রমাপ্রসাদ রায়ের মার সপিণ্ডনে সভাস্থ হওয়ায় কোন কোনখানে তুমূল কাণ্ড বেধে উঠলো–বাবা ছেলের সঙ্গে পৃথক হলেন। মামী ভাগ্নেকে ছাঁট্লেন–-ভাগ্নে মামীর চিরঅন্ন-পালিত হয়েও চিরজন্মের কৃতজ্ঞতায় ছাই দিয়ে, বিলক্ষণ বিপক্ষ হয়ে পড়লেন! আমরা যখন স্কুলে পড়তুম, তখন সহরের এক বড়মানুষ সোণার বেণেদের বাড়ীর শম্ভুবাবু বলে একজন আমাদের ক্লাসফ্রেণ্ড ছিলেন; একদিন তিনি কথায় কথায় বলেন যে “কাল রাত্রে আমি ভাই অমাড় স্ত্রীকে বড় ঠাট্টা কড়েচি, সে আমায় বলে তুমি হনুমান্”; আমি অমনি ভস কড়ে বললুম তোর শ্বশুড় হনুমান!” ভাগ্নেবাবুও সেই রকম ঠাট্টা আরম্ভ কল্লেন। ‘রসরাজ’ কাগজ পুনরায় বেরুলো, খেউড় ও পচালের স্রোত বইতে লাগলো। এরি দেখাদেখি একজ সংস্কৃত কলেজের কৃতবিদ্য ছোকরা ব্রাহ্মধর্ম্ম ও কলেজ-এডুকেশন মাথায় তুলে যেমন কম্ম তেমনি ফুল নামে ‘রসরাজে’র জুড়ি এক পচালপোরা কাগজ বার কল্লেন—’রসরাজ’ ও ‘তেমনি ফলে’ লড়াই বেধে গেল। দুই দলে কৃত্বাস্ত্র ও সেনাসংগ্রহ করে, সমরসাগরে অবতীর্ণ হলেন —স্কুলবয়েরা ভূরি ভূরি নির্ব্বুদ্ধি দলবল সংগ্রহ কয়ে, কুরুপাণ্ডব যুদ্ধ ঘটনার ন্যায় ভিন্ন ভিন্ন দলে মিলিত হলেন। দুর্ঘদ্ধিপরায়ণ ক্যারাণী, কুটেরা ওবাজে লোকেরা সেই কষ্য রস পান করবার জন্য কাক, কবন্ধ ও শৃগাল শকুনির মত, রণস্থল জুড়ে রইলো! ‘রসরাজ’ ও ‘তেমনি ফলের’ ভয়ানক সংগ্রাম চলতে লাগলো—“পীর গোরাচাঁদের ম্যালা ‘পরীর জন্মবিবরণ’ ‘ঘোড়া ভূত’ ও ‘ব্রহ্ম-দৈত্যের কথোপকথন’ প্রভৃতি প্রস্তাবপরিপূর্ণ ‘রসরাজ’ প্রতিদিন পাঁচশ, হাজার, দু হাজার কপি নগদ বিক্রী হতে লাগলো। কিন্তু ‘ব্রাহ্মধৰ্ম্ম’ মাসে একখানাও ধারে বিক্রী হয় কি না সন্দেহ। ‘তিলোত্তমা’ ও ‘সীতার বনবাসের’ খদ্দের নাই। কিছুদিন এই প্রকার লড়াই চলচে, এমন সময়ে গবর্ণমেণ্ট বাদী হয়ে কদর্য্য প্রস্তাব লিখন অপরাধে ‘রসরাজ’ সম্পাদকের নামে পুলিসে নালিশ কল্লেন, ‘যেমন কর্ম্ম’ ও পাছে তেমনি ফল পান, এই ভয়ে গা ঢাকা দিলেন; ‘রসরাজের’ দোয়ার ও খুলীরে মূল গায়েনকে মজলিসে বেধে, ‘চাচা আপন বাঁচা’ কথাটি স্মরণ করে, মেদ্দোষ ও মন্দিরে ফেলে চম্পট দিলো। ভাগ্নেবাবু (ওরফে মিত্তির খুড়ো) সফিনের ভয়ে, অন্দরমহলের পাইখানা আশ্রয় কল্লেন—গিরিবর ক্ষেত্রমোহন বিদ্যারত্ন চামর ও নূপুর নিয়ে সৎসাহিত্য-গ্রন্থাবলী তিন মাসের জন্য হরিণবাড়ী ঢুকলেন। ‘পীর গোরাচাঁদের’ বাকি গীত সেইখানে গাওয়া হলো। পাতরভাঙ্গা হাতুড়ির শব্দ, বেতের পটাং পটাং ও বেড়ীর ঝুমঝুমানি মন্দিরে ও মৃদঙ্গের কাজ কল্লে–কয়েদীরা বাজে লোক সেজে ‘পীরের গীত’ শুয়ন মোহিত হয়ে বাহবা ও পালা দিলে; “খেলেন দই রমাকান্ত, বিকারে ব্যালা গোবর্দ্ধন”। যে ভাষা কথা আছে, ভাগ্নেবাবু (ওরফে মিড়ির খুড়ো) ও রসরাজ-সম্পাদকের সেইটির সার্থকতা হলো; আমরাও ক্রমে বুড়ো হয়ে পড়লেম, চসমা ভিন্ন দেখতে পাইনে।
Related Chapters
- ভূমিকা
- ১.০১ কলিকাতায় চড়ক পার্ব্বণ
- ১.০২ কলিকাতার বারোইয়ারি-পূজা
- ১.০৩ হুজুক
- ১.০৪ ছেলেধরা
- ১.০৫ প্রতাপচাঁদ
- ১.০৬ মহাপুরুষ
- ১.০৭ লালা রাজাদের বাড়ী দাঙ্গা
- ১.০৮ কৃশ্চানি হুজুক
- ১.০৯ মিউটীনি
- ১.১০ মরা-ফেরা
- ১.১১ আমাদের জ্ঞাতি ও নিন্দুকেরা
- ১.১২ নানা সাহেব
- ১.১৩ সাতপেয়ে গরু
- ১.১৪ দরিয়াই ঘোড়া
- ১.১৫ লক্ষ্ণৌয়ের বাদসা
- ১.১৬ শিবকৃষ্ট বন্দ্যোপাধ্যায়
- ১.১৭ ছুঁচোর ছেলে বুঁচো
- ১.১৮ জষ্টিস ওয়েলস
- ১.১৯ টেকচাঁদের পিসি
- ১.২০ পাদ্রি লং ও নীলদর্পণ
- ১.২১ রমাপ্রসাদ রায়
- ১.২২ রসরাজ ও যেমনকৰ্ম্ম তেমনি ফল
- ১.২৩ বুজরুকী
- ১.২৪ হোসেন খাঁ
- ১.২৫ ভূত-নাবানো
- ১.২৬ নাক-কাটা বঙ্ক
- ১.২৭ পদ্মলোচন দত্ত ওরফে হঠাৎ অবতার
- ১.২৮ মাহেশের স্নানযাত্রা
- ২.১ রথ
- ২.২ দুর্গোৎসব
- ২.৩ রামলীলা
- ২.৪ রেলওয়ে