শালিবান নামে এক রাজা ছিলেন। তিনি বড়ো নিষ্ঠাবান ও ধার্মিক ছিলেন। কিন্তু তাঁর ছেলে কি মেয়ে কিছুই ছিল না। বিপুল ধন-ঐশ্বর্য থাকলেও রাজা-রানির মনে সুখ ছিল না। প্রতিমাসেই পুত্র কামনায় একটি করে যজ্ঞ করতেন, কবচ, মাদুলি, যে যা বলত তাই ধারণ করতেন। তবুও রাজার সন্তান হল না। রাজা-রানির মনঃকষ্টের সীমা নেই। একদিন রানি স্বপ্ন দেখলেন, হংস-বাহনে এক দেবতা এসে বলছেন, ‘তুমি জিতাষ্টমীর ব্রত করো, তোমার ছেলে হবে।’
রানি ঘুম ভেঙে রাজার কাছে সব কথা খুলে বললেন। রাজা আশ্বিন মাসের কৃষ্ণ অষ্টমীর দিন উঠানে একটি ক্ষুদ্র পুকুর কাটালেন। পুকুরের মাঝখানে কলাগাছ আর বেলগাছ পুঁতে মটর ও ফলের নৈবেদ্য করলেন। রাজা-রানি উপবাসী থেকে সন্ধ্যার সময় জীমুতবাহনের পুজো করে, সেই প্রসাদ সকলকে বিতরণ করলেন। পরদিন প্রভাতে উঠে স্নান করে রাজা-রানি সেই পুকুরের ধারে গিয়ে পুজো করে পুত্র-বর চেয়ে নিলেন। কিছুদিন পরে শালিবানের একটি পুত্র আর একটি কন্যা হল। রাজা পুত্রের নাম রাখলেন জীমূতবাহন ও কন্যাটির নাম রাখলেন সুশীলা। জীমূতবাহন বড়ো হল, অন্য রাজার মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হল।
বউটি বড়ো হলে, তার যত ছেলে হয়, সব মরে যায়। শাশুড়ি উঠানে পুকুর কেটে জিতাষ্টমীর ব্রত করতেন, বউটি তাই দেখে উপহাস করত। বলত, মায়ের এখনও ছেলেখেলা গেল না। সেই পাপেই বউটির মৃতবৎসা দোষ হয়েছিল। শাশুড়ি বললেন, ‘বউমা! আজ আশ্বিন মাসের কৃষ্ণ অষ্টমী, এসো আমরা শাশুড়ি-বউয়ে পুকুর কেটে ছেলেখেলা করি।’ বউ হেসে গড়াগড়ি দিয়ে বললে, ‘তা খেলা বরং করব; কিন্তু তোমার মতন শুকিয়ে থাকতে পারব না বাছা!’ শাশুড়ি বললেন, ‘তা হবে না; তোমায় আজ উপবাস করতেই হবে। তবে বলি শোনো, আমার অনেক বয়স পর্যন্ত ছেলে হয়নি, কত যাগ-যজ্ঞ, ব্রত করেছি, কিছুতেই আমার ছেলে হয়নি। তারপর এই ছেলেখেলা করে তবে আমি সোনার চাঁদ ছেলে পেয়েছি। তুমিও আমার সঙ্গে আজ উপবাস করে জিতাষ্টমীর ব্রত করো। তোমার সন্তান হয়ে রক্ষা পাবে, আর কখনও তোমাকে পুত্রশোক পেতে হবে না।’
তখন বউ উপবাস করে, শাশুড়ির সঙ্গে জিতাষ্টমীর ব্রত করলেন। বউয়ের ছেলে-মেয়ে হয়ে বেঁচে রইল, জীমূতবাহন খুব ধুমধাম করে প্রজাদের কাছে জিতাষ্টমীর ব্রতমাহাত্ম্য প্রচার করলেন।
জিতাষ্টমীর ব্রতকথা সমাপ্ত।