ভুতের গল্প শুনবি? আচ্ছা, বসে পড় এখানে। সবরকম গল্প মজুত রয়েছে আমার কাছে। যা চাস।
শোন তা হলে। সেবার আমার বড় মামা
কী বললি? মামার গল্প চলবে না? নিজের চোখে দেখা ভূতের গল্প শোনাতে হবে? আচ্ছা, তাই সই। নিজের চোখেই যে কত ভূত দেখেছি সে-সব বলতে গেলে আঠারো পর্বের ভুতুড়ে মহাভারত হয়ে যায়।
আচ্ছা, চুপচাপ বোস সবাই। বেশ জুত করে খানিকটা নস্যি নিয়ে নিই আগে। রেডি? অল রাইট। মানে, ঘটনাটা ঘটেছিল বিহারে। মোকামা জংশন জানিস তো? তারই কাছাকাছি এক জায়গায়। রাতের বেলায় নয়–একদম দিনে-দুপুরে।
দিনে-দুপুরে শুনেই চমকে গেলি? আরও চমকাবি এর পরে। কান পেতে শুনে যা।
যাদের বেশি ভূতের ভয় আছে তারা এই বেলা বেরিয়ে যেতে পারিস। নইলে পরে মুস্কিলে পড়বি।
অ্যা–আরও ঘনিয়ে বসলি সবাই? বেশ, আমার কী। কেউ যদি হার্টফেল করিস, আমার কোনও দোষ নেই। কী বলছিস? তোদের হার্ট খুব শক্ত। আচ্ছা–দেখা যাক।
তা হলে আসল গল্পে আসা যাক। মোকামা জংশন থেকে বাসে করে মাইল পনেরো গিয়ে, সেখান থেকে মাইল চারেক গেঁয়ো রাস্তা দিয়ে হাঁটলে একটা মস্ত পোলট্রি ফার্ম পাওয়া যায়। পোলট্রি ফার্ম মানে জানিস তো? যেখানে হাঁস-মুরগি এইসব পোষে–তাদের ডিম-টিম বিক্রি করে। যাই হোক, আমি সেই পোলট্রি ফার্মে যাচ্ছিলুম। এক পিসেমশাই তার মালিক–অনেক দিন ধরেই সেখানে ব্যবসা করছেন।
বাস থেকে নেমে চার পাইল পথ পাড়ি দিচ্ছি–বেশ লাগছে। শীতের দুপুর–রোদটাও তেমন গায়ে বিধছে না। পথ একেবারে নির্জন। মাঠে মাঠে ছোলা কড়াইশুটি ফলেছে, সর্ষে ফুলে রং ধরেছে। পথের দুধারে হাওয়ায় হাওয়ায় শুকনো পাতা উড়ে যাচ্ছে।
বেশ গলা ছড়িয়ে গান গাইতে গাইতে চলেছি হঠাৎ
হঠাৎ দেখি মাঠের ভেতর দিয়ে চারজন লোক বিকট চিৎকার করতে করতে আসছে। তাদের কাঁধে এক খাটিয়া, তাতে মড়া। দেখেই আমি ভয় পেয়ে একেবারে একটা ঝোপের আড়ালে বসে পড়লুম।
কী বললি? মড়া নিয়ে যাচ্ছে দেখেই ভয় পেলুম–তা-ও দুপুরবেলা? আরে না, অত কাপুরুষ আমি নই। যে-লোকগুলো মড়া নিয়ে আসছিল, সারা গা তাদের রক্তমাখা। আর খাটিয়ায় যে-মড়াটা রয়েছে, সেও রক্তে নাওয়া। মানে, খুন করে মড়া পাচার করে দিচ্ছে কোথায়।
ভেবে দ্যাখ–কী সাংঘাতিক কাণ্ডকারখানা!
আমি তো ঝোপের আড়ালে বসে ঠকঠক করে কাঁপছি। সে-ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখলে কে-ই বা ঠাণ্ডা থাকতে পারে, বল? হাত-পা সেঁধিয়ে যেতে চাইছে পেটের মধ্যে। ভাবছি, দেখতে পেলে বোধ হয় সঙ্গে সঙ্গে ওরা আমাকেও সাবড়ে দেবে। প্রাণের দায়ে আমি দুর্গানাম জপতে শুরু করেছি তখন।
কী বলছিস? এর মধ্যে ভূত কোথায়? দাঁড়া–দাঁড়া–আসছে। এক্ষুনি আসছে।
লোকগুলো মড়া নিয়ে আসতে আসতে একটা গাছতলায় নামাল। তারপর বোধহয় বিড়ি-টিড়ি ধরাতে যাচ্ছে, হঠাৎ হঠাৎ সেই রক্তমাখা মড়াটা একটা বিকট চিৎকার ছাড়ল। সে কী চিৎকার!
ঝোপের ভেতর একটা ভুঁড়ো শেয়াল আমার কাছাকাছি কোথাও ঘাপটি মেরে বসেছিল, বিকট চিৎকার শুনে সঙ্গে সঙ্গে সে দিল ভোঁ দৌড়। আর আমি? দাঁতকপাটি লাগতে লাগতে দেখলুম, মড়াটা খাটিয়া ছেড়ে তড়াক করে উঠে বসল, তারপরে ঝাঁ করে এক লাফে সামনের একটা পিপুলগাছে তরতর করে উঠে গেল।
খুনী লোকগুলোর বুকের পাটা আছে বলতে হবে। অমনি তারা হইহই করে চেঁচিয়ে উঠল, মুর্দা ভাগা, মুর্দা ভাগা! মানে মড়া পালাল, মড়া পালাল! কেমন লাগছে? মাথার চুল খাড়া হচ্ছে তো?–হবেই। তারপরে যা হল—
কী হল? মড়াটা আবার গাছ থেকে নীচে নেমে পড়ল, এবার সোজা ছুটে এল আমি যেখানে বসে আছি ঠিক সেই দিকেই।
আর আমি? বাপ-রে–মা-রে বলে প্রাণপণে ছুট লাগালুম। আর সেই মড়াটা করলে কী জানিস? আমাকে তাড়া করল-সোজা তাড়া করল।
তারপর?
আমি তখন আছি কি নেই। ছুটতে ছুটতে ধপাস করে একটা পেল্লায় আছাড় খেলুম। আর তক্ষুনি রক্তমাখা মড়াটা আমার ঘাড় ধরে আমাকে দাঁড় করাল! কী ভীষণ তার স্পর্শ কী ভয়ঙ্কর তার কালো কালো হাত! আর কয়েকটি ঝকঝকে হিংস্র দাঁত বের করে আমাকে কামড়ালে? না-না। হেসে বললে, বাবু, হোলি যায়। বকশিশ।
–আরে হ্যাঁ—হ্যাঁ–হোলিই ত। ওদের দেশে অনেক দিন ধরে চলে জানিস তো? তাই সারা গায়ে দোলের রং মেখে, একটা লোককে খাটিয়ায় চাপিয়ে
কী–উঠে পড়লি যে? পছন্দ হল না? বলছিস ভূতের গল্প হয়নি? হয়নি তো বয়ে গেল। যা–এখন বেরো এ-ঘর থেকে। গেট আউট!