আমরা বড় হলেম, হাতে খড়ি হলো। একদিন গুরুমহাশয়ের ভয়ে চাকরদের কাছে লুকিয়ে রয়েছি, এমন সময় চাকরেরা পরস্পর বলাবলি কচ্চে যে “বর্দ্ধমানের রাজা প্রতাপচাঁদ একবার মরেছিলেন, কিন্তু আবার ফিরে এসেছেন। বর্দ্ধমানের রাজত্ব নেবার জন্য নালিশ করেচেন, সহরের তাবৎ বড়মানুষরা তাকে দেখতে যাচ্ছেন–এবার পুরাণবাবুর সর্ব্বনাশ, পুষ্যিপুত্তর নামঞ্জুর হবে।” নতুন জিনিষ হলেই ছেলেদের কৌতূহল বাড়িয়ে দেয়; শুনে অবধি আমরা অনেকেরই কাছে খুঁটরে খুঁটরে রাজা প্রতাপচাঁদের কথা জিজ্ঞাসা কত্তেম। কেউ বলতো, “তিনি একদিন একরাত জলে ডুবে থাকতে পারেন!” কেউ বলতো, “তিনি গুলিতে মরেন নি-রাণী বলেছেন, তিনিই রাজা প্রতাপচাঁদ—ঘুড়ি ওড়াতে গিয়ে লকে কাণ কেটে গিয়েছিল, সেই কাটাতেই তার ভগিনী চিনে ফেল্লেন!” কেউ বল্লে, “তিনি কোন মহাপাপ করেছিলেন, তাই যুধিষ্ঠিরের মত অজ্ঞাতবাসে গিয়েছিলেন, বাস্তবিক তিনি মরেন নি; অম্বিকা কালনায় যখন তাঁরে দাহ কৰ্ত্তে অনা হয় তখন তিনি বাক্সের মধ্যে ছিলেন না, সুদু বাক্স পোড়ান হয়।” সহরে বড় হুজুক পড়ে গেল, প্রতাপচাঁদের কথাই সর্ব্বত্র আন্দোলন হতে লাগলো।
কিছুদিন এই রকমে যায়—একদিন হঠাৎ শুনা গেল, সুপ্রিমকোর্টের বিচারে প্রতাপচাঁদ জাল হয়ে পড়েছেন। সহরের নানাবিধ লোক কেউ সুবিধে কেউ কুবিধে–কেউ বল্লে, “তিনি আসল প্রতাপচাঁদ নন”—কেউ বলে, “ভাগ্যি দ্বারিকানাথ ঠাকুর ছিলেন, তাই জাল প্রুব হলো। তা না হলে পরাণবাবু টেরটা পেতেন।” এদিকে প্রতাপদ জাল সাব্যস্ত হয়ে, বরানগরে বাস কল্লেন। সেথা জরুক হলেন— খানকি ঘুসকি ও গেরস্ত মেয়েদের মেলা লেগে গেল, প্রতাপচাঁদ না পারেন, হেন কৰ্ম্মই নাই। ক্রমে চলতি বাজনার মত প্রতাপচাঁদের কথা আর শোনা যায় না; প্রতাপচাঁদ পুরোণো হলো, আমরাও পাঠশালে ভর্তি হলেম।