এক ব্রাহ্মণ আর ব্রাহ্মণী থাকেন। ব্রাহ্মণ বড়ো নিষ্ঠাবান। তাঁর স্ত্রী সব রকম বারব্রত করেন, তথাপি তাঁদের যত ছেলে হয় সব মরে যায়। তখন তাঁরা মনের দুঃখে বললেন, বারব্রত, ধর্মকর্ম সব মিছে, আর এদেশে থাকব না, চল কাশী যাই। তারপর তাঁরা কাশী গিয়ে রইলেন। একদিন তাঁরা গঙ্গাস্নান করে ঘাটে বসে বসে কাঁদছেন, এমন সময় মা ষষ্ঠী সন্ন্যাসিনীর বেশ ধরে তাঁদের কাছে এসে বললেন, ‘তোমরা ঘাটে বসে কাঁদছ কেন গা?’ ব্রাহ্মণী বললেন, ‘তোমায় বলে কি হবে মা! বড়ো মনের জ্বালায় জ্বলছি, আমাদের পাঁচটি ছেলে ও একটি মেয়ে হয়েছিল মা, সব গেছে। এখন দেখছি অদৃষ্ট ছাড়া পথ নেই, বারব্রত সব মিথ্যে।’ তখন সন্ন্যাসিনী বললেন, ‘সে কী মা! ঠাকুর দেবতা কখনও কি মিথ্যে হয়! তোমাদের একটা বড়ো দোষ, বারব্রত কর বলে তোমাদের মনে মনে বড়ো অহঙ্কার। সেই পাপে তোমাদের ছেলে বাঁচে না। বারব্রত শুধু করলে কী হবে, মন পবিত্র রাখা চাই, ধর্মে বিশ্বাস থাকা চাই, ছেলের কল্যাণের জন্যে ভগবানকে দিন রাত ডাকা চাই, সকলকার কাছে নিনু হয়ে থাকবে, তবে তো তাঁর দয়া হবে। তোমরা ছেলে ছেলে করছ যে, ছেলের দেবতা ষষ্ঠীঠাকরুণকে কি মানো?’ ব্রাহ্মণী বললেন, ‘সে কী মা! মা ষষ্ঠীকে কে না মানে?’ সন্ন্যাসিনী বললেন, ‘যদি ছেলে বাঁচাতে চাও, তাহলে মা ষষ্ঠীকে একটু করে মেনো, রোজ তাঁকে নমস্কার করবে; তাঁর সব রকম পালনি করবে, তবে তো তাঁর দয়া হবে।’ তখন ব্রাহ্মণী সন্ন্যাসিনীর পায়ে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘আমাদের কি অহঙ্কার হয়েছে মা! আর মা ষষ্ঠীর সব রকম ব্রতও তো করি।’
তখন সন্ন্যাসিনী বললেন, ‘কই, কখনও কি নীল ষষ্ঠী করেছ?’ ব্রাহ্মণী বললেন, ‘সে কী রকম মা! এ ব্রতের নাম তো জানি না, এর নিয়মই বা কী!’ তখন সন্ন্যাসিনী বললেন, ‘সমস্ত চৈত্রমাস সন্ন্যাস করে প্রত্যহ শিবপূজো করবে। তারপর সংক্রান্তির আগের দিন সমস্ত দিনের বেলা উপবাস করে সন্ধ্যার সময় নীলাবতীর পুজো করে, নীলকন্ঠ শিবের ঘরে বাতি জ্বেলে দিয়ে, মা ষষ্ঠীকে প্রণাম করে, তবে জল খাবে। ওই দিনকে নীল ষষ্ঠীর দিন বলে। নীল ষষ্ঠী করলে মা ষষ্ঠীর দয়া হতেই হবে। কারণ নীল ষষ্ঠী করলে কখনও ছেলে মরে না। তাই বলছি, এবার নীল ষষ্ঠী করো, দেখবে তোমার ছেলে মরবে না।’ এই বলে মা ষষ্ঠী অন্তর্ধান হলেন। ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণী সেই থেকে খুব ভক্তি করে নীল ষষ্ঠীর পুজো করতে লাগলেন। ক্রমে তাঁদের ছেলেপুলে হল, সেগুলি সব বেঁচে রইল। ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণীর সুখ দেখে পাড়ার সকলে নীল ষষ্ঠীর ব্রত করতে লাগল। সেই থেকে নীল ষষ্ঠীর পূজো প্রচার হল।
নীল ষষ্ঠীর কথা সমাপ্ত।