ব্রতকাল: সেঁজুতি ব্রত আরম্ভ হয় কার্তিক সংক্রান্তির দিন সকালবেলায়। তারপর অঘ্রান মাসের শেষ পর্যন্ত প্রত্যহ বৈকালে ব্রত পালন করে যেতে হয়। চার বৎসর এভাবে ব্রত পালন করার পর হয় ব্রত উদযাপন।
ব্রত উদযাপন: ব্রত উদযাপনের সময় চাই তিন জোড়া কাপড়, তিন জোড়া চাদর, আর মধুপর্কের বাটি তিনটি। তাতে থাকবে দই, মধু, চিনি, দুধ, ঘি আর চন্দন। তিনজন ব্রাহ্মণকে পরিতোষের সঙ্গে ভোজন করিয়ে, প্রত্যেককে দক্ষিণার সঙ্গে এক-এক জোড়া কাপড়-চাদর আর এক-একটি মধুপর্কের বাটি দান করতে হবে।
ব্রত অনুষ্ঠান: ব্রত অনুষ্ঠানের জন্যে দালানে, নয়তো বাড়ির উঠোনে, কী ঘরের ছাদে পিটুলির আলপনা দিতে হবে। আলপনায় অনেক কিছু আঁকা যায়, যেমন—দোলা, কোঁড়া, শিব, পুতুল, ষোলঘর, গোয়াল, তেকোণা প্রদীপ, বেনা গাছ, ঢেঁকি, রান্নাঘর, গোলা, পাকা পান, কাজল-লতা, শাঁখ, পাখি, খাট-পালঙ্ক এবং এই রকমের আরও অনেক জিনিস। তবে যে কয়টি জিনিস না আঁকলেই নয় সে কয়টি হচ্ছে শিব, দুটি পুতুল, কোঁড়া, দোলা, এইসব। মূল আলপনা হবে এই রকমের:
ঘট স্থাপন করতে হবে ওপরে শিব আর নীচে পুতুলের মাঝখানে চৌকো জায়গাটিতে অর্থাৎ সেঁজুতির কোঁড়ার ওপরে।
ঘটের সামনে জ্বেলে দেবে তেকোণা প্রদীপ। তারপর মন্ত্র পড়ে দূর্বা দেবে:
সাঁঝ ভোজন সেঁজুতি
ষোলো ঘরের ষোলো বতি
তার মধ্যে আমি এক বতি
বতি হয়ে মাগি বর
ধন পুত্রে বাড়ুক বাপ-মার ঘর।
আবার সাঁঝ ভোজন সেঁজুতি…ধন পুত্রে বাড়ুক আমার বরের ঘর।
এইভাবে সেঁজুতির পুজো হলে পর গঙ্গা-যমুনার পুজো করবে। গঙ্গা- যমুনা আলপনা দিয়ে সেই ঘরটি ধরে মন্ত্র পড়ে দূর্বা দেবে।
গঙ্গা যমুনা পুজোর মন্ত্র:
গঙ্গা যমুনা যোড়া হয়ে,
সাত ভাইয়ের বোন হয়ে,
সাবিত্রী-সমান হয়ে,
নিসোতা নিলবতি
সাত ভাইয়ের বোন পুত্রবতী।
গঙ্গা যমুনা পূজ্যন,
সোনার থালে ভুজ্যন।।
সোনার থালে ক্ষীরের নাড়ু,
শাঁখের ওপর সুবর্ণের খাড়ু।।
তারপর করবে চন্দ্র-সূর্য পুজো।
চন্দ্র সূর্য পুজোর মন্ত্র:
চন্দ্র সূর্য পূজ্যন,
সোনার থালে ভুজ্যন।
সোনার থালে ক্ষীরের নাড়ু
শাঁখের উপর সুবর্ণের খাড়ু।।
তারপর হাট, ঘাট, গো-গোয়ালের পুজো করতে হয়।
মন্ত্র:
হাট ঘাট পূজ্যন ইত্যাদি।
গোল গঙ্গা পুজ্যন ইত্যাদি।
তারপর সংসারের সবকিছুকে স্মরণ করে করজোড়ে বলতে হয়:
বেণা বেণা বেণা, আমার ভাই গাঁয়ের সোনা।
সোনা সোনা ডাক পাড়ে, গা গুচি গুয়ো পড়ে।
আমার ভাই চিবিয়ে ফেলে, অন্যের ভাই কুড়িয়ে খায়।।
শর শর শর, আমার ভাই গাঁয়ের বর, আমার ভাই লক্ষেশ্বর।
লক্ষেশ্বর লক্ষেশ্বর ডাক পাড়ে, গা গুচি গুয়ো পড়ে।
আমার ভাই চিবিয়ে ফেলে, অন্যের ভাই কুড়িয়ে খায়।।
সোনা পাখি ময়না, সতীন যেন হয় না
ঢেঁকি পড়ন্ত, গাই বিয়ন্ত, উনুন জ্বলন্ত।
সরু ধানে কালো পুতে
জন্ম যায় যেন এয়তে এয়তে।
কাজললতা কাজললতা বাসর ঘর
যাও গো মেলানি আনো গিয়ে বর
সব সপাতা পাকা পান
আমার স্বামী নারায়ণ
যখন যাবে রণে
থাকে যেন আমার কথাটি মনে।
কুঁচ কুঁচুতি কুচুই বন
কেন রে কুচুই এতক্ষণ।
ভাই এনেছে টাকার ছালা
তাই গুণতে এত বেলা।
শ্বশুর এনেছে টাকার ছালা
তাই গুণতে এত বেলা।
বর এনেছে টাকার ছালা
তাই গুণতে এত বেলা।
সাঁঝ পূজনী। সাঁঝ পূজনী।
তোমাকে দিলাম পিটুলির বালা,
আমি যেন পাই সোনার বালা।
অরুন্ধতী রাজ্যপতি
বের্ত করেন পার্বতী
বের্ত করলে কী হয়
নির্ধনের ধন হয়
অপুত্রের পুত্র হয়
সাত ভাইয়ের বোন হয়।
কোঁড়ার মাথায় দিয়ে ফুল
ঘর সংসার হুল থুল।
কোঁড়ার মাথায় দিয়ে ঘি
আমি হই রাজার ঝি।
কোঁড়ার মাথায় দিয়ে মৌ
আমি হই রাজার বৌ।
কোঁড়ার মাথায় দিয়ে ফাগ
আমি হই রাজার মাগ।
পুজো হয়ে গেলে দূর্বা কুড়োতে কুড়োতে মন্ত্র বলবে :
অরুণ ঠাকুর বরণে
ফুল ফুটেছে চরণে।
যখন ঠাকুর দেবেন বর
ফুল কুড়িয়ে যাব ঘর।
সেঁজুতি ব্রত সমাপ্ত।