুমন্ত রাত্রির স্বপ্নসংগীত!

জয়ন্ত দূর থেকেই যেন নকুলের কানে কানে বললে, ‘ঘুমিয়ে পড়ুন, ঘুমিয়ে পড়ুন, ঘুমিয়ে পড়ুন৷’

নকুলের মাথাটা হঠাৎ একদিকে কাত হয়ে এলিয়ে পড়ল- দুই বাহুও শিথিল দেহের দুই পার্শ্বে৷

এই তো যোগনিদ্রা!

জয়ন্ত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোজা হয়ে উঠে বসে আস্তে আস্তে হাততালি দিলে এবং সুন্দরবাবুর সঙ্গে মানিকের ঘরের ভিতরে প্রবেশ৷

নকুলের মুদ্রিত চোখ দুটো আবার খুলে গেল৷

সুন্দরবাবু হতাশভাবে বললেন, ‘ও জয়ন্ত, নকুলকে তাহলে ঘুম পাড়াতে পারলে না?’

জয়ন্ত বললে, ‘এ হচ্ছে জাগ্রত সুষুপ্তি৷ একেই বলে যোগনিদ্রা৷ ও চোখ খুলে তাকিয়ে আছে বটে, কিন্তু কিছুই দেখতে পাচ্ছে না৷ ওর কাছে লুপ্ত এখন বাইরের জগৎ!’

মানিক বললে, ‘অঃতপর?’

-‘অঃতপর নকুল আমার প্রশ্রের সঠিক উত্তর দেবে৷ . . . নকুল . . . নকুল, শুনছ?’

প্রায় শোনা যায় কি না যায় এমনি মৃদুস্বরে নকুল বললে, ‘অ্যাঁ?’

-‘তুমি কি এখন ঘুমিয়ে পড়েছ?’

-‘হ্যাঁ৷’

-‘তুমি হাসিনীকে চেনো?’

-‘চিনি৷’

-‘সে এখন কোথায়?’

-‘শহরতলির পঞ্চানন দাস লেনে৷’

-‘বাড়ির নম্বর-‘

-‘তেইশ৷’

-‘সেখানে তাকে নিয়ে গেল কে?’

-‘আমি৷’

-‘ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না৷ সব কথা ভালো করে খুলে বলো৷’

তখন নকুল তেমনি প্রায়-অস্ফুট স্বরে যেসব কথা প্রকাশ করলে, সংক্ষেপে তা হচ্ছে এই ঃ

প্রথমে সিনেমাগৃহে নকুলের সঙ্গে হাসিনীর পরিচয় হয়৷ তারপর বিভিন্ন ছবিঘরে তাদের পরিচয় ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে ধীরে ধীরে৷ হাসিনীর মুখেই প্রকাশ পায়, তার জীবনের প্রধান উচ্চাকাঙ্খা: সে ছবির পর্দায় আত্মপ্রকাশ করবার জন্যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ৷ নকুল তার সেই দুর্বলতার সুযোগ গ্রহণ করতে ইতস্তত করেনি৷ হাসিনীকে জানায়, এক প্রখ্যাত স্টুডিয়োর মালিক ও বহু বিখ্যাত চিত্রপরিচালক তার বিশেষ বন্ধু, সে অনুরোধ করলে তাঁরা তাকে হিরোইনের ভূমিকা দিতে আপত্তি করবেন না৷ হাসিনী তাই শুনেই আগ্রহে উন্মুখ হয়ে ওঠে৷ নকুল বলে, তার বাবা নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে মত দেবেন না৷ হাসিনী বলে, চিত্রনটী হবার জন্য তার বাবার অমতেই সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে চায়৷ তারপর একবার ছবির পর্দায় দেখা দিলেই তার বাবা তাকে ক্ষমা করতে বাধ্য হবেন, কারণ তার বাবা তাকে অত্যন্ত ভালোবাসেন, আর সে ছাড়া তার বাবার আর কোনো সন্তান নেই৷ নকুল বলে, ছবিওয়ালারা তাকে গ্রহণ করতে রাজি হলেও তাকে নিয়ে ছবি তুলতে সময় লাগবে কয়েক মাস, বাবাকে লুকিয়ে পালালে সেই কয়েক মাসের খরচ চালাবার জন্যে যে অর্থের প্রয়োজন নকুলের তা দেবার ক্ষমতা নেই৷ হাসিনী বলে, নিজের খরচ নিজেই চালাবার ব্যবস্থা না করে সে বাড়ি ছেড়ে পালাবে না৷ তারপর এক নির্দিষ্ট দিনে সে বাড়ি থেকে পালিয়ে নকুলের সঙ্গে প্রথমে তারই বন্ধু শ্রীনাথ সেনের বউবাজারের হোটেলে গিয়ে ওঠে৷ দিনকয়েক যায়৷ তারপর ছবির স্টুডিয়োয় যাবার জন্যে হাসিনী বিশেষ অধীর হয়ে উঠলে নকুল নিজের আসল মনের কথা প্রকাশ করে বলে, সে তাকে আগে বিবাহ করবে, তারপর স্টুডিয়োয় নিয়ে যাবে৷ সেই কথা শুনেই হাসিনী গোলমাল শুরু করে দেয়৷ ইতিমধ্যে তাদের নিয়ে পুলিশের জোর তদন্ত আরম্ভ হয়৷ নকুল তখন ভয় পেয়ে হাসিনীকে স্থানান্তরিত করে শ্রীনাথের শহরতলির বসতবাড়িতে নিয়ে যায়৷ এখন সেইখানেই সে বন্দিনি হয়ে আছে৷

জয়ন্ত শুধোলে, ‘হাসিনীর দশ হাজার টাকার গহনা আর নগদ পাঁচ হাজার টাকার খবর কী?’

নকুল বললে, ‘আমি সেসব আমার কাছে গচ্ছিত রাখতে চেয়েছিলুম, কিন্তু হাসিনী কিছুতেই কিছু হাতছাড়া করতে রাজি হয়নি৷’

-‘তুমি কি ভেবেছিলে, হাসিনী তোমাকে পছন্দ করে?’

-‘হ্যাঁ, ভেবেছিলুম সে সাধারণ চরিত্রের মেয়ে৷ আমাকে বিবাহ করতে আপত্তি করবে না, আর আমিও সহজেই তার পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হব৷’

-‘তারপর?’

-‘তারপর বুঝলুম সে ভয়ানক মেয়ে৷ তার কাছে বিবাহের কথা তুলতেই সে আগুনমূর্তি হয়ে উঠল, আমাকে আর কাছে ঘেঁষতেই দিলে না!’

নকুল মৌন হবার পর জয়ন্ত মুখ ফিরিয়ে বললে, ‘সুন্দরবাবু, সব শুনলেন?’

সুন্দরবাবু বললে, ‘হুম, আশ্চর্য!’

জয়ন্ত বললে, ‘কেমন করে যোগনিদ্রার সঙ্গে অপরাধবিদ্যার সম্পর্ক স্থাপন করা যায়, বুঝলেন তো? এখন তেইশ নম্বর পঞ্চানন দাস লেনে গিয়ে হাসিনী দেবীকে উদ্ধার করলেই, আপনি বাজিমাত করতে পারবেন, তাহলে আদালতে আর যোগনিদ্রার নামোল্লেখও করতে হবে না, কারণ বন্দিনির মুখেই জাহির হবে নকুলের শয়তানির কাহিনি৷ জেগে ওঠবার পর যোগনিদ্রার কোনো কথাই নকুলেশ্বরেরও আর মনে পড়বে না৷’

মানিক বললে, ‘সব শুনে হাসিনী দেবীর উপর আমার শ্রদ্ধা হচ্ছে৷ সুন্দরবাবুর বর্ণনায় আমরা হাসিনী দেবীর একপেশে ছবি দেখেছি৷ তাঁর পূর্ণাঙ্গ নারীত্বের কোনো পরিচয়ই পাইনি৷’

জয়ন্ত বললে, ‘সিনেমার মোহ হাসিনী দেবীর আসল চরিত্রকে এতটুকু আচ্ছন্ন করতে পারেনি-বাস্তবের এক আঘাতে তাঁর সমস্ত মোহ ছুটে গিয়েছে৷ সচরাচর এটা দেখা যায় না৷’

সুন্দরবাবু বললেন, ‘আমারও মানরক্ষা হল, নকুলদেরও বাড়াভাতে ছাই পড়ল, হাসিনী দেবীকে বিবাহ করে সে আর ধনী শ্বশুরের সম্পত্তির উত্তরধিকারী হতে পারলে না৷’

জয়ন্ত বললে, ‘আমি তাহলে এখন নকুলের ঘুম ভাঙাই, আপনিও আবার হাতকড়া বার করুন৷’

জয়ন্তের কথা মিলে গেল অক্ষরে অক্ষরে৷

পুলিশ যথাসময়ে গিয়ে ঘেরাও করে ফেললে, শ্রীনাথের শহরতলির বসতবাড়ি৷

শ্রীনাথ পলাতক-দূরে থেকেই সে পুলিশের গাড়ি আবিষ্কার করে ফেলেছিল এবং সেপাইরা আসছে যে তারই বাড়ির দিকে, এটুকু বুঝতেও তার বিলম্ব হয়নি৷

হাসিনী বাইরে এসে দাঁড়াল বেশ সপ্রতিভ মুখেই৷ সুন্দরবাবু শুধোলেন, ‘এখন কী করবে? বাড়ি যাবে, না সিনেমা-অভিনেত্রী হবে?’

হাসিনীর দুই চক্ষু বিদ্যুৎকণিকার মতো জ্বলে উঠেই নিবে গেল৷ শান্ত কন্ঠে বললে, ‘বাড়ি যাব৷ ভুল বুঝে এইসব করেছি, উপায় নেই৷’

-‘বাবার কাছে যেতে ভয় পাবে না?’

-‘বাবা বকবেন বটে, কিন্তু তিনি আমাকে ভালোবাসেন৷ তাঁর পায়ে ধরে ক্ষমা চাইব৷ তিনি আমাকে পায়ে ঠেলতে পারবেন না৷’

সন্ধ্যার সময়ে জয়ন্তের কাছে গিয়ে দুই বাহু শূন্যে আন্দোলন করে সুন্দরবাবু বললেন, ‘জয়ন্ত জয়ন্ত! ধন্য তোমার যোগনিদ্রা-হুম!’

মানিক বললে, ‘আমেন! অর্থাৎ তথাস্তু!’


© 2024 পুরনো বই