জীব যখন আহত হয় ঠিক সেই মুহূর্তে সাড়া দেয় না। ভেকের পায়ে চিমটি কাটিলে সাড়া পাইতে তার ন্যূনাধিক সেকেণ্ডের শত ভাগের এক ভাগ সময় লাগে। ইংরেজী ভাষ্যে এই সময়টুকু ‘লেটেণ্ট পিরিয়ড্’। ‘অননুভূতি-সময়’ ইহার প্রতিশব্দরূপে ব্যবহৃত হইল।
বাহিরের অবস্থা অনুসারে অননুভূতি-কালের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। মৃদু আঘাত অনুভব করিতে একটু সময় লাগে, কিন্তু প্রচণ্ড আঘাত অনুভব করিতে বেশী সময়ের অপব্যয় হয় না। আর যখন শীতে জীব আড়ষ্ট থাকে তাহার অনুভূতি-কাল তখন দীর্ঘ হইয়া পড়ে। এমন-কি সে সময়ে কখনও কখনও একেবারেই অনুভবশক্তি লোপ পায়। গাছের অনুভূতি সম্বন্ধে এই একই প্রথা। লজ্জাবতীর তাজা অবস্থায় অননুভূতি-কাল সেকেণ্ডের শতাংশের ছয় ভাগ– উদ্যমশীল ভেকের তুলনায় কেবলমাত্র ছয় গুণ বেশি। আর একটি আশ্চর্য বিষয় এই যে, স্থুলকায় বৃক্ষ দিব্য ধীরে সুস্থে সাড়া দিয়া থাকে। কিন্তু কৃশকায়টি একেবারে সপ্তমে চড়িয়া বসে। মনুষ্যলোকেও ইহার সাদৃশ্য আছে কি না, আপনারা বিবেচনা করিয়া দেখিবেন।
শীতে গাছের অননুভূতি-কাল প্রায় দ্বিগুণ দীর্ঘ হইয়া পড়ে।
আঘাতের পর গাছের প্রকৃতিস্থ হইতে প্রায় পনেরো মিনিট লাগে। তাহার পূর্বে আঘাত করিলে অননুভূতি-সময় প্রায় দেড় গুণ দীর্ঘ হয়। অধিক ক্লান্ত হইলে অননুভূতিশক্তির সাময়িক লোপ, তখন গাছ একেবারেই সাড়া দেয় না। এ অবস্থাটি যে কিরূপ অবস্থা, আমার দীর্ঘ বক্তৃতার পর তাহা আপনারা সহজে হৃদয়ংগম করিতে পারিবেন।