অনেকগুলো গল্পের বই আর দশ বারোখানা উপন্যাস লিখেছেন রামহরিবাবু। তাঁর বইগুলোর ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর নাম–প্রলয়ের আগুন, ডাইনীর আর্তনাদ, রক্তের হুঙ্কার, ডাকাতের খাঁড়া, কাটামুণ্ডুর নাচ–এই সব! রামহরিবাবুর ধারণা, শরৎচন্দ্রের পরে তাঁর মতো ভালো কেউ তো লিখতে পারেই না শরৎচন্দ্রের চাইতেও তিনি ভালো লেখেন।
কিন্তু দুঃখের কথা এই যে, ধারণাটা তিনি ছাড়া আর কারও নেই। এত রাশি রাশি বই লিখলেন, অথচ লোকে তাঁর কদর বুঝল না। কুড়িয়ে বাড়িয়ে সবসুদ্ধ পঞ্চাশখানার বেশি বই এ-পর্যন্ত তাঁর বিক্রি হল না। সাধে কি জাতির অধঃপতন হচ্ছে। ওই পঞ্চানন শিকদার নিতান্তই সেদিনকার ছোকরা এখনও ভালো করে গোঁফ ওঠেনি, আর তার বই কিনা ঝড়ের বেগে কাটতি হয়ে যায়। অথচ তিনি, যিনি শরৎচন্দ্রের চাইতেও ভালো লেখেন, তাঁর বই কাটে পোকাতে। ধিক ধিক!
পোকায় কাটা বইগুলোর দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে রামহরিবাবু বারবার বাঙালি জাতিকে ধিক্কার দিতে থাকেন।
শুধু কি এই? বাংলাদেশে কতই তো সভা-সমিতি হচ্ছে। সেদিনকার ছোকরা পঞ্চানন শিকদার পর্যন্ত সভাপতি হয়ে গলায় মোটা মোটা মালা পরে–দেখে রামহরিবাবুর উত্তেজনায় হার্টের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে আসতে চায়। কোনও সভায় এ-পর্যন্ত তাঁকে কেউ সভাপতি হতে ডাকল না। বড় বড় মিটিংয়ের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম, পাড়ার সরস্বতী পুজোয় পর্যন্ত বাইরে থেকে লোক ডেকে এনে সভাপতি করা হয়। অথচ তিনি যে সকলের চোখের সামনে সূর্যের মতো একেবারে জ্বলজ্বল করে জ্বলছেন এটা কারও মনেই পড়ে না। এরই নাম হচ্ছে প্রদীপের নীচে অন্ধকার।
এই সব গবেষণা করে রামহরিবাবু যখন সন্ন্যাসী হওয়ার জন্য গেরুয়া ছোপাচ্ছিলেন, এমন সময় একটা কাণ্ড ঘটে গেল।
ভগবান অন্তর্যামী। রামহরিবাবুর মনের বেদনা তিনি বুঝলেন!
সেদিন সকালে দাড়ি কামাচ্ছেন রামহরিবাবু। সবে গালের একটা দিক কামিয়েছেন এমন সময়ে শুনতে পেলেন বাইরে তাঁর চাকর বুদ্ধুর সঙ্গে কে যেন কথা বলছে।
–রামহরি বটব্যালের বাড়ি এইটে?
–আইগ্যা হ। কত্তা কী কামে আইছেন?
–তাঁকে একটা সভায় সভাপতি হবার জন্যে
-শোবাপতি? তিনি আবার শোভার পতি অইবেন ক্যান? আমার মা ঠাইনের পতি তো তিনি অইয়াই আছেন–
লোকটি কী যেন বলতে যাচ্ছিল, এর মধ্যেই ক্যাঙারুর মতো একখানা সমুদ্রলঙ্ঘন লম্ফ দিয়ে এসে পড়েছেন রামহরিবাবু। একগালে সাবান, হাতে ক্ষুর। চেহারাখানা যা খোলতাই হয়েছে বলবার নয়। দেখে লাফিয়ে তিন পা সরে গেল বুদ্ধু। বললে, কত্তা, অমন ক্ষুর লইয়া ধাইয়া আইলেন ক্যান? খ্যাপছেন নাকি?
–যা যা ব্যাটা গাড়ল, ভেতরে যা।–এক ধমকে নার্ভাস বুদ্ধুকে আরও নার্ভাস করে দিয়ে প্রসন্ন দৃষ্টিতে রামহরিবাবু আগন্তুকের দিকে তাকালেন। তারপর আধগাল দাড়ি আর সাবান নিয়ে তিনি একগাল হাসি হাসলেন; আমিই রামহরি বটব্যাল। কী চাই আপনার?
–আপনিই রামহরিবাবু? নমস্কার নমস্কার। আপনাকে আমাদের একটা সাহিত্যসভার সভাপতি হবার জন্যে
–আসুন, আসুন, বসুন–ওরে বুদ্ধু, বাবুকে শিগগির চা এনে দে।
কৃপণতার জন্যে রামহরিবাবু বিখ্যাত। তাঁর দোরগোড়া থেকে ভিখিরি ঠ্যাঙা খেয়ে যায়, পাত কুড়োবার মতো কিছু পায় না বলে বাড়িতে কাক পর্যন্ত পড়ে না। এ-হেন লোক কিনা খুশির আতিশয্যে আগন্তুককে হাফ কাপ ঝোলাগুড়ের চা খাইয়ে দিলেন।
.
তারপরে শুরু হল আসল গল্প।
মার্টিনের রেলগাড়িতে প্রচণ্ড ছারপোকার কামড় খেতে খেতে রামহরিবাবু এসে নামলেন একটা ছোট স্টেশনে। স্টেশনের নাম বাঁশতলা।
যে-লোকটি তাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে, তার নাম গজেন তফাদার। কথায় কথায় রামহরিবাবু জানতে পেরেছেন সে গ্রামের নাট্য-সমিতির সেক্রেটারি–এ-গাঁয়ে ও-গাঁয়ে যাত্রা করে বেড়ায়। খবরের কাগজে সাহিত্য-সমিতির হিড়িক দেখে তাদেরও সাহিত্য করবার শখ হয়েছে। তাই তারা রামহরিবাবুকে সভাপতি করবার জন্যে ধরে এনেছে।
রামহরিবাবু জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমার সব বই পড়েছেন আপনি?
–খেপেছেন আপনি!–বিড়িতে টান দিয়ে গজেন তফাদার জবাব দিয়েছিল : আমার সময় কোথায় বলুন দিকি? দিনরাত যাত্রার পার্ট মুখস্থ করেই সময় পাই না, তো বই পড়ব। দু-একখানা যাত্রার বই যদি লিখতেন স্যার, তা হলেও বা কথা ছিল।
মুহূর্তে ভারি ক্ষুণ্ণ হয়ে গেলেন রামহরিবার, ইচ্ছে করল গজেনের লম্বা লম্বা কান দুটো ধরে বেশ করে ঝাঁকিয়ে দেন। কিন্তু মনের ভাব গোপন করে বললেন, তবে আমি যে লিখি সেটা জানলেন কী করে?
–আমি কেমন করে জানব মশাই? আমাদের যাত্রার দলে যে হনুমান সাজে সেই গদাই শীল আগে কলকাতায় ছাপাখানার কম্পোজিটার ছিল। তাকে জিজ্ঞেস করলাম কোনও সাহিত্যিককে চেনে কিনা! সে আপনার ‘পাতালের আগুন’ না কি একটা কম্পোজ করেছিল, প্রুফ নিয়েও গিয়েছিল আপনার বাড়িতে। তার কাছেই আপনার নাম ঠিকানা পেলাম আর কী! সে বললে, আপনি বেড়ে লেখেন–পাতালের আগুন
রামহরিবাবু বাধা দিয়ে বললেন, উঁহু, প্রলয়ের আগুন।
–ওই হল স্যার। প্রলয় হলেই সব পাতালে চলে যায় কিনা। তা আপনার বইয়ের আট-দশ পাতা সে পড়েছে, বলেছে দশ পাতাতেই নাকি আপনি দশটা খুন ঘটিয়ে দিয়েছেন। শুনে আমাদেরও আপনার ওপর খুব ভক্তি হয়েছে স্যার! দশ পাতায় দশটা খুন! আপনি স্যার, অসাধারণ লোক।
রামহরিবাবুর ইচ্ছে হয়েছিল তক্ষুনি বাড়ি ফিরে যান, কিন্তু সভাপতি হওয়ার প্রলোভনটা কম নয়। না হয় তাঁর লেখা এরা পড়েইনি, কিন্তু তাতেই বা ক্ষতি কী! বক্তৃতার চোটে মুখ দিয়ে এমন আগুন তিনি ছড়িয়ে দেবেন যে, চারদিকে দাউদাউ করে জ্বলে যাবে। এরা বুঝতে পারবে তিনি একেবারে কেউকেটা নন।
অতএব শেষ পর্যন্ত গজেনের সঙ্গে তিনি এসে নামলেন বাঁশতলা স্টেশনে।
আশা ছিল, স্টেশনে তাঁকে দেখবার জন্যে কাতারে কাতারে লোক দাঁড়িয়ে থাকবে। কিন্তু জনপ্রাণীর চিহ্ন নেই। একজন পিলে-রোগী স্টেশন মাস্টার আর জন তিনেক হেলে চাষা স্টেশনময় ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছে। রামহরিবাবুর মনটা আর একবার খারাপ হয়ে গেল।
গজেন এসে বললে, দাঁড়িয়ে আছেন কেন? চলুন।
–কোথায় যেতে হবে?
–আমাদের গাঁয়ে।
–সে কোথায়?
–শিয়ালপাড়া।
–শিয়ালপাড়া! সে কদ্দূর?
–বেশি নয়, কোশ দুয়েক।
–কোশ দুয়েক? গাড়ি কই?
গজেন অবাক হয়ে গেল : গাড়ি! এ কি স্যার কলকাতা শহর পেয়েছেন? টুপ করে ট্রামগাড়িতে চাপলেন আর ঝুপ করে ধরমতলা গিয়ে নামলেন। এ স্যার পাড়াগাঁ।
–কিন্তু দু কোশ রাস্তা! হাঁটব কী করে? অন্তত একটা গোরুর গাড়ি
গোরুর গাড়ি! গজেন মুখ ভেংচে উঠল : একটা গাড়ির আজকাল ভাড়া কত জানেন? অন্তত আড়াই টাকা। কে দেবে মশাই? আপনি?
রামহরিবাবু মাথা নেড়ে জানালেন যে তিনি দেবেন না।
-তা হলে হাঁটুন, হাঁটুন। এখানে বেশিক্ষণ দাঁড়াবেন না, কাছাকাছি গোটা দুই শেয়াল খেপেছে, কামড়ালেই জলাতঙ্ক।
–ওরে বাবা। লাফিয়ে উঠে রামহরিবাবু ছুটতে শুরু করেন।
গজেন চেঁচিয়ে বললে, থামুন স্যার, থামুন। অমন ঘোড়ার মতো আদাড়ে-পাদাড়ে ছুটবেন না–এখানকার জঙ্গলে আবার কেউটে সাপের আমদানি বেশি।
অ্যাঁঃ!–রামহরিবাবুর ভয়ে প্রায় শিবনেত্র হবার দাখিল।
তবু সভাপতি হবার লোভ। পঞ্চানন শিকদারকে যে করে হোক টেক্কা দিতে হবে। বেলা দুটোর সময় এক হাঁটু ধুলো নিয়ে রামহরিবাবু যখন শিয়ালপাড়ায় এসে পৌঁছুলেন তখন তাঁর প্রায় দম আটকে আসছে।
জংলা ছোট গ্রাম। কয়েকঘর গৃহস্থ, বেশির ভাগেরই দৈন্যদশা। সভাস্থলের নমুনা দেখেই সভাপতির হয়ে এল।
একটা আধভাঙা চণ্ডীমণ্ডপে চাটাই বিছিয়ে রামহরিবাবুকে বসতে দেওয়া হল। তারপর আস্তে আস্তে দু-চারজন করে ভিড় জমাতে লাগল তাঁর পাশে।
পাঠশালার বুড়ো পণ্ডিতমশাই এসে অনেকক্ষণ ধরে পর্যবেক্ষণ করছিলেন রামহরিবাবুকে। এইবার বেশ করে কেশে নিয়ে বললেন, আপনার বই আমার বড্ড ভালো লাগে স্যার। খাসা লেখা আপনার।
রামহরিবাবুর অত্যন্ত আনন্দ হল। এখানকার সবাই তা হলে গজেনের মতো নয়, দু-একজন পড়ুয়া লোকও আছে!
–আমার কী কী বই পড়েছেন আপনি?
-কেন স্যার? ব্যাকরণ-সুধা, বালক-বোধ প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ–পড়িনি কী? আহা-হা, কী চমৎকার তদ্ধিত-প্রকরণ লিখেছেন আপনি। পড়তে পড়তে আমার কান্না পেয়ে গিয়েছিল।
–কিন্তু ব্যাকরণ-ট্যাকরণ তো আমি লিখিনি।
–সে কী! আপনার নাম অশ্বপতি কাব্যচঞ্চু নয়?
কী আশ্চর্য–লোকটা রামহরিবাবুর নাম পর্যন্ত জানে না, অথচ কোন এক অশ্বপতি না অশ্বডিম্ব ঠাউরে বসে আছে! চটে গিয়ে তিনি বললেন, না মশাই, আমি অশ্বটশ্ব নই, ওনামের কোনও লোককে আমি চিনি না।
ধ্যাৎ, তা হলে খালি খালি এলাম! শুধু সময় নষ্ট বলে পণ্ডিতমশাই উঠে চলে গেলেন।
এবার এগিয়ে এলেন কবিরাজমশাই।
–আমাশয় প্রকরণ আর সহজ পাঁচন-নির্মাণ বই দুটো আপনারই লেখা তো?
রামহরিবাবু সরোষে বললেন, না।
–তা হলে আপনি কৃতান্তকুমার মারণরত্ন নন?
–না-না-না। আমার নাম রামহরি বটব্যাল।
-তাই নাকি?–বিরক্তমুখে কবিরাজ বললেন, গজা হতভাগা তা তো বললে না। খালি খালি বেতো পা নিয়ে ছুটে এলাম। দূর-দূর!
কবিরাজ প্রস্থান করলেন। তারপর আস্তে আস্তে আর সবাই। একা চণ্ডীমণ্ডপে রামহরি বসে রইলেন, রাগে তাঁর গা জ্বলতে লাগল।
ইতিমধ্যে কোত্থেকে একটা ডাবা হুঁকো সেজে এনেছে গজেন। বললে, তামাক ইচ্ছে করুন, তারপর চলুন সভায় যাই।
সক্রোধে রামহরি বললেন, সভা না হাতি! খালি খালি আমাকে ভোগান্তি করতে কেন নিয়ে এলেন বলুন দেখি?
গজেন মধুর হেসে জবাব দিলে, আহা হা, চটছেন কেন স্যার! পাড়াগাঁ জায়গা, এমন হয়েই থাকে। নিন নিন, তামাকটা খেয়ে ফেলুন, তারপর সভায় যাওয়া যাবে।
অগত্যা হুঁকোটা হাতে নিয়ে একটা টান দিলেন রামহরিবাবু। কিন্তু সে কী সোজা তামাক! টান দেবার সঙ্গে সঙ্গে মাথা ঘুরে একেবারে মূর্ছার উপক্রম। সামলে নিয়ে রামহরিবাবু খেপে উঠলেন : এ কী কাণ্ড মশাই?
কী হল স্যার?
–এ তামাক না গাঁজা? উঃ–আর একটু হলে প্রাণটা আমার বেরিয়ে যেত।
–ও কিছু না স্যার–তেমনি মিষ্টি করে হেসে গজেন বললে, দা-কাটা তামাক একটু কড়া হবেই। ওসব না হলে যাত্ৰাই জমে না।
-কিন্তু আমি তো যাত্রা করতে আসিনি।
না, সভা করতে এসেছেন। একই কথা স্যার–আসলে তো বক্তৃতা করাই? নিন, এবারে উঠুন।
.
সভা-পর্বের বিস্তারিত বর্ণনা না করাই ভালো।
একটা খোলামাঠে খানকয়েক চাটাই পাতা। আর একদিকে একখানা তে-পায়া চেয়ার : সভাপতির আসন। চেয়ারে বসতে গিয়ে একটুর জন্যে ধরাশয্যার হাত থেকে রক্ষা পেয়ে গেলেন রামহরিবাবু।
সভায় লোক হয়েছে গোনা-গুনতি পনেরো জন। সাত-আটটি কালো কালো ন্যাংটো ছেলেমেয়ে, জন দুই চাষা, গজেন আর জন পাঁচেক ভদ্রলোক। মাল্যদান হল না, প্রস্তাব হল না, উদ্বোধন সঙ্গীত হল না। রামহরিবাবুর বুকভরা আশা যেন ধক করে নিবে গেল।
কিন্তু ঘাবড়ালে চলবে না। মনে মনে শক্ত করে কোমর বাঁধলেন তিনি। হোক ছোট সভা, না-ই বা থাকুক মালা, কিন্তু তিনি পিছপা হবেন না। বক্তৃতার তোড়ে এমন আগুন ছুটিয়ে দেবেন যে, এই পনেরোজন লোকেরই মাথা ঘুরে যাবে। সুতরাং তিনি আরম্ভ করলেন :
“বন্ধুগণ, অদ্যকার এই বিরাট জনসভায় আমাকে সভাপতির আসন দিয়া আমাকে আপনারা যেভাবে সম্মানিত করিয়াছেন, সেজন্য আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। আমি জানি, এই আসনের যোগ্য আমি নই–”
হঠাৎ পেছন থেকে চিৎকার উঠল–পালাও–পালাও
আঁতকে রামহরিবাবু থেমে গেলেন। কী হয়েছে?
জমিদারের লাঠিয়াল আসছে। বিনা অনুমতিতে তার জমিতে সভা করা হচ্ছে, তাই লাঠিয়াল পাঠিয়েছে। বলেছে, আগে সভাপতির মুণ্ডুটা দু ফাঁক করে তারপর
বাকিটা শোনবার আর সময় ছিল না। বাবা গো–বলে রামহরিবাবু ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে শুরু করলেন। কোথায় কোনদিকে তিনি জানেন না। মুহূর্তে সেখানে সভার চিহ্নমাত্রও রইল না।
ওদিকে রামহরিবাবু ছুটলেন। ভুঁড়িটা মস্ত একটা ফুটবলের মতো আগে আগে দৌড়ুচ্ছে, পেছনে দৌড়ুচ্ছে শরীর। তারপরেই ঝপ ঝপাস করে একটা শব্দ!
হ্যাঁ–এতক্ষণে সভা জমেছে বটে!
একটা পচা ডোবার বুক সমান কাদার ভেতর থেকে রামহরিবাবু ওঠার চেষ্টা করছেন, কিন্তু উঠতে পারছেন না। জলে কাদায় তাঁর বিরাট শরীরটাকে দেখাচ্ছে একটা জলহস্তীর মতো। আর ডোবার চারদিকে শ’দুয়েক লোক জড়ো হয়েছে। গজেন আছে, পণ্ডিতমশাই আছেন, কবিরাজও আছেন। পরমানন্দে সবাই রামহরিবাবুর দুর্গতিটা উপভোগ করছে। এইবারে সত্যি সত্যিই বিরাট সভা আর রামহরিবাবু সত্যিকারের সভাপতি।
.
কলকাতায় ফিরে রামহরিবাবু ইজিচেয়ারে চোখ বুজে শুয়ে আছেন। বুদ্ধু তাঁর সর্বাঙ্গে মলম মাখাচ্ছে।
হঠাৎ চোখ মেলে রামহরি করুণস্বরে ডাকলেন, বুদ্ধু!
-আইজ্ঞা।
–কোনও দিন কোথাও সভাপতি হোসনে, বুঝলি?
–আইজ্ঞা বুঝছি। আমি আমার পরিবারের পতি অইয়া সুখে আছি, শোবাটোবার পতি হম কোন দুঃখে? বীরের মতো জবাব দিলে বুদ্ধু।