বড়ো রাস্তার মোড়ের কাছে একটা শোরগোল উঠল। দু-চার জন পথে নেমে এল, কিছু লোক সার দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল দু-ধারে—যেমন করে দাঁড়ায় প্রসেশন যাওয়ার সময়। যারা নামল না, তারা বকের মতো গলা বাড়িয়ে দিলে বারান্দা থেকে।
ব্যাপার আর কিছু নয় নৃপেন রায় আসছেন।
কে এই নৃপেন রায়? দেশনেতা নন, রাজা মহারাজা নন, সিনেমার অভিনেতাও নন। কোনো আশ্রমে-টাশ্রমে মোটা টাকাও দান করে বসেননি। তবু তাঁর সম্পর্কে লোকের সীমাহীন কৌতূহল।
কেন যে কৌতূহল, তার জবাব পাওয়া গেল যখন তিনি বাঁক ঘুরে সামনে এসে পোঁছালেন।
ছ-হাতের মতো লম্বা। মাথায় একরাশ কোঁকড়ানো বাবরি চুল—সম্প্রতি বিপর্যস্ত। লম্বাটে মুখের কৌণিক হাড়গুলোতে অনেক ডাম্বেল-কষা মুগুর ভাঁজার কাঠিন্য। ঢালের মতো চওড়া বুক, আজানুলম্বিত পেশল হাত দুখানিকে মহাবাহু ছাড়া আর কোনো সংজ্ঞা দেওয়া যায় না। পদ্মপলাশ বিস্তৃত চোখ এবং সে-চোখ পলাশ ফুলের মতোই আরক্তিম।
পরনে ব্রিচেস, কাঁধে ঝোলানো দু-দুটো বন্দুক, ভয়ংকর মানুষটাকে তা আরও বীভৎস করে তুলেছে। কিন্তু তিনি একা নন, তাঁর সঙ্গে একটা মেয়েও আছে—তাঁরই মেয়ে। তার আকর্ষণও কম নয়।
বছর বারোর মেয়ে। ববছাঁটা ধূলিরুক্ষ চুল। খাকিরঙা সালোয়ারের ওপর একটি খাকি শার্ট পরা। মেয়েটির গলায় টোটার মালা। শুধু টোটা নয়, আর এক ছড়া মালাও আছে। তাতে ঝুলছে রক্তমাখা গোটা পাঁচেক স্নাইপ এবং এক জোড়া চায়না ডাক। মেয়েটির জামার এখানে-ওখানে সে-রক্তের ছোপ লেগেছে—যেন ভৈরবীর মূর্তি।
সব মিলিয়ে দৃশ্যটাকে ভয়ানক বললেও কম বলা হয়। পৈশাচিক।
ভিড়ের মধ্য থেকে কে একজন মন্তব্য ছুড়ে দিলে একটা।
দেখেছ কান্ড! মেয়েটাকেসুদ্ধ কী বানিয়ে তুলছে।
আর একজন বললে, লোকটা একেবারে অমানুষ!
যা বলেছ। কেউ সরস করে ব্যাখ্যা করে দিলে—জিনিসটা মানুষ নিশ্চয় নয়, রাক্ষস।
বাপ-মেয়ে কথাগুলো কেউ শুনতে পেলেন কি না বোঝা গেল না। শুনলেও ভ্রূক্ষেপ করলেন না নৃপেন রায়। জীবনে করেনওনি কোনোদিন।
মাথার ওপর উঠে আসা দুপুরের সূর্যের কড়া রোদে দুজনে সোজা চলে গেলেন। দুজনেই বুটপরা, শুধু বহুদূর থেকেও সেই দু-জোড়া বুটের অস্পষ্ট হয়ে আসা মচমচানি শোনা যেতে লাগল।
শহরের একটেরেয় নৃপেন রায়ের বাড়ি। সামনে একখানা মাঝারি ধরনের বাগান। তাতে একটি গন্ধরাজ, একটি ম্যাগনোলিয়া এবং দুটি শিউলি। একপাশে বহু পুরোনো একটি আম গাছ, তাতে আজকাল আর ফল ধরে না। বসন্তের হাওয়ায় কয়েকটি শীর্ণ মুকুল দেখা দিয়েই ঝরে যায় বিবর্ণ জীর্ণতায়। একদিকে বেশ পুরু একটি কেয়াঝোপ। বাড়ির গায়ে কেয়াবন কোনো গৃহস্থের ভালো লাগার কথা নয়, বর্ষায় ফুল ফুটলে তার পাগল-করা-গন্ধে নাকি আনাগোনা শুরু হয় গোখরো সাপের। কিন্তু ওসব কোনো কুসংস্কার নেই নৃপেন রায়ের। আর এ ছাড়া বাগানের সবচেয়ে বিশেষত্ব হল, সযত্নরোপিত নানা জাতের ক্যাকটাস। ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গা থেকে এদের সংগ্রহ করা হয়েছে। বেশিরভাগই তীক্ষ্ণকাঁটায় আকীর্ণ, নানা বিচিত্র ধরনের ফুল ফোটে তাতে। শিকার আর ক্যাকটাসের পরিচর্যা—এই হল নৃপেন রায়ের প্রধান ব্যসন।
বাড়িটা বড়ো কিন্তু এখন শ্রীহীন। প্রায় হাজার পঞ্চাশেক টাকা আর চা-বাগানের মোটা রকমের শেয়ার রেখে বাপ চোখ বুজেছিলেন। আন্তরিক নিষ্ঠার সঙ্গে ওই পঞ্চাশ হাজার টাকা কয়েকটি বছরের মধ্যেই উড়িয়েছেন নৃপেন রায়। এখন সংসার চলে বাঁধা মাইনের মতো শেয়ারের একটা নিয়মিত আয়ে। তারও পরিমাণ উপেক্ষার নয়। খুশিমতো আর অপচয় করা চলে না বটে, কিন্তু রুচিমাফিক অপব্যয়ে বাধা নেই এখনও। সে-অপব্যয়টা চলে শিকার আর বিলাতি মদের রন্ধ্রপথে।
নৃপেন আর তাঁর মেয়ে গৌরী, এই দুজনকে নিয়েই সংসার। একটা বুড়ো চাকর আছে বাপের আমলের; চোখে অল্প অল্প ছানি পড়েছে, কানেও কম শোনে। সংসারের ঝক্কিটা পোয়াতে হয় তাকেই। গৌরীর বছর দুই বয়েসের সময় নৃপেন রায়ের স্ত্রী স্বামীর আটত্রিশ বোরের রিভলবারটা দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। সেই থেকে ওদিকটাতে নিশ্চিন্ত হয়েছেন নৃপেন রায়। তারপরে আর বিয়ে করেননি। মেয়েদের তিনি সহ্য করতে পারেন না।
বাইরের ঘরে ঢুকে একটা সোফার ওপর বন্দুক দুটোকে নামিয়ে রাখলেন। তারপর বুটসুদ্ধ পা দুটোকে তুলেই এলিয়ে পড়লেন একটা কাউচে।
পাখি আর টোটার মালা গলায় নিয়ে গৌরী তখনও সামনে দাঁড়িয়ে আছে, যেন কী করতে হবে জানে না—বাপের আদেশের অপেক্ষা করছে সে।
পাখাটা খুলে দে তো গৌরী। আর ওগুলো নামিয়ে রাখ মেঝেতে।
গৌরী তাই করল।
আয়, বোস আমার কাছে। নৃপেন রায় ডাকলেন। গলার স্বরে মেশাতে চাইলেন স্নেহের নমনীয় আমেজ। সে-স্বরে স্নেহ ফুটল কি না বোঝা গেল না, কিন্তু গৌরী যেন আশ্বস্ত বোধ করল একটু। একটা টুল টেনে নিয়ে নীরবে বাপের পাশে এসে বসল।
আজ খুব কষ্ট হয়েছে, না রে? আবার সস্নেহ স্বরে জানতে চাইলেন নৃপেন রায়।
হ্যাঁ বাবা। আস্তে আস্তে জবাব দিলে গৌরী।
মিষ্টি, ক্লান্ত গলার আওয়াজ। এতক্ষণ পরে মেয়েটিকে যেন দেখতে পাওয়া গেল ভালো করে। অলঞ্জীর মতো বব-করা রুক্ষ চুলের পটভূমিতেও শান্ত কমনীয় একখানা মুখ। গভীর কালো চোখের তারায় ব্যথিত শঙ্কা। বাইরের পোশাকের সঙ্গে যেন কোনো মিল নেই তার মনের চেহারার।
আরও একটু লক্ষ করলে চোখে পড়ে—তার মুখে কোথাও যেন ভাবের স্পষ্ট আভাস নেই কিছু, কেমন প্রাণহীন। একটা জন্তুর মতো প্রাকৃতিক ভয়, প্রাকৃতিক দুঃখানুভূতি। কোনো ডাক্তার দেখলে প্রথম দৃষ্টিতেই বলে দেবে মেয়েটা হাবা। তার শিশুর মতো অপরিণত চেতনা চিরকাল নীহারিকায় বাষ্পচ্ছন্ন হয়ে থাকবে, কোনোদিন অভিজ্ঞতার কঠিন আকৃতি-বন্ধনে পূর্ণ হয়ে উঠবে না।
প্রথমদিকে একবার ডাক্তার দেখানো হয়েছিল অবশ্য। পরীক্ষা করে ডাক্তার শুধু মাথা নেড়েছিলেন বার কয়েক। তারপর ধিক্কারভরা চোখে নৃপেন রায়ের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, আপনার পাপেরই ও প্রায়শ্চিত্ত করছে, এর কোনো ওষুধ নেই।
তার মানে?
মানে এখনও জানতে চান? ডাক্তারের মুখে ঘৃণার চিহ্ন ফুটে উঠেছিল, জন্মের আগেই ওর সমস্ত জীবনকে আপনি নষ্ট করে রেখেছেন। আজ আর ওর ভালো করবার চেষ্টা বৃথা।
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন নৃপেন রায়। নিস্পন্দ হয়ে থেমে গিয়েছিল মুখের সমুদ্যত কঠিন হাড়ের সঙ্গে জড়ানো মাংসপেশিগুলো। শক্ত থাবায় চেয়ারের হাতলটাকে ধরেছিলেন মুঠো করে।
জানেন, কী বলছেন আপনি?
ডাক্তার ভয় পাননি। স্থিতপ্রজ্ঞের গাম্ভীর্য নিয়ে চশমাটা রুমালে মুছতে মুছতে বলেছিলেন, জানি। যদি বিশ্বাস না করেন, আপনার আর আপনার মেয়ের ব্লাড দিয়ে যান। কাল কান টেস্টের রিপোর্ট পাঠিয়ে দেব, তা থেকেই আশা করি সব বুঝতে পারবেন।
জীবনে এই প্রথম থমকে গিয়েছিলেন নৃপেন রায়, যেন কুঁকড়ে গিয়েছিলেন। শিথিল হয়ে গিয়েছিল মুখের পেশিগুলো, মুঠিটা ঢিলে হয়ে এসেছিল চেয়ারের গায়ে। আর দাঁড়াননি তারপর।
ডাক্তারের টেবিলের ওপর প্রায় ছুড়ে দিয়েছিলেন ফি-এর টাকাগুলো। মেয়ের হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে বলেছিলেন, চল।
কিন্তু আর চিকিৎসা হয়নি গৌরীর।
চিকিৎসা করেও কোনো লাভ হবে না, একথা বুঝতে পেরেছিলেন নৃপেন রায়। কিছুদিন একটা গভীর অপরাধবোধ তাঁকে আচ্ছন্ন করে রাখল। তারপর ক্রমশ নিজের মধ্যেই একটা জোর খুঁজে পেলেন তিনি। অন্যায় যদি তাঁর হয়ে থাকে, তবে তার প্রতিকারের দায়িত্বও তাঁরই হাতে। গৌরীকে তিনি জাগিয়ে তুলবেন, চেতনার আলো ছড়িয়ে দেবেন তার অন্ধকার মনের প্রান্তে প্রান্তে।
প্রাণ যদি নাই পায়, অন্তত অন্য দিক থেকে সজাগ করে তুলবেন একটার পর একটা নিষ্ঠুর হিংসার খোঁচা দিয়ে।
হিংসা! তাই বটে। কী বিরাট, কী প্রচন্ড শক্তি! রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার যখন তাঁকে সামনাসামনি চার্জ করেছে, তখন সে-শক্তির বিদ্যুঝলক টের পেয়েছেন রক্তের মধ্যে। শালবনের ভেতরে মাতলা হাতি শিকার করতে গিয়ে সেই শক্তির উৎক্ষেপে দুলে উঠেছে তাঁর হৃৎপিন্ড। সেই শক্তি, সেই হিংসা। জীবনে নৃপেন রায় তার চেয়ে কোনো বড়ো জিনিসের কথা ভাবতেও পারেননি।
গৌরী জাগুক, কেটে যাক তার চৈতন্যের ওপর থেকে এই কুয়াশার আবরণ। তারপর ডাক্তারকে তিনি দেখে নেবেন।
আজও অস্পষ্টভাবে তাঁর মাথার মধ্যে যেন ঘুরে যাচ্ছিল এই চিন্তাটাই। আধবোজা চোখে গৌরীর দিকে তিনি চেয়ে রইলেন আবিষ্টের মতো।
হাঁস দুটো আজ বড়ো ভুগিয়েছে, না?
তেমনি প্রাণহীন গলায় গৌরী বললে, হ্যাঁ বাবা।
শিকারে যেতে পোর ভালো লাগে না?
লাগে।
কষ্ট হয় না?
হয়। গৌরী জানলার বাইরে আম গাছটার দিকে দৃষ্টি মেলে দিলে। অনেক কাঁটা আর বড্ড রোদ, হাঁটতে পারা যায় না।
ওটুকু কষ্ট না করলে শিকারি হতে পারে কেউ? উৎসাহে নৃপেন রায় দৃষ্টিটা সম্পূর্ণ মুক্ত করে ধরলেন।
শিকার কি আর ধরা দেয় অত সহজে? অনেক পরিশ্রম করতে হয়, অনেক রোদ কাঁটা সইতে হয়। একবার নেশা ধরলে দেখবি দুনিয়ার আর সব একেবারেই ভুলিয়ে দেবে।
কিন্তু পাখি মেরে কী হয় বাবা? গৌরীর নিষ্প্রাণ চোখে একটা জান্তব বেদনা পরিস্ফুট হয়ে উঠল, কেমন সুন্দর দেখতে! আর কী মিষ্টি করে ডাকে!
হঠাৎ একটা খোঁচা খেলেন নৃপেন রায়, চমকে উঠলেন কীসের অশুভ সংকেতে। উলটো সুর বলছে গৌরীর গলা; এমন কথা ছিল না, এমন হওয়া উচিত নয়।
কাউচের উপর উঠে বসলেন তিনি। মানসিক অধৈর্যে বুটপরা পা দুটোকে সশব্দে নামিয়ে আনলেন মেঝের ওপর। স্বগতোক্তির মতো পুনরাবৃত্তি করলেন গৌরীর কথা দুটোর, খুব সুন্দর দেখতে, না? খুব মিষ্টি করে ডাকে কেমন?
হকচকিয়ে গেল গৌরী। নীহারিকার মতো অস্বচ্ছ মনের ধোঁয়াটে পর্দায় জান্তব ভীতির পূর্বাভাস পড়েছে। চাপা উৎকণ্ঠায় গৌরী বললে, হ্যাঁ বাবা!
হ্যাঁ বাবা! নৃপেন রায় বিশ্রীভাবে ভেংচে উঠলেন একটা। ইচ্ছে করল থাবার মতো তাঁর প্রচন্ড মুঠিটা সজোরে বসিয়ে দেন মেয়েটার মাথার ওপর।
আর খেতে কেমন লাগে? কেমন লাগে নরম তুলতুলে মাংসগুলো? বিকৃত গলায় তিনি একটা তিক্ত প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, চাবুকের আওয়াজের মতো যেন বাতাসে কেটে গেল কথাটা।
সভয়ে গৌরী চুপ করে রইল কিছুক্ষণ।
কী, কথা কইছিস না যে? পায়ের নীচে একটা কিছু থেঁতলে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছেন এমনই ভঙ্গিতে বুটজোড়া মেঝেতে ঠুকলেন নৃপেন রায়।
প্রায় নিঃশব্দে জবাব এল গৌরীর, খেতে ভালোই লাগে বাবা।
খেতে যা ভালো লাগে, তা মারতেও মন্দ লাগা উচিত নয়। হিপনটাইজ করবার মতো একটা নির্নিমেষ খরতা জ্বলতে লাগল নৃপেন রায়ের চোখে। যা, পাখিগুলোর পালক ছাড়িয়ে কেটেকুটে তৈরি করে রাখ গো
আমি? ব্যথিত বিস্ময়ে গৌরী বললে, আমি তো কখনো করি না বাবা। ওসব তো বৃন্দাবন করে।
না, আজ থেকে বৃন্দাবন আর করবে না, তোকেই করতে হবে। নৃপেন রায়ের সমস্ত মুখোনা মুছে গিয়ে গৌরীর দৃষ্টির সামনে প্রত্যক্ষ হয়ে রইল শুধু দুটো আগ্নেয় চোখ। তুই-ই করবি এর পর থেকে। যা।
কলের পুতুলের মতো উঠে পড়ল গৌরী। তারপর পিঠের ওপর বাপের প্রখর দৃষ্টির উত্তাপ অনুভব করতে করতে তাড়া-খাওয়া একটা জানোয়ারের মতো পাখিগুলোকে তুলে নিয়ে ছুটে পালাল।
লাল হয়ে আসা শেষ রোদে বাগানের মধ্যে পায়চারি করছিলেন নৃপেন রায়। অদ্ভুত কৌতুকের সঙ্গে লক্ষ করছিলেন সূর্য ডোবার আগেই কোথা থেকে বেরিয়ে পড়েছে একটা পাহাড়ি মথ। বেশ বড়ো আকারের, প্রায় পাঁচ ইঞ্চি করে ফিকে নীলের ওপর সাদা ডোরাকাটা ডানা। মথটা ঘুরে ঘুরে কেয়াপাতার ওপর বসবার চেষ্টা করছে, কিন্তু তারপরেই তীক্ষ্ণধার কাঁটার ঘায়ে উড়ে যাচ্ছে সেখান থেকে।
সুন্দর পাখা, খাসা রং। কিন্তু নির্বোধটা জানে না, এই কেয়াকাঁটার ঝাড়ে রঙিন পাখনা নিয়ে বসবার মতো জায়গা নেই কোথাও। হঠাৎ একটা অমানুষিক আনন্দে নৃপেন রায় থাবা দিয়ে ধরলে মথটাকে। মুঠির মধ্যে পড়তে-না-পড়তে সেটা পিষ্ট হয়ে গেল, হাতের তালুতে পরাগের মতো জড়িয়ে রইল একরাশ সাদা গুঁড়ো।
ফুলের পাঁপড়ি ছেড়ার মতো করে, ভোরের আকাশে নীলিমার বুকের ওপর প্রথম সূর্যের আলো পড়ার মতো শুভ্রতায় রেখায়িত পাখা দুটোকে তিনি নখের ডগায় টুকরো টুকরো করতে লাগলেন। বেশ লাগে ছিড়তে। অদ্ভুত সূক্ষ, আশ্চর্য নরম! কিন্তু কেয়া গাছের একটি পাতাও অমন করে ছেঁড়া যাবে না, সে-চেষ্টা করতে গেলে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে হাতের চামড়া, ভেসে যাবে রক্তের ধারায়।
বাগানের মধ্যে চলতে চলতে হঠাৎ এক জায়গায় থমকে দাঁড়ালেন তিনি। সমস্ত মুখোনা খুশির আলোয় তাঁর ঝলমল করে উঠেছে।
এই তো! এতদিন পরে তবে ফুল ফুটেছে!
রাজপুতানা থেকে আনা, মরুভূমির বালিতে বেঁচে থাকা এই ক্যাকটাস। কেয়ার চাইতেও বড়ো বড়ো খরমুখ কাঁটা। এদের ভীষণতার এইটুকুই মাত্র পরিচয় নয়। এই ক্যাকটাসগুলোর আশেপাশে থাকে এক জাতের ছোটো ছোটো বেলে সাপ; যেমন দ্রুত, তেমনি অব্যর্থ তাদের বিষ। এই বিষকন্যার আজ যৌবন এসেছে, ফুল ফুটেছে এর গায়ে!
একটি মাত্র ফুল, মাঝারি ধরনের আনারসের মতো চেহারা। হরিদ্রাভ বর্ণে হালকা হালকা লালের ছোপ। কৌতূহলী হয়ে তার গায়ে হাত দিতে গিয়েই চমকে সরে এলেন নৃপেন রায়। হাতে লাগল কাঁটার তীক্ষ্ণ খোঁচা, জ্বালা করতে লাগল। তাকিয়ে দেখলেন মধ্যমার উপরে এসে জমেছে একবিন্দু রক্ত।
নিজের রক্ত কত বার দেখেছেন, তবু এই একটি বিন্দুকে কেমন বিস্ময়কর বলে মনে হল তাঁর। আশ্চর্য স্বচ্ছ আর নির্মল দেখাল তাঁর রং। নৃপেন রায় কুঞ্চিত করে তাকিয়ে রইলেন। এই রক্তে বিষ আছে, বিষ আছে তাঁদের নিজের অপরাধের। অসম্ভব।
হঠাৎ কান দুটো সতর্ক করে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। গানের সুর। গৌরী গান গাইছে। আঙুলে ক্যাকটাসের বিষাক্ত জ্বালা নিয়ে অস্থির পায়ে ঘরের দিকে এগোলেন নৃপেন রায়। বাইরের ঘরে একটা জানলার পাশে বসে বুড়ো আম গাছটার দিকে তন্ময় হয়ে তাকিয়ে আছে গৌরী। কোলের ওপর তার দুটি সদ্যফোঁটা গন্ধরাজ। নিজের মনেই কী-একটা গানের সুর সে গুঞ্জন করে চলেছে।
গৌরী?
তীক্ষ্ণগলায় তিনি ডাকলেন। বিদ্যুদবেগে গৌরী দাঁড়িয়ে পড়ল, মাটিতে পড়ল কোলের ওপরে রাখা গন্ধরাজ দুটো।
কী দেখছিলি?
দুটো ঘুঘু বাবা, কী সুন্দর ডাকছে! গৌরীর গলায় একটা আনন্দিত কৌতূহলের আমেজ। কিন্তু তাতে কোনো চেতন-সত্তার বোধের চিহ্ন নেই। একটা প্রাকৃতিক অনুভূতি। নদীর নীল জলের আয়নায় নিজের ছায়া দেখে অর্থহীন আনন্দে ডেকে ওঠা কোনো হরিণের মতো।
কোথায় ঘুঘু? নৃপেন রায়ের চোখ দুটো চকচক করে উঠল।
ওই যে। গৌরী আঙুল বাড়িয়ে দেখিয়ে দিলে, কেমন গায়ে গায়ে লাগিয়ে বসে আছে। এখুনি ঘু ঘু করে ডাকছিল।
ওঃ!
নৃপেন রায় সরে এলেন। তুলে আনলেন দেওয়ালের কোনায় ঠেসান দেওয়া বন্দুকটা। লোড করাই ছিল। আনলোডেড বন্দুক কখনো তিনি ঘরে রাখেন না।
গৌরীর হাতে বন্দুকটা তুলে দিয়ে বললেন, মার।
হরিণের চোখে যেন বাঘের ছায়া পড়ল।
বাবা।
মার। পাথরের মতো শক্ত শোনাল নৃপেন রায়ের গলা। জ্বলে উঠল সম্মোহকের দৃষ্টি। তারপর গৌরীর সামনে থেকে তাঁর সমস্ত মুখোনা মিলিয়ে গেল, জেগে রইল শুধু দুটো আগ্নেয় চোখ। সে-দুটো যেন ক্রমশ বড়ো—আরও বড়ো হয়ে কোনো চলন্ত ট্রেনের দুটো আলোর মতো এগিয়ে আসতে লাগল গৌরীর দিকে।
ঘামে ভেজা হাতে ঠাণ্ডা বন্দুকটা আঁকড়ে ধরল গৌরী। আস্তে আস্তে তুলে নিয়ে লক্ষ ঠিক করল। তারপরেই একটা তীব্র শব্দের সঙ্গে সঙ্গে দুটো তুলোর বলের মতো ঘুঘুজোড়া ছটফট করতে করতে পড়ল মাটিতে।
ঘর-কাঁপানো একটা অট্টহাসিতে নৃপেন রায় ফেটে পড়লেন।
খাসা টিপ হয়েছে তোর! বন্দুক ধরেই জাতশিকারি! অসীম আনন্দে আর একবার তিনি হা-হা করে হেসে উঠলেন।
কিন্তু গৌরী আর দাঁড়াল না। দু-হাতে মুখ ঢেকে পালিয়ে গেল সেখান থেকে।
আর সঙ্গে সঙ্গেই নাকের ওপর প্রচন্ড একটা ঘুসি এসে পড়বার মতো হাসিটা থেমে গেল নৃপেন রায়ের। না, এখনও হয়নি। এখনও অনেক দেরি। পায়ের নীচে গন্ধরাজ দুটোকে নির্মমভাবে দলিত-মথিত করতে করতে তিনি ভাবতে লাগলেন, বাগানে একটাও ফুলের গাছ আর তিনি রাখবেন না। কালই কাটিয়ে নির্মূল করবেন সমস্ত। আর সেখানে পুঁতে দেবেন আরও গোটা কয়েক ক্যাকটাস—আরও নির্মম, আরও কণ্টকিত।
দিন দশেক পরে বাড়িতে দুটো বড়ো বড়ো বাক্স এল। আর সেইসঙ্গে এল শক্ত তারের
জাল-দেওয়া একটা মস্তবড়ো খাঁচা। খাঁচার মাঝখানে জালের আর একটা পার্টিশন—দুটো জানোয়ার পাশাপাশি রাখার ব্যবস্থা।
গৌরী অবাকবিস্ময়ে বললে, এতে কী হবে বাবা?
মজা হবে। নৃপেন রায় হাসলেন, হাতের তেলোয় একটা প্রজাপতি পিষে ফেলবার মতো হাসি। মজার চেহারাটাও একটু পরেই স্পষ্ট হয়ে উঠল। কাঠের একটা বাক্স খুলতেই খাঁচার এদিকের ঘরে লাফিয়ে ঢুকল মাঝারি ধরনের একটা লেপার্ড। পোষমানা নয়, বন্য এবং উদ্দাম।
বাঃ, কী সুন্দর বাঘ! খুশিতে ছলছল করে উঠল গৌরী, এ বাঘটা আমাদের?
আমাদের বই কী।
আনন্দে গৌরী হাততালি দিলে, কী মজা। আর ওই বাক্সে?
দ্বিতীয় বাক্স থেকে যে বেরিয়ে এল, তাকে দেখে সভয়ে গৌরী অব্যক্ত শব্দ করল একটা। খাঁচার দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সে বিদ্যুদবেগে ফিরে দাঁড়াল। তারপর তীক্ষ্ণশিস টানার মতো গর্জন করে হাত চারেকের মতো উঁচু হয়ে উঠল। বিশাল ফণা তুলে প্রচন্ড বেগে ছোবল মারল খাঁচার দরজায়।
হাত আটেক লম্বা একটি শঙ্খচূড়। উজ্জ্বল, মসৃণ চিত্রিত দেহে আরণ্যক বিভীষিকা।
গৌরী পিছিয়ে যাচ্ছিল, নৃপেন তার হাতটাকে আঁকড়ে ধরলেন। এত জোরে ধরলেন যে গৌরীর হাড়টা মড়মড় করে উঠল।
পালাচ্ছিস কেন? দাঁড়া, এইবারেই তো মজা শুরু হবে!
বাক্স যারা বয়ে এনেছিল, তারা একবার এ ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করে সরে পড়ল সেখান থেকে। শুধু আম গাছটার ছায়ার নীচে নিশ্চিন্ত মনে বসে বসে ঝিমুতে লাগল বৃন্দাবন—সে চোখে দেখতে পায় না, কানেও শুনতে পায় না।
গৌরী বিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
খাঁচায় ঢুকে বাঘটা সবে শ্রান্তভাবে বসে পড়েছিল, চাটতে শুরু করেছিল সামনের একটা থাবা। শঙ্খচূড়ের গর্জন শোনামাত্র বিদ্যুদবেগে সে উঠে দাঁড়াল।
প্রতিদ্বন্দ্বী তার পাশে, মাত্র এক ইঞ্চি সরু একটা জালের ব্যবধানে। সেই জালের ওপারে সে লতিয়ে লতিয়ে উঠতে চাইছে, তার চোখ দুটো এই দিনের আলোতেও দু-টুকরো সিগারেটের আগুনের মতো জ্বলছে।
বাঘটা পায়ে পায়ে একেবারে খাঁচার এপারে সরে এল। একটা অতিকায় বিড়ালের মতো ফুলে উঠল তার গায়ের রোঁয়াগুলো। হিংস্র হাসির ভঙ্গিতে দাঁতগুলো বের করে চাপা স্বরে সেও একটা গর্জন করল। কিন্তু সে গর্জনে বীরত্ব প্রকাশ পেল না। তার চোখ দুটোয় ফুটে উঠল মর্মান্তিক ভয়ের ছায়া।
শিরদাঁড়া ধনুকের মতো বাঁকিয়ে নিয়ে সাপটা ফণা বিস্তার করল। তারপর আবার একটা তীব্র শিসের শব্দ করে প্রচন্ড বেগে ছোবল মারল পার্টিশনের গায়ে। সমস্ত খাঁচাটা ঝনঝন করে উঠল। দুর্বলভাবে একটা থাবা তুলে লেপার্ডটা অস্ফুট গর্জন করল—গররর…
নৃপেন রায় মেয়ের দিকে তাকালেন। হ্যাঁ, প্রাণ জেগে উঠেছে, ভাষা জেগে উঠেছে। গৌরীর চোখে; ঝলমল করে উঠেছে কৌতূহলের আলোয়। শরীর রোমাঞ্চিত হয়ে উঠেছে। একটা অদ্ভুত প্রত্যাশায়।
সাপটা এবার ফণা তুলে দাঁড়িয়ে রইল। উদ্ধত আহ্বানের মতো হেলতে লাগল ডাইনে বাঁয়ে। সিগারেটের আগুনের মত চোখে ফুটে উঠল একটা বিষাক্ত নীলিম দীপ্তি। লেপার্ডটা এক বার লেজ আছড়াল, নির্নিমেষভাবে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইল শঙ্খচূড়ের দিকে, তারপর যেন মরিয়া হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল পার্টিশনের ওপরে।
এইবার সাপটার পিছিয়ে যাওয়ার পালা। কিন্তু ভয়ের আভাস নেই, শুধু আত্মরক্ষার চেষ্টা। তারপরেই নিজেকে আবার দৃঢ় করে নিয়ে খাঁচা-ফাটানো ছোবল বসিয়ে দিলে।
বিদ্যুদবেগে বাঘ সরে এল খাঁচার নিরাপদ কোণে। কান্নার মতো আওয়াজ তুলল, গর-র-র…
গৌরী নেচে উঠল। হাততালি দিয়ে হেসে উঠল, বা-বা, কী চমৎকার!
তারপর সারাটা দিন ধরে চলল সেই অমানুষিক স্নায়ুযুদ্ধ। সন্ধ্যার দিকে ক্লান্ত বাঘটা খাঁচার মাঝখানে এলিয়ে পড়ল। কিন্তু তাকে তো ছুটি দেবে না গৌরী। একটা ছটো লাঠি দিয়ে বাইরে থেকে খোঁচা দিতে লাগল বার বার। আর বাঁচবার শেষ আকুতিতে থেকে থেকে ক্ষুব্ধ কান্নায় খাঁচার এদিক-ওদিক ঝাঁপিয়ে পড়তে লাগল বাঘটা।
সারাদিনের মধ্যে গৌরীকে নড়ানো গেল না খাঁচার সামনে থেকে। হিংস্র আনন্দে থেকে থেকে চেঁচিয়ে উঠতে লাগল, কী চমৎকার!
অনেক রাতে ঘুমন্ত গৌরীকে খাঁচার সামনে থেকে টেনে উঠিয়ে নিয়ে গেল বৃন্দাবন।
রাত তখন প্রায় দুটো হবে। গৌরী উঠে বসল। রক্তের মধ্যে একটা অস্থির চঞ্চলতা। বিছানা থেকে সে নেমে পড়ল, সামনের টেবিলের ওপর থেকে তুলে নিলে নৃপেন রায়ের হান্টিং টর্চটা।
পাশের ঘরে নাকের ডাকের শব্দ। পায়ে পায়ে বারান্দায় বেরিয়ে গেল সে। টর্চের আলোয় দেখা গেল কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছে সাপটা। বাঘটা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে খাঁচার কোনায়। অধৈর্যভাবে খাঁচার গায়ে কয়েকটা টোকা মারতে শঙ্খচূড় এক বার নড়ে উঠল, কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া গেল না লেপার্ডের তরফ থেকে।
ছোটো লাঠিটা কুড়িয়ে এনে বাঘকে খোঁচা দিলে গৌরী। নড়ল না, গর্জে উঠল না অসহায় যন্ত্রণায়। টর্চের তীব্র আলোয় বুঝতে পারা গেল-সীমাহীন ভয়ের সঙ্গে লড়াই করতে করতে শিথিল স্নায়ু নিয়ে সে ঢলে পড়েছে।
কিন্তু শঙ্খচূড় উঠে দাঁড়িয়েছে। উঠে দাঁড়িয়েছে শিরদাঁড়ায় ভর দিয়ে। প্রতিদ্বন্দ্বীপ্রতিদ্বন্দ্বী চাই তার। পার্টিশনের ওপর আবার একটা ভয়ংকর ছোবল পড়ল, কিন্তু তার শত্রু আর নড়ল না-নড়বেও না আর। হতাশায় ক্ষোভে গৌরী চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। সহ্য করতে পারছে না। তার সমস্ত জান্তব বোধকে আচ্ছন্ন করে দিয়েছে একটা প্রাগৈতিহাসিক হিংস্র আনন্দ। উপায় চাই, উপকরণ চাই। নেশা চাই তার। যেমন করে হোক, যে উপায়েই হোক।
কয়েক মুহূর্ত স্থির হয়ে থেকে গৌরী খাঁচাটায় সজোরে একটা ধাক্কা দিলে। সরল না। আর একটা ধাক্কা আরও জোরে। খাঁচার কাঠের চাকাগুলো গড়গড় করে এগিয়ে গেল কয়েক পা। আর একটু ঠেলে দিলেই নৃপেন রায়ের দরজা। অনেক রাত পর্যন্ত মদ খেয়ে নৃপেন রায় মেজের ওপরেই পড়ে আছেন, দরজা বন্ধ করে দেবার সুযোগ তাঁর হয়নি।
…শঙ্খচূড়ের গর্জনে আতঙ্কবিহ্বল নৃপেন রায় উঠে দাঁড়ালেন। তখনও নেশায় টলছেন, তখনও চোখের দৃষ্টি আচ্ছন্ন। দেখলেন আট হাত লম্বা আরণ্যক বিভীষিকা তাঁর মুখের দিকে স্থির তাকিয়ে আছে—হেলছে দুলছে, চোখে নীল হিংসার খরদীপ্তি!
এক লাফে দরজার দিকে সরে গেলেন। টানতে গেলেন প্রাণপণে, দরজা খুলল না। গৌরী বাইরে থেকে শিকল বন্ধ করে দিয়েছে।
গৌরী! গৌরী!
আর্তস্বরে নৃপেন রায় চেঁচিয়ে উঠলেন। গৌরীর জবাব এল না, এল হাসির শব্দ। কাচের জানলার মধ্যে দিয়ে সে ব্যাপারটা দেখছে। আর একটা নতুন খেলা, একটা নতুন আনন্দ! নেশা!
প্রচন্ড বেগে ছোবল মারল সাপটা। আটত্রিশ বোরের রিভলবারটা ড্রয়ার থেকে বার করবার আর সময় নেই। শেষ চেষ্টায় সাপকে আঁকড়ে ধরতে গেলেন নৃপেন রায়, পারলেন না। মণিবন্ধনের ওপর দংশনের তীব্র জ্বালা অনুভব করতে করতে দেখলেন কাচের জানলার হাততালি দিয়ে দিয়ে হেসে উঠছে গৌরী। সে প্রাণ পেয়ে উঠেছে, কোথাও কিছু বাকি নেই তার; আর শঙ্খচূড় সাপের মতো তারও জান্তব চোখ আচ্ছন্ন হয়ে গেছে আদিম হিংসার নীল আলোয়।