প্রথমে দেখা যাউক, কি উপায়ে স্নায়ুর উত্তেজনা দূরে প্রেরিত হয়। এ সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা হইলে পরে দেখা যাইবে, কিরূপে উত্তেজনা-প্রবাহ বর্ধিত কিংবা প্রশমিত হইতে পারে। স্নায়ুসূত্র অসংখ্য অণু-গঠিত; প্রত্যেক অণুই স্বাভাবিক অবস্থায় আপেক্ষিক নিশ্চলভাবে স্বীয় স্থানে অবস্থিত। কিন্তু আঘাত পাইলে হেলিতে দুলিতে থাকে; এই হেলা দোলাই উত্তেজিত অবস্থা। একটি অণু যখন স্পন্দিত হয়, পার্শ্বের অন্য অণুও প্রথম অণুর আঘাতে স্পন্দিত হইয়া থাকে এবং এইরূপ ধারাবাহিক রূপে স্নায়ুসূত্র দিয়া উত্তেজনা এক প্রান্ত হইতে অন্য প্রান্তে প্রেরিত হয়। অণুর আঘাতজনিত কম্পন কিরূপে দূরে প্রেরিত হয় তাহার একটা ছবি কল্পনা করিতে পারি। মনে কর, টেবিলের উপর এক সারি পুস্তক সোজাভাবে সাজানো আছে। ডান দিকের বইখানাকে বাম দিকে ধাক্কা দিলে প্রথম নম্বরের পুস্তক দ্বিতীয় নম্বরের পুস্তকের উপর পড়িয়া তৃতীয় পুস্তককে ধাক্কা দিবে এবং এইরূপে আঘাতের ধাক্কা এক দিক হইতে অন্য দিকে পৌঁছিবে। বইগুলি প্রথমে সোজা ছিল এবং প্রথম পুস্তকখানাকে উল্টাইয়া ফেলিতে কিয়ৎপরিমাণ শক্তির আবশ্যক; মনে কর তাঁহার মাত্রা পাঁচ। ধাক্কার জোর যদি পাঁচ না হইয়া তিন হয় তাহা হইলে বইখানা উল্টাইয়া পড়িবে না; সুতরাং পার্শ্বের বইগুলিও নিশ্চল অবস্থায় থাকিবে। এই কারণে বহিরিন্দ্রিয়ের উপর ধাক্কা যখন অতি ক্ষীণ হয় তখন উত্তেজনা দূরে পৌঁছিতে পারে না এবং এই জন্য বাহিরের আঘাত ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হয় না। মনে কর, বইগুলিকে সোজা অবস্থায় না রাখিয়া বাম দিকে একটু হেলানো অবস্থায় রাখা গেল। এবার স্বল্প ধাক্কাতেই বইখানা উল্টাইয়া পড়িবে এবং ধাক্কাটা এক দিক হইতে অন্য দিকে পৌঁছিবে। পূর্বে ধাক্কার জোর পাঁচ না হইয়া তিন হইলে আঘাত দূরে পৌঁছিত না, এখন তাহা সহজেই পৌঁছিবে। বইগুলিকে উল্টাদিকে হেলাইলে পাঁচ নম্বরের ধাক্কা প্রথম পুস্তকখানাকে উল্টাইতে পারিবে না। ধাক্কা এবার দূরে পৌঁছিবে না; গন্তব্য পথ যেন একেবারে বন্ধ হইয়া যাইবে। এই উদাহরণ হইতে বুঝা যায় যে, স্নায়ুসূত্রের অণুগুলিকেও দুই প্রকারে সাজানো যাইতে পারে। ‘সমুখ’ সন্নিবেশে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য শক্তি ইন্দ্রিয়-গ্রাহ্য হইবে। আর ‘বিমুখ’ সন্নিবেশে বাহিরের ভীষণ আঘাতজনিত উত্তেজনার ধাক্কা ভিতরে পৌঁছিতে পারে না।
Related Chapters
- ০১. কথারম্ভ
- ০২. যুক্তকর
- ০৩. আকাশ-স্পন্দন ও আকাশ-সম্ভব জগৎ
- ০৪. উদ্ভিদের জন্ম ও মৃত্যু
- ০৫. মন্ত্রের সাধন
- ০৬. অদৃশ্য আলোক
- ০৭. আলোর সাধারণ প্রকৃতি
- ০৮. আলোর বিবিধ বর্ণ
- ০৯. মৃত্তিকা-বর্তুল ও কাচ-বর্তুল
- ১০. সর্বমুখী এবং একমুখী আলো
- ১১. বক-কচ্ছপ সংবাদ
- ১২. তারহীন সংবাদ
- ১৩. পলাতক তুফান
- ১৪. অগ্নি পরীক্ষা
- ১৫. ভাগীরথীর উৎস-সন্ধানে
- ১৬. বিজ্ঞানে সাহিত্য
- ১৭. কবিতা ও বিজ্ঞান
- ১৮. বিজ্ঞানে সাহিত্য – অদৃশ্য আলোক
- ১৯. বৃক্ষজীবনের ইতিহাস
- ২০. বৃক্ষের দৈনন্দিন ইতিহাস
- ২১. ভারতে অনুসন্ধানের বাধা
- ২২. গাছের লেখা
- ২৩. উপসংহার
- ২৪. নির্বাক জীবন
- ২৫. তরুলিপি
- ২৬. গাছ লাজুক কি অ-লাজুক
- ২৭. অনুভূতি কাল নিরূপণ
- ২৮. সাড়ার মাত্রা
- ২৯. বৃক্ষে উত্তেজনাপ্রবাহ
- ৩০. স্বতঃস্পন্দন
- ৩১. বনচাঁড়ালের নৃত্য
- ৩২. মৃত্যুর সাড়া
- ৩৩. নবীন ও প্রবীণ
- ৩৪. দলাদলি
- ৩৫. পরিষদ-গৃহে বক্তৃতা
- ৩৬. বোধন
- ৩৭. জীবনসংগ্রাম
- ৩৮. লোকসেবা
- ৩৯. শিল্পোদ্ধার
- ৪০. মানসিক শক্তির বিকাশ
- ৪১. বিফলতা
- ৪২. মনন ও করণ
- ৪৩. রানী-সন্দর্শন
- ৪৪. নিবেদন
- ৪৫. পরীক্ষা
- ৪৬. জয়-পরাজয়
- ৪৭. পৃথিবী পর্যটন
- ৪৮. বীরনীতি
- ৪৯. বিজ্ঞান-প্রচারে ভারতের দান
- ৫০. আশা ও বিশ্বাস
- ৫১. আবিষ্কার এবং প্রচার
- ৫২. অর্ঘ্য
- ৫৩. দীক্ষা
- ৫৪. আহত উদ্ভিদ
- ৫৬. জীবনের মাপকাঠি
- ৫৭. গাছের উত্তেজনার কথা
- ৫৮. গাছের লিপিযন্ত্র
- ৫৯. গাছের লেখা হইতে তাহার ভিতরকার ইতিহাস উদ্ধার
- ৬০. পাত্রাধার তৈল
- ৬১. আহতের সাড়া
- ৬২. আঘাতে অনুভূতি-শক্তির বিলোপ
- ৬৩. জন্মভূমি
- ৬৪. স্নায়ুসূত্রে উত্তেজনা-প্রবাহ
- ৬৫. স্বতঃস্পন্দন ও ভিতরের শক্তি
- ৬৬. ইন্দ্রিয়-অগ্রাহ্য কিরূপে ইন্দ্রিয়-গ্রাহ্য হইবে?
- ৬৭. বাহিরের শক্তির প্রতিরোধ
- ৬৮. বৃক্ষে স্নায়ুসূত্র
- ৬৯. আণবিক সন্নিবেশে উত্তেজনা-প্রবাহের হ্রাস-বৃদ্ধি
- ৭০. পরীক্ষা
- ৭১. ভিতর ও বাহির
- ৭২. হাজির
- ৭৩. বৃক্ষের অঙ্গভঙ্গী
- ৭৪. সবিতার রথ
- ৭৫. ছাত্রসমাজের প্রতি