ঊনচত্বারিংশ অধ্যায়
নাগগণের আশ্বস্তি
উগ্রশ্রবাঃ কহিলেন, নাগগণ এলাপত্রের এই বাক্যশ্রবণে সাতিশয় আহ্বাদিত হইয়া তাঁহাকে সাধুবাদ করিতে লাগিলেন। নাগরাজ বাসুকিও সেই কথা শ্রবণ করিয়া পরম পরিতোষ প্রাপ্ত হইলেন এবং তদবধি জরৎকারুনাম্নী নিজ ভগিনীকে অতি প্রযত্নে রক্ষণাবেক্ষণ করিতে লাগিলেন।
কিয়ৎক্ষণ পরে দেবাসুরগণ একত্র হইয়া সমুদ্রমন্থন আরম্ভ করিলেন। সর্ব্বনাগশ্রেষ্ঠ বাসুকি তাহাতে মন্থনরজ্জু হইয়াছিলেন। সমুদ্রমন্থন সমাপ্ত হইলে দেবগণ বাসুকিকে সমভিব্যাহারে লইয়া ব্রহ্মার নিকটে গমনপূর্ব্বক নিবেদন করিলেন, “ভগবান্! এই নাগকুলাগ্রণী বাসুকি মাতৃশাপে ভীত হইয়া অত্যন্ত সন্তপ্ত হইয়াছেন। আপনি অনুগ্রহ করিয়া জ্ঞাতিকুলহিতৈষী নাগরাজের মাতৃশাপরূপ হৃদয়শল্য উৎপাটন করুন। ইনি আমাদিগের অত্যন্ত প্রিয়কারী ও হিতসাধনে তৎপর, অতএব অনুকূল হইয়া আপনাকে ইঁহার মনোব্যথা নিবারণ করিতে হইবে।”
দেবগণের এই প্রার্থনা শ্রবণ করিয়া ব্রহ্মা কহিলেন, “পূর্ব্বে এলাপত্র সর্প ইঁহাকে যাহা কহিয়াছেন, সে আমারই বাক্য। ইনি সেই বাক্যানুসারে কার্য্য করুন, তাহার সময়ও উপস্থিত হইয়াছে। যাহারা দুরাচার ও পাপিষ্ঠ, তাহারাই সর্পসত্রে বিনষ্ট হইবে। ধর্ম্মপরায়ণ নাগগণের কিছুই ভয় নাই। সেই জরৎকারু জন্মগ্রহণ করিয়াছেন এবং কঠোর তপস্যার অনুষ্ঠান করিতেছেন। নাগরাজ বাসুকি তাঁহাকে যথাকালে ভগিনী প্রদান করুন। হে দেবগণ! এলাপত্র যাহা কহিয়াছেন, উহা নাগকুলের পরম হিতকর, উহাতে সন্দেহ নাই।”
উগ্রশ্রবাঃ কহিলেন, নাগাধিপ বাসুকি সর্ব্বলোকপিতামহ ব্রহ্মার এই বাক্য শ্রবণ করিয়া অবধি জরৎকারুকে ভগিনী প্রদান করিতে সঙ্কল্প করিলেন এবং ঐ সঙ্কল্পে বহুসংখ্যক সর্পদিগকে তদীয় সন্নিধানে সতত অবস্থান করিতে প্রেরণ করিলেন। ভুজঙ্গমরাজ তাহাদিগকে এই কহিয়া দিলেন, “ভগবান্ জরৎকারু যে মুহূর্ত্তে দারপরিগ্রহ করিতে অভিলাষ প্রকাশ করিবেন, তোমরা তৎক্ষণাৎ আসিয়া আমাকে সংবাদ দিবে।”