আমার ভাল লাগে। পথে নেমে নিঃশব্দে আমি জীবন-চিত্র দেখি। জীবনের মিছিল দেখি। কেউ আমাকে কিছু দেখায় না। চলমান মানুষগুলো নিজেরা আপনা থেকে এক একটা চিত্র হয়ে আমার সামনে আসে আবার দূরে চলে যায়।
কোন কাজ না থাকলে আমি পথে নেমে আসি। নিরুদ্দিষ্টের মত হাঁটতে থাকি এক-একটা দিক ধরে। খেয়ালখুশি মত কখনো কোন ট্রামে উঠে পড়ি কখনো বা বাসে। কেউ বুঝতে পারে না আমি একজন বেকার দর্শক মাত্র। দেখাটা আমার নেশা।
দেখে দেখে মনে হয় প্রতিটি মানুষের ভিতরে যেন একটা করে সংকল্পের মোটর বসানো। সেই মোটরের দম-মাফিক তাদের ওঠা বসা চলা ফেরা কাদা হাসা। মুখের দিকে চেয়ে চেয়ে আমি তাদের ভিতরের সঙ্কল্পটি আঁচ করতে চেষ্টা করি। ঠিক হয়। কিনা আমি জানি না। কিন্তু ভাল লাগে। বিশ্বাস, ঠিকও হয়।
বাসের গাদাগাদি ভিড়ের মধ্যে একসঙ্গে পাঁচ সাতটা মুখ আমার মুখের ওপর। চড়াও হতে দেখেছি। আমার সামনের আসনে-বসা লোকটা উসখুস করছে। নেবে যাবার জন্য সে এক্ষুনি উঠে দাঁড়াবে মনে হয়। আমার চারদিকের লোকগুলোর জোড়া জোড়া চোখ আমারই মুখের ওপর আটকে আছে কেন তক্ষুনি বোঝা গেল। যে লোকটার সীট ছেড়ে ওঠার সম্ভাবনা তার একেবারে সামনেই আমি। অর্থাৎ সে উঠলে আমারই। ওই সীটটা দখলের সম্ভাবনা।
বসা লোকটা উঠল ঠিকই। সেই মুহূর্তে ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যমনস্কের মত আর এক দিকে মুখ ফিরিয়ে আছি। তক্ষুনি হুটোপুটি কাণ্ড বেধে গেল আমার দুপাশে। ওই অন্যমনস্কতার ফাঁকে দুদিকের লোকই সেই খালি সীটের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়েছে।
…ট্রামে বসে আছি। রাতক্রমে জানালার ধারের সীটটাই আমার দখলে। আমার পাশে যে আধবয়সী লোকটি বসে আছে সে কেন যেন ফিরে ফিরে আমার দিকেই তাকাচ্ছে। প্রথমে খেয়াল করিনি। একটু বাদেই করলাম। আমার পথচিত্র দেখার ঝোঁকটা সে ধরতে পারেনি। এদিক ওদিক তাকাচ্ছি দেখে ভাবছে এক্ষুনি হয়তো নেমে যাব আমি। উঠে দাঁড়ালেই সে জানালার ধারটার দখল নেবার জন্য প্রস্তুত।
মনে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সত্যি মিথ্যে যাচাইয়ের জন্য উসখুস করে উঠল ভিতরটা। আধা-আধি উঠে কোমর বেঁকিয়ে একবার নিচের দিকে ঝুঁকলাম। সাগ্রহে পাশের লোক সেই বসা-অবস্থাতেই সাঁ করে জানালার ধারে সরে গিয়ে পা তুলে আমাকে বেরুবার জায়গা করে দিল। কিন্তু ওইরকম আধাআধি উঠে আসলে আমি কি করছিলাম? হাতের টিকিট মাটিতে ফেলে ঝুঁকে সেটাই আবার কুড়িয়ে নিচ্ছিলাম। সেটা হাতে নিয়ে অবাক মুখ করে লোকটির দিকে তাকাতে সে তার ভুল বুঝতে পেরে লজ্জিত।
সরি!
ঠিক আছে, বসুন বসুন।
জানালার ধার ছেড়ে দিয়ে আমি তার পাশে বসেছি।
.
…ময়দানের নিরিবিলি ধারটা দিয়ে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে চলেছে। ছেলেটার বয়েস সাতাশ-আটাশ আর মেয়েটার বড় জোর উনিশ। তেমন সুশ্রী নয় আবার তেমন কুরূপাও নয় মেয়েটা। হাত মুখ নেড়ে কথা বলতে বলতে চলেছে। কিন্তু আমার মনে হল তার সঙ্গীটি কথা যত না শুনছে তার থেকে দেখছে ঢের বেশী। তার একখানা হাত মেয়েটার কাঁধের ওপর। সেই হাত পিঠ বেয়ে মাঝে মাঝে মেয়েটার কোমরের দিকে নেমে আসছে। হাত বিশেক পিছনে চলেছি আমি। মেয়েটা পলকের সন্দিগ্ধ চোখে ঘাড় বাঁকিয়ে সঙ্গীর মুখখানা দেখে নিল একবার। সঙ্গীর হাত তক্ষুনি ওর কাঁধের দিকে উঠে গেল। আর পিছনে ফিরে একবার দেখেও নিল।
আমার মন বলছে তেমন অভিজ্ঞ নয় মেয়েটা। অনেকটা সরল বিশ্বাসেই সঙ্গীর পাশে চলেছে। আর মনে হল, ওই পাশের লোকটা নিরাপদ গোছের নির্জনতা খুঁজছে একটু। সন্ধ্যার ছায়া গাঢ় হয়ে এসেছে। ওরা এগিয়ে চলেছে। একটু বাদেই আর দেখা গেল না ওদের।
আমি মাঠেই এক জায়গায় বসে পড়লাম।
আধঘন্টার মধ্যেই প্রত্যাশিত নাটক দেখলাম। অন্ধকার কুঁড়ে হনহন করে কেউ একজন এদিকে আসছে। প্রায় ছুটেই আসছে যেন। আমিও অন্ধকার বিদীর্ণ করে দেখছি। একটা মেয়েই। সেই মেয়ে। কেউ যেন ওকে তাড়া করেছে। ও পালাচ্ছে।
আমি ভুইফেঁড়ের মত সামনে উঠে দাঁড়ালাম। মেয়েটা আঁতকে উঠল।
বললাম, ভয় পেও না, দাঁড়াও–তোমার পিছনের ওই লোক এসে গেছে, এভাবে পালিয়ে পার পাবে না।
বলতে বলতে লোকটা এসে গেল। সেই লোক। দাঁড়াবে কি দাঁড়াবে না ভাবছিল। অস্ফুট গর্জনে একটা কটুক্তি করে উঠে আমি তেড়ে যেতেই সে ত্রস্ত কুকুরের মত ছুটে পালাল। আমি মেয়েটাকে বললাম, এবার যাও, আর সন্ধ্যায় হাওয়া খেতে এসো না।
অন্ধকারে আমিও পা চালিয়ে দিলাম।
.
…বাসের ঠাসাঠাসি ভিড়ের মধ্যে সেই লোকটার মুখের দিকে আমার চোখ আটকাল কেন জানি না। বেশ ফিটফাট চেহারা। পরনে চকচকে প্যান্ট ঝকঝকে শার্ট। মুখে দু-চারটে বসন্তের দাগ। বছর চব্বিশ-পঁচিশ বয়েস। সে আমাকে দেখছে না। তার চোখ আশ-পাশের মানুষদের উপর চক্কর খাচ্ছে। এই চিত্র যেন আমার ষষ্ঠ চেতনার ওপর আঘাত দিল একটা। মন বলল, লোকটা নিঃশব্দে অপরের পকেটের সন্ধানে আছে।
মিনিট কতকের জন্য একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ এক ভদ্রলোক চেঁচামেচি করে উঠল। তার পকেট থেকে মানিব্যাগ খোয়া গেছে। একটা হৈ-চৈ পড়ে গেল। আশপাশের সকলকেই সন্দেহ করছে ভদ্রলোক। আমি দেখলাম সেই লোকটি তখন বেশ দূরে দাঁড়িয়ে–অনেকটা সামনে এগিয়ে গেছে। আর নিস্পৃহ মুখে ঘাড় ফিরিয়ে একটা দৃশ্য দেখছে যেন।
কপাল ঠুকে একটা কাণ্ড করে বসলাম। টাকা যার খোয়া গেছে তার গা টিপে ওই লোকটাকে দেখিয়ে দিলাম। সে ছুটে গিয়ে তাকে চেপে ধরল। লোকটা পাল্টা হুমকি দিয়ে উঠল, কিন্তু মুখখানা আমসি। আরো দুচারজন উৎসাহী লোক তাকে ঘেঁকে ধরে কোমরে হাত দিতেই ব্যাগ বেরুল। তারপর বহুজনের সে কি নৃশংস উল্লাস!
.
এই থেকেই নিজের ওপর একটা দৃঢ় বিশ্বাস এসে গেছল। আমি পথচিত্র দেখি। আর তাই থেকে মানুষের ভিতরের চিত্রটাও স্পষ্ট দেখি।
সেদিন…
বেলা তখন তিনটে হবে। একটা পরিচিত ছোট রাস্তা ধরে আসছিলাম। উদ্দেশ্য মোড়ের ওই দোকান থেকে পান খাব। আমি ওই বিশেষ দোকানের খদ্দের। বলতে ণেলে এ পাড়াতেই খানিক দূরে বাসা আমার। ওই অল্পবয়সী পানঅলাটাকে খুব পছন্দ আমার। দেশ উড়িষ্যায়। এখন বাঙালীই হয়ে গেছে। সব সময় মিষ্টি মিষ্টি হাসে, পান সাজার ফাঁকে শরীর কেমন আছে না আছে খবর নেয়। মজাদার টাটকা খবর কিছু থাকলে তাও বলে ফেলে।
গজ বিশেক এ-ধারেই দাঁড়িয়ে পড়তে হল। সামনে কিসের জটলা একটা। একজন মহিলা–বছর পঁয়ত্রিশ-ছত্রিশ হবে বয়সে, ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আর চারদিক থেকে তাকে ঘিরে অনেকে অনেক রকমের কথা বলছে। কেউ কেউ এটা সেটা জেরা করছে। মহিলাকে, কিন্তু উদগত কান্না চেপে মহিলা জবাব দিয়ে উঠতে পারছে না। হাত তুলে। সামনের গলিটা দেখিয়ে দিচ্ছে কেবল।
আমিও দাঁড়িয়ে গেছি। সমাচার যা শুনলাম তার সারমর্ম, মহিলা আজ সকালেই তার এক আত্মীয়ের কাছ থেকে পঁচাত্তরটি টাকা স্বামীর চিকিৎসার জন্য ধার করে এনেছে। স্বামী একেবারে শয্যাশায়ী। ঘরে আর এক কপর্দকও নেই। ওই টাকায় স্বামীর। জন্য ওষুধ আসবে আর তার বুকের এক্স-রে হবে। মহিলা আগে ওষুধটা কিনে নিয়ে বাড়ি যাবে ঠিক করে এ-পথ দিয়ে যাচ্ছিল। এরই মধ্যে একটা লোক ছোঁ মেরে তার হাতের ব্যাগটা ছিনিয়ে নিয়ে ওই গলিতে সেঁধিয়ে গেছে। মহিলা বুক চাপড়ে কেঁদে উঠেছে। কিন্তু গলির ভিতর দিয়ে লোকটা কোথা থেকে কোথায় চলে গেছে ঠিক কি।
আমি দেখছি। মহিলাকে ঘিরে লোকের সংখ্যা এখন কম করে তিরিশজন। নানা বয়সের লোক। চেনা মুখও আছে এর মধ্যে অনেক। মহিলার দিকে তাকালাম আমি। কান্না থামেনি তখনো। তার হাতে প্রেসকৃপশনটা আছে শুধু।…এক কালে সুন্দরীই ছিল মনে হয়। অনটনের হাড়কাঠে পড়ে সে-সৌন্দর্য গেছে বোঝা যায়। কাঁদছে আর অসহায় চোখে চারদিকে তাকাচ্ছে। শোকে আর উত্তেজনায় হাঁপাচ্ছে অল্প অল্প। ঈষৎ স্রস্ত বসনের ওধারে ওই বুকের ওঠা-নামা দেখছে কেউ কেউ। কেউ পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে। কেউ বা জেরা করে করে ছিনতাইয়ের আরো সঠিক হদিশ পেতে চেষ্টা করছে।
আমি দেখছি একটা শোক আর হতাশা যেন মহিলার দুচোখ দিয়ে ঠেলে বেরুচ্ছে। ঘরে রুগ্ন স্বামী নিশ্চয় তার প্রতীক্ষায় বসে আছে। কিন্তু সে ঘরে যাবে কোন মুখ নিয়ে?
এ পাড়ায় এ রকম হামলা সন্ধ্যায় বা রাতে আরো হয়ে গেছে। এখন দিন মানেও এই উপদ্রব শুরু হয়েছে। লোকচরিত্র বা পথচিত্র দেখে যদি কোন অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে তাহলে আমার ধারণা মহিলার এত বড় ক্ষতিটা পূরণ করে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু কোন একজনের প্রথম এগিয়ে আসা দরকার।
পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম দুটো দশ টাকার নোট আছে। কয়েক মুহূর্তের দ্বিধা কাটিয়ে আমিই এগিয়ে গেলাম। গোল হয়ে যারা ঘিরে আছে মহিলাকে এবং নানা দিক থেকে নানাভাবে দেখছে, তাদের সক্কলকে উদ্দেশ্য করে বললাম, ছিনতাই ঠেকাতে পারছি না, দিনে দুপুরে এই কাণ্ড–এ আমাদের দোষ, আমাদের পাড়ার দুর্নাম। এই আমি কুড়িটাকা দিলাম, আপনারা যে যা পারেন দিয়ে মহিলাকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করুন।
নিন ধরুন।
মহিলা থমকে তাকাল আমার দিকে। দুগালে তখনো জলের দাগ। কি করবে ভেবে পেল না।
ধরুন, ধরুন। এটা লজ্জা করার সময় নয়–দোষ আপনার নয়, দোষ আমাদের। নোট দুটো হাতে গুঁজেই দিলাম একরকম।
আর একজন দেখলাম পকেট থেকে মানিব্যাগ বার করছে।
নায়কের ভূমিকা নেবার পর আর দাঁড়িয়ে থাকার মানে হয় না। এক-আধজন আবার অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে লক্ষ্য করছে আমাকে।
কিন্তু বেশিরভাগ লোকেরই পকেটে হাত ঢুকছে দেখলাম। পথচিত্র দেখে অভ্যস্ত এই দুটো চোখ আগেই আঁচ করেছিল এ রকম হবে।
সরে এসে পানের দোকানের সামনে সবে দাঁড়িয়েছি। বছর চল্লিশ বিয়াল্লিশের। একটি লোক সেখানে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে আর হুস হুস করে সিগারেট টানছে। আমাকে দেখেই একটা চোখ ছোট করে আর সেই রকমই হেসে পরিচিতের মতই। জিজ্ঞাসা করল, কি মশাই, টাকা দিয়ে এলেন নাকি?
সঠিক না বুঝে আমি বললাম, হ্যাঁ।
লোকটা ফিক ফিক করে আরো বেশি হাসতে লাগল আর সেই সঙ্গে জোরে দুতিনটে টান মারল সিগারেটে। ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে জিজ্ঞাসা করল, কেন দিলেন, সুন্দর মুখের বিলাপটুকু পছন্দ হল?
আমি রুষ্ট-নেত্রে তাকালাম তার দিকে।–ভদ্রমহিলা এ-রকম বিপদে পড়েছেন, এসব কি বলছেন আপনি!
আরো বিচ্ছিরি করে হাসল লোকটা। বলল, ভদ্রমহিলা বিপদে পড়লে আপনাদের দরদ উথলে ওঠে, না? আর সুন্দর মুখ হলে তো কথাই নেই–কোন ভদ্রলোক ও-রকম বিপদে পড়লে ফিরে তাকাতেন?
আমি বললাম, শাট আপ, ভদ্রলোকের মত কথা বলুন, ওই মহিলা কি রকম বিপদে পড়েছেন আপনি জানেন?
হাসছে তখনো।–জানি বইকি, অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসার টাকা ছিল ব্যাগে–সেই ব্যাগ ছিনতাই হয়েছে, এই তো?
আমি থমকে গেলাম।ওই মহিলাকে আপনি চেনেন?
চিনি বইকি। আরো বেশি হাসতে লাগল।ওই দেখুন আরো কত জনে টাকা। পয়সা দিচ্ছে, ওয়াণ্ডারফুল!
ফিরে তাকালাম একবার। পানঅলাটা কি যেন ইশারা করছে আমাকে।
আমার ওর দিকে তাকাবার সময় নেই। রূঢ় স্বরে সামনের লোকটাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কতটা চেনেন আর কি জানেন?
মুচকি হেসে সে জবাব দিল, এমনও হতে পারে ওই মহিলার সেই অসুস্থ স্বামীর সঙ্গেই আপনি দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। থ্যাংকস্ ফর দি চ্যারিটি–
দ্রুত চলে গেল লোকটা।
আমার মাথায় আগুন জ্বলে উঠল। পানঅলা আমাকে বাবু বলে হাঁক দিল। কিন্তু আমি সে ডাকে কর্ণপাত না করে ওই মহিলার দিকেই ছুটে গেলাম। রাগের মাথায় এক থাবা মেরে মহিলার হাত থেকে টাকা পয়সা সব মাটিতে ফেলে দিলাম। চিৎকার করে বলে উঠলাম, মশাইরা, কেউ এক পয়সাও দেবেন না, সব জোচ্চুরি,সব মিথ্যে! মহিলা হতভম্ব মুখে চেয়ে রইল আমার দিকে। যারা চারপাশে ছিল তখনো তারাও চিত্রার্পিত।
হাতে একটা টান পড়তে চেয়ে দেখি ওই পানঅলা টানছে আমাকে। ছুটে এসে হাঁপাচ্ছে সে। বলছে, শুনুন বাবু শুনুন, খুব ভুল হোয়ে গেল
তিন হাত এদিকে টেনে এনে সে আমাকে বলল, ওই পাগলের কথা শুনে আপনি কি করছেন বাবু!
পাগল!
হ্যাঁ পাগল। দুবছর আগে ওর বউ অন্য লোকের সঙ্গে ভেগে গেছে। তারপর থেকে একটু ভাল চেহারার কোন মেয়েছেলে দেখলেই বলে তার বউ।
আমি বিমূঢ় কয়েক মুহূর্ত। ওদিকে লোকগুলোর মধ্যে বিপরীত প্রতিক্রিয়া শুরু হব-হব করছে। আমি তাড়াতাড়ি এসে ছড়ানো ছিটনো টাকা পয়সাগুলো রাস্তা থেকে কুড়োতে লাগলাম। অনেকে একসঙ্গে প্রশ্ন ছুঁডল, কি হয়েছে মশাই, কি হয়েছে?
আমি জবাব দিলাম, কিছু না মশাইরা, আমার মস্ত বড় একটা ভুল হয়েছে। সবিনয়ে আবার সেই টাকা পয়সা মহিলার সামনে ধরলাম, বললাম, অপরাধ নেবেন না, নিন। মহিলা হাত বাড়িয়ে নিল। কিন্তু সেই সঙ্গে জ্বলন্ত চোখে আমার মুখটা একপ্রস্থ দগ্ধ করল।
.
এখনো আত্মবিস্মৃত তন্ময়তায় আমি পথচিত্র দেখে যাই। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আর কখনো নিঃসংশয় হতে পারি না।